করোনাভাইরাস মহামারীর মধ্যেও সদ্য সমাপ্ত ২০২০-২০২১ অর্থবছরের রপ্তানি আয়ে প্রবৃদ্ধিসহ কয়েকটি ইতিবাচক সূচকের দেখা মিলেছে; যদিও সামগ্রিক রপ্তানি লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে এখনও সাড়ে ৫ শতাংশ পিছিয়ে।
নিউজ ডেস্ক:
সোমবার রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরো- ইপিবি সর্বশেষ অর্থবছরের রপ্তানি আয়ের যে পরিসংখ্যান প্রকাশ করেছে তাতে মহামারীর সঙ্কটের মধ্যেও রপ্তানি আয়ে বাংলাদেশের ঘুরে দাঁড়ানোর তথ্যই দেখা গেছে।
এতে দেখা যায়, গত ৩০ জুন শেষ হওয়া অর্থবছরে মোট তিন হাজার ৮৭৫ কোটি ৮৩ লাখ ডলারের (৩৮ দশমিক ৭৫ বিলিয়ন) পণ্য রপ্তানি করেছে বাংলাদেশ।
এর আগের ২০১৯-২০ অর্থবছরের চেয়ে যা ১৫ দশমিক ১০ শতাংশ বেশি। ওই বছর ৩ হাজার ৩৬৭ কোটি ডলারের (৩৩ দশমিক ৬৭ বিলিয়ন) পণ্য রপ্তানি হয়েছিল।
২০১৯-২০২০ অর্থবছরের নয় মাস পেরিয়ে যাওয়ার পর এপ্রিলে মহামারীর প্রথম ধাক্কা এসেছিল। অন্যদিকে সদ্যসমাপ্ত ২০২০-২০২১ অর্থবছর জুড়ে সংক্রমণের মধ্যে সময় পার করতে হয়েছে।
সর্বশেষ এপ্রিল মাসেও কোভিড-১৯ এর দ্বিতীয় ঢেউ সামাল দিতে আবার লকডাউন শুরু হয়েছে। এমন পরিস্থিতির মধ্যে রপ্তানি আয়ের এই প্রবৃদ্ধিকে মহামারীর সঙ্গে খাপ খাওয়ার প্রচেষ্টায় সাফল্য হিসেবে দেখছেন রপ্তানিকারকরা।
সদ্য সমাপ্ত অর্থবছরে চার হাজার ১০০ কোটি ডলার রপ্তানি লক্ষ্যমাত্রা অর্জিত না হলেও সার্বিক চিত্র দেখে অনেকটা আশান্বিত হওয়ার কথা জানান শিল্প মালিক ও রপ্তানিকারকরা।
বিজিএমইএর সভাপতি ফারুক হাসান বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “২০১৯-২০২০ অর্থবছরের এপ্রিলে প্রথম যখন মহামারী হানা দেয় তখন আমরা কারখানা লম্বা সময় বন্ধ রেখেছিলাম। তবে এবার আরও খারাপ পরিস্থিতির মধ্যেও মালিক-শ্রমিকরা সাহস করে উৎপাদন প্রক্রিয়া চালু রেখেছেন।
“সরকারও এ বিষয়ে সহযোগিতা অব্যাহত রেখেছে। বলা চলে- এমন পরিস্থিতিতে রপ্তানি আয়ের প্রবৃদ্ধি মহামারীতে ঘুরে দাঁড়ানোর সূচক।“
পোশাক খাত গত কয়েক মাসে অনেকটা ‘কাভার’ করেছে এবং ভালো করেছে উল্লেখ করে তিনি আরও বলেন, “আগামীতে আরও ভালো করতে পারব বলেই মনে হচ্ছে।
“পোশাক খাতে গত বছরের চেয়ে সাড়ে ১২ শতাংশ প্রবৃদ্ধি রয়েছে। তবে মহামারী শুরুর আগের পরিস্থিতির সঙ্গে তুলনা করলে ২০১৮-১৯ অর্থবছরের চেয়ে এখনও ৭ দশমিক ৮৪ শতাংশ পিছিয়ে আছি।“
নিট পোশাক ইতোমধ্যে প্রি-কভিড অবস্থায় ফিরেছে জানিয়ে বিজিএমইএ সভাপতি বলেন, “২০১৮-২০১৯ অর্থবছরের তুলনায় দশমিক ৪৪ শতাংশ প্রবৃদ্ধি হয়েছে। ওভেনে এখনও ১৬ শতাংশের মত পিছিয়ে আছি। আমরা অর্ডার পাচ্ছি, ইউরোপ-আমেরিকাতে সব মার্কেট খুলে গেছে।
সরকারও আমাদের কারখানা খোলা রাখার অনুমোদন দিয়েছে। পোশাক মালিক শ্রমকিরাও সাহস করে উৎপাদন চালিয়ে যাচ্ছেন। সবকিছু মিলিয়ে জীবন জীবিকার যে সমন্বয়ের কথা হচ্ছে তা ধীরে ধীরে অর্জিত হচ্ছে।”
ইপিবির তথ্যে দেখা যায়, সদ্য সমাপ্ত অর্থবছরের শেষ মাস জুনে ৩৬৭ কোটি ডলারের পণ্য রপ্তানি করেছে বাংলাদেশ; যা গত বছরের জুন মাসের চেয়ে ৩১ দশমিক ৭৭ শতাংশ বেশি।
ইপিবির সবর্শেষ পরিসংখ্যানে দেখা গেছে, মোট রপ্তানি আয়ের ৮১ শতাংশই এসেছে তৈরি পোশাক খাত থেকে। এছাড়া পাট ও পাটপণ্য, চামড়া ও চামড়াপণ্য, হোম টেক্সটাইল, প্লাস্টিক পণ্য, কৃষিপণ্য রপ্তানিতে আয় ইতিবাচক ধারায় ফিরেছে।
গত ২০২০-২১ অর্থবছরে ৩ হাজার ১৪৫ কোটি ৬৭ লাখ ডলারের পোশাক পণ্য রপ্তানি হয়েছে, যা আগের অর্থবছরের চেয়ে ১২ দশমিক ৫৫ শতাংশ বেশি।
পোশাকের মধ্যে নিট পোশাক রপ্তানি থেকে আয় হয়েছে এক হাজার ৬৯৬ কোটি ডলার। এই খাতে প্রবৃদ্ধি ২২ শতাংশ।
অন্যদিকে ওভেন পোশাক রপ্তানি করে আয় হয়েছে এক হাজার ৪৪৯ কোটি ৬৭ লাখ ডলার। এই খাতেও প্রবৃদ্ধি ৩ দশমিক ২৪ শতাংশ।
গেল অর্থবছরে ১১৬ কোটি ১৯ লাখ ডলারের পাট ও পাটজাত পণ্য রপ্তানি হয়েছে, যা এর আগের অর্থ বছরের চেয়ে ৩১ দশমিক ৬৩ শতাংশ বেশি।
এ ছাড়া ১১৩ কোটি ২০ লাখ ডলারের হোম টেক্সটাইল রপ্তানির পর এই খাতে ৪৯ দশমিক ১৭ শতাংশ প্রবৃদ্ধির দেখা মিলেছে।
এক বিলিয়নের মাইলফলক অতিক্রম করা খাতগুলোর মধ্যে হোম টেক্সটাইলের প্রবৃদ্ধি সবচেয়ে বেশি।
চামড়া ও চামড়াজাত পণ্য রপ্তানি করে ৯৪ কোটি ১৬ লাখ ডলার আয় হয়েছে। এক বিলিয়নের ঘর অতিক্রম করতে না পারলেও গত বছরের তুলনায় ১৮ দশমিক ০৬ শতাংশ প্রবৃদ্ধি রয়েছে রপ্তানিতে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখা এই খাতেও।
বিজিএমইএ সভাপতি সার্বিক রপ্তানি বিশ্লেষণ করতে গিয়ে বলেন, “আমাদের ২০১৮-১৯ অর্থবছরে মোট রপ্তানির ৮৪ দশমিক ২ শতাংশ গার্মেন্ট ছিল। এই বছর সেটা ৮১ দশমিক ১৬ শতাংশে নেমেছে। এটিও সামগ্রিক রপ্তানির জন্য একটি ভালো দিক।
“আমরা যে রপ্তানি পণ্যের বৈচিত্র্যের কথা বলে থাকি, এখানে এবছর সেই লক্ষ্য কিছুটা হলেও অর্জিত হচ্ছে। লেদার আগের চেয়ে ভালো করেছে। পাট, কৃষিপণ্য এবং হোম টেক্সটাইল এক বিলিয়ন ডলারের মাইলফলক ক্রস করেছে। ভবিষ্যতে ফার্মাসিউটিক্যালটাও আরও ভালো করবে।“