নিউজ ডেস্ক:
ভোলার মনপুরা উপজেলায় নির্মাণ করা হচ্ছে দেশের বৃহত্তম ‘অফগ্রিড’ সৌর বিদ্যুৎকেন্দ্র। মূল ভূখণ্ড থেকে ‘বিচ্ছিন্ন’ এই দ্বীপ উপজেলাকে ভৌগোলিক কারণে জাতীয় গ্রিডের সঙ্গে সম্পৃক্ত করা যায়নি। মূলত এ কারণে সেখানকার প্রায় এক লাখ বাসিন্দার জন্য নির্মাণ করা হচ্ছে এ বিদ্যুৎকেন্দ্র। চলতি বছরেই এ কেন্দ্র থেকে বিদ্যুৎ সরবরাহ শুরু হবে। এতে শিক্ষা, চিকিৎসা ও ব্যবসা-বাণিজ্যের পাশাপাশি সেখানকার পর্যটনশিল্পেরও বিকাশ ঘটবে বলে মনে করছেন স্থানীয়রা।
বেসরকারি প্রতিষ্ঠান- ‘ওয়েস্টার্ন মনপুরা সোলার পাওয়ার লিমিটেড’ এটি নির্মাণ করছে। ১০ মেগাওয়াট ক্ষমতার অফগ্রিড সৌরবিদ্যুৎ সিস্টেম থেকে দিনের বেলা ৩ মেগাওয়াট এসি বিদ্যুৎ উৎপাদন ও সরবরাহ করা হবে। এ ছাড়া সূর্যের আলো থেকে সৌর প্যানেলের মাধ্যমে উৎপাদিত বিদ্যুৎ ব্যাটারিতে সঞ্চিত করে রাতে সরবরাহ করা হবে। রাতে কিংবা কুয়াশায় সূর্যের আলো না থাকলেও ২৪ ঘণ্টা পর্যন্ত সঞ্চিত বিদ্যুৎ ব্যবহার করা যাবে। দুর্যোগপূর্ণ আবহাওয়ায় টানা কয়েক দিন বৃষ্টি অথবা কুয়াশার কারণে সৌরবিদ্যুতের উৎপাদন ব্যাহত হতে পারে। এ ধারণা থেকে বিকল্প হিসেবে ডিজেল জেনারেটরও রাখা হবে, যাতে বিদ্যুৎ উৎপাদন করে তা সরবরাহ করা যায়।
কেন্দ্রটি থেকে ২০ বছর ধরে নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ কিনতে চুক্তি করেছে রাষ্ট্রায়ত্ত বিদ্যুৎ বিতরণ প্রতিষ্ঠান ওয়েস্ট জোন পাওয়ার ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানি লিমিটেড (ওজোপাডিকো)। ওজোপাডিকো খুলনা-বরিশাল অঞ্চলে বিদ্যুৎ সরবরাহ করে থাকে। ওজোপাডিকো সূত্রে জানা যায়, প্রতিষ্ঠানটি ওয়েস্টার্ন মনপুরা সোলার পাওয়ার থেকে ২১ টাকা ৫০ পয়সা দামে বিদ্যুৎ কিনবে। তবে ভর্তুকি দিয়ে কম দামে সরকার নির্ধারিত মূল্যে সাধারণ মানুষের কাছে বিদ্যুৎ বিক্রি করবে।
ওজোপাডিকোর কর্মকর্তা প্রকল্প পরিচালক প্রকৌশলী মতিউর রহমান বলেন, এই কেন্দ্রে কোনো ক্যাপাসিটি চার্জ দিতে হবে না। চুক্তির শর্ত অনুযায়ী বিদ্যুৎ উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠানকে প্রতিদিন অন্তত ৩০ হাজার ইউনিট বিদ্যুৎ সরবরাহ করতে হবে। করতে না পারলে নির্দিষ্ট হারে জরিমানা গুনতে হবে। এ ছাড়া বিশেষ প্রয়োজনে ডিজেল থেকে বিদ্যুৎ উৎপাদনের সুযোগ রাখা হলেও তা ১০ শতাংশের বেশি করা যাবে না।
‘অফগ্রিড’ সৌর বিদ্যুৎকেন্দ্র জাতীয় গ্রিডে যুক্ত করা যায় না। এটি ব্যাটারিতে সংরক্ষণ করা যায়। অন্যদিকে অনগ্রিড সৌরবিদ্যুৎ গ্রিডে যুক্ত করা যায়।
প্রকৌশলী মতিউর বলেন, মনপুরা থেকে বিদ্যুতের জাতীয় গ্রিডের দূরত্ব প্রায় ৯৬ কিলোমিটার। ফলে সরাসরি গ্রিডলাইন নির্মাণের সুযোগ নেই। তবে নদী কিংবা সাগরের তলদেশ দিয়ে সাবমেরিন ক্যাবল স্থাপন করে বিদ্যুৎ সরবরাহ করা যাবে। এতে সরকারের প্রায় ৩০০ কোটি টাকা ব্যয় হবে। তবে ভবিষ্যতে চরফ্যাশনে গ্রিড সাবস্টেশন নির্মাণ হলে সেখান থেকে গ্রিডলাইনের মাধ্যমে বিদ্যুৎ নেওয়ার সুযোগ রাখা হয়েছে এই প্রকল্পে।
সর্বশেষ তথ্য অনুযায়ী, মনপুরায় বর্তমানে জেনারেটরের মাধ্যমে সীমিত বিদ্যুৎ সরবরাহ করছে ওজোপাডিকো। শুরুতে ৪টি জেনারেটর থাকলেও এখন দুটি জেনারেটরের মাধ্যমে সন্ধ্যা থেকে মাত্র ৬ ঘণ্টা সেখানকার ৮৫৩ জন গ্রাহককে বিদ্যুৎ সরবরাহ করা হয়। দুই হাজার ৩০৩ জন গ্রাহক বেসরকারি খাতের সোলার মিনিগ্রিডের সাহায্যে বিদ্যুৎ সুবিধা পান। এ জন্য প্রতি ইউনিট বিদ্যুতের জন্য গ্রাহককে ৩০ থেকে ৩৫ টাকা ব্যয় করতে হয়। এ ছাড়া কিছু মানুষ নিজস্ব উদ্যোগে ছোট ছোট সৌরবিদ্যুৎ সিস্টেমের মাধ্যমে বিদ্যুৎ ব্যবহার করছে।
প্রকল্প সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা বলছেন, বর্তমানে তিনটি সোলার মিনিগ্রিড থেকে প্রায় ৭শ কিলোওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন করে তা সরবরাহ করা হচ্ছে। কেন্দ্রটি চালু হলে এই বিদ্যুৎ সরাসরি ওই কেন্দ্রের উৎপাদিত বিদ্যুতের সাথে যোগ হয়ে গ্রাহককে সরবরাহ করা হবে। বিদ্যুৎ সরবরাহের জন্য ওজোপাডিকো প্রায় ১৩০ কোটি টাকা ব্যয়ে বিতরণ লাইন নির্মাণ করছে। লিথিয়াম আয়ন ব্যাটারি ব্যবহারের কারণে ব্যয় কিছুটা বাড়লেও পরিবেশ ও সামগ্রিক বিবেচনায় এটি লাভজনক। মনপুরার পাশাপাশি ঢালচর, কলাতলা ও কাজিরচরে এই বিদ্যুৎ সরবরাহ করা হবে।
মনোরম প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের জন্য ভ্রমণকারীদের মধ্যে ব্যাপক জনপ্রিয় মনপুরা দ্বীপ। তবে এলাকার অর্থনৈতিক সমৃদ্ধির ক্ষেত্রে বিদ্যুৎ এখনো প্রধান বাধা হয়ে রয়েছে।