নিউজ ডেস্ক:
দেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের ১০ জেলার সাথে সড়ক পথে ঢাকার যোগাযোগের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ মধুমতি নদীর ওপর নির্মাণাধীন কালনা সেতুর কাজ দ্রুত গতিতে এগিয়ে চলছে। বাস্তবায়ন হতে চলেছে নড়াইল, গোপালগঞ্জ, ফরিদপুর, যশোরসহ দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের ১০টি জেলার মানুষের স্বপ্ন। প্রায় হাজার কোটি টাকা ব্যয়ে দেশের প্রথম ছয় লেন বিশিষ্ট সেতু নির্মাণ হচ্ছে গোপালগঞ্জের কাশিয়ানীর কালনা ফেরিঘাটে। ছয় লেনের এই সেতু যুক্ত হবে এশিয়ান হাইওয়ের সাথে।
চলতি বছরের সেপ্টেম্বরে সেতুটির নির্মাণ কাজ শেষ হওয়ার কথা রয়েছে। সেতুটি চালু হলে দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের মানুষের যাতায়াত সহজ হবে। ৬৯০ মিটার দীর্ঘ এই সেতুটির ধাতব অবকাঠামো নির্মাণ করা হচ্ছে ভিয়েতনামে। সেতুটি চালু হলে গোপালগঞ্জ, নড়াইল, খুলনা ও যশোরসহ দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের মানুষের জীবনমান বদলে যাবে। এমনকি ঢাকা-বেনাপোল পথে পণ্য পরিবহনে জটিলতাও অনেক কমে আসবে।
প্রকল্প সংশ্লিষ্টরা জানান, এরই মধ্যে প্রকল্পের ৪৫ শতাংশ কাজ শেষ করেছে নির্মাতা প্রতিষ্ঠান। এই সেতুর চারটি মূল লেনে দ্রুত গতির ও বাকি দুই লেনে চলবে কম গতির যানবাহন। নির্মাণাধীন সেতুটির ব্যয় ধরা হয়েছে প্রায় ৯৬০ কোটি টাকা। জাইকার সহযোগিতায় ও দেশীয় অর্থে তিনটি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান যৌথভাবে এ সেতু নির্মাণের কাজ করছে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ২০১৫ সালের ২৪ জানুয়ারি সেতুটির ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন আর ২০১৮ সালের ৩০ অক্টোবর নির্মাণ কাজের উদ্বোধন করেন। নির্দিষ্ট সময়ে সেতুর কাজ শেষ করতে প্রতিদিন তিন শতাধিক শ্রমিকসহ অসংখ্য প্রকৌশলী কাজ চালিয়ে যাচ্ছেন। এটি নির্মাণের ফলে দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের মানুষের প্রাণের স্পন্দন হয়ে উঠবে এই কালনা সেতু।
গোপালগঞ্জ সড়ক ও জনপথ সূত্রে জানা গেছে, এ সেতুটি এশিয়ান হাইওয়ের অংশ। কালনা সেতু নির্মিত হলে ঢাকার সাথে গোপালগঞ্জ-যশোর অঞ্চলের দূরত্ব কমবে প্রায় ২শ’ কিলোমিটার। একইভাবে ঢাকার সঙ্গে শিল্প ও বাণিজ্যিক শহর নওয়াপাড়া, খুলনা ও মংলা বন্দর এবং সাতক্ষীরা ও মাগুরাসহ দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের ১০টি জেলার দূরত্ব কমবে।
কালনা ফেরি পার হওয়া ট্রাকচালক তোফায়েল ও মমতাজ উদ্দিন দারুণ খুশি সেতু নির্মিত হচ্ছে বলে। তারা বলেন, কালনা ফেরি ঘাট এই এলাকার একটা গুরুত্বপূর্ণ ঘাট। এই ঘাট দিয়ে বেনাপোল যশোরসহ দক্ষিণ পশ্চিমাঞ্চলের যাতায়াতের শর্টকাট রাস্তা। এই পথ দিয়ে প্রায়ই আমাদের যাতায়াত করতে হয়। এই ঘাটে ফেরির অবস্থা তেমন একটা ভালো নয়। পারাপারের সময় ভীড় লেগেই থাকে। প্রায়ই ঘাটে এসে বসে থাকতে হয়। এখানে এমন একটা সেতু নির্মিত হচ্ছে, তাই আমরা আনন্দিত। ব্রিজ তৈরির জন্য প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে ধন্যবাদ জানাই ও ব্রিজের কাজটি যেন সময় মতো শেষ হয় সে জন্য সরকারের সুদৃষ্টি কামনা করছি।
কালনা ঘাট দিয়ে যাতায়াত করা শংকরপাশা গ্রামের ব্যবসায়ী ফটিক অধিকারী, মুকসুদপুরের উপজেলার লক্ষীপাশা গ্রামের মোজ্জামেল হোসেন দৈনিক ইনকিলাবকে বলেন, কালনাঘাটে এসে কখনো নৌকা আবার কখনো ফেরিতে পারাপার হতে হয়। তাতে অনেক সময় লাগতো। ব্রিজ হলে আমাদের ঘাটে এসে আর বসে থাকতে হবে না। আমরা চাই শিগগিরই ব্রিজটি তৈরি হোক।
কাশিয়ানী ইউনিয়নের চেয়ারম্যান মশিউর রহমান বলেন, সেতুটি নির্মিত হলে গোপালগঞ্জ, নড়াইল, খুলনা ও যশোর অঞ্চলের মানুষের দীর্ঘ বছরের স্বপ্ন পূরণ হবে। এই রাস্তায় চলাচলকারী লাখ লাখ যাত্রী সাধারণের ঢাকার সাথে যোগাযোগ সহজ হবে। সেই সাথে দীর্ঘ বছরের অসহনীয় দুঃখ-দুর্দশা থেকে রেহাই পাবে এই ঘাট দিয়ে চলাচলকারিরা। তাদের আর ঘণ্টার পর ঘণ্টা ফেরি ঘাটে বসে থাকতে হবে না। শুধু তাই নয়, কালনা সেতু নির্মাণ হলে বেনাপোল স্থলবন্দরের সাথে ঢাকার দূরত্ব কমে আসবে। বেনাপোল স্থলবন্দর থেকে আমদানি-রফতানি পণ্য সরাসরি পদ্মা সেতু হয়ে রাজধানী ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে পরিবহনে সুবিধা পাবে ব্যবসায়ীরা। যাত্রী সাধারণও কোন ভোগান্তি ছাড়া যাতায়াত করতে পারবেন।
কালনা ফেরি ঘাট ইজারাদার মঞ্জুর হাসান বলেন, আর বেশিদিন যাত্রীদেরকে ভোগান্তি পোহাতে হবে না। খুব তাড়াতাড়ি তারা এই সেতু পার হয়ে এবং পদ্মা সেতু দিয়ে রাজধানীতে স্বল্প সময়ের মধ্যে যাতায়াত করতে পারবেন। কালনা সেতু নির্মাণকারী প্রতিষ্ঠান আব্দুল মোমেন কনস্ট্রাকশনের হাইওয়ে প্রকৌশলী মোহাম্মদ জোনায়েদ রাহবার বলেন, আশা করা হচ্ছে নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে কাজ সমাপ্ত হবে।
কালনা সেতুর সহকারী প্রকল্প পরিচালক ও সড়ক ও জনপথ বিভাগের উপ-বিভাগীয় প্রকৌশলী সৈয়দ গিয়াস উদ্দিন জানান, ছয় লেনের এ সেতু হবে এশিয়ান হাইওয়ের অংশ। চারটি মূল লেনে দ্রæতগতির এবং দুটি লেনে কম গতির যানবাহন চলাচল করবে। সেতুর দৈর্ঘ্য হবে ৬৯০ মিটার ও প্রস্থ ২৭ দশমিক ১ মিটার। উভয় পাশের সংযোগ সড়ক হবে ৪ দশমিক ৩০ কিলোমিটার।
তিনি আরো জানান, জাপান ইন্টারন্যাশনাল কর্পোরেশন এজেন্সির (জাইকা) অর্থায়নে এ সেতু নির্মিত হচ্ছে। জাপানের টেককেন কর্পোরেশন, ওয়াইবিসি ও বাংলাদেশের আব্দুল মোনেম লিমিটেড যৌথভাবে এ সেতুর নির্মাণ কাজ করছে। কালনা সেতুটির নির্মাণ কাজ শেষ হলে পাল্টে যাবে এ অঞ্চলের মানুষের জীবনমান আর সেই সাথে বেনাপোল-ঢাকা পথে অল্প খরচে পণ্য পরিবহনে সুযোগ পাবে আমদানি-রফতানিকারকরা।