শুক্রবার , নভেম্বর ১৫ ২০২৪
নীড় পাতা / জাতীয় / ভোলার গ্যাস যাবে সারাদেশে

ভোলার গ্যাস যাবে সারাদেশে

নিউজ ডেস্ক:
কদিকে সংকট, অন্যদিকে চাহিদা দিন দিন বৃদ্ধি পাওয়ায় ভোলায় আবিষ্কৃত গ্যাস কাজে লাগাতে তৎপর হয়ে উঠেছে বিদ্যুৎ জ্বলানি ও খনিজ সম্পদ মন্ত্রণালয়। তারই অংশ হিসেবে ভোলায় পাওয়া প্রাকৃতিক গ্যাস এলএনজিতে (লিকুইড ন্যাচারাল গ্যাস) রূপান্তরিত করে জাতীয় গ্রিডে যুক্ত করার প্রাথমিক সিদ্ধান্ত নিয়েছে জ্বালানি বিভাগ। ভোলার গ্যাস কীভাবে জাতীয় গ্রিডে সরবরাহ করা যায়, সে বিষয়ে পরীক্ষা-নিরীক্ষা করতে জ্বালানি বিভাগ থেকে ইতোমধ্যে চিঠি দেওয়া হয়েছে বাংলাদেশ তেল গ্যাস খনিজ সম্পদ করপোরেশনকে (পেট্রোবাংলা)।

এ বিষয়ে জ্বালানি বিভাগের যুগ্ম সচিব (উন্নয়ন) ড. মো. রফিকুল ইসলাম বলেন, বিষয়টি নিয়ে চিন্তাভাবনা করে কাজ করতে জ্বালানি বিভাগ থেকে পেট্রোবাংলাকে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। পেট্রোবাংলা প্রতিবেদন তৈরি করে জ্বালানি বিভাগে দিলে মন্ত্রণালয় পরবর্তী সিদ্ধান্ত গ্রহণ করবে।

জ্বালানি বিভাগের অন্য এক জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তা আমাদের সময়কে বলেন, পাইপলাইন অথবা এলএনজিতে রূপান্তর করে কী প্রক্রিয়ায় ভোলার গ্যাস জাতীয় গ্রিডে যুক্ত করা যায়, সে বিষয়ে কাজ করতে পেট্রোবাংলাকে বলা হয়েছে। বিষয়টি প্রাথমিক পর্যায়ে থাকলেও বলা হয়েছে গুরুত্ব দিয়ে কাজ করতে। কারণ বিশ^বাজারে দাম অব্যাহত বৃদ্ধির কারণে এলএনজি আমদানি নিয়ে হিমশিম খেতে হচ্ছে সরকারকে। ফলে দেশে আবিষ্কৃত গ্যাস অব্যবহৃত হয়ে পড়ে থাকুক, সেটা আমরা চাই না।

জানা গেছে, মূল ভূখণ্ড থেকে বিচ্ছিন্ন দ্বীপজেলা ভোলায় আবিষ্কৃত গ্যাস মূলত ছোট একটি বিদ্যুৎকেন্দ্রে সরবরাহ ছাড়া তেমন কাজে লাগছে না। অথচ বিদেশ থেকে ব্যায়বহুল এলএনজি আমদানি করে জাতীয় গ্রিডে সরবরাহ করতে হচ্ছে। দুই ঘণ্টা যদি জাহাজ থেকে জাতীয় গ্রিডে এলএনজি সরবরাহ করা বন্ধ থাকে, তা হলেই দেশে গ্যাসে সংকট দেখা দেয়। শিল্পকারখানা গ্যাসের চাপ কম অনুভব করে। এ ছাড়া এলএনজি আমদানির চাপ সামলাতেও জ্বালানি বিভাগ মরিয়া। ফলে ভোলার আবিষ্কৃত গ্যাস জাতীয় গ্রিডে ব্যবহার নিয়ে চিন্তা করছেন নীতিনির্ধারকরা।

জ্বালানি বিভাগ সূত্রে জানা যায়, বিশাল নদী পেরিয়ে পাইপলাইন স্থাপনের মাধ্যমে ভোলার গ্যাস জাতীয় গ্রিডে যুক্ত করা কঠিন ও ব্যয়বহুল হলেও তার উপায় খুঁজছে কর্তৃপক্ষ। পেট্রোবাংলার তথ্যানুযায়ী, ভোলায় প্রায় দুই ট্রিলিয়ন ঘনফুট বা টিসিএফ গ্যাস আছে। এ ছাড়া বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম এক্সপ্লোরেশন অ্যান্ড প্রডাকশন কোম্পানি (বাপেক্স) ধারণা করছে ভোলায় আরও গ্যাস পাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। বাপেক্স কর্মকর্তাদের মতে, দ্বীপজেলা ভোলা গ্যাসের ওপর ভাসছে। এখানে ইতিপূর্বে প্রায় দুই ট্রিলিয়ন গ্যাস আবিষ্কৃত হয়েছে। আরও অন্তত দুই ট্রিলিয়ন গ্যাস আবিষ্কারের সম্ভাবনা রয়েছে। ভোলায় বর্তমানে তিনটি গ্যাসক্ষেত্রে ছয়টি কূপ খনন করা হয়েছে। তাতে গ্যাসের মজুদ রয়েছে প্রায় দুই ট্রিলিয়ন ঘনফুট। আবিষ্কার হওয়া গ্যাসক্ষেত্রগুলো হলো শাহবাজপুর ইস্ট-১ ও ভোলা নর্থ-১ ।

পেট্রোবাংলার একজন জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তা আমাদের সময়কে বলেন, ভোলায় আবিষ্কৃত গ্যাস এলএনজিতে রূপান্তর করে জাতীয় গ্রিডে সরবরাহের আগে সেখানে কত গ্যাস মজুদ আছে, সেটা পরিষ্কার হওয়া দরকার। মজুদ গ্যাসের মূল্য নির্ধারণের বিষয়টিও ভাবনায় রাখা দরকার। একটি এলএনজি প্রসেসিং প্ল্যান্ট স্থাপনে কত খরচ পড়বে, যে পরিমাণ গ্যাস আছে তা উত্তোলন করে এলএনজি প্রসেসিং করে আবার সেটা জাতীয় গ্রিডে যুক্ত করা বাণিজ্যিকভাবে কতটা সফল হবে বিবেচনায় রাখা দরকার সেগুলোও।

বিভিন্ন সূত্রে জানা যায়, ভোলায় গ্যাস আছে এমন প্রতিবেদন প্রথম প্রকাশ পায় ১৯৫২ সালে। এর পর থেকে ১৯৫৯ সাল পর্যন্ত জরিপ করে গ্যাসক্ষেত্র হিসেবে শাহবাজপুরকে চিহ্নিত করা হয়। পাকিস্তান সেল অয়েল কোম্পানি সিঙ্গেল কনডাক্টেড ২ডি সিসমিক জরিপ করে। দেশ স্বাধীন হওয়ার পর ১৯৭৪-৭৫ সালে ফেস-২ প্রকৃত সিসমিক জরিপ করা হয়। ফেস ৩-এ ১৯৮৭ সালে ফের সিসমিক জরিপ হয়। ওই জরিপ প্রতিবেদনের ভিত্তিতে ১৯৯৪ সালে শাহবাজপুর-১ গ্যাসক্ষেত্রে শুরু হয় খনন। ১৯৯৫ সালে উত্তোলন করা গ্যাসে আগুন প্রজ্বালন করা হয়। পরে ২৭ বছর পর বর্তমান সরকারের আমলে উদ্যোগ নেওয়া হয় ফেস-৪ হিসেবে নতুন গ্যাসক্ষেত্র খুঁজে বের করার। ২০১৪-১৫ সালে বাপেক্সের তত্ত্বাবধানে ৬০০ বর্গকিলোমিটার এলাকায় থ্রিডি সিসমিক জরিপ করে দুটি আলাদা গ্যাসক্ষেত্র চিহ্নিত করা হয়। এ দুটিই হচ্ছে ইস্ট-১ ও নর্থ-১। একই জরিপ অব্যাহত থাকলে আরও গ্যাসক্ষেত্র পাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে বলে জানান বিশেষজ্ঞরা।

সর্বশেষ বাপেক্স সিলেটের জকিগঞ্জে আরও একটি গ্যাসক্ষেত্র আবিষ্কার করে, যা দেশের ২৮তম গ্যাসক্ষেত্র। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, জকিগঞ্জ গ্যাসক্ষেত্র থেকে ৪৮বিসিএফ গ্যাস উত্তোলন করা যাবে, টাকায় যার মূল্য প্রায় ১ হাজার ২৭৬ কোটি টাকা। দেশে বর্তমানে মোট ২৮টি গ্যাসক্ষেত্র রয়েছে। যার মধ্যে ২০টি ক্ষেত্র থেকে গ্যাস উত্তোলন করা হয়। ২০টি ক্ষেত্রের উত্তোলিত গ্যাস কূপের সংখ্যা ১০৪টি। এসব ক্ষেত্র থেকে দৈনিক ২ হাজার ৭৫০ মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাস উৎপাদন সক্ষমতার বিপরীতে দৈনিক ২ হাজার ৩৮৪ মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাসের সরবরাহ করা হয়। এই অবস্থায় ভোলার গ্যাস জাতীয় গ্রিডে যুক্ত করা দেশের অর্থনীতির অগ্রগতির জন্য জরুরি বলে মনে করছে জ্বালানি বিভাগ।

আরও দেখুন

রাণীনগরে স্বর্ণ ব্যবসায়ীকে মারপিট করে  ১৫ভরি স্বর্ণের ও 

১০০ভরি চান্দির গহনা ছিনতাই নিজস্ব প্রতিবেদক রাণীনগর,,,,,,,,,,  নওগাঁর রাণীনগরে দোকান থেকে বাড়ী ফেরার  পথে পথ …