নিউজ ডেস্ক:
চলমান জ্বালানি সংকট ও ক্রমাগত বেড়ে চলা বিদু্যৎ ঘাটতি মেটাতে ভোলা ক্ষেত্র থেকে জাতীয় গ্রিডে গ্যাস আনার পরিকল্পনা করেছে পেট্রোবংলা। কোনো পাইপলাইন না, সিএনজি আকারে জাহাজে করে এ গ্যাস আনা হবে। এ লক্ষ্যে একটি কমিটিও গঠন করা হয়েছে। তবে এই গ্যাস আনতে আরও ২-৩ মাস সময় লাগবে।
সবকিছু ঠিক থাকলে ডিসেম্বরের শেষদিকে দৈনিক ৮০ মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাস যোগ হতে পারে জাতীয় গ্রিডে। কিন্তু বর্তমানে ভোলার শাহবাজপুরের ৫টি কূপের উৎপাদন করা হচ্ছে ৬৫ মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাস। এই গ্যাসের বড় একটি অংশ বিতরণ করা হচ্ছে স্থানীয় বিদু্যৎ কেন্দ্রের বিদু্যৎ উৎপাদন ও আবাসিক পর্যায়ে।
বাপেক্সের অধীন ভোলা গ্যাস ক্ষেত্রের মহাব্যবস্থাপক (উৎপাদন বিভাগ) প্রকৌশলী মো. ফজলুল হক যায়যায়দিনকে জানান, ভোলা থেকে পেট্রোবাংলা দিনে ৮০ মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাস নেওয়ার পরিকল্পনা করেছে। কিন্তু বর্তমান উৎপাদন দিনে ৬৫ মিলিয়ন ফুট। তবে চাহিদা বাড়লে আরও গ্যাস উত্তোলনের সক্ষমতা তাদের রয়েছে বলে জানান তিনি।
তিনি বলেন, ‘শাহবাজপুর গ্যাসক্ষেত্রে থেকে প্রতিদিন আরও ৬০ মিলিয়ন ঘনফুট অর্থাৎ মোট ১২০ মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাস উৎপাদন বাড়ানো সম্ভব, আর সে সক্ষমতা আমাদের রয়েছে। এ ছাড়া নতুন আরও ৩টি কূপের কাজ চলমান রয়েছে। এর মধ্যে টগবী-১ এর গ্যাস উত্তোলন পরীক্ষামূলক পর্যায়ে রয়েছে। আগামী সপ্তাহে পরীক্ষামূলকভাবে এই কূপের গ্যাস উত্তোলন হতে পারে। এ ছাড়া ইলিশা-১ ও ভোলা নর্থ-২ কূপের খননের কাজ চলমান রয়েছে।’
এদিকে ভোলা থেকে ক্যাসডেক পদ্ধতিতে গ্যাস পরিবহণে পরিকল্পনার কথা জানিয়েছে পেট্রোবাংলা সূত্র। ‘ক্যাসডেক’ হচ্ছে উচ্চ চাপে গ্যাস সিলিন্ডার স্টোরেজ সিস্টেম। যা কম্প্রেসারের মাধ্যমে ছোট আকারের সিলিন্ডারে রিফিল করে পরিবহণ করা হবে। তবে এই প্রসেসটি দেশের জন্য নতুন হওয়া গঠিত কমিটি বৈশ্বিক স্ট্যান্ডার্ড ও সম্ভাব্য ঝুঁকিসহ বিভিন্ন বিষয় পর্যালোচনা করছে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও চীনের পাশাপাশি ইরান ও নাইজেরিয়ার মতো দেশেও এই পদ্ধতিতে বড় পরিসরে সিএনজি আকারে গ্যাস পরিবহণ করা হয়।
জ্বালানি বিশ্লেষকরা বলছেন, সংকট দূর করতে হলে দেশের এই খনিজসম্পদের সঠিক ব্যবহার প্রয়োজন।
ভোলার গ্যাস ক্ষেত্রের দায়িত্বে থাকা রাষ্ট্রায়ত্ত প্রতিষ্ঠান বাপেক্সের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মোহাম্মাদ আলী বলেন, ‘যদিও এখন দিনে ৬৫ মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাস উৎপাদন করা হচ্ছে তবে আমাদের দিনে প্রায় ১২০ মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাস উৎপাদনের সক্ষমতা রয়েছে। তাই পেট্রোবাংলাকে ৮০ মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাস দিতে আমরা প্রস্তুত’।
অন্যদিকে ১৯৯৫ সালে ভোলায় গ্যাস ক্ষেত্র আবিষ্কার করা হলেও এই প্রথম সেখান থেকে গ্যাস উত্তোলনে বড় ধরনের কোনো উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। যদিও গত ৩ দশকে বিভিন্ন সময় এই গ্যাস উত্তোলন বৃদ্ধির পরিকল্পনা করা হয়েছিল। কিন্তু নানা জটিলতায় তা আর আলোর মুখ দেখেনি।
পেট্রোবাংলার তথ্যানুযায়ী ২০২২-২৩ অর্থবছরে ভোলার বিদ্যমান শাহবাজপুর গ্যাস ক্ষেত্রের উৎপাদন দৈনিক ৬০ মিলিয়ন ঘনফুট বাড়াতে ১টি গস্নাইকল ডিহাইড্রেশন টাইপ প্রসেসে পস্নান্ট স্থাপনসহ বাপেক্সের দুটি অনুসন্ধান কূপ টগবী-১ ও ইলিশা-১ এবং উন্নয়ন কূপ ভোলা নর্থ-২ কূপ খনন প্রকল্প চলমান রয়েছে। এই অর্থবছরের মধ্যেই এই খনন প্রকল্পে ভূমি অধিগ্রহণ, উন্নয়ন, পূর্তকাজ, টার্ন-কী ভিত্তিতে বৈদেশিক মালামাল ক্রয়, কূপ খনন ও পরীক্ষণ কাজ সম্পূর্ণ হওয়ার কথা।
এদিকে প্রধানমন্ত্রীর বিদু্যৎ, জ্বালানি ও খনিজসম্পদ বিষয়ক উপদেষ্টা তৌফিক-ই-এলাহী চৌধুরী বলেছেন, এই মুহূর্তে স্পট মার্কেট থেকে জ্বালানি কেনার অবস্থা রিজার্ভে নেই। কারণ ২০০ এমএমসিএফ গ্যাস আমদানি করা হলে তাতে দীর্ঘমেয়াদি এলএনজির চেয়ে অতিরিক্ত খরচ হবে প্রায় ১.২ বিলিয়ন মার্কিন ডলার। তাই ভোলা থেকে গ্যাস আনার পরিকল্পনা করা হয়েছে। তবে আগামী ডিসেম্বরের মধ্যে কয়লাভিত্তিক কিছু বিদু্যৎকেন্দ্র চালু হলে বিদু্যতের গ্যাস সরবরাহ কমিয়ে কিছু গ্যাস শিল্পে দেওয়া হবে।