নিজস্ব প্রতিবেদক:
ভূমি ব্যবস্থাপনা সেবা পেতে নানা অনিয়ম ও দুর্নীতি নিয়ে ভুক্তভোগীদের অসন্তোষ দীর্ঘদিনের। এক জমি একাধিক ব্যক্তির নামে বিক্রি, রেজিস্ট্রেশন ও নামজারির ঘটনা ছিল নিত্যনৈমিত্তিক ব্যাপার। খাজনা পরিশোধ, দলিল উত্তোলনসহ ভ‚মি অফিসের যেকোনো কাজ ঘুষ ছাড়া হয় না। এমন পরিস্থিতিতে দেশের ভ‚মি ব্যবস্থাপনা প্রক্রিয়াকে পুরোপুরি ডিজিটালাইজড করার উদ্যোগ নেয় সরকার। এ প্রক্রিয়ার অংশ হিসেবে গত বছরের ১ জুলাই থেকে তিনটি পার্বত্য জেলা বাদে সারা দেশে একযোগে শতভাগ ই-নামজারি বাস্তবায়ন শুরু হয়। ফলে অনিয়ম কমার পাশাপাশি কমেছে দালালদের দৌরাত্ম্য। এ ছাড়া সম্প্রতি নেওয়া ভ‚মি ব্যবস্থাপনা অটোমেশন প্রকল্প গ্রাহকের ১৭ ধরনের সেবা নিশ্চিত করবে। এ লক্ষ্যে ১ হাজার ১৯৭ কোটি ৩ লাখ টাকা ব্যয়ে ভ‚মি ব্যবস্থাপনা অটোমেশন প্রকল্প এবং ১ হাজার ২১২ কোটি ৫৫ লাখ টাকা ব্যয়ে ডিজিটাল জরিপ পরিচালনার সক্ষমতা বৃদ্ধিকরণ প্রকল্প গ্রহণ করেছে সরকার।
ভ‚মি মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, প্রকল্প দুটি জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির (একনেক) সভায় অনুমোদন দেওয়ার পর বাস্তবায়ন কাজ শুরু করেছে ভ‚মি মন্ত্রণালয়। ২০২৫ সালের ৩০ জুনের মধ্যে প্রকল্পের কাজ শেষ হবে। ভ‚মি ব্যবস্থাপনা অটোমেশন প্রকল্পের মাধ্যমে গ্রাহকের ১৭ ধরনের সেবা পেতে অ্যাপ্লিকেশন সফটওয়্যার তৈরি করা হবে। সেবাগুলো হচ্ছেÑ ই-মিউটেশন, রিভিউ ও আপিল মামলা ব্যবস্থাপনা, অনলাইন ভ‚মি উন্নয়ন কর, রেন্ট সার্টিফিকেট মামলা ব্যবস্থাপনা, মিউটেটেড খতিয়ান, ডিজিটাল ল্যান্ড রেকর্ড, মৌজা ম্যাপ ডেলিভারি সিস্টেম, মিস মামলা ব্যবস্থাপনা, কৃষি ও অকৃষি খাসজমি ব্যবস্থাপনা, দেওয়ানি মামলা তথ্য ব্যবস্থাপনা, হাটবাজার ব্যবস্থাপনা, জলমহাল ব্যবস্থাপনা, বালুমহাল ব্যবস্থাপনা, চা বাগান ব্যবস্থাপনা, অর্পিত সম্পত্তি ব্যবস্থাপনা, ভ‚মি অধিগ্রহণ ব্যবস্থাপনা, অভ্যন্তরীণ বাজেট ব্যবস্থাপনা ইত্যাদি। ‘ল্যান্ড ইনফরমেশন সার্ভিস ফ্রেমওয়ার্ক’ সিস্টেম সফটওয়্যারের মাধ্যমে একই কাঠামোয় এরপর
নিয়ে এসে আন্তঃপরিচালনযোগ্য ডাটাবেজ তৈরি করে সরকারের অন্যান্য সব সেবার সঙ্গে সমন্বয় করা হবে।
এ ছাড়া ডিজিটাল পদ্ধতিতে ভ‚মি জরিপ করতে ভ‚মি রেকর্ড এবং জরিপ অধিদফতরের ডিজিটাল জরিপ পরিচালনার সক্ষমতা বৃদ্ধিকরণ প্রকল্পে স্যাটেলাইট ও ড্রোনের মাধ্যমে সর্বাধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহার করে অপেক্ষাকৃত স্বল্প সময়ে, নির্ভুলভাবে ডিজিটাল পদ্ধতিতে ভ‚মি জরিপ করতে তিনটি পার্বত্য জেলা ছাড়া সারা দেশের ৪৭০টি উপজেলার মৌজা পর্যায়ে জিওডেটিক সার্ভের মাধ্যমে ২ লাখ ৬০ হাজার ৩১০টি জিও-রেফারেন্সিং পয়েন্ট নির্ধারণ ও ১ লাখ ৩৩ হাজার ১৮৮টি মৌজা ম্যাপের ডাটাবেজ প্রস্তুত করা হবে। এ ছাড়া পটুয়াখালী ও বরগুনা জেলায় এসএ জরিপের পর আরএস জরিপ সম্পন্ন না হওয়ায় ওই দুটি জেলার ১৪টি উপজেলায় ডিজিটাল পদ্ধতিতে জরিপ সম্পন্ন করা হবে। এ প্রকল্পের আওতায় নির্ধারিত জিও-রেফারেন্স করা মৌজা ম্যাপ উপর্যুক্ত ‘ভ‚মি ব্যবস্থাপনা অটোমেশন’ প্রকল্পে সরবরাহ করা হবে। ভ‚মি মন্ত্রণালয়ের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা জানান, এ কাজ খুব সহজ নয়। ভারতসহ পাশর্^বর্তী দেশগুলোয় ভ‚মি ব্যবস্থাপনায় অনেক সময় লেগেছে। সেখানে বাংলাদেশে দুই থেকে চার বছরে এটি সম্ভব নয়। কর্মকর্তাদের মতে, ভ‚মি জরিপ কার্যক্রমটি সময়সাপেক্ষ ও ব্যয়বহুল বিষয়। পৃথিবীর বিভিন্ন দেশের ভ‚মি ব্যবস্থাপনায় আধুনিকীকরণ ও ডিজিটালাইজেশন করতে সময় লেগেছে ২০-২৫ বছর। ২০২১ সালের মধ্যে দেশে ভ‚মি রেকর্ড ও জরিপ অধিদফতরের ডিজিটালাইজেশন প্রক্রিয়া সম্পন্ন করা সম্ভব। তবে ভ‚মি তথ্য ব্যবস্থাপনায় ডিজিটালাইজেশন এ সময়ে সম্পন্ন করা কঠিন। কারণ ভ‚মি তথ্য ব্যবস্থাপনা ডিজিটালাইজেশনের চ‚ড়ান্ত ও পূর্ণাঙ্গ রূপ দেওয়ার বিষয়টি একাধিক মন্ত্রণালয় ও বিভাগের সঙ্গে সম্পৃক্ত।
কর্মকর্তারা জানান, এই প্রকল্প ভ‚মি মন্ত্রণালয়ের আওতাধীন ভ‚মি রেকর্ড ও জরিপ অধিদফতর বাস্তবায়ন করবে। এ দুটি প্রকল্প বাস্তবায়িত হলে প্রত্যাশিত সেবাগ্রহীতা সংশ্লিষ্ট ভ‚মি অফিসে না গিয়ে ঘরে বসে মোবাইল বা ইন্টারনেটের মাধ্যমে সেবা পাবেন। প্রকল্পের আওতায় সফটওয়্যার ব্যবহার করে দেশের ভ‚মি সংক্রান্ত ৫ হাজার ২৪৭টি অফিসের একসঙ্গে অনলাইন ও ইলেকট্রনিক ভ‚মিসেবা চালু করা সম্ভব হবে। হাতের মুঠোয় ভ‚মিসেবা প্রদানই প্রকল্প দুটির মূল লক্ষ্য বলে জানিয়েছেন ভ‚মিমন্ত্রী সাইফুজ্জামান চৌধুরী। তিনি বলেন, ভ‚মি ব্যবস্থাপনা ডিজিটাল করার বিষয়টি বর্তমান সরকারের পুরনো অঙ্গীকার। এ অঙ্গীকার বাস্তবায়নে সরকার অত্যন্ত আন্তরিক। এজন্য নেওয়া হয়েছে একাধিক প্রকল্প। কাজটি যতই চ্যালেঞ্জিং হোক, সরকার এ উদ্যোগ বাস্তবায়ন করবেই।
ভ‚মি মন্ত্রণালয় সূত্র জানায়, গত বছরের ১ জুলাই থেকে দেশের তিনটি পার্বত্য জেলা খাগড়াছড়ি, রাঙামাটি ও বান্দরবান বাদে বাকি ৬১ জেলায় ই-নামজারি বাস্তবায়ন কার্যক্রম শুরু হয়। বর্তমানে ৪৮৫টি উপজেলা ভ‚মি অফিস, সার্কেল অফিস এবং ৩ হাজার ৬১৭টি ইউনিয়ন ভ‚মি অফিসে ই-নামজারির কার্যক্রম চলছে। এরই মধ্যে সারা দেশে প্রায় দেড় কোটি সুবিধাভোগী ই-নামজারির কার্যক্রম থেকে সুবিধা পেয়েছে। এ সংক্রান্ত সাড়ে ৬ লাখেরও বেশি মামলা অনলাইনে নিষ্পত্তি হয়েছে। ই-নামজারি প্রক্রিয়া চালু হওয়ার পর থেকে সামাজিক দ্ব›দ্ব-সংঘাত, ফৌজদারি মামলা, ভোগান্তি ও মধ্যস্বত্বভোগীর দৌরাত্ম্য কমছে। ফলে নথি হারিয়ে গেলে বা নষ্ট হলেও সমস্যা হবে না। এতে নাগরিকের সময় ও খরচ কমেছে। ই-নামজারির ফলে এক জমি একাধিকবার একাধিক ব্যক্তির কাছে বিক্রি, নামজারি ও রেজিস্ট্রেশন বন্ধ হয়েছে। সরকার এরই মধ্যে ডিজিটাল রেকর্ডরুম চালু করেছে। এ-টু-আইয়ের সহযোগিতায় ভ‚মি মন্ত্রণালয় দেশের সব ভ‚মি রেকর্ডকে (খতিয়ান) ডিজিটাল করার উদ্দেশ্যে ডিজিটাল ল্যান্ড রেকর্ডরুম সার্ভিস (ডিএলআরএস) নামে একটি পৃথক প্রকল্প হাতে নিয়েছে। এর মাধ্যমে জেলা রেকর্ডরুমে সিএস, এসএসহ অন্যান্য খতিয়ান ডিজিটালাইজড করা হচ্ছে বলে জানিয়েছেন ভ‚মিমন্ত্রী সাইফুজ্জামান চৌধুরী। তিনি বলেন, ভ‚মি অফিসে ই-নামজারি চালু হওয়ায় দালালদের দৌরাত্ম্য ও মাঠ পর্যায়ে দুর্নীতির সুযোগ কমেছে। সে সঙ্গে সেবা পেতে নাগরিকদের সময় ও খরচ কম হচ্ছে।
আরও দেখুন
বিএনপির সাবেক এমপি আমিনুল ইসলামের বিরুদ্ধে হামলা-দখলের অভিযোগ
নিজস্ব প্রতিবেদক চাঁপাইনবাবগঞ্জ,,,,,,,,,,চাঁপাইনবাবগঞ্জের নাচোলে বিএনপির জাতীয় নির্বাহী কমিটির শিল্প ও বানিজ্য বিষয়ক সহ-সম্পাদক ও সাবেক …