নিজস্ব প্রতিবেদক:
ভূতুড়ে বিদ্যুৎ বিলের ‘ভূত’-এর খোঁজ পেয়েছে বিদ্যুৎ বিভাগ। যথাযথ কর্তৃপক্ষের সঙ্গে আলোচনা ছাড়াই নিজ সিদ্ধান্তে মনগড়া বিদ্যুৎ বিল প্রস্তুতের নির্দেশ দিয়েছিলেন ঢাকা পাওয়ার ডিস্ট্রিবিউশন কম্পানির (ডিপিডিসি) একজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা। বিদ্যুৎ বিভাগের গঠিত তিন সদস্যের তদন্ত কমিটির দেওয়া প্রতিবেদন অনুযায়ী, নির্দেশদাতা এই কর্তাব্যক্তি ডিপিডিসির আইসিটি বিভাগের জেনারেল ম্যানেজার রবিউল হাসান।
তদন্তসংশ্লিষ্ট একজন কর্মকর্তা গতকাল মঙ্গলবার রসিকতার সুরে কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘ভূতুড়ে বিদ্যুৎ বিলের ভূত খুঁজে পেয়েছি। আশা করি, ভবিষ্যতে এ ধরনের ঘটনা ঘটবে না। দায়ীদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়ার সিদ্ধান্ত আসছে।’
বিল নিয়ে গণমাধ্যম ও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে তোলপাড়ের ঘটনায় সবারই নজর ছিল কে বা কাদের নির্দেশে হাজার হাজার গ্রাহককে বাড়তি বিল গুনতে হয়েছে?
বিদ্যুৎ বিভাগ সংবাদ সম্মেলনে জানিয়েছিল, তারা ৬২ হাজার ৯৬টি বিলে অসংগতি পেয়েছে। এর মধ্যে ডিপিডিসির ১৫ হাজার ২৬৫টি। গত জুন ও জুলাই মাসে এসব বিল অবশ্য সমন্বয় করা হয়েছে।
মন্ত্রণালয় থেকে পাঠানো চিঠিতে জিএম রবিউল হাসানসহ ডিপিডিসির শীর্ষ তিন কর্মকর্তার বিরুদ্ধে ডিপিডিসির পরিচালনা পর্ষদে ব্যবস্থা নেওয়ার সুাপারিশ করা হয়েছে। বাকি দুজন হলেন নির্বাহী পরিচালক (অপারেশন) এ টি এম হারুন অর রশিদ ও নির্বাহী প্রকৌশলী (আইসিটি অ্যান্ড প্রকিউরমেন্ট) এস এম শহীদুল। তদন্ত প্রতিবেদনের চিঠিতে বিদ্যুৎসচিবের বরাতে রবিউল হাসানের বিষয়ে বলা হয়েছে, ‘যথাযথ অনুমোদন ব্যতীত বিল সম্পর্কিত ই-মেইল প্রেরণ একজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তার অদক্ষতা ও অসদাচরণের শামিল। জিএম (আইসিটি) রবিউল হাসানের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য ডিপিডিসির পরিচালন পর্ষদকে বলা যেতে পারে।’
সম্প্রতি শেষ হওয়া তদন্ত প্রতিবেদন অনুযায়ী, বিদ্যুৎ বিভাগের সমন্বয় অধিশাখা-২-এর উপসচিব আইরিন পারভীন ডিপিডিসির ব্যবস্থাপনা পরিচালক বরাবর দোষীদের বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে বলেন। বিদ্যুৎ বিভাগ থেকে পাঠানো চিঠিতে তদন্তকারী দলের ছয় দফা সুপারিশ তুলে ধরা হয়েছে।
এসব সুপারিশের মধ্যে রয়েছে—কর্তৃপক্ষের যথাযথ অনুমোদন ছাড়া বিদ্যুৎ বিল তৈরি সম্পর্কিত ই-মেইল পাঠানোয় ডিপিডিসি তথা বিদ্যুৎ বিভাগের সুনাম ক্ষুণ্ন হয়েছে। গুরুত্বপূর্ণ যোগাযোগের ক্ষেত্রে আরো সতর্কতা অবলম্বন করার জন্য রবিউল হাসানকে পরামর্শ দেওয়া যেতে পারে। দ্বিতীয়ত, ডিপিডিসির দুই কর্মকর্তা গণমাধ্যমে পরস্পরবিরোধী দায়িত্বহীন বক্তব্য দেওয়ায় সরকারের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন হয়েছে। এই কারণে ডিপিডিসির নির্বাহী পরিচালক (অপারেশন) এ টি এম হারুন অর রশীদ এবং নির্বাহী প্রকৌশলী এস এম শহীদুলের বিরুদ্ধে পরিচালনা পরিষদ ব্যবস্থা নিতে পারে। তৃতীয়ত, ভবিষ্যতে অতিরিক্ত বিল পরিহার করার লক্ষ্যে কম্পানির আইসিটি ও এনওসিএসসহ সংশ্লিষ্ট দপ্তরগুলোকে আরো দক্ষ ও কার্যক্ষম করার জন্য প্রয়োজনীয় প্রশিক্ষণের সুপারিশও করেছে তদন্ত কমিটি। এ ছাড়া দ্রুততম সময়ে ডিপিডিসির সব গ্রাহকের জন্য স্মার্ট প্রি-মিটারিং কার্যক্রম বাস্তবায়নসহ গ্রাহকদের যেকোনো অভিযোগ সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিয়ে দ্রুত সমাধানের জন্য এনওসিএসগুলোকে নির্দেশনা দেওয়ার পরামর্শ দেওয়া হয়েছে। তদন্ত প্রতিবেদনের সুপারিশে আরো বলা হয়েছে, এসব ঘটনার পুনরাবৃত্তি রোধে ডিপিডিসির ব্যবস্থাপনা পরিচালককে আরো যত্নশীল হওয়া দরকার। এ ছাড়া ডিপিডিসির ব্যবস্থাপনা, সাংগঠনিক দুর্বলতা ও পারস্পরিক সমন্বয়হীনতা দূর করতে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের জন্য লিডারশিপ ও ব্যবস্থাপনাসংক্রান্ত প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করা যেতে পারে।
জানতে চাইলে পাওয়ার সেলের মহাপরিচালক ও তদন্ত কমিটির সদস্য মোহাম্মদ হোসাইন বলেন, ‘বিদ্যুৎ বিভাগের নির্দেশনা বাস্তবায়ন হলে ভবিষ্যতে আর ভূতুড়ে বিলের পুনরাবৃত্তি ঘটবে না। যেসব অনিয়ম ও অসংগতি পাওয়া গেছে সেগুলোও বন্ধ হবে।’ প্রায় একই আশাবাদের কথা শোনান বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদও।