নিউজ ডেস্ক: মাতৃভূমির সাথে প্রতারণার করার ইতিহাস যাদের রক্তে মিশে আছে, সেই উগ্র গোষ্ঠী ইসলামী ছাত্রশিবিরের নেতৃত্ব দেশের মানুষের সাথে যেকোনো প্রতারণার আশ্রয় নিতে পারে এটাই স্বাভাবিক। সেভাবে এক অভিনব প্রতারণার আশ্রয় নিয়ে ইসলামী ছাত্রশিবিরের কেন্দ্রীয় সভাপতি ড. মোবারক হোসাইন ধরা খেয়েছেন। প্রতারণার অভিনব কৌশলে ‘মাওলানা’ ডিগ্রি অর্জন করে শিবির সভাপতি ব্যাপক সমালোচনার সৃষ্টি করেছেন।
সূত্র বলছে, কওমি মাদরাসার নিয়মিত ছাত্র না হয়েও দাওরায়ে হাদিসের পরীক্ষায় অংশ নেন এবং নানা কৌশলে উত্তীর্ণ হন তিনি। ফলাফল প্রকাশের পর এটা নিয়ে কওমি প্রাঙ্গণে ব্যাপক সমালোচনা শুরু হয়। গুঞ্জন উঠেছে, দাওরায়ে হাদিসের পরীক্ষায় অংশ নেওয়ার জন্য শুধু মেশকাত ক্লাসের সনদ বাধ্যতামূলক নয়, বরং সব স্তরের সনদ ও কওমি মাদরাসার নিয়মতান্ত্রিক ছাত্রত্ব থাকতে হবে। কিন্তু তা তার ছিলো না।
বাংলাদেশ ইসলামী ছাত্রশিবিরের কেন্দ্রীয় সভাপতি ড. মোবারক হোসাইন দাওরায়ে হাদিস (তাকমিল)-এ ৬৯৬ নম্বর পেয়ে জায়্যিদ জিদ্দান (প্রথম বিভাগ) বিভাগে উত্তীর্ণ হয়েছেন। ‘আল হাইআতুল উলইয়া লিল-জামিয়াতিল কওমিয়া বাংলাদেশ’ এর অধীনে অনুষ্ঠিত ১৪৪০ হিজরি শিক্ষাবর্ষের দাওরায়ে হাদিস (তাকমিল) পরীক্ষায় তিনি এ ফলাফল প্রতারণার মাধ্যমে অর্জন করেন। যা কওমি মাদরাসার ইতিহাসে দ্বিতীয়টি কখনো ঘটেনি।
দাওরায়ে হাদিসের পরীক্ষায় অংশ নিয়ে প্রথম বিভাগ পাওয়ার খবর শিবির সভাপতি তার ফেসবুক পেইজে জানান। তবে তিনি কোন মাদরাসা থেকে পরীক্ষায় অংশ নিয়েছেন সেটা প্রকাশ করেননি।
অনুসন্ধানে জানা গেছে, তিনি আল জামিয়াতুল উসমানিয়া দারুল উলুম, সাতাইশ, টঙ্গি মাদরাসা থেকে পরীক্ষায় অংশ নিয়েছেন। আর পরীক্ষার কেন্দ্র ছিলো টঙ্গীর চেরাগ আলীতে অবস্থিত দারুল উলুম মাদরাসা। শিবির সভাপতির রোল নম্বর ছিলো- ৬৯৪৫।
শিবির সভাপতি কীভাবে এ মাদরাসা থেকে পরীক্ষার সুযোগ পেলেন, এ বিষয়ে জানতে চাইলে মাদরাসার একাধিক শিক্ষক বলেন, শিবির সভাপতি প্রতারণার মাধ্যমে আমাদের মাদরাসা থেকে পরীক্ষায় অংশ নিয়েছেন। পরিচয় গোপন করে খুব কৌশলে তিনি প্রতারণার আশ্রয় নিয়েছেন। তবে তিনি আমাদের মাদরাসায় কখনো ভর্তি হননি। ক্লাস করেননি। মাদরাসার বোখারির বয়োজ্যেষ্ঠ এক শিক্ষককে ভুল বুঝিয়ে উনার সুপারিশে এই পরীক্ষায় অংশ নেয়ার সুযোগটি পান। আমরা এর তীব্র নিন্দা জানিয়েছি।
এ বিষয়ে মাদরাসার বোখারির বয়োজ্যেষ্ঠ সেই শিক্ষক বলেন, আমি তাকে সেভাবে চিনি না। তিনি নিজেকে একটি কলেজের প্রফেসর পরিচয় দিয়ে আমার জুমার বয়ান শুনে ইলমে দ্বীন শেখার আগ্রহ দেখান। তাই আমি তাকে এ সুযোগ করে দিয়েছি। কিন্তু সেই প্রতারক প্রফেসরের জন্য মাদরাসার সকলের কাছে আমার সম্মান নষ্ট হয়েছে। তার এই প্রতারণার জন্য আমার যে ক্ষতি হলো একদিন আল্লাহ তার বিচার করবেন।
বোখারির বয়োজ্যেষ্ঠ সেই শিক্ষক আরো বলেন, ছাত্রশিবির ইসলামের নামে সন্ত্রাস কার্যক্রম করে দেশকে ধ্বংস করে দেয়ার ষড়যন্ত্রে লিপ্ত রয়েছে। আর এখন কওমি মাদরাসাকে ধ্বংসের মিশনে নেমেছে। কওমি সনদকে মানুষের সামনে সস্তা হিসেবে উপস্থাপন করার জন্যই প্রতারণার আশ্রয় নিয়েছেন তিনি। আল্লাহকে সন্তুষ্ট করা তার উদ্দেশ্য ছিলো না। এই ভণ্ড প্রতারক কওমি মাদরাসাকে হেয় করার জন্য প্রতারণার আশ্রয় নিয়ে সনদ অর্জন করেছেন। যা ইসলামের দৃষ্টিতে গর্হিত অপরাধ।