বাংলাদেশের জল, স্থল ও আকাশপথের অবকাঠামো ব্যবহার করে ট্রানজিট সুবিধায় তৃতীয় দেশে পণ্য আমদানি-রপ্তানি করতে পারবে ভুটান। বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের এ সংক্রান্ত একটি চুক্তির খসড়া অনুমোদন দিয়েছে মন্ত্রিসভা। বাণিজ্য মন্ত্রণালয় বলছে, এ চুক্তির আওতায় ভুটান সামগ্রিক ট্রানজিট সুবিধা পেতে যাচ্ছে। যার ফলে দেশটি আমদানি-রপ্তানির প্রয়োজনে বাংলাদেশের ভূখণ্ড ব্যবহার করতে পারবে; এমন কি তারা জল, স্থল, রেলপথ, বিমান পরিষেবাসহ সমুদ্রবন্দর, স্থলবন্দর ও বিমানবন্দর ব্যবহারের সুযোগও পাবে।
সংশ্লিষ্টরা জানান, ট্রানজিট সুবিধার আওতায় তৃতীয় দেশে রপ্তানির জন্য ভুটানের গাড়িগুলো পণ্য নিয়ে বাংলাদেশের সড়ক, রেল ও নৌপথ ব্যবহার করে বিমান ও সমুদ্রবন্দরে যাবে। এরপর এসব পণ্য বহির্বিশ্বে পাঠানো হবে। বাংলাদেশের ওই একই অবকাঠামো ব্যবহার করে আবার আমদানি করা পণ্য ভুটানে পরিবহন হবে। এক্ষেত্রে সমুদ্রপথে পণ্য পরিবহনের জন্য চট্টগ্রাম ও মোংলা বন্দর ব্যবহার করবে ভুটান। এ ছাড়া আকাশপথে পণ্য পরিবহনের জন্য হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর ব্যবহারের সুযোগ আছে। এসব বন্দরের সঙ্গে সংযুক্ত রয়েছে এমন সড়ক, রেলপথ ও নৌপথ খসড়া প্রটোকলে যুক্ত রয়েছে। বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব তপন কান্তি ঘোষ বাংলাদেশ প্রতিদিনকে জানান, ভুটানকে ট্রানজিট সুবিধা দেওয়ার জন্য খসড়া প্রটোকলে পাঁচটি সড়কপথ ও দুটি রেলপথের প্রস্তাব করা হয়েছে। এ ছাড়া নৌপথে ট্রানজিট সুবিধার জন্য নৌ মন্ত্রণালয়, রেল রুট ব্যবহারের জন্য রেল বিভাগের সঙ্গে ভুটানের প্রটোকল স্বাক্ষরিত হবে। এ জন্য দুই দেশের মধ্যে যে চুক্তি সই হবে তার শিরোনাম হচ্ছে ‘প্রটোকল অব দ্য এগ্রিমেন্ট অন দ্য মুভমেন্ট অব ট্রাফিক ইন ট্রানজিট বিটুইন বাংলাদেশ অ্যান্ড ভুটান। আগামী ২২ মার্চ বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশি চুক্তি স্বাক্ষর করতে ভুটান যাচ্ছেন।
যে ৫ রুট ব্যবহার করে বাণিজ্য করবে ভুটান : গত সেপ্টেম্বরে ঢাকায় অনুষ্ঠিত দুই দেশের বাণিজ্য সচিব পর্যায়ের বৈঠকে তৃতীয় দেশে পণ্য আমদানি-রপ্তানির জন্য ভুটানকে বাংলাদেশের অবকাঠামো ব্যবহারের সুযোগ দেওয়ার লক্ষ্যে ট্রানজিট চুক্তির খসড়া ও প্রটোকল চূড়ান্ত করা হয়। এরপর সেটি মন্ত্রিসভায় উপস্থাপনের জন্য প্রধানমনন্ত্রীর অনুমোদন নেওয়া হয়। খসড়া প্রটোকল অনুযায়ী সড়কপথে পণ্য পরিবহনের জন্য বাছাইকৃত রুটগুলো হচ্ছে : (১) (ভুটান থেকে পণ্য নিয়ে) সামসি/ গোমটু/ফুয়েন্টসলিং/গেলেপু-বুড়িমারি-রংপুর-বগুড়া-হাটিকুমরুল-ঢাকা-চট্টগ্রাম; (২) সামসি/গোমটু/ফুয়েন্টসলিং/গেলেপু-ফুলবাড়ি-বাংলাবান্ধা-রংপুর-বগুড়া-হাটিকুমরুল-ঢাকা-চট্টগ্রাম; (৩) গেলেপু-তামাবিল-সিলেট-ঢাকা; (৪) গেলেপু-সামদ্রুপ-জংখর-তামাবিল-সিলেট-সরাইল-ঢাকা-বেনাপোল এবং (৫) সামসি/গোমটু/ফুয়েন্টসলিং/গেলেপু-নাকুগাঁও নালিতাবাড়ী-ময়মনসিং-ঢাকা। সড়কপথে এই পাঁচটি রুট ছাড়াও রেলপথে পণ্য পরিবহনের মাধ্যমে চট্টগ্রাম ও মোংলা বন্দরের অবকাঠামো সুবিধা ব্যবহার করে আমদানি-রপ্তানির জন্য আরও দুটি রেলরুট যুক্ত করা হয়েছে খসড়া প্রটোকলে। এই রুটগুলো হচ্ছে : (১) সামসি/ গোমটু/ফুয়েন্টসলিং/গেলেপু-চিলাহাটি-সৈয়দপুর-পার্বতীপুর-সান্তাহার-ঈশ্বরদী-ভেড়ামারা-যশোর-নওয়াপাড়া-খুলনা-মোংলা; (২) চট্টগ্রাম-লাকসাম-কুমিল্লা-আখাউড়া-ঢাকা-সিরাজগঞ্জ-বগুড়া-লালমনিরহাট-বুড়িমারি-সামসি/গোমটু/ ফুয়েন্টসলিং/গেলেপু। সংশ্লিষ্টরা জানান, সমুদ্রপথে বাণিজ্যের জন্য চট্টগ্রাম ও মোংলা সমুদ্রবন্দর এবং আকাশপথে পণ্য পরিবহনের জন্য ঢাকার হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের সঙ্গে সংযোগ রেখে এই রুটগুলো প্রটোকলে যুক্ত করা হয়েছে। তবে বাংলাদেশের অবকাঠামো ব্যবহার করে ভুটান যাতে কলকাতার সমুদ্র ও বিমানবন্দর ব্যবহার করেও পণ্য আমদানি-রপ্তানি করতে পারে প্রটোকলে সেই সুবিধাও রাখা হয়েছে। এ ক্ষেত্রে ৩ নম্বর রুটে ভুটানের গেলেপু থেকে সিলেটের তামাবিল বন্দর দিয়ে বাংলাদেশে ঢুকে ঢাকা হয়ে পদ্মা সেতু ব্যবহার করে বেনাপোল দিয়ে কলকাতায় যেতে পারবে ভুটানের পণ্য। একই পথে আবার কলকাতা থেকেও আমদানিকৃত পণ্য ভুটানে পরিবহনের সুযোগ থাকছে। পার্শ্ববর্তী দেশগুলোর মধ্যে ভারত ট্রানজিট সুবিধায় বাংলাদেশের কিছু অবকাঠামো ব্যবহার করছে। দ্বিতীয় রাষ্ট্র হিসেবে ভুটান সেই সুবিধা পেতে যাচ্ছে। মন্ত্রিপরিষদ সচিব মো. মাহবুব হোসেন সাংবাদিকদের বলেন, বাংলাদেশে ভুটান যে ট্রানজিট সুবিধা পাচ্ছে তার বিপরীতে মাশুল পরিশোধ করতে হবে দেশটিকে। জাতীয় রাজস্ব বোর্ড এনবিআরসহ বিশেষ বিশেষ অবকাঠামো ব্যবহারের জন্য সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ আলোচনার মাধ্যমে মাশুল নির্ধারণ করবে।