রবিবার , ডিসেম্বর ২২ ২০২৪
নীড় পাতা / জনদুর্ভোগ / ভিক্ষা করলেও মৃৎশিল্প পেশায় আসবো না: মৃৎশিল্পী

ভিক্ষা করলেও মৃৎশিল্প পেশায় আসবো না: মৃৎশিল্পী

কামাল মৃধা:
নাটোরের এক সময়ের ঐতিহ্যবাহী মৃৎশিল্প এখন হুমকির মুখে পড়েছে। কেননা, মৃৎশিল্পের ধারক ও বাহক পাল বংশের নতুন প্রজন্ম শপথ নিয়েছে, ভিক্ষা করে খেলেও বাপ-দাদার ওই পেশায় তারা আর আসবেন না! এর কারণ, ওই পেশায় থেকে তাদের পূর্বসূরিরা সামাজিক মর্যাদা যেমন পায়নি, তেমনি পায়নি অর্থের দেখা। বরং দেখেছে সমাজের অবজ্ঞা, অবহেলা আর অর্থকষ্ট। তাই তারা নিজদের নতুন পেশায় কনভার্ট করছে। নাটোরের বিভিন্ন এলাকা ঘুরে এমনই মন্তব্য পাওয়া গেছে ভুক্তভোগীদের কাছ থেকে।

সরেজমিন জানা যায়, এক সময় নাটোর ছিল মৃৎশিল্পের জন্য বিখ্যাত। এখানে সাধারণ মানুষ তাদের পারিবারিক ও প্রয়োজনীয় কাজে ব্যাবহার করতো মাটির তৈরি হাড়ি, কলস, খেজুরের রস আহরণের হাঁড়ি, মাটির কুপি এমনকি বদনা পর্যন্ত। বিভিন্ন উৎসব উপলক্ষে আয়োজিত মেলায় দেখা যেতো মাটির তৈরি বাঘ, হাতি, পাখিসহ নানা আকর্ষণীয় খেলনা। চাহিদার সঙ্গে তাল মিলিয়ে পাল বংশের সদস্যদের বংশ পরস্পরায় প্রধান পেশা ছিল এই মৃৎশিল্প। কিন্তু কালের বিবর্তনে এখন মানুষ এসকল দ্রব্য ব্যাবহার না করে বেছে নিয়েছে সিলভার, ম্যালামাইন ও প্লাস্টিক সামগ্রী। ফলে দিন দিন জৌলুস হারিয়েছে এই শিল্প। জেলার সদর উপজেলাসহ সকল উপজেলায় এখনও পাল বংশের মানুষদের বসবাস করতে দেখা গেলেও ধীরে ধীরে পরিবর্তিত হচ্ছে পাল বংশের এই পেশা।

সদর উপজেলার ভাটোদাঁড়া গ্রামের পাশেই এখনও বাস করছেন পাঁচ ঘর পাল বংশের মানুষ। তবে এদের মধ্যে এখন এই পেশায় থেকে শুধুমাত্র বিভিন্ন প্রতিমা বানানোর কাজে আছেন সুজন নামে একজন। অন্যরা স্বর্ণকার, দোকানের কারিগর ও দর্জি পেশা বেছে নিয়েছেন। নলডাঙ্গা, বড়াইগ্রাম, সিংড়া ও লালপুর উপজেলা এলাকায় পাল বংশের সদস্যদের সঙ্গে কথা বলে প্রায় একই রকম তথ্য জানা গেছে।

বাগাতিপাড়া উপজেলার পাঁকা ইউনিয়নের পালপাড়ায় কথা হল বুদু পাল ও তার চাচাতো ভাই রবীন্দ্র পালের সঙ্গে। তারা জানান, এখানে তারা তিন ঘর বসবাস করছেন। তারা আট পুরুষ থেকে এখানে থেকে ওই পেশা ধরে রেখেছেন। তবে তাদের সন্তানরা আর ওই পেশায় যাবে না।

বুদু পাল জানান, এখন আর মাটির তৈরি জিনিসের তেমন কদর নেই। ওগুলো তৈরির মাটির দামও বেশি। সারা মাস কাজ করে তৈরি জিনিস বিক্রি করে গড়ে তাদের এক হাজার টাকা লাভ হয়। এমন অবস্থা দেখে নতুন প্রজন্ম ওই পেশায় না যাওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। তার দুই ছেলে দুই মেয়ে। মেয়েদের বিয়ে হয়েছে। বড় ছেলে পড়ালেখা করে প্রাণ কোম্পানিতে চাকরি করছে। ছোট ছেলে বিপ্লব নাটোর এনএস কলেজে পদার্থ বিজ্ঞানে অনার্স পড়ছে। 

রবীন্দ্রপাল জানান, তিনি মাটি দিয়ে শৌখিন সামগ্রী তৈরি করেন। তার ছেলেরাও এই পেশায় নেই। তার ছেলে বিষ্ণু রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে অ্যাপলাইড ম্যাথমেটিকস্ এ মাস্টার্স করছে।

জানতে চাইলে বিপ্লব ও বিষ্ণু জানান, তারা তাদের বাপ-দাদাদের পেশায় আসবেন না বলে প্রতিজ্ঞা করেছেন। কেননা এই পেশায় নেই কোনও সামাজিক মূল্যায়ন, নেই অর্থ, নেই ভবিষ্যৎ। বরং আছে শুধু অবহেলা। তাই সবকিছু ভেবে তারা নতুন পেশায় যাওয়ার মনস্থির করেছেন।। এক প্রশ্নের জবাবে তারা বলেন, পড়ালেখা শেষ করে কোনও চাকরি না পেলে বরং ভ্যান-রিকশা চালিয়ে জীবিকা নির্বাহ করবেন। প্রয়োজনে ভিক্ষা করে জীবন চালাবেন, তবু বাপ-দাদাদের পেশায় আসবেন না।

অপর এক প্রশ্নের জবাবে বিষ্ণু জানান, মৃৎশিল্পকে বাঁচাতে হলে রাষ্ট্র ও সরকারকে সুপরিকল্পিত পরিকল্পনা নিতে হবে। এই পেশার মানুষদের সামাজিক মর্যাদা, মূল্য ও ভর্তুকি দিয়ে তৈরি দ্রব্যের মূল্য দিতে হবে। কারণ, প্লাস্টিকসহ বিকল্প সামগ্রী পরিবেশ বান্ধব নয়, কিন্তু মৃৎশিল্প সম্পূর্ণ পরিবেশ বান্ধব আর বাঙালির ঐতিহ্য-সংস্কৃতির সঙ্গে জড়িত। তাই সুনির্দিষ্ট ও দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা না নিলে দ্রুত নাটোরসহ বাংলাদেশ থেকে হারিয়ে যাবে এই মৃৎশিল্প।

আরও দেখুন

বাড়ির উঠানে ৪ কেজি ওজনের গাঁজারগাছ-গ্রেপ্তার ১

নিজস্ব প্রতিবেদক সিংড়া,,,,,,,,,,,,নাটোরের সিংড়া পৌরসভার বালুয়াবাসুয়া মোল্লা পাড়া এলাকায় ১০ফুট উচ্চতার একটি গাঁজার গাছ উদ্ধার …