নিজস্ব প্রতিবেদক:
অনেক উন্নত দেশের শরণার্থীর তুলনায় রোহিঙ্গারা ভাসান চরে বেশ ভালো জীবনযাপন করছে। উন্নত বিশ্বের শরণার্থীরাও যেসব সুযোগ-সুবিধা পায় না, সেসব সুবিধাও বাংলাদেশের রোহিঙ্গাদের দেওয়া হচ্ছে। মিয়ানমারের সামরিক জান্তার বর্বর নির্যাতনের শিকার হয়ে ২০১৭ সালের ২৫ আগস্ট যেসব রোহিঙ্গা প্রাণ বাঁচাতে সীমান্তে ভিড় করেছিল, মানবিক কারণে তাদের বাংলাদেশে আশ্রয় দেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এভাবেই বিভিন্ন সময় প্রায় ১৫ লাখ রোহিঙ্গা রাখাইন থেকে বাংলাদেশে এসেছে। শুরুকে কক্সবাজারের টেকনাফ, উখিয়া, কুতুপালং সহ বিভিন্ন আশ্রয়কেন্দ্র এসব রোহিঙ্গাদের নিরাপদ জীবনযাপনের ব্যবস্থা করে বাংলাদেশ সরকার। এরই ধারাবাহিকতায় শরণার্থীদের জন্য সম্প্রতি আধুনিক সুবিধা সম্বলিত একটি সিটি গড়ে তোলা হয়েছে ভাসান চরে। শরণার্থীদের সহায়তায় বিশ্বের বুকে এটি অনন্য দৃষ্টান্ত।
জার্মানি, হাঙ্গেরি, যুক্তরাষ্ট্র, ফ্রান্সসহ উন্নত বিশ্বের বিভিন্ন রাষ্ট্রের শরণার্থীরাও অনেক মানবেতর জীবনযাপন করে। এসব স্থানে সুপেয় পানি ও টয়লেটের পর্যাপ্ত ব্যবস্থাও নেই। তাদের থাকতে দেওয়া হয় বনজঙ্গল-ঘেরা এলাকায়। থাকে না মশক নিধনের ব্যবস্থাও। বেঁচে থাকার জন্য ন্যূনতম সুযোগসুবিধাও দেওয়া হয় না উন্নত দেশের শরণার্থীদেরও। সেখানে বঙ্গবন্ধুকন্যা ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বাংলাদেশে আশ্রিত শরণার্থীদের জন্য সর্বোচ্চ সুবিধা নিশ্চিত করছেন। রোহিঙ্গা ও তাদের নতুন প্রজন্মের মানবিক বেড়ে ওঠা নিশ্চিতের জন্য ইতোমধ্যে প্রাকৃতিক পরিবেশে সুন্দর আবাসনের ব্যবস্থা করা হয়েছে।
দেশের দক্ষিণাঞ্চলের সুপরিচিত দ্বীপ সন্দীপের কাছে ভাসান চরে গড়ে তোলা হয়েছে আধুনিক সুবিধাসম্পন্ন মনোরম আবাসিক সিটি। অনেকে এটিকে ভাসান চর সিটি বলেও অভিহিত করছেন। চারপাশে শক্তিশালী বাঁধ নির্মাণ করে প্রায় ৩১ হাজার কোটি টাকা ব্যয়ে এক লাখ মানুষের আবাসনের জন্য এটি গড়ে তোলা হয়েছে। এই ভাসানচরে আধুনিক সুযোগসম্বলিত আবাসন ব্যবস্থার পাশাপাশি আরও রয়েছে সাইক্লোন সেন্টার, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, হাসপাতাল, বাজার, মসজিদ, পুলিশ স্টেশন এবং ২৪ ঘণ্টা বিদ্যুৎ সরবরাহের ব্যবস্থা। এছাড়াও এখানে আরও রয়েছে শিশুদের জন্য ডে-কেয়ার সেন্টার, এতিমখানা এবং সুপার শপ। এদিকে রোহিঙ্গাদের জীবনমান পর্যবেক্ষণ ও তাদের সহায়তার জন্য সরকারের পাশাপাশি জাতিসংঘ, আন্তর্জাতিক সংস্থা এবং বিভিন্ন এনজিও-এর অফিসও করা হয়েছে ভাসান চরে।
ইতোমধ্যে ১ হাজার ৬৪১ জন রোহিঙ্গাকে সেখানে স্থানান্তর করা হয়েছে। ভাসানচরে যাওয়ার পর সেখানকার সার্বিক সুযোগ সুবিধা দেখে মুগ্ধ হয়েছে রোহিঙ্গারা। তারা বলছে, ‘আগে অনেকরকম প্রতিবন্ধকতার মুখোমুখি হতে হতো। আমাদের বাচ্চা-কাচ্চারা চারপাশে ঘুরতে পারতো না। আমরা এখন ইচ্ছা মতো আলো বাতাসের মধ্যে ঘুরতে পারি। বুক ভরে শ্বাস নিতে পারি। এই জায়গাটা সুন্দর।’ এরকম আধুনিক নাগরিক সুবিধাসম্পন্ন থাকা-খাওয়ার জায়গা পাওয়ায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেছে ভাসান চরে যাওয়া রোহিঙ্গারা।
রোহিঙ্গাদের জন্য তৈরি নতুন আবাসস্থল ভাসান চরটি গুচ্ছগ্রাম আকারে সাজানো হয়েছে। মোট ১২০টি গুচ্ছগ্রাম তৈরি করা হয়েছে। প্রতিটি গুচ্ছগ্রামে আছে ১২টি ভবন এবং একটি করে সাইক্লোন সেন্টার। প্রতিটি ভবনে ১৬টি করে রুম আছে। এসব রুমের প্রত্যেকটায় চার জন করে থাকার ব্যবস্থা করা হয়েছে। পুরুষ ও নারীদের জন্য রয়েছে পৃথক বাথরুম ও টয়লেটের ব্যবস্থা। পুরো এলাকাটির নিরাপত্তা সিসিটিভির আওতায় নিশ্চিত করা হয়েছে। এখানকার বাসিন্দারা কৃষিকাজ, মৎস্যচাষ এবং অন্য যেকোনও পেশা থেকে জীবিকা নির্বাহ করতে পারবেন।
একজন রোহিঙ্গা নারী বলেন, ‘ আমরা এখানে ভালো আছি। জায়গাটা খোলামেলা। অনেকে বলেছিল, ভাসান চরে যেও না। ওটা পানিতে ডুবে আছে। থাকার মতো পরিবেশ নাই। কিন্তু এখানে এসে আগের চেয়ে ভালো আছি। এতো সুন্দর জীবনের কথা ভাবনাতেও ছিল না।’