নিজস্ব প্রতিবেদক:
উখিয়া-টেকনাফ থেকে ভাসানচরে আসা রোহিঙ্গাদের স্বাস্থ্য সেবায় তৈরি করা দুটি অত্যাধুনিক হাসপাতালে চিকিৎসা সেবা কার্যক্রম শুরু হয়েছে।
শুক্রবার রোহিঙ্গাদের ভাসানচরে নিয়ে আসার পর থেকে শনিবার (৫ ডিসেম্বর) দুপুর পর্যন্ত ৪২ জন রোহিঙ্গা তাদের স্বাভাবিক জ্বর ও সর্দি নিয়ে এই দুটি হাসপাতালের জরুরি বিভাগ থেকে চিকিৎসা নিয়েছেন।
শনিবার সকালে ১৩ নং ক্লাস্টারের ৭নং হাউজে বসবাস করা মো. আনাস (৫৬) নামে একজন মাথা ব্যাথা নিয়ে হাসপাতাল-১ এ চিকিৎসা নিতে আসেন। চিকিৎসা নিতে আসা আনাস হাসপাতালের উন্নত পরিবেশ দেখে অনেক খুশি বলে জানান। আলাপকালে আনাস জানান, কুতুপালং থেকে ভাসানচরের পরিবেশ অনেক ভালো। এখানে খোলামেলা পরিবশে তাদের অনেক ভালো লাগছে।
আনাসের মতো ৩নং ক্লাস্টারের ১০ নং হাউজে বসবাস করা জানিয়া (১৯), ২০ নং ক্লাস্টারের ১০নং হাউজের মো. আলম (৪৫) ও ১৪নং ক্লাস্টারের ৭ নং হাউজের জাহানারা (২৪) আবহাওয়া পরিবর্তনজনিত রোগে নতুন এই হাসপাতাল থেকে চিকিৎসা সেবা নিয়েছেন।
হাসপাতাল দুটির দায়িত্বে থাকা মেডিকেল অফিসার ডাক্তার মাহতাব উদ্দিন বলেন, আমি দীর্ঘদিন হাতিয়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে কর্মরত রয়েছি। বর্তমানে ভাসানচরের হাসপাতালের অস্থায়ী দায়িত্ব পালন করছি। রোহিঙ্গাদের জন্য যে দুটি হাসপাতাল স্থাপন করা হয়েছে বা যেসব যন্ত্রপাতি বসানো হয়েছে তাতে জটিল অপারেশন সফলতার সাথে করা যাবে। বিশেষ করে গর্ভবতী মায়েদের নরমাল ডেলিভারি ও সিজারের খুব ভালো ব্যবস্থা রয়েছে এখানে।
২০ শয্যার এই দুটি হাসপাতালে সরকারি একজন, এনজিও’র দুইজনসহ ৩ জন মেডিকেল অফিসার কর্মরত রয়েছে। এছাড়া স্বাস্থ্য সহকারি ৬ জনসহ বিভিন্ন পদে ১৪ জন দায়িত্ব পালন করছেন বলে জানান ভাসানচরের হাসপাতালের দায়িত্বরত অফিস সহকারি আকরাম হোসেন।
এছাড়াও রয়েছে ৪টি কমিউনিটি ক্লিনিক যাতে রোহিঙ্গাদের দেওয়া হবে প্রাথমিক চিকিৎসা। এসব ক্লিনিক থেকে বিনামূল্যে
তারা পাবে ৩০ রকমের ওষুধ।
এ ব্যাপারে হাতিয়া উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ডাক্তার নাজিম উদ্দিন জানান, ভাসানচরে এই দুটি হাসপাতালের কার্যক্রম শুক্রবার থেকে চালু করা হয়েছে। এখানে সরকারি ও এনজিওদের মেডিকেল অফিসারগণ দায়িত্ব পালন করছে। এছাড়া যে ৪টি কমিউনিটি ক্লিনিক নির্মাণ করা হয়েছে তাতে অচিরেই কার্যক্রম শুরু করা হবে।
শুক্রবার সকালে নৌ বাহিনীর তিনটি জাহাজে চট্টগ্রাম থেকে ১ হাজার ৬৪২ জন রোহিঙ্গার একটি দল ভাসানচরের উদ্দেশে রওনা হয়ে দুপুরে এসে পৌঁছায়। প্রথম ধাপে নারী-পুরুষ, শিশুসহ ১৬৪২ জন রোহিঙ্গা ভাসানচরে পৌঁছেছে। এর মধ্যে শিশু রয়েছে ৮১০জন, পুরুষ ৩৬৮জন, নারী ৪৬৪জন।
নৌবাহিনীর কর্মকর্তারা জানান, ভাসানচরে আসা সকল রোহিঙ্গাদের প্রথমে স্বাস্থ্য পরীক্ষা করা হয়। তারপর নৌবাহিনীর কর্মকর্তারা রোহিঙ্গাদের ব্রিফ করেন। ব্রিফিং শেষে রোহিঙ্গাদের জন্য প্রস্তুত রাখা ৭, ৮, ৯, ১০, ১৪ ও ২০ নম্বর ক্লাস্টারে
তাদেরকে রাখা হয়।