নিজস্ব প্রতিবেদক, শেরপুর:
ভালো নেই শেরপুরের ঝিনাইগাতী গারো পাহাড়ের কোচ সম্প্রদায়ের লোকেরা। অভাব-অনটন, দুঃখ আর দূর্দশাই কোচ সম্প্রদায়ের লোকদের নিত্য সঙ্গী। উপজেলার গারো পাহাড়ের রাংটিয়া, শালচুড়া, ডেফলাই, গান্ধিগাঁও, নকসী, হালচাটি, গজনী, বাকাকুড়া, পানবর, জোকাকুড়া, তাওয়াকুচা ও ভালুকাসহ বিভিন্ন পাহাড়ী গ্রামগুলোতে কোচ সম্প্রদায়ের লোকদের বসবাস। এসব গ্রামগুলোতে ৬শতাধিক পরিবারের ছোট, বড়, নারী, পুরুষ, শিশুসহ প্রায় ২ হাজার কোচ সম্প্রদায়ের লোকের বসবাস। তারা সনাতন ধর্মাবলম্বী ও মাতৃতান্ত্রিক। কৃষির উপর নির্ভরশীল এ সম্প্রদায়ের নারীরাই মাঠে ময়দানে সংসারের সকল কাজকর্ম করে থাকেন। পুরুষরা সন্তানাদি নিয়ে বাড়ীতেই খেলাধুলার মাধ্যমে সময় কাটান। তবে আধুনিকতার ছোঁয়ায় কোচদের মধ্যে এ রেওয়াজের অনেকটাই পরিবর্তন এসেছে। নারীদের পাশাপাশি পুরুষরাও এখন নানান কর্মে যুক্ত হচ্ছেন।
কোচ সম্প্রদায়ের রয়েছে আলাদা সংস্কৃতিও। তারা বাংলা ভাষার পাশাপাশি নিজস্ব মাতৃভাষায় কথা বলে থাকেন। এককালে এদের ছিল গোয়াল ভরা গরু, গোলা ভরা ধান ও পুকুর ভরা মাছ। কিন্তু কালের বির্বতনে নানা কারণে সবকিছু হারিয়ে আজ তারা পথে বসেছে।
বাকাকুড়া গ্রামের আদিবাসী নেতা শ্রী ধীমান চন্দ্র কোচ জানান, দেশ স্বাধীনের পর থেকেই প্রভাবশালীরা তাদের অনেকের জমি-জমা জবর দখল করে নেয়। শুধু তাই নয় গত ২যুগ ধরে পাহাড়ী গ্রামগুলোতে উপর্যপুরি বন্যহাতির তান্ডবে কোচ সম্প্রদায়ের লোকেরা তাদের জমিতে ফসল ফলাতে পারে না। ফলে জীবিকার তাগিদে জমি-জমা বিক্রি করে ভূমিহীন ও দিনমজুরে পরিণত হয়েছে।
গান্ধিগাঁও গ্রামের বকুল কোচ বলেন, জমি বিক্রির টাকা ও কোচ সম্প্রদায়ের লোকেরা সঠিক ভাবে হাতে পায়নি।
গজনী গ্রামের মনেন্দ্র চন্দ্র কোচ ও হালচাটি গ্রামের সুরেন্দ্র চন্দ্র কোচ বলেন, তাদের সম্প্রদায়ের লোকেরা পাহাড় থেকে জ্বালানী কাঠ এনে বাজারে বিক্রি ও শ্রম বিক্রি করে পরিবারের সদস্যদের জীবিকা নির্বাহ করেন। একদিন কাজে না গেলে সেদিন তাদের ঘরে চুলা জ্বলে না। সেদিন পরিবার-পরিজন নিয়ে থাকতে হয় তাদের অনাহারে-অর্ধাহারে।
সরেজমিনে অনুসন্ধানে দেখা গেছে, আবাসন সংকটেও রয়েছে সিংহভাগ কোচ সম্প্রদায়। এদের নেই কোন জমি, জমা। বনের জমিতে ঝুপড়ি ঘর তুলে কোন রকমে দিনাতিপাত করেন। বিভিন্ন বেসরকারী উন্নয়ন সংস্থা এনজিও আদিবাসীদের আর্থ সামাজিক উন্নয়নের লক্ষ্যে কাজ করে আসলেও কোচ সম্প্রদায় হচ্ছেন তা থেকে বঞ্চিত।
নকসী গ্রামের প্রফুল্ল কোচ ও জহীন কোচ বলেন, তাদের নারী শ্রমিকরা প্রতিনিয়ত মজুরী বৈশম্যের শিকার হন। সরকারী সাহায্য-সহযোগীতার ক্ষেত্রেও তারা হচ্ছেন চরমভাবে বৈশম্যের শিকার।
রাংটিয়া গ্রামের আদিবাসী নেতা যুগল কিশোর কোচ বলেন, অভাবের তাড়নায় কোচ সম্প্রদায়ের সন্তানাদিদের স্কুলে পাঠাতে পারছেন না। ফলে এ সম্প্রদায়ের লোকেরা শিক্ষা-দিক্ষায় রয়েছেন অনেক পিছিয়ে। কোচ সম্প্রদায়ের লোকদের অভাব, অনটন, দুঃখ ও দূর্দশাই নিত্য সঙ্গী। অর্থনৈতিক দৈন্যতার কারণে এ সম্প্রদায়ের লোকদের সংস্কৃতিও আজ বিলুপ্তির পথে।
আরও দেখুন
নাটোরের সকল এমপিদের গ্রেপ্তারের দাবি যুবদল, স্বেচ্ছাসেবক দল, ছাত্রদলের কেন্দ্রীয় নেতৃবৃন্দের
নিজস্ব প্রতিবেদক,,,,,,,, সাম্য ও মানবিক দেশ বিনির্মাণে দিকনির্দেশনামূলক যৌথ সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে। জাতীয়তাবাদী যুবদল, স্বেচ্ছাসেবক …