আব্দুল্লাহ আল মামুন:
“ফাগুনের হাওয়া”
ইচ্ছে ছিল কোন এক বর্ষার রাতে তোমাকে নিয়ে লিখবো। যখন প্রচন্ড বৃষ্টি হবে ঝুমঝুমান্তি বৃষ্টি। যে বৃষ্টিতে ঝুমঝুম করে নুপূরের শব্দ হয় সেই বৃষ্টির নাম ঝুম-ঝুমান্তি বৃষ্টি। কিন্তু ফাগুনের পাগল হাওয়া তা করতে দিলো না। লিখতে শুরু করলাম।
তো নিজের পরিচয়টা দিয়ে শুরু করিঃ- আমি গাধা টাইপ, প্যারাসাইট টাইপ মানুষ। এই শ্রেণীর মানুষ গল্প করার জন্য সময় কাটানোর জন্য খুব ভালো। কিন্তু ভালোবাসার মানুষ হিসাবে এরা ভয়য়ংকর খারাপ। কেন খারাপ? এরা অপদার্থ এই জন্য খারাপ। যদিও বর্ষা আসতে এখনো অনেক দেরী তার পরেও কেন জানি বৃষ্টিতে ভিজতে ইচ্ছে করছে। তুমি বৃষ্টিতে ভিজতে পছন্দ করো ? চল দুজন বৃষ্টিতে ভিজি। তুমি চিন্তা করছো ? তুমি পাগল আমি তো পাগল না। জ্বর আসবে এই ভয়ে বৃষ্টিতে ভেজার আনন্দ থেকে নিজেকে বঞ্চিত করবা ? রবীন্দ্রনাথের ঐ গানটা মনে করলে কিন্তু জ্বরের কথা মাথায় আসবে না। দু’হাত ধরে ঘুরে ঘুরে বৃষ্টিতে ভিজতে ইচ্ছা করবে। এসো কর স্নান, নবধারা জলে এসো নীপবনে ছায়াবীথি তলে। বৃষ্টি দেখলেই আমার বৃষ্টিতে ভিজতে ইচ্ছা করে।
ফাল্গুনের বাসন্তী রঙ্গের রেষ কাটতে না কাটতে ভালোবাসার বরাত নিয়ে আসে ভালোবাসা দিবস। ভালোবাসা মানুষের মনের শ্রেষ্ঠ অনুভূতিগুলোর মধ্যে অন্যতম তাই এই দিন কে নিয়ে আমারও মনের মধ্যে অন্য রকম একটা অনুভূতি কাজ করছে। তোমার সাথে আমার কথাও হয় তুমি বলো আমাকে বন্ধুত্ব করো ভালো কিন্তু কখনো প্রস্তাব দিয়োনা। কিন্তু ফাগুন আমার অজান্তেই আমার মনে ফাগুন এনে দেয়।
তোমার ময়না পাখির মতো কথা, মায়াবী সেই চেহারা আস্তে আস্তে আমাকে গ্রাস করে। আর সেই কারনে সহজেই ভালোবেসে ফেলিছি। বুঝি না তোমার কাছে কি নেশা আছে..বার বার শুধু তোমার কাছে যেতে ইচ্ছে করে, শুধু বলতে ইচ্ছে করে “তোমায় বড় ভালোবাসি …বড় ভালোবাসি তোমায়”। তোমাকে দেবার মতন আমার কাছে কিছুই নেই………আমি জানি ভালোবাসায় চাওয়া পাওয়া থাকেনা। থাকে শুধু ভালোবাসা। তোমায় ভালোবাসি তোমার বুকে একটু জায়গা চাই। মেঘ যেমন ভালোবেসে চাঁদকে আড়াল করে নেয়, তেমনি তুমিও আমাকে আগলে রেখ।
ইচ্ছে ছিল ফগুনের প্রথম দিন তুমি হলুদ শাড়ী পড়বে, খোপায় থাকবে হলুদ গাদার মালা, হাতে ভরে থাকবে হলুদ রেশমী চুড়ি, পায়ে থাকবে আলতা আর আমি হিমুর বেসে হলুদ পাঞ্জাবী পরে তোমার হাতে হাত রেখে হাটবো আজনার পথে। আমার সেই ইচ্ছেই থেকে গেল। পারলাম না পুকুর পাড়ে তোমার পাশে বসে বসন্ত কে বরণ করতে। শুনতে পারলাম না সন্ধায় কুহুকুহ ডাকে পুকুর পাড় মাতিয়ে তুলেছে এক জোড়া কোকিল। আমি অপেক্ষায় আছি সামনে ফাগুনে আমার ইচেছ পূরণ হবে। তুমি নিজ হাতে পৃথিবীতে আমার নিজের একটা ভুবন তৈরী করে দিয়েছে। অপরিসীম যত্নে তৈরী সে ভুবনে কখনো হাসি, গান গাই, আবার অভিমানে মনও খারপ করি। প্রচন্ড মমতায় অল্প সময়েই প্রশয় দিয়েছে, দিয়েছে আশ্রয়। কোন দিন তোমাকে কে আমি হারাতে চাই না। পৃথিবী আমাকে ময়না পাখীর থেকে দূরে ঠেলে দিলেও পারবেনা ময়না পাখীর কাছ থেকে আমাকে আলাদা করতে। পারবেনা ভাঙ্গাতে আমার ভালোবাসার স্বপ্ন………..।
হঠাৎ গত ১৬ তারিখে সন্ধায় তুমি আমাকে বলো তুমি কাল রংপুরে যেতে পারো। আমি আস্থির হয়ে যাই। তারপর থেকে ভাবনার জাল বুনছি ! কখন দেখবো স্বপ্নপরীকে, ময়না কি থাকবে কালো টিপ পড়ে ! জোছনা মাখা রাতে হাতদুটো কি রাখতে পারবো ময়নার হাতে। সুযোগ পাবো ময়নার পাশে বসে কথা বলতে। দেখতে পারবো ভোরের আকাশে কোলাহল মুক্ত নদীর পারে ভিজে লাল শাড়িতে। ঘাসের আঁচলে ফড়িংয়ের মতো দূরন্ত দেখতে। আমি আমার কল্পনায় যা চেয়েছি তুমি তার থেকে অনেক বেশি আমাকে দিয়েছো। ঐ দুটি দিনের প্রতিটি সময় এতো দ্রুত চলে গেছে যে আমি বিশ্বাস করতে পারছিলাম না আমি বাস্তবে না কল্পনায় আছি।
অনেক দিন পর এতো মধুর দুটো দিন আমি পার করেছি যা হয়তো আমাকে আগামীর জন্য অনুপ্রেরণা দিবে। তুমি অনেক ভালোবাসা পাবে পথে-প্রান্তরে, অপরিচিত, অনেক চেনা মনের অন্দরে। জানি তুমি একজনকে ভালোবাসো তোমার কল্পনার রঙ্গিন আকাশে। কিন্তু আমার ভালাবাসা ঠিকিই তোমাকে খুঁজে খুঁজে নিবে। আমার দীর্ঘশ্বাশে আকাশ ভারী হয়ে উঠবে। আশার প্রদীপটা নিভু নিভু হয়ে জ্বলে থাকবে। শিশির শুকিয়ে দুপুরের রোদ্রতাপে ঘাস হলদে হয়ে যাবে তবুও আমাকে নিরাশা করতে পারবেনা। সঙ্গী করে নিয়ে থাকবো আপেক্ষা আর পুরনো স্মৃতী।
তার পরেও জেনে রোখো এক দিন না এক দিন আমার ভালোবাসা অনাহ্নত অতিথীর মতো আমাকে ধরা দিবে। তার চোখের জলে বিশ্রী গরম ভুলিয়ে দেওয়া বৃষ্টির মতো একদিন হঠাৎ করে ভিজিয়ে দিবে আমার ভিতর বাহির। অপেক্ষার-ক্ষতে বুলিয়ে দিবে সুশষ্যার মলম। হলদে ঘাসে রাঙ্গিয়ে দিবে সবুজের প্রলেপ। অজান্তেই একদিন ভালোবেসে আমার মনের দুয়ারে কড়া নেড়ে যাবে।