নিজস্ব প্রতিবেদক:
ভারত থেকে আসবে করোনাভাইরাসের ভ্যাকসিন। ভারতের সেরাম ইনস্টিটিউট থেকে অক্সফোর্ডের তৈরি করোনা ভ্যাকসিনের তিন কোটি ডোজ কিনতে মোট খরচের অর্ধেক ৭৩৫ কোটি ৭৭ লাখ ৫০ হাজার টাকা বরাদ্দ দিয়েছে অর্থ বিভাগ, যার মধ্যে ভ্যাকসিন কিনতে ৬৩৫ কোটি ৭৭ লাখ ৫০ হাজার টাকা এবং আনুষঙ্গিক খরচ হিসেবে ১০০ কোটি টাকা বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। তবে সরকারিভাবে এই ভ্যাকসিন ক্রয়, পরিবহনসহ আনুষঙ্গিক ব্যয় হিসেবে ১ হাজার ৫৮৯ কোটি ৪৪ লাখ ৭৫ হাজার টাকা বরাদ্দ চেয়েছিল স্বাস্থ্য অধিদপ্তর। গত বুধবার অর্থ মন্ত্রণালয়ের অর্থ বিভাগ (বাজেট অনুবিভাগ-১) থেকে অর্থ বরাদ্দের মঞ্জুরি আদেশ জারি করা হয়।
অর্থ বরাদ্দের মঞ্জুরি আদেশে বলা হয়, স্বাস্থ্যসেবা বিভাগের প্রস্তাবের পরিপ্রেক্ষিতে কভিড-১৯ প্রতিরোধক ভ্যাকসিন ক্রয়ের লক্ষ্যে পরিবহন খরচসহ কোল্ড চেইনে পৌঁছানো পর্যন্ত ৩ কোটি ডোজ ভ্যাকসিন ক্রয়ের জন্য ১ হাজার ২৭১ কোটি ৫৫ লাখ টাকার ৫০ শতাংশ অর্থাৎ ৬৩৫ কোটি ৭৭ লাখ ৫০ হাজার টাকা এবং কোল্ড চেইন ইকুইপমেন্ট, এডি সাইরিংগস বক্সেস ক্রয়, ভ্যাকসিন কেন্দ্র পর্যন্ত পরিবহন, জনবল, মাইক্রোপ্লানিং ও তালিকা প্রণয়ন, সুপারিশ ও মনিটরিং, প্রশিক্ষণ, প্রচার-প্রচারণাসহ মানুষের শরীরে ভ্যাকসিন দেওয়া পর্যন্ত ৩ কোটি ডোজ ভ্যাকসিনের জন্য ১০০ কোটি টাকাসহ মোটি ৭৩৫ কোটি ৭৭ লাখ ৫০ হাজার টাকা চলতি ২০২০-২১ অর্থবছরে অর্থ বিভাগের বাজেট ‘করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাব মোকাবিলায় তহবিল’ থেকে স্বাস্থ্যসেবা বিভাগের অনুকূলে প্রদানের মঞ্জুরি আদেশ নির্দেশক্রমে জারি করা হলো।
এছাড়া বরাদ্দপ্রাপ্ত অন্য খাতগুলো হলো পণ্যের ভাড়া ও পরিবহন ব্যয়ের প্রস্তাবিত ৯৩ কোটি ৩০ লাখ ৯৮ হাজার টাকার মধ্যে ৮ কোটি ৯৮ লাখ ৪৪ হাজার টাকা, প্রশিক্ষণ ব্যয়ের জন্য প্রস্তাবিত ১৫ কোটি ১৬ লাখ ৬৮ হাজার টাকার মধ্যে ১২ কোটি ৮০ লাখ ৩৭ হাজার টাকা, চিকিৎসা ও শল্য চিকিৎসা সরঞ্জামাদি বাবদ প্রস্তাবিত ৫৮ কোটি ৫৩ লাখ ৫৩ হাজার টাকার বিপরীতে ৫৬ কোটি ৫৩ লাখ ৮৮ হাজার টাকা, মুদ্রণ ও বাঁধাইয়ের জন্য প্রস্তাবিত ৬ কোটি ২৬ লাখ ১ হাজার টাকার পুরোটাই বরাদ্দ পেয়েছে। সম্মানী বাবদ প্রস্তাবিত ১০ কোটি ৪ লাখ ৭৬ হাজার টাকার মধ্যে ৩ কোটি ৯৯ লাখ ১৮ হাজার টাকা, প্রকৌশলী এবং অন্যান্য সরঞ্জামাদি বাবদ প্রস্তাবিত ১৩ কোটি ৬৪ লাখ ৭০ হাজার টাকার পুরোটাই বরাদ্দ পেয়েছে। ডাটাবেজ বাবদ প্রস্তাবিত ৩ কোটি ৬৯ লাখ ৯৪ হাজার টাকা পুরোটাই বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে।
এদিকে আপ্যায়ন ব্যয়ের জন্য প্রস্তাবিত ৮৯ কোটি ৮৫ লাখ ৬০ হাজার টাকার প্রেক্ষিতে কোনো টাকা বরাদ্দ দেওয়া হয়নি। প্রস্তাবিত হায়ারিং চার্জ ৬ লাখ ৮০ হাজারের পুরোটাই বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। প্রচার ও বিজ্ঞাপন ব্যয়ের জন্য প্রস্তাবিত ১৪ কোটি ১৭ লাখ ৩৮ হাজার টাকার প্রেক্ষিতে কোনো টাকা বরাদ্দ দেওয়া হয়নি। ব্যবস্থাপনা ব্যয়ের জন্য প্রস্তাবিত ১ কোটি ২ লাখ টাকার প্রেক্ষিতে কোনো টাকা বরাদ্দ দেওয়া হয়নি। ভ্রমণ ব্যয়ের জন্য প্রস্তাবিত ৬ কোটি ৭৬ লাখ ১৯ হাজার টাকার প্রেক্ষিতে কোনো টাকা বরাদ্দ দেওয়া হয়নি। বরাদ্দ পায়নি স্বাস্থ্য বিধান সামগ্রীর জন্য প্রস্তাবিত ৩ কোটি ৩৮ লাখ ৬৪ হাজার টাকাও।
জরিপের জন্য প্রস্তাবিত ৯৫ লাখ টাকার মধ্যে কোনো টাকা বরাদ্দ দেওয়া হয়নি। চিকিৎসা ব্যয় বাবদ প্রস্তাবিত ২১ লাখ ৫৪ হাজার টাকার মধ্যে কোনো টাকাই বরাদ্দ দেওয়া হয়নি।
অর্থ বরাদ্দের ক্ষেত্রে কয়েকটি শর্ত দেওয়া হয়েছে। শর্তগুলো হলোভ্যাকসিন ক্রয়ের ক্ষেত্রে সরকারি অর্থনৈতিক বিষয়সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটির অনুমোদন নিতে হবে। সরকারি ক্রয়সংক্রান্ত কমিটির অনুমোদন গ্রহণ করতে হবে। অর্থ বিভাগের মতামত গ্রহণপূর্বক ব্যাংক গ্যারান্টি চূড়ান্ত করতে হবে। অর্থ ব্যয়ের ক্ষেত্রে দ্য পাবলিক প্রকিউরমেন্ট অ্যাক্ট-২০০৬ এবং দ্য পাবলিক প্রকিউরমেন্ট রুলস-২০০৮ অনুসরণসহ যাবতীয় আর্থিক বিধিবিধান যথাযথভাবে পালন করতে হবে এবং ভ্যাকসিন ক্রয় ও কোল্ড চেইন ইকুইপমেন্ট, এডি সাইরিংগস বক্সেস ক্রয় বাবদ ব্যয় সম্পাদনের এক মাসের মধ্যে ব্যয় করা অর্থের সাপেক্ষে যথাযথ কর্র্তৃপক্ষের প্রত্যয়নসহ বিল-ভাউচার ও ব্যয় প্রতিবেদন অর্থ বিভাগে পাঠাতে হবে।
বিনামূল্যে করোনাভাইরাসের ভ্যাকসিনের জন্য গত ৫ নভেম্বর অক্সফোর্ডের তৈরি ভারতের সিরাম ইনস্টিটিউট, বাংলাদেশের বেক্সিমকো ফার্মা ও স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের মধ্যে ত্রিপক্ষীয় চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়। চুক্তি অনুযায়ী বাংলাদেশকে অক্সফোর্ডের ৩ কোটি ডোজ ভ্যাকসিন সরবরাহ করবে সেরাম ইনস্টিটিউট। সে প্রেক্ষিতে তিন কোটি ডোজ ভ্যাকসিনের মোট মূল্য দাঁড়ায় ১ হাজার ৫৮৯ কোটি ৪৩ লাখ ৭৫ হাজার টাকা। ভ্যাকসিনসহ অন্যান্য আনুষঙ্গিক উপকরণের জন্য ১ দশমিক ২৫ ইউএস ডলার ধার্য করা হয়। এতে প্রতি ডোজ ভ্যাকসিন বাবদ মোট খরচ দাঁড়ায় ৬ ডলার ২৫ সেন্ট।