নিউজ ডেস্ক:
আকাশপথে ভারতে এসে নামতে হলে আন্তর্জাতিক যাত্রীদের এতদিন যে ‘এয়ার সুবিধা’ ফরম পূরণ করতে হতো এবং ‘ফুল ভ্যাক্সিনেশনে’র প্রমাণ দিতে হতো, মঙ্গলবার (২২ নভেম্বর) থেকে তার আর কোনও প্রয়োজন হচ্ছে না। বাংলাদেশ থেকে ভারতে আসছেন যে যাত্রীরা,তারাও এ সুবিধা পাবেন।
ভারতের স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয় সোমবার রাতে এক নতুন নির্দেশিকায় জানিয়েছে— সারা পৃথিবীতে কোভিড-১৯ এর ‘ট্র্যাজেক্টরি’তে যে নিম্নমুখী ট্রেন্ড দেখা যাচ্ছে এবং টিকা নেওয়ার ক্ষেত্রে যে ধরনের অগ্রগতি হয়েছে, তার পরিপ্রক্ষিতেই এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।
কিন্তু একই সঙ্গে তারা জানিয়েছে, ‘তবে যে যাত্রীরা ভারতে এসে নামবেন— তারা পরিপূর্ণ (ফুল ডোজে) টিকাপ্রাপ্ত হবেন এটাই বাঞ্ছনীয়।’
বিশ্বব্যাপী কোভিড মহামারি শুরু হওয়ার কয়েক মাসের মধ্যেই, ২০২০ সালের আগস্টে ভারত ‘এয়ার সুবিধা’ নামে একটি বিশেষ পোর্টাল চালু করেছিল। ভারতে আসতে ইচ্ছুক যেকোনও যাত্রীর জন্যই, তা তিনি ভারতের নাগরিকই হোন বা বিদেশের, এই ফরমটি পূরণ করতেই হতো।
ভারতগামী বিমানে চেক-ইনের সময় সেটির প্রিন্ট আউট বা সফট কপি দেখানোও ছিল বাধ্যতামূলক। ফরমে নাম, পরিচয়, পাসেপোর্টের নম্বরের পাশাপাশি কোন ফ্লাইটে কোথা থেকে আসছেন, বিমানে আসন সংখ্যা কত— সবই জানাতে হতো যাত্রীদের। এই ফরম ঠিকঠাকভাবে পূরণ করতে না পারার কারণে বহু ভারতগামী যাত্রী ফ্লাইটে চেক-ইন করতে পারেননি, বা ফ্লাইট মিস করেছেন, এমন ঘটনাও ঘটেছে অজস্র।
বাংলাদেশ থেকে প্রতি বছর যে লাখ লাখ পর্যটক ভারতে আসেন, তাদের জন্যও ‘এয়ার সুবিধা’ হয়ে উঠেছিল একটা বাড়তি বিড়ম্বনার নাম।
গত বছর থেকে ‘এয়ার সুবিধা’র সঙ্গে যোগ হয় যাত্রার ৭২ ঘণ্টার মধ্যে করা নেগেটিভ পিসিআর টেস্ট রিপোর্ট যোগ করার নিয়ম। চলতি বছরের গোড়ার দিক থেকে অবশ্য তার পরিবর্তে ফুল ভ্যাক্সিনেশনের প্রমাণ যোগ করলেও চলতো। কিন্তু সব মিলিয়ে এর ফলে ভারতে যাওয়ার প্রক্রিয়াটা যে অনেক কঠিন ও জটিল হয়ে পড়েছিল, তাতে কোনও সন্দেহ নেই।
মঙ্গলবার (২২ নভেম্বর) মধ্যরাত থেকেই এই এয়ার সুবিধার পদ্ধতিটাই পুরোপুরি উঠে যাচ্ছে। ফলে আন্তর্জাতিক যাত্রীরা আবারও প্রায় বছরতিনেক আগের মতো অনায়াসে ও মসৃণভাবে ভারতের মাটিতে পা রাখবেন। যেহেতু বাংলাদেশ থেকেই ভারতে সবচেয়ে বেশি বিদেশি পর্যটক আসেন, তাই এর ফলে সবচেয়ে উপকৃত হবেন বাংলাদেশি নাগরিকরাই।
ভারতের স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের একজন কর্মকর্তা অবশ্য জানিয়েছেন, এয়ারলাইনগুলোকে আমরা অবশ্য বলেছি— ভারতগামী বিমানে একটু পর পর কোভিড বিধি সংক্রান্ত সতর্কতা, মাস্ক পরার প্রয়োজনীয়তা, এই নিয়ে অ্যানাউন্সমেন্ট করে যেতে হবে। যাত্রীদের কোভিড সচেতন রাখার কাজে ঢিলেমি দিলে চলবে না। তবে আমরা চেষ্টা করছি, তাদের যাত্রা যতটা সম্ভব মসৃণ করে তোলা যায়।
এয়ার সুবিধা ফরম পূরণের বা ভ্যাক্সিনেশনের প্রমাণ দেওয়ার আর কোনও দরকার না- থাকলেও বিমানযাত্রার সময় যদি দেখা যায়— কোনও যাত্রীর মধ্যে কোভিডের উপসর্গ লক্ষ্য করা যাচ্ছে, তাহলে ভারতের মাটিতে নামার পর তাকে ‘আইসোলেট’ বা আলাদা করে নিয়মমাফিক কোভিডের পরীক্ষা করানো হবে।
এছাড়া সব যাত্রীকেই বিমানবন্দরে রুটিন ‘থার্মাল স্ক্রিনিং’য়ের মধ্যে দিয়ে যেতে হবে, কারও শরীরের তাপমাত্রা স্বাভাবিকের চেয়ে বেশি হলে, পরীক্ষা করানো হবে তারও।