নিউজ ডেস্ক:
মহামারির এই সংকটময় মুহূর্তে কোভিড মোকাবিলায় ভারতকে ত্রাণ এবং শ্রীলঙ্কাকে ডলার সহায়তা দেওয়ার মাধ্যমে বাংলাদেশ তার অর্থনৈতিক অগ্রগতি প্রদর্শন করছে। একইসঙ্গে একে প্রতিবেশী দেশগুলোর সাথে মিত্রতা জোরদারে ব্যবহার করছে ঢাকা।
করোনায় পর্যটন-নির্ভর শ্রীলঙ্কার অবস্থা লন্ডভন্ড। বৈদেশিক বিনিময়ে প্রতিনিয়ত মান হারাচ্ছে দেশটির মুদ্রা রুপি। এমন পরিস্থিতিতে চলতি সপ্তাহের শুরুতে বাংলাদেশ সরকার শ্রীলঙ্কাকে তাদের মুদ্রা রুপির বিনিময়ে ২০ কোটি ডলার দেওয়ার ঘোষণা দিয়েছে।
বিপুল বৈদেশিক ঋণের বোঝা নিয়ে শ্রীলঙ্কা এখন ধুঁকছে। ঋণ শোধের ব্যাপক চাপ তৈরি হয়েছে দেশটিতে। অর্থনীতিতে দেখা দিয়েছে মারাত্মক সংকট। চলতি বছরে দেশটির ঋণের পরিমাণ ৩ দশমিক ৭ বিলিয়ন ডলার। বলা হচ্ছে, বাংলাদেশ থেকে এই অর্থ সহায়তা পাওয়ায় দেশটির ঋণের চাপ কিছুটা হলেও কমবে এবং তা অর্থনীতিতে প্রাণসঞ্চার করবে।
মুদ্রার এই বিনিময় এমন একটি লেনদেন, যার মাধ্যমে দু’পক্ষের মধ্যে সমপরিমাণ অর্থ বিনিময় হয়। কিন্তু সেটা হয় ভিন্ন ভিন্ন মুদ্রায়। এতে করে বৈদেশিক মুদ্রা ঋণ হিসেবে নেওয়ার বিষয়টি থাকে না এবং ব্যয় কমে যায়। এতে সুবিধাজনক হারে অপর দেশ থেকে আর্থিক সহায়তা পায় ক্ষতিগ্রস্ত দেশ।
২০১৯ সালে ইস্টার সানডের সময় শ্রীলঙ্কায় সিরিজ বোমা হামলা ও তাতে শত শত মানুষের প্রাণহানির পর গভীর সংকটে পড়ে শ্রীলঙ্কার অর্থনীতি। এরপর মহামারি করোনাভাইরাস আঘাত হানার পর দেশটির অর্থনীতিতে বিপর্যয় দেখা দেয়। এই মহামারি দেশটির পর্যটন খাত লন্ডভন্ড করে দিয়েছে। একইসঙ্গে ধুঁকতে শুরু করেছে অন্যান্য খাতও। এমন সময় পাশে দাঁড়িয়েছে বাংলাদেশ। তাই বাংলাদেশকে ধন্যবাদ জানিয়েছে শ্রীলঙ্কা।
অপরদিকে, মহামারি করোনার দ্বিতীয় দফার প্রকোপে বিপর্যস্ত ভারতে যে ৪০টি দেশ নানাভাবে ত্রাণ সহায়তা পাঠিয়েছে তার একটি বাংলাদেশ। গত ১৮ মে ঢাকা ভারতের কাছে বিভিন্ন অ্যান্টিভাইরাল ওষুধ আর কোভিড সুরক্ষা সরঞ্জামের ২ হাজার ৬৭২ বক্স হস্তান্তর করে। এর আগে গত ৬ মে ঢাকা করোনা চিকিৎসায় ব্যবহৃত ওষুধ রেমডেসিভিরের ১০ হাজার ডোজ ভারতকে সহায়তা হিসেবে দেয়।
মহামারি করোনার আঘাতে গোটা বিশ্ব বিপর্যস্ত হলেও চলতি অর্থবছরে বাংলাদেশের জিডিপি প্রবৃদ্ধি ৫ দশমিক ৮ শতাংশ প্রবৃদ্ধি হবে বলে পূর্বাভাস দেওয়া হয়েছে। শুধু অর্থনৈতিক কারণে নয়, ইন্দো-প্যাসিফিক অঞ্চলে বাংলাদেশের কৌশলগত অবস্থানের কারণে ঢাকা এখন যুক্তরাষ্ট্রের নজরেও রয়েছে। ওয়াশিংটন এখন নানাভাবে ঢাকার সঙ্গে কূটনৈতিক ও বাণিজ্যিক সম্পর্ক আরও জোরদারের চেষ্টা করছে।
ক্রমাগত অগ্রসরমাণ অর্থনৈতিক সক্ষমতা নিয়ে বিশ্বজুড়ে প্রশংসা কুড়িয়েছে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন বাংলাদেশ সরকার। এমনকি চিরপ্রতিদ্বন্দ্বী হিসেবে পরিচিত পাকিস্তানও এখন বাংলাদেশের এই অভাবনীয় সাফল্যের প্রশংসায় পঞ্চমুখ।
পাকিস্তানের শীর্ষস্থানীয় এক জাতীয় দৈনিকে প্রকাশিত কলামে বিশ্বব্যাংকে পাকিস্তানবিষয়ক সাবেক উপদেষ্টা আবিদ হাসান বলছেন, ‘বর্তমান সরকারসহ পাকিস্তানের প্রতিটি সরকার বিশ্বজুড়ে ভিক্ষার থালা নিয়ে ঘুরে বেড়িয়েছে। এটা অচিন্তনীয় যে গেল বিশ বছরে বাংলাদেশের মাথাপিছু জিডিপি পাকিস্তানের দ্বিগুণ হয়েছে। অতীতের মতো আগামীতেও যদি বাংলাদেশের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি এই হারে হতে থাকে, তাহলে ২০৩০ সালে বাংলাদেশ ‘ইকনোমিক পাওয়ার হাউসে’ পরিণত হবে। তখন পাকিস্তান যে বাংলাদেশের কাছে সাহায্যের জন্য হাত বাড়াবে সেই সম্ভাবনা যথেষ্ট।’
ভারতে উন্নয়নশীল দেশগুলো নিয়ে কাজ করা রিসার্চ অ্যান্ড ইনফরমেশন সিস্টেমের (আরআইএস) প্রবীর দে বলছেন, বাংলাদেশের অর্থনীতির এই প্রবৃদ্ধির মূল কারণ হিসেবে কাজ করেছে ইউরোপীয় ইউনিয়ন (ইইউ) থেকে পাওয়া অগ্রাধিকারমূলক বাণিজ্য সুবিধাসহ (জিএসপি) অন্যান্য বাণিজ্য সুবিধা।
প্রবীর দে বলেন, ‘ইইউ’র জিএসপি স্কিম থেকে অব্যাহতভাবে এই সুবিধা পাওয়ায় কৌশলগত রফতানির মাধ্যমে বাংলাদেশ দীর্ঘদিন ধরে উল্লেখযোগ্য হারে আয় করছে। একইসঙ্গে অনেক দেশ থেকে বেশ ভালো পরিমাণ রেমিটেন্সও পাচ্ছে বাংলাদেশ।’
বাংলাদেশ সিকিউরিটিস অ্যান্ড একচেঞ্জ কমিশনের কমিশনার মিজানুর রহমান দ্য প্রিন্টকে জানিয়েছেন, ২০১০ সালের ৯ বিলিয়ন মার্কিন ডলারের জায়গায় ২০২১ সালে এসে বাংলাদেশের বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভের পরিমাণ এখন ৪৫ বিলিয়ন ডলার। এছাড়া রেমিটেন্স ঠেকেছে ২০০ বিলিয়ন ডলারে।
তিনি বলেন, ‘দায়িত্ব নিয়ে প্রতিবেশীদের সঙ্গে সম্পর্কে এবং যাদের সাহায্যের প্রয়োজন তাদের পাশে দাঁড়ানোয় বিশ্বাসী বাংলাদেশ। অবদমিত না করে প্রতিবেশীদের সঙ্গে বোঝাপড়া ও সম্পর্কের দিকেই নজর বাংলাদেশের। বাংলাদেশ এখন এশিয়ার নয়া রয়েল বেঙ্গল টাইগার।’