- সোয়া কোটি গরিব পরিবারের তালিকা প্রায় চূড়ান্ত
- ২০ মার্চ আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন
- টিসিবির মাধ্যমে দেয়া হবে সয়াবিন তেল, চিনি, ডাল, ছোলা, পেঁয়াজ ও খেজুরের মতো সামগ্রী
আসন্ন রমজান মাসে সারাদেশের স্বল্প আয়ের গরিব পরিবারগুলোকে ভর্তুকি মূল্যে খাদ্য সহায়তা দিতে ব্যাপক প্রস্তুতি গ্রহণ করা হয়েছে। খাদ্য সহায়তার এই কর্মসূচীর আওতায় একজন ভোক্তা স্বল্পমূল্যে পাবেন সয়াবিন তেল, চিনি, ডাল, ছোলা, পেঁয়াজ ও খেজুরের মতো পণ্য সামগ্রী। সুনির্দিষ্ট কিংবা টার্গেট পরিবারের কাছে এ সহায়তা পৌঁছাতে দেয়া হবে ডিজিটাল ফ্যামিলি কার্ড। ইতোমধ্যে ৭৫ লাখ পরিবারের তালিকা সংরক্ষণ করা হয়েছে। নতুন করে যুক্ত হবে আরও ২৫ থেকে ৫০ লাখ পরিবার। এতে সরকারের খাদ্য সহায়তা খাতে শুধু রোজায় প্রায় ১ হাজার ৫০০ কোটি টাকার ভর্তুকি প্রয়োজন হবে। দেশের বিরাট
জানা গেছে, করোনা পরিস্থিতিতে দরিদ্র জনগোষ্ঠীর আয় কমে যাওয়া ও সম্প্রতি দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধির প্রেক্ষাপটে রমজান সামনে রেখে সরকারের পক্ষ থেকে এই উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়েছে। প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের নির্দেশে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের অধীনস্থ বাজার নিয়ন্ত্রণকারী সংস্থা ট্রেডিং কর্পোরেশন অব বাংলাদেশ-টিসিবি সারাদেশে ভর্তুকি মূল্যের এসব খাদ্যসামগ্রী সরবরাহ করবে। পুরো কর্মসূচীটি সঠিকভাবে পরিপালন করা হচ্ছে কি না- তা স্বয়ং প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বিশেষ নজর রাখছেন বলে জানিয়েছে সংশ্লিষ্ট সূত্র। এ কারণে খাদ্য সহায়তা কর্মসূচীটি সফল করতে রাষ্ট্রের সর্বোচ্চ পর্যায় থেকে নিবিড় মনিটরিং করা হচ্ছে। রোজার আগে ও মাঝে মোট দুইবার খাদ্য সহায়তা পাবেন দেশের স্বল্প আয়ের সাধারণ পরিবার।
যাদের যেসব পণ্য দেয়া হবে ॥ টিসিবির ভর্তুকি মূল্যে খাদ্য সরবরাহ কর্মসূচীর আওতায় প্রতিটি পরিবার রমজানের আগে ২০ মার্চ থেকে একবার দুই লিটার সয়াবিন তেল, দুই কেজি চিনি, দুই কেজি মসুর ডাল ও এক কেজি ছোলা পাবে। আবার দশ রমজানের মধ্যে আরেক দফা এসব পণ্য দেয়া হবে পরিবারগুলোকে। এছাড়া, কোন কোন এলাকায় আমদানি করা পেঁয়াজ ও খেজুরও দেয়া হবে। প্রতি দফায় এসব পণ্য পেতে দরিদ্র পরিবারগুলোর খরচ হবে ৩০০ থেকে ৩৫০ টাকা। চলতি মাসের ৩ ফেব্রুয়ারি প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের সিনিয়র সচিব মোঃ তোফাজ্জল হোসেন মিয়ার সভাপতিত্বে এক সভায় কোভিডের সময় নগদ প্রণোদনা পাওয়া ৩৫ লাখ দরিদ্র কর্মহীন পরিবারকে টিসিবির ভর্তুকি মূল্যের পণ্য পৌঁছে দেয়ার সিদ্ধান্ত হয়। পরে বিষয়টি নিয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে আলোচনা করলে প্রধানমন্ত্রী আসন্ন রমজানে এক থেকে সোয়া কোটি পরিবারকে খাদ্য সহায়তা দেয়ার নির্দেশনা দিয়েছেন বলে জানা গেছে। এছাড়া সম্প্রতি বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ে তপন কান্তি ঘোষের সভাপতিত্বে এ সংক্রান্ত আরেকটি বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। সেই বৈঠকে সারাদেশের বিভিন্ন জেলা থেকে ২৩ জন জেলা প্রশাসক অংশগ্রহণ করেন। ওই বৈঠকে কারা পাবেন তাদের বিষয়ে বিস্তারিত আলোচনা করা হয়।
এদিকে, সরকারের এ সিদ্ধান্তকে ইতিবাচক হিসেবে দেখছেন বিশ্লেষকরা। তারা বলছেন, কোভিডে যখন দরিদ্র মানুষের আয় কমে গেছে এবং বাজারে পণ্যমূল্য বেড়ে গেছে, তখন এক থেকে সোয়া কোটি কোটি পরিবার, তথা প্রায় সাড়ে পাঁচ কোটি মানুষকে ভর্তুকি মূল্যে খাদ্য সরবরাহ করার সিদ্ধান্ত খুবই ইতিবাচক। তবে, সঠিকভাবে উপকারভোগী যাচাই-বাছাই করাই হবে মূল চ্যালেঞ্জ। স্বল্প আয়ের মানুষের বিষয়টি বিবেচনায় নিয়ে সরকারের এই উদ্যোগ সঠিকভাবে বাস্তবায়ন হওয়া প্রয়োজন। এ প্রসঙ্গে কনজ্যুমারস এ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ক্যাব) চেয়ারম্যান গোলাম রহমান জনকণ্ঠকে বলেন, রমজানে এক থেকে সোয়া কোটি পরিবারকে ভর্তুকি মূল্যে টিসিবির পণ্য সরবরাহ করার উদ্যোগটি খুবই ভাল। কিন্তু তালিকাটি এমনভাবে করতে হবে যাতে শুধুমাত্র যাদের সহায়তা প্রয়োজন তারাই এখানে আসেন। এ কারণে উপকারভোগী সঠিকভাবে নির্ধারণ করতে হবে। তবে রমজানে সার্বিকভাবে যেন পণ্যমূল্য না বাড়ে, সরকারকে সেদিকেও কঠোরভাবে নজরদারি করতে হবে। নিত্যপণ্যের আমদানি ও সরবরাহ ব্যবস্থা ঠিক রাখতে হবে।
জানা গেছে, ২০ ফেব্রুয়ারির মধ্যে জেলা প্রশাসকরা উপকারভোগীর সংখ্যা টিসিবিকে জানাবেন। টিসিবির পণ্য জেলা পর্যায়ে সংরক্ষণের জন্য গুদাম নির্ধারণ করবেন এবং জেলা প্রশাসকদের চাহিদা অনুযায়ী টিসিবি নির্ধারিত গুদামে পণ্য পাঠাবে। অতিরিক্ত জেলা প্রশাসকরা তাদের বরাদ্দ পত্র অনুযায়ী পণ্য বুঝে নিয়ে রিসিভ কপি টিসিবিকে দেবেন। উপকারভোগীদের মধ্যে টিসিবির পণ্য বিতরণের জন্য জেলা প্রশাসকরা ক্রেতার সংখ্যা, বিক্রয়ের সময় ও স্থান নির্ধারণ করে কোন তারিখে, কোথায়, কতজন উপকারভোগীর মধ্যে পণ্য বিতরণ করা হবে, তার ক্যালেন্ডার করবেন। এই ক্যালেন্ডারের কপি বাণিজ্য মন্ত্রণালয়, টিসিবি, পুলিশ সুপার, উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা, ইউপি চেয়ারম্যান, মেম্বার, পৌরসভার মেয়র, ওয়ার্ড কমিশনারদের দেবেন। উপজেলা নির্বাহী অফিসার পণ্য বিক্রির তারিখ, সময় ও স্থান সম্পর্কে ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান, মেম্বার, ইউনিয়ন ভূমি সহকারী কর্মকর্তা এবং অন্যান্য সকল মাধ্যম ব্যবহার করে পণ্য বিক্রির ৪ দিন আগেই ডিজিটাল কার্ড হোল্ডারদের অবহিত করবেন।
জানা গেছে, এপ্রিলের প্রথম সপ্তাহে শুরু হতে যাচ্ছে পবিত্র রমজান মাস। রোজা আসলেই সিন্ডিকেট ব্যবসায়ীদের অপতৎপরতা শুরু হয়। পণ্যমূল্য বাড়াতে কারসাজির আশ্রয় নিয়ে থাকে। এতে করে বাজার অস্থিতিশীল হয়ে উঠে। তবে এবার অপর তিনপণ্য বিশেষ করে পেঁয়াজ, ছোলা এবং খেজুরের মজুদ ও আমদানি পরিস্থিতি ভালো অবস্থায় রয়েছে বলে জানিয়েছে ট্রেড এ্যান্ড ট্যারিফ কমিশন। রমজান মাসে ভোগ্যপণ্যের দাম ভোক্তাদের নাগালের মধ্যে রাখতে ১৫ মন্ত্রণালয়, সংশ্লিষ্ট দফতর, অধিদফতর এবং বেসরকারীখাত একযোগে কাজ করবে। এলক্ষ্যে স্থানীয় সরকার, বাণিজ্য মন্ত্রণালয়, খাদ্য, বিদ্যুত সড়ক পরিবহন ও মহাসড়ক বিভাগ, শিল্প, স্বাস্থ্য সেবা বিভাগ, ধর্ম, রেলপথ, নৌ-পরিবহন ও বিমান পরিবহন ও পর্যটন, কৃষি, বাংলাদেশ ব্যাংক, জাতীয় রাজস্ব বোর্ড, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়, ঢাকা ওয়াসা, ঢাকা উত্তর ও দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশন এবং এফবিসিসিআইয়ের উদ্যোগে একটি সমন্বিত কর্মকৌশল নির্ধারণ করা হয়েছে। এর মূল্য লক্ষ্য রমজানে দ্রব্যমূল্য স্থিতিশীল রাখা। এর পাশাপাশি প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় থেকেও দ্রব্যমূল্য ও বাজার পরিস্থিতি মনিটরিং করা হবে। আসন্ন রমজানে দ্রব্যমূল্য স্থিতিশীল রাখতে সব ধরনের উদ্যোগ থাকবে। গত কয়েক মাম ধরে চাল, ভোজ্যতেল, মুরগি, আটা ও মসুর ডালের দাম উর্ধমুখী। আগামীতে দাম আরও বাড়ার আশঙ্কা করা হচ্ছে। অন্যদিকে মার্চ-এপ্রিল মাসের আগেই দেশীয় পেঁয়াজ কৃষকের ঘরে আসবে। ইতোমধ্যে নতুন পেঁয়াজ বাজারে বিক্রি হচ্ছে। এছাড়া ওই সময় শীতের সবজিও বাজারে থাকবে। এর পাশাপাশি ও ছোলা ও খেজুরের সারাবছর চাহিদা থাকায় আমদানি ও মজুদ পরিস্থিতি ভাল অবস্থায় রয়েছে।