নিউজ ডেস্ক:
রাজধানীর বেইলি রোডের আগুন লাগা বাণিজ্যিক ভবনটিতে জরুরি অগ্নিনির্গমন পথ না থাকায় ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিনি গতকাল শুক্রবার সকালে রাজধানীর বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে জাতীয় বীমা দিবস উপলক্ষে আয়োজিত অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির ভাষণে এ নিয়ে কথা বলেন।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, ‘আমরা অগ্নিনির্বাপক যন্ত্রের ব্যবস্থা করেছি, তবু মানুষ এতটা সচেতন নয়। বেইলি রোডেরটি বহুতল ভবন হলেও সেখানে অগ্নিনির্বাপণ ব্যবস্থা ছিল না।
শেখ হাসিনা বলেন, তিনি সব সময় স্থাপত্যবিদদের অনুরোধ করেন ভবন বা স্থাপনা তৈরির সময় যেন খোলা বারান্দা বা ভেন্টিলেশন এবং অগ্নিনির্বাপণের ব্যবস্থা রাখা হয়। কিন্তু স্থাপত্যবিদরা সেভাবে নকশা করেন না, আবার মালিকরা এক ইঞ্চি জায়গাও ছাড়তে চান না। ৪৬ জন মানুষ মারা গেছে। এর চেয়ে দুঃখ ও কষ্টের আর কী হতে পারে! অথচ সরকার বারবার ফায়ার এক্সটিঙ্গুইশার যন্ত্র লাগানোসহ অগ্নিকাণ্ডের সময় নিরাপদে বের হওয়ার পথের ব্যবস্থা রাখার নির্দেশ দিলেও তা মানা হচ্ছে না।
প্রধানমন্ত্রী মন্তব্য করেন, ‘দেখা যাবে এখানে কোনো বীমাও করা ছিল না। কাজেই বিনিময়ে কিছু পাবেও না। এ ক্ষেত্রে মানুষ যাতে সচেতন হয় সে জন্য তিনি বীমাসংশ্লিষ্ট মহলকে তাগিদ দেন। প্রকৃতই যাদের প্রাপ্য তারা যেন দ্রুত ও সহজে বীমার পাওনা পেতে পারে।
এ প্রসঙ্গে একটি গার্মেন্টস কারখানায় বীমার দাবি আদায়ে প্রতারণার কৌশলের ঘটনা তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী দাবি মেটানোর ক্ষেত্রে সতর্ক হওয়ার পরামর্শ দেন।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, “সবাইকে সচেতন করতে ‘বাংলাদেশ ইনস্যুরেন্স অ্যাসোসিয়েশন ও বীমা নিয়ন্ত্রণ সংস্থা আইডিআরএ’কে আরো জোরালো ভূমিকা রাখার জন্য আমি আহ্বান জানাচ্ছি।”
ব্যাংকের মাধ্যমে বীমার উদ্বোধন
জাতীয় বীমা দিবস উপলক্ষে আয়োজিত এ অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী ব্যাংকের মাধ্যমে বীমা করার জন্য ‘ব্যাংকাস্যুরেন্স’ এর উদ্বোধন করেন। এ পদ্ধতির মাধ্যমে
ব্যাংকের গ্রাহকরা প্রয়োজনানুযায়ী ব্যাংক থেকেই বীমা পলিসি নিতে পারবেন। প্রধানমন্ত্রী বীমা দাবি পরিশোধের ভিত্তিতে চারটি প্রতিষ্ঠানকে সম্মাননা স্মারক প্রদান করেন।
তিনি দিবসটি উপলক্ষে স্কুল-কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয় পর্যায়ে আয়োজিত রচনা প্রতিযোগিতার বিজয়ীদের মধ্যে পুরস্কার বিতরণ করেন।
অর্থমন্ত্রী আবুল হাসান মাহমুদ আলী অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন। এতে বীমা শিল্প এবং ‘ব্যাংকাস্যুরেন্স’-এর ওপর নির্মিত পৃথক দুটি প্রামাণ্যচিত্র প্রদর্শিত হয়।
উল্লেখ্য, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ১৯৬০ সালের ১ মার্চ পাকিস্তানের আলফা ইনস্যুরেন্স কম্পানির এই অঞ্চলের প্রধান হিসেবে যোগ দিয়েছিলেন। তাঁর এই কাজে যোগ দেওয়ার দিনটিকে স্মরণীয় করে রাখতে ২০২০ সালে প্রতিবছর ১ মার্চকে জাতীয় বীমা দিবস ঘোষণা করে সরকার। অর্থ মন্ত্রণালয়ের আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগের উদ্যোগে উদযাপিত দিবসটির এবারের প্রতিপাদ্য নির্ধারণ করা হয়েছে, ‘করব বীমা গড়ব দেশ, স্মার্ট হবে বাংলাদেশ’।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আমাদের দেশ প্রাকৃতিক দুর্যোগের দেশ। মানুষকে একটু সঞ্চয়মুখী করা, উৎপাদন বৃদ্ধি করা এবং নিরাপত্তা দেওয়া জরুরি। বীমা মানুষকে নিরাপদ জীবন দিতে পারে।’
অগ্নিঝরা মার্চের প্রথম দিনটিতে শুরুতেই প্রধানমন্ত্রী জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান, মুক্তিযুদ্ধের ৩০ লাখ শহীদ ও সম্ভ্রমহারা দুই লাখ নারী এবং ’৭৫-এর ১৫ আগস্ট ও জাতীয় চার নেতাসহ নভেম্বরের শহীদদের শ্রদ্ধাভরে স্মরণ করেন। সূত্র : বাসস