নিজস্ব প্রতিবেদক, বড়াইগ্রাম:
বড়াইগ্রামে নারী দাদন ব্যবসায়ী সাথী আক্তারের দৌরাত্মে অতিষ্ঠ হয়ে উঠেছে এলাকার মানুষেরা। কোন নিয়ম নীতির তোয়াক্কা না করে মর্জিমাফিক সুদ আদায়, ফাঁকা চেক ও নন জুডিশিয়াল স্ট্যাম্পে স্বাক্ষর নিয়ে পরে ইচ্ছেমত টাকার অংক বসিয়ে মিথ্যা মামলা দিয়ে হয়রানী ও অপমান-অপদস্ত করায় স্থানীয় অসংখ্য পরিবার বর্তমানে নিঃস্ব হওয়ার উপক্রম হয়েছে। কেউ কেউ নির্যাতনে ভিটেবাড়ি ছেড়ে দেশান্তরীও হয়েছেন। এ অবস্থায় তার দৌরাতœ থেকে রক্ষা পেতে পুলিশ প্রশাসনসহ সংশ্লিষ্টদের দ্রæত হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন ভ‚ক্তভোগীরা। অভিযুক্ত দাদন ব্যবসায়ী সাথী আক্তার উপজেলার বাগডোব গ্রামের মকবুল হোসেনের মেয়ে।
বাগডোব গ্রামের জহুরুল ইসলাম জানান, তিনি ১৭ মাস আগে ফাঁকা চেক ও স্ট্যাম্পে সই দিয়ে মেয়ের বিয়ের জন্য সাথী আক্তারের কাছ থেকে ৯০ হাজার টাকা ঋণ নেন। পরে মাসিক ১৯ হাজার টাকা হারে আট মাসে এক লাখ ৫২ হাজার টাকা সুদ দেন তিনি। এরপর আর্থিক সঙ্কটে কয়েক মাস তিনি সুদ দিতে পারেননি। পরে একসঙ্গে ঋণের ৯০ হাজার টাকা পরিশোধ করতে গেলে সাথী সুদাসলে মোট পাঁচ লাখ টাকা দাবি করে। ঋণ নেয়ার ১৪ মাসের মাথায় সুদাসলে মোট ১২ লাখ টাকা দাবি করে সাথী। কিন্তু তিনি তা কোন ভাবেই দিতে পারবেন না বলে জানালে তার দেয়া ইসলামী ব্যাংকের একটি চেক যার নং গঈও-৯৯৬৯৮০১ চাটমোহর শাখা থেকে ডিজঅনার করিয়ে ১৫ লাখ টাকা দাবি করে আইনজীবির মাধ্যমে লিগ্যাল নোটিশ পাঠিয়েছেন সাথী আক্তার।
অনুসন্ধানে জানা গেছে, শুধু তিনিই নন, উপজেলার খাকসা গ্রামের তফিজউদ্দিন ৫৫ হাজার টাকা ঋণ নিয়ে কয়েকগুণ পরিশোধ করলেও সাথী তার কাছে আরো দেড় লাখ টাকা দাবি করে। কিন্তু সে টাকা দিতে না পারায় সাথীর নির্যাতনে গত কয়েক মাস ধরে তিনি স্ত্রী-সন্তান নিয়ে বাড়িঘর ফেলে নিরুদ্দেশ হয়েছেন। ভরতপুর পূর্বপাড়া গ্রামের সৈয়দ আলীর ছেলে আজিজুল হক পটল মিয়া জানান, তিনি গত ১০ মাস আগে সাথীর কাছ থেকে ২০ হাজার টাকা ঋণ নেন। প্রতি মাসে চার হাজার টাকা করে ৬ মাস সুদ দেন। বর্তমানে সে ৬ মাসের সুদ পাওয়ার কথা অস্বীকার করে পুরো ১০ মাসের সুদসহ মোট ৬০ হাজার টাকা দাবি করে আসছেন। বাগডোব গ্রামের চাঁদ সরকারের ছেলে বাচ্চু মিয়া জানান, তিনি এক বছর আগে মাত্র ৫ হাজার টাকা নেন। এরপর সপ্তাহে এক হাজার টাকা করে মোট ১০ হাজার টাকা সুদ দেন তিনি। তারপর মূল টাকা দিতে চাইলেও সাথী নেননি। বর্তমানে সুদাসলে মোট এক লাখ টাকা দাবি করছে ওই দাদন ব্যবসায়ী। এমন অনেকেই সাথী’র সুদের জালে পিষ্ট হয়ে পথের ফকির হওয়ার উপক্রম হয়েছে।
ভুক্তভোগীরা জানান, সচরাচর টাকার খুব প্রয়োজন হলে এমনিতে কেউ ধার না দেয়ায় বাধ্য হয়েই তারা সাথী আক্তারের কাছ থেকে ঋণ নিয়েছিলেন। এ সময় টাকা পাওয়ার জন্য চেক ও নন জুডিশিয়াল স্ট্যাম্পে স্বাক্ষর দিয়ে তারা টাকা নেন। চক্রবৃদ্ধি হারে বিপুল পরিমাণ সুদ পরিশোধ করতে না পারলে সাথী আক্তার তাদের দেয়া চেক ও স্ট্যাম্পে মুল টাকার অঙ্ক বহুগুণ বাড়িয়ে লিখে নিয়ে তাদেরকে সে টাকা পরিশোধ করতে বাধ্য করেন। তার খপ্পড়ে পড়ে অনেক মানুষ সর্বস্বান্ত হলেও প্রশাসন কোন ব্যবস্থা নেয়নি বলে অভিযোগ তাদের।
এ ব্যাপারে ভ‚ক্তভোগী জহুরুল ইসলাম বলেন, মাত্র ৯০ হাজার টাকা নিয়ে দেড় লাখ দিয়েছি। এখন ১৫ লাখ টাকার জন্য লিগ্যাল নোটিশ দিয়েছে। আমার সহায় সম্পদ সব বিক্রি করেও ১৫ লাখ টাকা দেয়া সম্ভব না। এখন আমাকে জেলের ভয় দেখাচ্ছে। এ অবস্থায় স্ত্রী-সন্তান নিয়ে একযোগে আত্মহত্যা করা ছাড়া আমার সামনে আর কোন পথ খোলা নেই।
এ ব্যাপারে দাদন ব্যবসায়ী সাথী আক্তার বলেন, জহুরুলকে তিনি ৯০ হাজার নয়, পনেরো লাখ টাকা ধার দিয়েছিলেন। সে টাকাই তিনি দাবি করেছেন। তবে অন্য ভ‚ক্তভোগীদের অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি দাবি করেন যে, এগুলো সব তার বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র।
বড়াইগ্রাম থানার ওসি আবু সিদ্দিক জানান, এ ব্যাপারে খোঁজ নিয়ে অবশ্যই প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া হবে।
আরও দেখুন
বিএনপির সাবেক এমপি আমিনুল ইসলামের বিরুদ্ধে হামলা-দখলের অভিযোগ
নিজস্ব প্রতিবেদক চাঁপাইনবাবগঞ্জ,,,,,,,,,,চাঁপাইনবাবগঞ্জের নাচোলে বিএনপির জাতীয় নির্বাহী কমিটির শিল্প ও বানিজ্য বিষয়ক সহ-সম্পাদক ও সাবেক …