শুক্রবার , নভেম্বর ১৫ ২০২৪
নীড় পাতা / জেলা জুড়ে / বড়াইগ্রাম / বড়াইগ্রামে সুদি মহাজনের চাপে এলাকা ছাড়া ১০ পরিবার

বড়াইগ্রামে সুদি মহাজনের চাপে এলাকা ছাড়া ১০ পরিবার

নিজস্ব প্রতিবেদক, বড়াইগ্রাম:
নাটোরের বড়াইগ্রামে পারিবারিক অভাবে পরে চরা সুদে টাকা নিয়ে তার তিনগুন পরিশোধ করার পরেও শোধ হয় না মূল টাকা। পরে সেই টাকা পরিশোধ করতে সুদি মহাজনের চাপের কারনে ১০টি পরিবার এলাকা ছেড়ে পালিয়ে রয়েছেন। উপজেলার বড়াইগ্রাম ইউনিয়নের রাজাপুর এলাকায় এ ঘটনা ঘটেছে। এ ঘটনায় বৃহস্পতিবার রাজাপুর এলাকার রব্বেল আলীর ছেলে মুকুল আলী নামে এক ক্ষতিগ্রস্থ জেলা প্রশাসক, পুলিশ সুপার, ইউএনও এবং বড়াইগ্রাম থানায় লিখিত অভিযোগ করেছেন।

অভিযোগ সুত্রে জানাযায়, উপজেলার মাড়িয়া গ্রামের সোহরাব সরকারের ছেলে মাসুদ সরকার (৩৫), আলী মন্ডলের ছেলে আকাব্বর মন্ডল (৫০) ও রাজাপুর গ্রামের জফের ডাক্তারের ছেলে শফিকুল ইসলাম (৪০) মিলে দীর্ঘদিন থেকে এলাকায় একটি সুদের সমিতি পরিচালনা করে আসছেন। যেখান থেকে অস্বাভাবিক চরা সুদে মানুষকে ঋণ দেয়া হয়। আর সেই ঋণের সুদ পরিশোধে ব্যর্থ হলে চলে নিজস্ব বাহিনী দিয়ে নির্যাতন।
সেখান থেকে ২০২০ সালের শেষ দিকে অভাবে পরে মাসিক ১০ হাজার টাকা সুদের শর্তে ৫০ হাজার টাকা ঋণ নেন স্থাণীয় মকুল আলী। পরে প্রতি মাসে ১০ হাজার টাকা করে দিয়ে মোট এক লাখ ২০ হাজার পরিশোধ করেন। আবার অভাবে পরে টাকা দিতে দেরি হলে গত মার্চ মাসে উপজেলার জালশুকা বাজারের শফিকুল ইসলামের মুদি দোকানে আটকে এক লক্ষ ৫০ হাজার টাকা দাবী করেন তারা। তিনি দিতে অস্বীকার করলে তার থেকে জোর করে দু’টি সাদা চেকে স্বাক্ষর নিয়ে রেখে দেয় একই সাথে একশত পঞ্চাশ টাকা মুল্যের দুটি সাদা স্ট্যাম্পে সাক্ষর নেয়। সেখান থেকে ছাড়া পেয়ে টাকা পরিশোধে অক্ষমতা এবং তাদের মারপিটের ভয়ে এলাকা থেকে পালিয়ে আত্মগোপনে আছেন মুকুল আলী। পরে ওই চক্র তার দু’টি চেকে ৬ লাখ টাকা লিখে মামলা করেন শফিকুল ইসলাম।

মুকুল আলী মোবাইল ফোনে এই প্রতিবেদককে বলেন, সুদি মহাজনের ভাড়া করা সন্ত্রাসীদের চাপ আর আদালতে মামলা। এই উভয় মুখি চাপ থেকে বাঁচতে আমার আত্মহত্যা ছাড়া আর কোন পথ খোলা নাই।

শুক্রবার সরজমিন ওই এলাকা ঘুরে স্থাণীয়দের সাথে কথা বলে জানা যায়, প্রায় ১০-১২ বছর আগে মাসুদ সরকার, আকাব্বর মন্ডল ও শফিকুল ইসলাম সমিতির নামে উচ্চ সুদের কারবার শুরু করেন। তাদের দেয়া ঋণের নিরাপত্তার জন্য স্বাক্ষরিত সাদা চেক (টাকার অংক না লিখে) জমা নেয়া হয়। পরে সেখানে ইচ্ছেমত টাকার অংক লিখে আদালতে চেক ডিজ অর্নার মামলা দেয়া হয়।

এদের নিকট থেকে উপজেলার গোয়ালফা গ্রামের মরু প্রামানিকের স্ত্রী মুর্শিদা বেগম, খিদিরপুর গ্রামের ফালু মিয়ার ছেলে শের মোহাম্মদ, জলন্দা গ্রামের কুতুব আলীর ছেলে রাজন আলী, আব্দুল বাতেনের ছেলে রিপন হোসেন, শুকুর আলীর ছেলে মিজান হোসেন, হাফিজ উদ্দিনের ছেলে হেলাল উদ্দিন, আবু সাঈদের ছেলে সাদ্দাম হোসেন, ফুলবতি গ্রামের ফরিদ মুন্সির ছেলে লিটন হোসেন, মাড়িয়া গ্রামের আব্দুল গনির ছেলে আলম হোসেন চরা সুদে ঋণ নিয়েছেন। পরে বিভিন্ন সময় সুদ দিয়ে আসলের চেয়ে অধিক পরিমান টাকা পরিশোধ করেছেন। এরপরও টাকার চাপ এবং হুমকি থেকে বাঁচতে তারা পরিবার নিয়ে এলাকা ছেড়ে পারিয়েছেন। তাদের অধিকাংশের নামেই চেক জালিয়াতি মামলা দেয়া হয়েছে।

জলন্দা এলাকার ফায়েজ উদ্দিন বলেন, এরা সবাই চিহ্নিত সুদি ব্যবসায়ী। এদের খপ্পরে পরে অনেক মানুষ সর্বশান্ত হয়েছেন। এখই এদের বিরুদ্ধে প্রচলিত আইনের আওতায় এনে বিচার করা উচিৎ।

অভিযুক্ত শফিকুল ইসলাম বলেন, আমার নিকট থেকে মুকুল আলী ছয় লক্ষ টাকা ধার হিসেবে নিয়েছিল। সেটা পরিশোধ না করায় আদালতের আশ্রয় নিয়েছি। জোর করে স্বাক্ষর নেওয়ার অভিযোগ সঠিক নয়।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একাধিক ব্যাক্তি বলেন, এই তিন সুদি মহাজন এলাকার প্রভাবশালী হওয়ায় কেউ মুখ খুলতে পারেন না। এরা ইতিমধ্যে অনেক মানুষেরে জমি জোর পুর্বক সুদের টাকার বিপরিতে রেজিষ্ট্রি করে নিয়েছেন।

অপর অভিযুক্ত মাসুদ সরকার ও আকাব্বর বলেন, আমরা কয়েকজন মিলে একটি সমিতি করি। সেই সমিতির টাকা সুদের উপর লাগিয়ে যে লাভ হয় তা দিয়ে বছর শেষে দেশের বিভিন্ন স্থানে বেড়াতে যাই। আমি শফিকুল ইসলাম এবং আকাব্বর আলী এই সমিতি পরিচালনা করি।
বড়াইগ্রাম থানার পরিদর্শক (তদন্ত) আব্দুর রহিম বলেন, অভিযোগ পেয়েছি। তদন্ত করে আইনানুগ ব্যাবস্থা গ্রহন করা হবে।

আরও দেখুন

রাণীনগরে স্বর্ণ ব্যবসায়ীকে মারপিট করে  ১৫ভরি স্বর্ণের ও 

১০০ভরি চান্দির গহনা ছিনতাই নিজস্ব প্রতিবেদক রাণীনগর,,,,,,,,,,  নওগাঁর রাণীনগরে দোকান থেকে বাড়ী ফেরার  পথে পথ …