নিজস্ব প্রতিবেদক, বড়াইগ্রাম:
বড়াইগ্রামের দিঘলকান্দি বাজার সংলগ্ন দাখিল মাদরাসা মাঠে নির্মাণ সামগ্রী রেখে একাধিক রাস্তার সংস্কার কাজ চলছে। এতে বিষাক্ত ধোঁয়া, ধূলাবালি ও বিটুমিন (পিচ) গলানোর দুর্গন্ধে চরম স্বাস্থ্য ঝুঁকিতে পড়েছেন বাজারের ক্রেতা-বিক্রেতাসহ স্থানীয় বাসিন্দারা। একই সঙ্গে খেলাধুলার সুযোগ থেকে বঞ্চিত হচ্ছে মাদ্রাসার শিক্ষার্থীসহ এলাকার তরুণ সমাজ।
স্থানীয়রা জানান, এক মাস ধরে ঠিকাদার আব্দুল আজিজ খাকসা তেতুলতলা থেকে দিঘলকান্দি লেউতির মোড় পর্যন্ত রাস্তা সংস্কারের জন্য মাঠে নির্মাণ সামগ্রী রেখেছেন। ইতিমধ্যে সে রাস্তার কাজ শেষ হলেও তিনি এখান থেকেই ৮-১০ কি.মি. দুরের উপশহরের রাস্তার কাজ করছেন। একটানা কাজ করায় বিষাক্ত ধূঁয়া, ধূলাবালি ছড়িয়ে পড়ে মাঠ সংলগ্ন বাজারের ব্যবসায়ী ও ক্রেতাসহ স্থানীয়রা পড়েছেন চরম স্বাস্থ্য ঝুঁকিতে। এছাড়া মসজিদ থেকে মাত্র ২০ হাত দুরে এসব কর্মযজ্ঞ চলায় মুসল্লীরাও বেকায়দায় পড়েছেন।
বৃহস্পতিবার সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, গোটা মাঠ জুড়ে বালি, পাথর। বারান্দায় স্তুপ করে রাখা হয়েছে চুলায় জাল দেয়ার ঝুট কাপড়। মাঠে চুলা তৈরী করে পিচ গলানোসহ মিক্সার মেশিনে পিচের সঙ্গে পাথর বালি মেশানো হচ্ছে। চুলা ও মিক্সার মেশিনের কালো ধোঁয়াসহ বালি ও ছাই উড়ে চারদিকে ছড়িয়ে পড়ছে। প্রতিনিয়ত নাকে মুখে ঢুকছে সেসব ধোঁয়া ও বালি। এ সময় শিশু বাচ্চাদের নিয়ে আশেপাশের বাড়ির মহিলাদের বাড়ি ছেড়ে দুরে গিয়ে বসে থাকতে দেখা গেছে।
এ ব্যাপারে দিঘলকান্দি গ্রামের গৃহবধু শাহনাজ খাতুন বলেন, সব সময় বাতাসে বালি উড়ে এসে ঘরের সব আসবাবপত্র, কাপড়চোপড়, খাদ্যদ্রব্যে পড়ছে। এভাবে নাকে মুখে ধূঁয়া ও বালি ঢুকে বাচ্চারাও অসুস্থ হয়ে পড়ছে।
দিঘলকান্দি বাজারের গ্রাম্য চিকিৎসক বয়েন উদ্দিন জানান, ধূঁয়া আর বালির উড়াউড়িতে বাজারে টেকাই দায় হয়ে পড়েছে। চা বিক্রেতা সাগর ও আজমত হোসেন বলেন, করোনার কারণে বাজারে এমনিতেই লোকজন কম, দুই সপ্তাহ ধরে এ সমস্যার কারণে দোকানে লোকজনই আসছে না। কি যে বিপদে আছি বলে বোঝানো যাবে না।
হাবিবুর রহমান হবি বলেন, পিচ পোড়ানোর গন্ধে বমি বমি ভাব আর মাথা ঘোরানোসহ ঠিকমত খেতে পর্যন্ত পারি না।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একজন মুসল্লী জানান, বালিতে মসজিদের মেঝে ভরে থাকে, ধূঁয়ায় থাকা যায় না। এ জন্য মসজিদেও লোকজন আসছে না।
ক্রীড়ামোদি রনি আহম্মেদ জানায়, আগে আমরা মাঠে খেলাধূলা করতাম। কিন্তু প্রায় এক মাস যাবৎ লেখাধূলা বন্ধ, বিকালে এখন অলস সময় কাটাই।
দিঘলকান্দি মাদরাসার সুপার মাওলানা হাবিবুর রহমান জানান, মাদ্রাসা বন্ধ, কিন্তু মাঠে নির্মাণ সামগ্রী রাখার আগে আমার কাছ থেকে কেউ কোন অনুমতি নেয়নি।
খাকসা-খোকসা বিএম কলেজের অধ্যক্ষ সরোয়ার হোসেন বিপ্লব জানান, কলেজ বন্ধ থাকলেও অফিস খোলা। কিন্তু বালি ও ছাই উড়ে এসে কাগজপত্র সব নোংরা হয়ে যাচ্ছে, বিষাক্ত ধূঁয়ায় কলেজে থাকাই কঠিন হয়ে পড়েছে।
ঠিকাদার আব্দুল আজিজের সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করেও কল রিসিভ না হওয়ায় কথা বলা সম্ভব হয়নি।
তবে মাঠে কাজের তদারকিতে থাকা ঠিকাদারের ম্যানেজার মানিক হোসেন জানান, লোকজনের অসুবিধা হচ্ছে বুঝতে পারছি। কিন্তু কিছু করার নাই। এ সময় ৮-১০ কিলোমিটার দুরের রাস্তার নির্মাণ সামগ্রী এখানে কেন জানতে চাইলে তিনি কোন সদুত্তর দিতে পারেননি।