নিজস্ব প্রতিবেদক, বড়াইগ্রাম:
নাটোরের বড়াইগ্রামে সমবায় সমিতি পরিচালনায় ব্যপক অনিয়মের অভিযোগ উঠেছে। উপজেলার মাঝগাঁও ইউনিয়নের বাহিমালি বাজারে অবস্থিত ‘বাহিমালী স্টার পল্লী সার্বিক গ্রাম উন্নয়ন কো-অপারেটিভ সোসাইটি লিমিটেড’ নামের একটি প্রতিষ্ঠান। বস্তুত সমবায়ের নিয়ম অনুযায়ী তা পরিচালনার কথা থাকলেও অভন্তরে চলছে অধিক মুনাফায় সুদের রমরমা ব্যবসা। বিপদগ্রস্থ এবং দিনহীন মানুষগুলো অভাবের তাড়নায় বা অর্থনৈতিক সমস্যা থেকে উদ্ধারের আশায় প্রতিনিয়ত এই সুদ ব্যবসায়ীদের ফাঁদে পা দিচ্ছে।
দেশের প্রচলিত আইনে এবং সমবায় নিয়মে নিষেধ থাকলেও ঋণের নামে নেওয়া হচ্ছে ফাঁকা স্ট্যাম্প এবং ব্যাংক একাউন্ট এর ফাঁকা চেক। আর এই স্ট্যাম্প এবং চেক দিয়ে জিম্মি করে বছরের পর বছর আদায় করা হয় চৌড়া সুদ। কোন সদস্য এই ঋণের বোঝা বইতে না পেরে সমিতি থেকে সদস্য পদ বাতিল করতে চাইলে সঞ্চয় থেকে নিয়ম বহির্ভূতভাবে কেটে নেওয়া হয় মোটা অঙ্কের টাকা। প্রতিবাদ করলে অকথ্যভাষায় গালিগালাজ সহ দেখানো হয় চেক জালিয়াতির মামলার ভয়। সারাদিন অফিস কক্ষের কোন কার্যক্রম না থাকলেও সন্ধ্যার পরে অফিসের কার্যক্রম শুরু হয়। অসহায় মানুষগুলোকে মিষ্টি কথার জালে ফাঁসিয়ে গলায় আটকানো হয় ঋণ ও চৌড়া সুদের কাঁটা।
এবিষয়ে সাধারন মানুষের মধ্যে ব্যপক ক্ষোভের সৃষ্টি হয়। বিষয়টি জানাজানি হলে গত রবিবার (২৭ ডিসেম্বর) সন্ধ্যায় ক্রাইম নিউজ ২৪ এর নাটোর জেলা প্রতিনিধি ও অনলাইন পত্রিকা বাংলা এক্সপ্রেস২৪.কম এর প্রকাশক ও সম্পাদক, বড়াইগ্রাম কেন্দ্রীয় প্রেসক্লাবের কার্যনির্বাহী সদস্য সাংবাদিক সুলতানুল আরিফিন কাজল সহ কয়েকজন সাংবাদিক উক্ত সমিতির অফিস কক্ষে তথ্য সংগ্রহের জন্য গেলে, কোন তথ্য দিবেনা বলে সমিতির সভাপতি ফরহাদ হোসেন (নয়ন) এবং তার সহযোগী কামাল মাষ্টারসহ সমিতির ২/১জন সদস্যসহ প্রথমে অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ করে এবং উপস্থিত জনগণের সামনে সাংবাদিক সুলতানুল আরিফিন কাজলের উপর হামলা চালায়।
এতে সাংবাদিক কাজল গুরুতর আহত হয়। পরে স্থানীয় লোকজন তাকে উদ্ধার করে প্রথমে বনপাড়া পাটোয়ারী জেনারেল হাসপাতালে এবং পরে বনপাড়া আমিনা হাসপাতালে নিয়ে চিকিৎসা দেয়।
এবিষয়ে সাংবাদিক সুলতানুল আরেফিন কাজল বাদী হয়ে গতকাল সোমবার ২৮ ডিসেম্বর বড়াইগ্রাম থানায় একটি অভিযোগ দায়ের করেন।
থানায় অভিযোগের বিষয়টি এলাকায় প্রচার হলে রাজনৈতিক এবং স্থানীয় লোকজনের মাধ্যমে সমঝোতার জন্য জোর তদবির চালিয়ে যাচ্ছেন মর্মে তথ্য প্রমান পাওয়া যায়।
এবিষয়ে অভিযুক্ত ফরহাদ হোসেন নয়ন বলেন- আমি কোন সাংবাদিক কে মারিনি, তবে তাকে আমি দেখে নেব। একজন সরকারের বেতনভুক্ত চাকুরীজীবি হয়ে সুদ ব্যবসা করতে পারেন কিনা জানতে চাইলে তিনি কোন সদুত্তর দিতে পারেন নি।
সংবাদ সংগ্রহে গিয়ে আহত সাংবাদিক সুলতানুল আরিফিন কাজল বলেন- এলাকার অনেক মানুষ নিঃস্ব হয়ে গেছে এই সুদ চক্রের জালে। এলাকাবাসীর অভিযোগের ভিত্তিতে তাদের জিজ্ঞাসা করতে গেলে আমাকে হত্যার উদ্দেশ্যে সন্ত্রাসী হামলা চালায়। আমি আইনের প্রতি শ্রদ্ধা রেখে থানায় অভিযোগ করেছি।
এবিষয়ে বড়াইগ্রাম কেন্দ্রীয় প্রেসক্লাবের সভাপতি অমর ডি কস্তা এবং সাধারন সম্পাদক পিকে এম আব্দুল বারী জানান- একজন সুদ ব্যবসায়ী কর্তৃক সাংবাদিকের উপর সন্ত্রাসী হামলা এটা খুবই দুঃখ জনক ঘটনা। আইনের মাধ্যমে সুদ ব্যবসায়ী, সন্ত্রাসী ফরহাদ হোসেন নয়ন কে দ্রুত গ্রেফতার করে শাস্তির দাবি জানান তারা।
বিষয়ে বড়াইগ্রাম উপজেলা সমবায় কর্মকর্তা সুশান্ত নারায়ন খাঁ’র কাছে জানতে চাইলে তিনি বলেন- সমবায় এর রেজিষ্ট্রেশন নিয়ে কোন ভাবেই উচ্চহারে সুদ ব্যবসা এবং নিয়ম বহিভূত কার্যক্রম করতে পারবে না। সত্যতা পেলে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করবো।
এবিষয়ে বড়াইগ্রাম থানার ভারপ্রাপ্ত (ওসি) আনোয়ারুল ইসলাম জানান- সাংবাদিকের উপর হামলা দুঃখ জনক, খুব দ্রুত সময়ের মধ্যে তদন্ত করে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।