নিজস্ব প্রতিবেদক, বড়াইগ্রাম
বঙ্গবন্ধু গোল্ডকাপ ফুটবল টুর্ণামেন্টে চূড়ান্ত লড়াইয়ে বিজয় ছিনিয়ে নিয়ে গলায় মেডেল পরে ট্রফি হাতে উল্লাস করতে করতে নিজ এলাকায় ফিরছিলো ছাত্রীরা। তখন সন্ধ্যা ৭টা বাজতে মাত্র ১৫ মিনিট বাকী ছিলো। ৪টি শ্যালো ইঞ্জিন চালিত ভুটভুটি ও ৩টি সিএনজি অটোরিক্সায় ফিরছিলো বিজয়ীরা। কিন্তু পথেই ঘটলো বিপত্তি। হাইওয়ে থানা পুলিশ আটকে দিলো তাদের যান। সকলকে জোরপূর্বক নামিয়ে দিয়ে ৩ সিএনজি ও ৪ ভুটভটিকে থানায় নিয়ে গেলো পুলিশ।
নাটোরের বড়াইগ্রামের বনপাড়া-পাবনা মহাসড়কের গোধরা এলাকায় বনপাড়া হাইওয়ে থানা পুলিশ এ যানগুলো আটক করে। উপজেলার নগর ইউনিয়নের কুশাইট উচ্চ বিদ্যালয়ের অর্ধশতাধিক ছাত্রী, অভিভাবক ও শিক্ষকরা বনপাড়া মডেল উচ্চ বিদ্যালয়ে টুর্ণামেন্ট শেষে বাড়ি ফিরছিলো। বনপাড়া পৌর সীমান্ত অতিক্রম করার পর গোধরা এলাকায় পুলিশ আটক করে ওই যান। রাত হয়ে যাওয়ায় বাড়ি ফেরার আর কোন যান-বাহন খুঁজে পায়নি তারা। এরই মধ্যে শুরু হয় মুষলধারে বৃষ্টি। বৃষ্টিতে ভিজে ভয়ে কাতর হয়ে পড়ে ছাত্রীরা। উদ্বিগ্ন বাড়ে শিক্ষক ও অভিভাবকদের মধ্যে। হাইওয়ে পুলিশের এমন দায়িত্বকে ‘কান্ডজ্ঞানহীন দায়িত্ব পালন’ হিসেবে আখ্যায়িত করে অনেকেই। হতবাক ও ক্ষুদ্ধ হয় স্থানীয়রা। পরে বিক্ষুদ্ধ জনতা এর প্রতিবাদে মহাসড়ক অবরোধ করে। খবর পেয়ে ছুটে আসেন পুলিশের উর্দ্ধতন কর্মকর্তাগণ, সাংবাদিক ও উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান। পরে আটককৃত যান গুলো ছেড়ে দেয়া ও ছাত্রীদের নিরাপদে বাড়ি পৌঁছে দেয়ার শর্তে অবরোধ তুলে নেয় বিক্ষুব্ধ জনতা।
কুশাইট উচ্চ বিদ্যালয়ের সহকারী প্রধান শিক্ষক ইস্রাফিল হোসেন জানান, টুর্ণামেন্ট শেষে মেডেল ও ট্রফি নিতে সন্ধ্যা হয়ে যায়। ইউএনও এর কাছ থেকে অনুমতি নিয়ে ভুটভুটি ও সিএনজি যোগে সকলেই বাড়ি ফিরছিলো। এ দিকে বৃষ্টি শুরু হয়ে গেছে। এমন সময় পুলিশ তাদেরকে জোর করে নামিয়ে দিয়ে যান গুলো থানায় নিয়ে যায়।
এসময় কয়েকজন ছাত্রীরা জানায়, নামতে না চাইলে পুলিশ শিক্ষক ও ছাত্রীদের ঘাড় ধাক্কা দিয়ে ও টেনে হিঁচড়ে নামিয়ে দেয়। অনেকে ভয়ে কান্নাকাটি করতে থাকে।
খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে ছুটে আসেন উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান ডা. সিদ্দিকুর রহমান পাটোয়ারী, বড়াইগ্রামের এএসপি (সার্কেল) হারুন-অর-রশিদ, ওসি দিলিপ কুমার দাস, হাইওয়ে থানার ওসি দেলোয়ার হোসেন, নগর ইউপি চেয়ারম্যান নিলুফার ইয়াসমিন ডালু।
হাইওয়ে থানার ওসি দেলোয়ার হোসেন সাংবাদিকদের জানান, শিক্ষক ও ছাত্রীদের ঘাড় ধাক্কা দিয়ে ও টেনে হিঁচড়ে নামানোর অভিযোগ সত্য নয়।
তিনি আরও জানান, রাত ক্রমশ বেড়ে যাওয়ায় ও ছাত্রীদের নিরাপত্তার কথা ভেবে যান গুলো ছেড়ে দেয়া হয়। তবে ভবিষ্যতে কোন অবৈধ যান এভাবে ছেড়ে দেয়া হবে না মর্মে পুলিশ তাৎক্ষণিক সকলকে অবগত করেন।