নিউজ ডেস্ক:
মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণকে সামনে রেখে ঘোষণা করা মুদ্রানীতিতে ঋণের সুদহারে ৯ শতাংশের সর্বোচ্চ সীমা তুলে দিয়ে যে ‘রেফারেন্স রেট’ চালু করা হচ্ছে তাতে ব্যাংক ঋণের সর্বোচ্চ সুদহার দাঁড়াবে ১০ দশমিক ১২ শতাংশ।
রোববার কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সম্মেলন কক্ষে আগামী ২০২৩-২৪ অর্থবছরের প্রথমার্ধ জুলাই-ডিসেম্বর মেয়াদের জন্য মুদ্রানীতি ঘোষণাকালে বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর আব্দুর রউফ তালুকদার সুদহারের সীমা তুলে দেওয়ার সিদ্ধান্তের কথা জানান।
রেফারেন্স রেট পদ্ধতি অনুযায়ী এসএমএআরটি এর হিসাবের সঙ্গে ৩ শতাংশ যোগ করে গ্রাহক পর্যায়ে ব্যাংকের ঋণের সুদহার দাঁড়াবে সর্বোচ্চ ১০ দশমিক ১২ শতাংশ। ব্যাংক বর্হিভূত আর্থিক প্রতিষ্ঠানে (এনবিএফআই) তা সর্বোচ্চ ১২ দশমিক ১২ শতাংশ। আর সিএমএসএমই ও ভোক্তা ঋণে ব্যাংকের ক্ষেত্রে তা ১১ দশমিক ১২ শতাংশ এবং এনবিএফআইতে তা সর্বোচ্চ ১৩ দশমিক ১২ শতাংশ হতে পারবে।
‘রেফারেন্স রেট’ অনুযায়ী সুদহার নির্ধারণের বিষয়ে বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রধান অর্থনীতিবিদ হাবিবুর রহমান জানান, এসএমএআরটি (স্মার্ট-সিক্স মান্থ মুভিং অ্যাভারেজ) নামের একটি পদ্ধতিতে রেফারেন্স ঠিক করা হবে। ছয় মাসের ট্রেজারি বিলের সুদের গড় হার হবে এ রেফারেন্স রেট।
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, গত ছয় মাসে ১৮২ দিন মেয়াদি ট্রেজারি বিলে গড় সুদ ছিল ৭ দশমিক ১২ শতাংশ।
রোববার নতুন মুদ্রানীতি ঘোষণা করেন বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর আব্দুর রউফ তালুকদার।
|
এর সঙ্গে ব্যাংকগুলো সর্বোচ্চ ৩ শতাংশ এবং এনবিএফআই ৫ শতাংশ সুদ যোগ করে ঋণ দিতে পারবে। কুটির, অতিক্ষুদ্র, ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্প (সিএমএসএমই) খাত ও ভোক্তা ঋণের ক্ষেত্রে ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলো খরচ সামাল দিতে আরও ১ শতাংশ যোগ করতে পারবে সুদহারে।
সুদহারের সীমা তুলে দেওয়া প্রসঙ্গে গর্ভনর বলেন, ঋণে ৯ শতাংশ সুদহার বেঁধে দেওয়াটি ছিল রাজনৈতিক সিদ্ধান্ত। তখন যে প্রেক্ষাপটে সিদ্ধান্তটি নেওয়া হয়েছিল, এখন তা আর নেই। তখন ঋণের সুদহার ১৭-১৮ শতাংশ ছিল। সেটি কমিয়ে আনা ছিল লক্ষ্য।
‘‘এই সীমা তুলে দেওয়ার সিদ্ধান্তটিও রাজনৈতিক। আমাদের কৃতিত্ব আমরা রাজনৈতিক নেতৃত্বকে পরিস্থিতি বোঝাতে সক্ষম হয়েছি। আমরা তাদের বুঝিয়েছি এটি তুলে দিতে হবে।’’
তিনি বলেন, ‘‘যখন এই সীমা দেওয়া হয়েছিল, তখন ব্যাংকগুলোর সুদ ১৮ শতাংশে উঠেছিল। তখন বিদেশি ঋণের সুদহার ছিল ২ শতাংশ। এখন বিদেশি ঋণের সুদ ৯-১০ শতাংশ। আবার টাকার অবমূল্যায়নের কারণে তার খরচ আরও বেশি হয়েছে।’’
আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল (আইএমএফ) এবং মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে রাখতে অর্থনীতিবিদদের পরামর্শ মেনে ঋণের সুদহার বাজারের উপরে ছেড়ে দেওয়ার এমন সিদ্ধান্তের কথা নতুন মুদ্রানীতিতে নেওয়া হয়েছে।
আরেক প্রশ্নে গভর্নর বলেন, ‘‘আমি এটিকে আইএমএফ এর শর্ত মোটেই বলতে চাচ্ছি না। আমরা এটাকে স্ট্যান্ডার্ড বলছিল। আমরা আইএমএফের সদস্য। তারা যেটা বলেন, তা তাদের ম্যানুয়াল অনুযায়ী অনুসরণ করতে বলেন।
‘‘আমরা কখনও তাদের কথা শুনি। আবার যখন প্রয়োজন মনে করি না, শুনি না।’’
তিনি বলেন, ‘‘আইএমএফের ঋণ সস্তা হওয়ায় এখন আমরা তাদের কাছ থেকে ঋণ প্রোগ্রামে গিয়েছি। এখন ঋণ প্রোগ্রামে যাওয়ায় তাদের স্টান্ডার্ড মানতে হচ্ছে, না হলে ঋণ দিবে না। আমরা আইএমএফ এর সদস্য রাষ্ট্র। সব সদস্য রাষ্ট্র মানলে, আমার মানতে সমস্যা কোথায়। আমি বরং বলবো আন্তর্জাতিক স্টান্ডার্ড মানতে হবে উন্নত রাষ্ট্র হওয়ার জন্য।’’
কম দামে আর ডলার বিক্রি করবে না বাংলাদেশ ব্যাংক
বাণিজ্যিক ব্যাংকের চাহিদা মেটাতে রিজার্ভ থেকে চলতি অর্থবছরের এ পর্যন্ত ১৩ বিলিয়ন ডলার বিক্রি করার তথ্য জানিয়ে গভর্নর রউফ তালুকদার বলেছেন, ‘‘বাংলাদেশ ব্যাংক আর ডিসকাউন্ট রেটে ডলার বিক্রি করবে না।’’
তিনি জানান, বাজার দর অনুযায়ী কেন্দ্রীয় ব্যাংকের কাছ থেকে সবাইকে ডলার কিনতে হবে, যা আগামী ১ জুলাই থেকে কার্যকর হবে।
নতুন সিদ্ধান্তে আন্ত:ব্যাংকে ডলারের যে দর উঠবে সেই দরে বাণিজ্যিক ব্যাংকের কাছে ডলার বিক্রি করবে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। গত সপ্তাহে আন্তঃব্যাংকে ডলারের দর উঠেছিল সর্বোচ্চ ১০৯ টাকা। আর গত সপ্তাহে ডলারের গড় দর কখনোই ১০৮ টাকার নিচে নামেনি।
বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোর কাছে বাংলাদেশ ব্যাংক সর্বশেষ ১০৬ টাকা দরে প্রতি ডলার বিক্রি করেছে। বাংলাদেশ ব্যাংক যে ১৩ বিলিয়ন ডলার বিক্রি করেছে চলতি অর্থবছরে; তার সিংহভাগের ক্রেতা সরকারের ব্যাংক।
জ্বালানি, সারসহ বিভিন্ন সরকারি কেনাকাটা ও পুরনো দায় পরিশোধে সরকার এ ডলার কিনেছে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের কাছ থেকে রাষ্ট্রায়ত্ব ব্যাংকের মাধ্যমে।
বর্তমানে ডলার দর রেমিটেন্সে সর্বোচ্চ ১০৮ টাকা ৫০ পয়সা, রপ্তানি আয়ের ক্ষেত্রে ১০৭ টাকা। আমদানি পর্যায়ে ডলারের দর চলতি গত সপ্তাহে ছিল গড়ে ১০৭ টাকা ৭৪ পয়সা। এরসঙ্গে ব্যাংকগুলো আরও ২০ থেকে ৫০ পয়সা যোগ করতে পারে।
এসময় বিনিময় হার একটি একক রেটে নিয়ে আসার চেষ্টা অব্যাহত থাকবে বলেও জানান গভর্নর।