রবিবার , ডিসেম্বর ২২ ২০২৪
নীড় পাতা / জাতীয় / ব্যাংকের শেয়ারে ফিরছে বিনিয়োগকারীরা

ব্যাংকের শেয়ারে ফিরছে বিনিয়োগকারীরা


নিজস্ব প্রতিবেদক:
গত পাঁচ বছরের লভ্যাংশ ঘোষণার ইতিহাস ঘেঁটে নিউজবাংলা দেখেছে, শেয়ার মূল্যের তুলনায় কেবল নগদ লভ্যাংশের ক্ষেত্রে ব্যাংক বা আর্থিক প্রতিষ্ঠানে যে কোনো সঞ্চয়ী স্কিমের চেয়ে বিনিয়োগকারীরা বেশি মুনাফা পেয়েছেন অন্তত ১০টি ব্যাংক থেকে।

পুঁজিবাজারে সাম্প্রতিক উত্থানের মধ্যে নড়চড় না থাকা নিয়ে আলোচনার মধ্যেই টানা দুই দিন বাড়ল ব্যাংকের শেয়ার।

পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত ৩০টি ব্যাংকের মধ্যে ২০টি ব্যাংকের শেয়ার দর এখন এক বছরের সর্বোচ্চ দামের কাছাকাছি বিক্রি হচ্ছে।

অবশ্য অন্য শেয়ারের তুলনা করলে ব্যাংকের শেয়ারের দর এখনও অনেক কম। গত এক বছরে বাজারের মূল্য সূচক বেড়েছে এক হাজার আটশ পয়েন্ট। বহু কোম্পানির শেয়ার দর দ্বিগুণ, তিন গুণ এমনকি চার গুণ হয়েছে।

সে হিসাবে ব্যাংকের শেয়ার দর বছরের সর্বোচ্চ দামে উঠলেও সেগুলো আসলে এখনও তলানিতেই বলা যায়।

এ নিয়ে বিনিয়োগকারীদের আলোচনার মধ্যে বৃহস্পতিবার ৩০টি ব্যাংকের মধ্যে দর কমে একটির, দুটির দর অপরিবর্তিত থাকে, আর দাম বাড়ে ২৭টির।

পরের কার্যদিবস রোববার ৩০টি কোম্পানির মধ্যে দাম কমে তিনটির, অপরিবর্তিত থাকে তিনটির, বাড়ে বাকি ২৪টির। সূচক পতনের এই দিন সবচেয়ে বেশি দাম বাড়া ১০টি কোম্পানির পাঁচটি ব্যাংক।

টানা ‍দুই দিন এক দিনে সর্বোচ্চ পরিমাণে বেড়েছে সিটি ব্যাংকের দর।

বিনিয়োগকারীদের আগ্রহ বাড়ার প্রমাণ পাওয়া যায়, মোট লেনদেনে ব্যাংকের হিস্যা দেখেও।

রোববার মোট লেনদেন হয়েছে দুই হাজার ৩৮৪ কোটি টাকা, যার ১৬ দশমিক ৭১ শতাংশ অবদান ছিল ব্যাংক খাতের। আগের কার্যদিবস বৃহস্পতিবার যা ছিল ১৩ দশমিক ৪৭ শতাংশ।

টানা দুই দিন বেড়েছে অধিকাংশ ব্যাংকের শেয়ার

বিনিয়োগকারীদের সংগঠন ‘পুঁজিবাজার বিনিয়োগকারী সম্মিলিত জাতীয় ঐক্য’ এর সভাপতি আ ন ম আতাউল্লাহ নাঈম নিউজবাংলাকে বলেন, ‘২০১০ সালের পর থেকে মূলত ব্যাংকের শেয়ারের দর কমেছে। তারপর থেকে খুব কম সময়ের জন্য এ খাত থেকে বিনিয়োগকারীরা মুনাফা পেয়েছেন। মূলত মুনাফা না থাকায় আগ্রহ হারিয়েছে বিনিয়োগাকরীরা। তারা মুনাফা পেলে আবার ফিরবেন।’

তবে ব্যাংক খাতে মুনাফা কম হয়, লভ্যাংশের ইতিহাস এটা বলে না।

গত পাঁচ বছরের লভ্যাংশ ঘোষণার ইতিহাস ঘেঁটে নিউজবাংলা দেখেছে, শেয়ার মূল্যের তুলনায় কেবল নগদ লভ্যাংশের ক্ষেত্রে ব্যাংক বা আর্থিক প্রতিষ্ঠানে যে কোনো সঞ্চয়ী স্কিমের চেয়ে বিনিয়োগকারীরা বেশি মুনাফা পেয়েছেন অন্তত ১০টি ব্যাংক থেকে।

বর্তমানে এফডিআরের মুনাফা ছয় থেকে সাত শতাংশে নেমেছে, তার শেয়ার দরের সঙ্গে তুলনা করে নগদ মুনাফার যে ইল্ড, তা ১৬ শতাংশও দিয়েছে কোনো কোনো ব্যাংক।

তার পরেও গত পাঁচ বছরে টানা ভালো মুনাফা দিয়ে এসেছে, এমন ১৫টির মতো ব্যাংকের দরও ১০ থেকে ২০ টাকার বেশি নয়। ১০ টাকার নিচেও আছে কয়েকটি ব্যাংক যেগুলো ‘এ’ ক্যাটাগরির অর্থাৎ বছরে কমপক্ষে ১০ শতাংশ হারে মুনাফা দিয়ে থাকে।

বেশ ভালো মুনাফা দেয়া হলেও ২০১০ সালে ধসের পর থেকে এই শেয়ারগুলো থেকে বিনিয়োগকারীরা অনেকটাই মুখ ফিরিয়ে নেয়। আর শেয়ার সংখ্যা বিপুল পরিমাণ ও চাহিদা কম থাকায় দাম পড়তে থাকে।

অর্থনীতিবিদ ও পুঁজিবাজার বিশেষজ্ঞ আবু আহমেদ মনে করেন, গত ১০ বছরে ব্যাংকিং খাতে খেলাপি ঋণ নিয়ে যে নানা ঘটনা এসেছে গণমাধ্যমে তাতে বিনিয়োগকারীরা ব্যাংকের শেয়ারের প্রতি আগ্রহ হারিয়েছেন।

তবে এই বিশ্লেষক এও মনে করেন, ব্যাংক খাতের বহু কোম্পানির শেয়ার দর অবমূল্যায়িত। অর্থাৎ যত দাম থাকা উচিত, তার চেয়ে কমে লেনদেন হচ্ছে।

বছরের সর্বোচ্চ দরের কাছাকাছি

২০২০ সালে এবি ব্যাংকের শেয়ারের দর ছিল ১৩.৮০ টাকা, যা গত এক বছরের সর্বোচ্চ দর। বর্তমানে লেনদেন হচ্ছে ১৩.৫০ টাকায়।

আল-আরাফাহ ইসলামী ব্যাংকের শেয়ার বর্তমানে লেনদেন হচ্ছে ২৩.১০ টাকায়। গত এক বছরে ব্যাংকটির সর্বোচ্চ দর উঠেছে ২৪ টাকা।

ব্যাংক এশিয়ার বর্তমান শেয়ার দর ১৮ টাকা, যা গত এক বছরের সর্বোচ্চ দরের কাছাকাছি। এক বছর আগে ব্যাংকটির সর্বোচ্চ দর ছিল ১৮.৯০ টাকা।

ব্র্যাক ব্যাংকের বর্তমান শেয়ার দর ৫১.১০ টাকা। এক বছরে ব্যাংকের সর্বনিম্ম দর ছিল ২৭.২০ টাকা, আর সর্বোচ্চ দর ছিল ৫২.৫০ টাকা।

সিটি ব্যাংকের বর্তমান শেয়ার দর ৩৩.৪০ টাকা, যা গত এক বছরের সর্বোচ্চ দরের কাছাকাছি। এক বছর বা ৫২ সপ্তাহে ব্যাংকের সর্বোচ্চ দর উঠেছে ৩৩.৫০ টাকা।

ঢাকা ব্যাংকের গত এক বছরে সর্বোচ্চ দর ছিল ১৪ টাকা। বর্তমানে ব্যাংকটির শেয়ার লেনদেন হচ্ছে ১২.৯০ টাকায়।

ডাচ-বাংলা ব্যাংকের গত এক বছরের সর্বোচ্চ দর ছিল ৭৪ টাকা। বর্তমানে ব্যাংকটির প্রতিটি শেয়ার লেনদেন হচ্ছে ৭০.২০ টাকায়।

তবে অন্য শেয়ারের তুলনা করলে ব্যাংকের শেয়ারের দর এখনও অনেক কম।

এক্সিম ব্যাংকের শেয়ার বর্তমানে লেনদেন হচ্ছে ১৩.১০ টাকায়, যা গত এক বছরের সর্বোচ্চ দরের কাছাকাছি। এক বছরে ব্যাংকটির সর্বোচ্চ দর ছিল ১৩.৬০ টাকা।

ফার্স্ট সিকিউরিটিজ ইসলামী ব্যাংকের গত এক বছরে সর্বোচ্চ দর ছিল ১১.৩০ টাকা। বর্তমানে লেনদেন হচ্ছে ১১ টাকায়।

আইসিবি ইসলামী ব্যাংকের বর্তমান শেয়ার দর ৪.৬০ টাকা। কিন্ত এক বছরে ব্যাংকের সর্বোচ্চ দর উঠেছে ৫.২০ টাকায়।

আইএফআইসি ব্যাংকের শেয়ার বর্তমানে লেনদেন হচ্ছে ১৬ টাকায়, যা গত এক বছরের সর্বোচ্চ দর থেকে মাত্র ৮০ পয়সা পিছিয়ে আছে। এক বছরে আগে ব্যাংকের সর্বোচ্চ দর ছিল ১৬.৮০ টাকা।

ইসলামী ব্যাংকের শেয়ার বর্তমানে লেনদেন হচ্ছে ৩০.৮০ টাকায়। আর এক বছর আগে এ ব্যাংকের শেয়ারের সর্বোচ্চ দর ছিল ৩২ টাকা।

যমুনা ব্যাংকের শেয়ার বর্তমানে লেনদেন হচ্ছে ১৯.৭০ টাকায়, যা এক বছরের সর্বোচ্চ দরের কাছাকাছি। ব্যাংকেটির গত এক বছরের সর্বোচ্চ দর ছিল ২০.২০ টাকা।

মার্কেন্টাইল ব্যাংকের শেয়ার ১৩.৬০ টাকায় লেনদেন হচ্ছে, যেখানে ব্যাংকটির এক বছরের সর্বোচ্চ দর উঠেছিল ১৪.২০ টাকা।

সাউথ ইস্ট ব্যাংকের বর্তমান শেয়ার দর ১৩.৩০ টাকা। ব্যাংকের গত এক বছরের সর্বোচ্চ দর ছিল ১৪.৮০ টাকা।

ন্যাশনাল ব্যাংকের শেয়ারের দর আর ১০ পয়সা বাড়লে পৌছে যাবে গত এক বছরের সর্বোচ্চ দরে। বর্তমানে ন্যাশনাল ব্যাংকের শেয়ার লেনদেন হচ্ছে ৯.৬০ টাকায়, যেখানে এক বছরের সর্বোচ্চ দর ছিল ৯.৭০ টাকা।

এক বছরের সর্বোচ্চ দরে পৌছাতে এনসিসি ব্যাংকের শেয়ারের দর বাড়তে হবে মাত্র ৬০ পয়সা। বর্তমানে ব্যাংকটির শেয়ার লেনদেন হচ্ছে ১৪.৪০ টাকা, আর এক বছরের সর্বোচ্চ দর ১৫ টাকা।

একইভাবে আর ৫০ পয়সা বাড়লে ওয়ান ব্যাংকের শেয়ারের দরও পৌঁছে যাবে এক বছরের সর্বোচ্চ দরে। বর্তমানে ব্যাংকটির শেয়ার লেনদেন হচ্ছে ১১.৭০ টাকায়, আর এক বছরের সর্বোচ্চ দর উঠেছিল ১২.২০ টাকা।

আরও দেখুন

লালপুরে বিদ্যুৎস্পৃষ্টে সাংবাদিকের ছেলের মৃত্যু!

নিজস্ব প্রতিবেদক লালপুর,,,,,,,,,,,,,,,, নাটোরের লালপুরে বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হয়ে জিহাদ ইসলাম (১৫) নামের এক তরুণের মৃত্যু হয়েছে। …