বৈশ্বিক ও দেশীয় পরিস্থিতিতে দিন দিন নানামুখী অর্থনৈতিক সংকট বাড়ছে। এ অবস্থায় কৃচ্ছ্রসাধন বা ব্যয় সংকোচনে আরও কঠোর অবস্থান নিয়েছে সরকার। এ লক্ষ্যে পরিচালন বাজেট বরাদ্দ কাটছাঁট করা হচ্ছে। এর ফলে পরিচালন বাজেট বরাদ্দ থেকে ভূমি অধিগ্রহণ, ভবন ও স্থাপনার নতুন ক্রয়াদেশ এবং যন্ত্রপাতি ও সরঞ্জাম কেনা পুরোপুরি স্থগিত থাকবে। এর আগে কয়েক দফা ব্যয় সাশ্রয়ের সিদ্ধান্ত নেয় অর্থ বিভাগ। তবে চলতি বাজেটে ব্যয় সাশ্রয়ের ক্ষেত্রে এটি সবচেয়ে বড় সিদ্ধান্ত।
সরকারের এক পরিপত্রে বলা হয়েছে, চলতি ২০২২-২৩ অর্থবছরে সব সরকারি, আধা সরকারি, স্বায়ত্তশাসিত, রাষ্ট্রায়ত্ত, সংবিধিবদ্ধ, রাষ্ট্রমালিকানাধীন কোম্পানি ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানের ক্ষেত্রে নতুন সিদ্ধান্তটি প্রযোজ্য হবে। গত মঙ্গলবার অর্থ মন্ত্রণালয়ের অর্থ বিভাগের বাজেট অনুবিভাগ পরিপত্রটি জারি করে।
পরিপত্রে বলা হয়, সব সরকারি, আধা সরকারি, স্বায়ত্তশাসিত, সংবিধিবদ্ধ ও রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন কোম্পানি এবং আর্থিক প্রতিষ্ঠানের পরিচালন বাজেট থেকে কোনো অর্থ ব্যয় করে ভূমি অধিগ্রহণ করা যাবে না। এ খাতে অর্থব্যয় সম্পূর্ণ বন্ধ থাকবে। এ ছাড়া পরিচালন বাজেটের আওতায় নতুন ভবন নির্মাণ ও স্থাপনা খাতে বছরের শুরুতে যে বরাদ্দ রাখা হয়েছে, তার বিপরীতে কোনো ধরনের কার্যাদেশ দেওয়া যাবে না। তবে এ নির্দেশনা জারির আগে যেসব নতুন ভবন ও স্থাপনার কার্যাদেশ দেওয়া হয়েছে, সেসবের বিপরীতে মাত্র ৫০ শতাংশ অর্থ ছাড় করতে পারবে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়, বিভাগ ও সংস্থা। বাকি ৫০ শতাংশ কার্যাদেশের বিপরীতে অর্থ বরাদ্দ স্থগিত থাকবে। পরিপত্রে আরও উল্লেখ করা হয়, বছরব্যাপী যন্ত্রপাতি ও সরঞ্জাম কেনাকাটা খাতে বিশেষ করে কম্পিউটার, আসবাবপত্র, বৈদেশিক সরঞ্জামাদি এবং অন্যান্য যন্ত্রপাতি ও সরঞ্জাম খাতে পুরোপুরি অর্থ ব্যয় বন্ধ রাখার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। অর্থ বিভাগ সূত্র
জানায়, সব মিলে উল্লিখিত খাতে বরাদ্দ আছে ১ লাখ ১৮ হাজার ৮৫৯ কোটি টাকা। এর মধ্যে ভূমি অধিগ্রহণ খাতে বরাদ্দ রাখা হয়েছে ১৩ হাজার ২৬৮ কোটি টাকা। আবাসিক ভবন নির্মাণ খাতে বরাদ্দ ৬ হাজার ৪২৮ কোটি, অনাবাসিক ভবন খাতে ২৪ হাজার ৮২২ কোটি এবং অন্যান্য স্থাপনা খাতে বরাদ্দ আছে ৫৬ হাজার ২৪৬ কোটি টাকা। এ ছাড়া বিভিন্ন মন্ত্রণালয়, অফিস-আদালতে কম্পিউটার ক্রয়ে বরাদ্দ আছে ২ হাজার ২৩৮ কোটি টাকা, আসবাবপত্র, বৈদ্যুতিক সরঞ্জাম ও অন্যান্য যন্ত্রপাতি ক্রয় বাবদ দেওয়া আছে ১৫ হাজার ৮৫৭ কোটি টাকা; যা এখন ব্যয় করা যাবে না। এই সাশ্রয়কৃত অর্থ অন্য কোনো খাতে ব্যয় করা এবং অন্য কোনো খাত থেকে এনে স্থগিত খাতগুলোয় অর্থ ব্যবহার পুরোপুরি নিষিদ্ধ করা হয়েছে ওই পরিপত্রে।
এর আগে চলমান ইউক্রেন-রাশিয়া যুদ্ধে সৃষ্ট বৈশ্বিক সংকট মোকাবিলায় বড় ধরনের কৃচ্ছ্রসাধনের সিদ্ধান্ত নেয় অর্থ বিভাগ। অপেক্ষাকৃত কম গুরুত্বপূর্ণ ৫০ প্রকল্পে (সি-ক্যাটাগরি) অর্থছাড় স্থগিত, বি-ক্যাটাগরির প্রায় ৫০০ প্রকল্পের মোট ব্যয়ের ২৫ শতাংশ অর্থছাড় স্থগিত করা হয়। এ ছাড়া মন্ত্রণালয়, বিভাগ ও সংস্থায় সব ধরনের মোটরযান ও জলযান কেনাকাটায় নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হয়েছে। পাশাপাশি অভ্যন্তরীণ প্রশিক্ষণ, আপ্যায়ন ও ভ্রমণ ব্যয়, মনিহারি দ্রব্য, কম্পিউটার-আনুষঙ্গিক, বৈদ্যুতিক সরঞ্জাম ও আসবাবপত্র কেনাকাটায় ৫০ শতাংশ ব্যয় করতে বলা হয়েছে। বাকি ৫০ শতাংশ ব্যয় করা যাবে না। এ ছাড়া উন্নয়ন প্রকল্পের বিভিন্ন কমিটির সম্মানী ব্যয়ও পুরোপুরি স্থগিত করা হয়। সব মিলিয়ে প্রাথমিকভাবে সম্ভাব্য সরকারি ব্যয়ে সাশ্রয় হবে প্রায় ৫০ হাজার কোটি টাকা। নতুন অর্থবছর শুরুর তৃতীয় দিনের মাথায় এমন সিদ্ধান্ত নিয়েছিল অর্থ মন্ত্রণালয়।
পলিসি রিসার্চ ইনস্টিটিউট অব বাংলাদেশের (পিআরআইবি) নির্বাহী পরিচালক ড. আহসান এইচ মনসুর আমাদের সময়কে বলেন, বাস্তবতার আলোকে এ পরিবর্তন করতেই হবে। বৈশ্বিক মহামারীর মধ্যে সরকার ব্যয় কমানোর যেসব উদ্যোগ নিয়েছে, তা যথার্থ।