নিউজ ডেস্ক:
আগামী অর্থবছরের বাজেটের মূল কেন্দ্রে থাকছে করোনা মোকাবিলা করে অর্থনীতি পুনরুদ্ধার। আর এ জন্য বিনিয়োগ বাড়ানো ও ব্যবসা-বাণিজ্য গতিশীল করার বিভিন্ন উদ্যোগ থাকছে বাজেটে। স্থানীয় শিল্পের উৎপাদন বাড়াতে ব্যবসায়ীদের বিভিন্ন ক্ষেত্রে কর, ভ্যাট ও শুল্ক্কে ছাড় দেওয়া হচ্ছে। এককথায় বাজেটে মোটাদাগে ব্যবসায়ীদের জন্য সুখবর থাকছে।
জাতীয় রাজস্ব বোর্ড ও অর্থ মন্ত্রণালয় সূত্র জানিয়েছে, শিল্প ও সেবা খাতকে গতিশীল করতে সরকার চলমান প্রণোদনা প্যাকেজগুলোর যথাযথ বাস্তবায়ন উদ্যোগ নেবে। এসএমই খাতের জন্য একটি বিশেষ প্যাকেজের ঘোষণা থাকতে পারে বাজেটে। দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলে ছড়িয়ে-ছিটিয়ে থাকা ছোট ছোট উদ্যোক্তার জন্য বিশেষ তহবিলের ঘোষণা আসছে বাজেটে। অন্যদিকে, বড় ও মাঝারি ব্যবসার বিভিন্ন পর্যায়ে কর ছাড় দেবে সরকার। কাঁচামাল আমদানি পর্যায়ে আগাম আয়কর কমানো হবে। আগাম ভ্যাট হারও কমবে, যাতে প্রতিষ্ঠানগুলোর হাতে নগদ অর্থ থাকে এবং সহজে কার্যক্রম পরিচালনা করতে পারে। শিল্প ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের সক্ষমতা বাড়াতে ভ্যাটের জরিমানা কমানো হচ্ছে। এ ছাড়া হাসপাতালসহ স্বাস্থ্যসেবার বিভিন্ন খাতে সরকারি বেসরকারি অংশীদারিত্বের (পিপিপি) সুযোগ সৃষ্টি করা হচ্ছে।
বিল্ডের চেয়ারম্যান ও এ কে খান গ্রুপের পরিচালক আবুল কাশেম খান সমকালকে বলেন, করোনার প্রভাবে অনেক প্রতিষ্ঠানেই নগদ টাকা সংকট দেখা দিয়েছে। এ অবস্থা নিরসনে আগাম কর ও ভ্যাট প্রত্যাহার হওয়া জরুরি। এ ছাড়া যেসব ক্ষেত্রে কর হার কমানোর যৌক্তিকতা রয়েছে, সেখানে কমাতে হবে। চাহিদা সৃষ্টি হয় এমন উদ্যোগ দরকার। তবে সবার আগে স্বাস্থ্য সুরক্ষা নিশ্চিত করতে হবে।
এনবিআর সূত্রে জানা গেছে, আগামী বাজেটে দেশীয় শিল্পের বিকাশে ভ্যাটে বড় ছাড় আসছে। আমদানি নির্ভরতা কমিয়ে দেশে হোম অ্যাপ্লায়েন্স সামগ্রী এবং তথ্যপ্রযুক্তি পণ্যের উৎপাদনকে উৎসাহিত করতে ভ্যাট অব্যাহতি দেওয়া হচ্ছে।
কৃষিকাজে ব্যবহূত যন্ত্রপাতি আমদানিতে আগাম কর প্রত্যাহার করা হচ্ছে। অন্যদিকে, রাজস্ব আদায় বাড়াতে সিগারেটে নকল-জাল ও পুনর্ব্যবহূত ব্যান্ডরোল ব্যবহার বা ব্যবহারে সহায়তা করলে জেল-জরিমানার বিধান রাখা হচ্ছে। পাশাপাশি ভ্যাট বিভাগে ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের বার্ষিক আর্থিক বিবরণী দাখিল বাধ্যতামূলক করে ‘ভ্যাট আইন’ সংশোধন করা হচ্ছে। এক হাজার ৬০০ সিসি পর্যন্ত গাড়ি উৎপাদনে প্রয়োজনীয় উপকরণ ও যন্ত্রাংশ আমদানিতে ভ্যাট অব্যাহতির সুবিধা ২০২৬ সাল পর্যন্ত বাড়ানো হচ্ছে। বর্তমানে যন্ত্রাংশ আমদানিতে আগাম কর দিতে হয়। আগামী বাজেটে যা বাতিল হতে পারে। এ ছাড়া পলিপ্রোপাইলিন স্ট্যাপল ফাইবার, মোবাইল ফোন এবং স্যানিটারি ন্যাপকিন ও ডায়াপারের কাঁচামাল আমদানিতে ভ্যাট অব্যাহতির মেয়াদ ২০২৩ সালের ৩০ জুন পর্যন্ত বাড়ানো হচ্ছে। হালকা প্রকৌশল শিল্পকেও বাজেটে প্রাধান্য দেওয়া হচ্ছে। শর্তসাপেক্ষে এ খাতের তৈরি করা যন্ত্রাংশ সরবরাহ পর্যায়ে ভ্যাট অব্যাহতি দেওয়া হতে পারে।
সূত্র জানায়, গত রোববার ভ্যাট ও কাস্টম বিভাগের রাজস্ব সংগ্রহ বিষয়ে এনবিআরে অনুষ্ঠিত এক সভায় সংস্থাটির চেয়ারম্যান আবু হেনা মো. রহমাতুল মুনিম বলেন, আগামী বাজেটে ভ্যাটে ব্যাপক পরিবর্তন আসছে। এসব পরিবর্তন বিষয়ে বাজেটের পরে কমিশনারদের সঙ্গে আলোচনা করা হবে। কোথাও কোনো অস্পষ্টতা থাকলে তা স্পষ্ট করা হবে। ওই সভায় এনবিআরের সদস্য (ভ্যাট-নীতি) মাসুদ সাদিক বলেন, আগামী বাজেট ব্যবসাবান্ধব করা হচ্ছে। ব্যবসা-বাণিজ্য যাতে সহজ হয়, এমন বিভিন্ন উদ্যোগ থাকছে। ফলে কর সংগ্রহে দায়িত্বপ্রাপ্তদের বাজেটের এই দর্শন মাথায় নিয়ে কাজ করতে হবে।
আগামী বাজেটে স্থানীয় বাজারে চাহিদা ধরে রাখতে সরকার কর্মসংস্থান সৃষ্টিতে জোর দেবে। কর্মসংস্থান সৃষ্টিতে চলতি অর্থবছরে নেওয়া প্রকল্প ও কর্মসূচি আগামী অর্থবছরেও অব্যাহত থাকছে। এসব প্রকল্পে বরাদ্দ বাড়ানো হচ্ছে। বর্তমানে কর্মসংস্থানের প্রকল্প ও কর্মসূচিতে পাঁচ হাজার কোটি টাকা বরাদ্দ আছে। আগামী অর্থবছরে তা আরও এক হাজার ৭১০ কোটি টাকা বাড়ানো হচ্ছে। বেসরকারি খাতে বিনিয়োগের মাধ্যমে কর্মসংস্থান সৃষ্টির লক্ষ্যে এ খাতে ঋণ সরবরাহ বাড়ানোর উদ্যোগ থাকবে। কর্মসংস্থান বিষয়ে বাজেট বক্তৃতায় একটি রূপরেখা তুলে ধরবেন অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল। এদিকে, সম্প্রতি চালু করা ইসলামী শরিয়াহ বন্ড সুকুক জনপ্রিয় করতে কর ছাড় দেওয়া হচ্ছে। জানা গেছে, সুকুক গঠন করতে সম্পদ হস্তান্তরে (অ্যাসেট ট্রান্সফার) মূলধনি মুনাফায় যে কর (গেইন ট্যাক্স) আছে, তা প্রত্যাহার করা হচ্ছে। বর্তমানে এ ক্ষেত্রে ৪ শতাংশ গেইন ট্যাক্স রয়েছে।