নিউজ ডেস্ক:
দেশের ইতিহাসে প্রথম ডিজিটাল জনশুমারির হিসাবে ১১ বছরে দেশের জনসংখ্যা ২ কোটি ১১ লাখ বেড়ে ১৬ কোটি ৫১ লাখ ৫৮ হাজার ৬১৬ জন হয়েছে। জনশুমারি ও গৃহগণনা ২০২২-এর প্রাথমিক প্রতিবেদন অনুযায়ী, বর্তমানে দেশে পুরুষের চেয়ে নারীর সংখ্যা প্রায় ১৬ লাখ বেশি। ২০১১ সালে পরিস্থিতি ছিল উল্টো। এক দশক আগের মতোই দেশের বেশির ভাগ লোক এখনো গ্রামে বাস করে। কিন্তু গ্রামের জনসংখ্যা যেখানে বেড়েছে ৩০ লাখের কম, সেখানে শহরের জনসংখ্যা বেড়েছে প্রায় দুই কোটি।
গতকাল বুধবার বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে এক অনুষ্ঠানে বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর প্রথম ডিজিটাল জনশুমারি ও গৃহগণনার এ প্রাথমিক প্রতিবেদন প্রকাশ করা হয়। গত ১৫ জুন সারাদেশে একযোগে জনশুমারি ও গৃহগণনা কার্যক্রম শুরু হয়। ২১ জুন সে কাজ শেষ হওয়ার কথা থাকলেও কয়েকটি জেলায় বন্যার কারণে তা ২৮ জুন পর্যন্ত বাড়ানো হয়। তার এক মাসের মাথায় পরিসংখ্যান ব্যুরোর প্রকল্প পরিচালক দিলদার হোসেন এ অনুষ্ঠানে তাদের প্রাথমিক প্রতিবেদনের বিভিন্ন দিক তুলে ধরেন।
পরিকল্পনামন্ত্রী এম এ মান্নানের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন জাতীয় সংসদের স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরী। আরো উপস্থিত ছিলেন জনপ্রশাসন প্রতিমন্ত্রী ফরহাদ হোসেন ও পরিকল্পনা প্রতিমন্ত্রী অধ্যাপক শামসুল আলম।
প্রধান অতিথির বক্তব্যে ড. শিরীন শারমিন চৌধুরী বলেন, দেশের জনসংখ্যা নিয়ে কেউ বলেন ১৮ কোটি, কেউ বলেন ২০ কোটি। তবে এসব কথা অনুমাননির্ভর। কিন্তু দেশের বর্তমান মোট জনসংখ্যার আসল তথ্য হলো ১৬ কোটি ৫১ লাখ। জনশুমারি দেশের উন্নয়ন পরিকল্পনা গ্রহণে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখবে। আমরা জনশুমারির প্রাথমিক প্রতিবেদন পেয়েছি। দ্রুততম সময়ে এর কাজ শেষ হয়েছে। রিপোর্টও চমৎকার হয়েছে। স্পিকার আরো বলেন, বর্তমানে মোবাইল জীবনের অপরিহার্য বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে। এর মাধ্যমে আমরা দ্রুত সময়ে নানা তথ্য-উপাত্ত জানতে পারি। বিশ্বের অনেক দেশের বড় অংশ বয়স্ক মানুষ জানিয়ে তিনি বলেন, দেশে ১৫ থেকে ১৯ বছর বয়সী জনসংখ্যা বেশি। এটা আমাদের জন্য বড় পাওয়া। তরুণ শক্তিকে সুন্দর ভবিষ্যৎ গড়তে কাজে লাগাতে হবে।
জনশুমারির এ প্রতিবেদনে বলা হয়, বর্তমানে মোট জনসংখ্যার মধ্যে পুরুষের সংখ্যা ৮ কোটি ১৭ লাখ ১২ হাজার ৮২৪ জন। আর নারীর সংখ্যা ৮ কোটি ৩৩ লাখ ৪৭ হাজার ২০৬। আর হিজড়া আছেন ১২ হাজার ৬২৯ জন। ২০১১ সালের আদমশুমারি ও গৃহগণনায় দেশের জনসংখ্যা পাওয়া গিয়েছিল ১২ কোটি ৪৩ লাখ ৫৫ হাজার ২৬৩ জন। সে সময় পুরুষ ছিলেন ৭ কোটি ২১ লাখ ৯ হাজার ৭৯৬ জন, নারী ছিলেন ৭ কোটি ১৯ লাখ ৩৩ হাজার ৯০১ জন। সে সময় ট্রান্সজেন্ডারদের আলাদাভাবে গণনা করা হয়নি। তার আগে ২০০১ সালে দেশের জনসংখ্যা ছিল ১২ কোটি ৪৩ লাখ ৫৫ হাজার ২৬৩ জন। ১৯৯১ সালে ছিল ১০ কোটি ৬৩ লাখ ১৪ হাজার ৯৯২ জন। ১৯৮১ সালে ছিল ৮ কোটি ৭১ লাখ ১৯ হাজার ৯৬৫ জন। প্রথম আদমশুমারিতে ১৯৭৪ সালে দেশের জনসংখ্যা পাওয়া গিয়েছিল ৭ কোটি ১৪ লাখ ৭৯ হাজার ৭১ জন।
প্রাথমিক ফলাফল ঘোষণা অনুষ্ঠানে প্রকল্প পরিচালক দিলদার হোসেন বলেন, শুমারির তথ্য অনুযায়ী দেশে জনসংখ্যার বার্ষিক গড় বৃদ্ধির হার কমছে। এবারের শুমারি অনুযায়ী জনসংখ্যা বৃদ্ধির হার ১ দশমিক ২২ শতাংশ, যা ২০১১ সালে ছিল ১ দশমিক ৪৬ শতাংশ, ২০০১ সালে ছিল ১ দশমিক ৫৮ শতাংশ।
বিবিএসের করা এ প্রতিবেদনে আরো দেখা গেছে, দেশে মোট তৃতীয় লিঙ্গের জনগোষ্ঠীর সংখ্যা ১২ হাজার ৬২৯ জন। বার্ষিক জনসংখ্যা বৃদ্ধির হার ১ দশমিক ২২ শতাংশ, এক দশক আগে যা ছিল ১ দশমিক ৪৬ শতাংশ। দেশে প্রতি বর্গ কিলোমিটারে জনসংখ্যা ঘনত্বের হার ১ হাজার ১১৯ জন, এক দশক আগে যা ছিল ৯৭৬ জন। এছাড়া ১০ থেকে তার বেশি বয়সী জনগোষ্ঠীর মধ্যে ২৮ শতাংশ অবিবাহিত এবং বিবাহিত ৬৫ শতাংশ। মোট জনংখ্যার ৯১ দশমিক ০৪ শতাংশ মুসলিম, হিন্দু ৭ দশমিক ৯৫ শতাংশ। দেশে মোট সাক্ষরতার হার ৭৬ দশমিক ৬৬ শতাংশ। এছাড়া প্রতিবন্ধিতার হার ১ দশমিক ৪৩ শতাংশ। এছাড়া দেশে মোবাইল ব্যবহারকারীর হার ৫৫ দশমিক ৮৯ শতাংশ এবং ইন্টারনেট ব্যবহারকারী ৩০ দশমিক ৬৮ শতাংশ। দেশে মোট খানার সংখ্যা ৪ কোটি ১০ লাখ ১০ হাজার ৫১টি। গড়ে খানার আকার চারজন, এক দশক আগে যা ছিল সাড়ে ৪ জন।
বিবিএসের শুমারি অনুসারে, দেশের মোট জনসংখ্যার ১১ কোটি ৩০ লাখ ৬৩ হাজার ৫৮৭ জন গ্রামের বাসিন্দা। আর শহরের বাসিন্দা ৫ কোটি ২০ লাখ ৯ হাজার ৭২ জন। দেশে সাক্ষরতার হার ৭৪ দশমিক ৬৬। পুরুষ জনগোষ্ঠীর সাক্ষরতার হার ৭৬ দশমিক ৫৬ শতাংশ, নারী জনগোষ্ঠীর এ হার ৭২ দশমিক ৮২।
জনশুমারির প্রাথমিক ফলাফলের বিষয়ে জানতে চাইলে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের পপুলেশন সায়েন্সেস বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ মঈনুল ইসলাম ভোরের কাগজকে বলেন, দেশের জনসংখ্যা বাড়ার হার কমলেও আকার বেড়েছে। সেসঙ্গে কর্মক্ষম জনগোষ্ঠীর সংখ্যা বেড়েছে। বয়স্ক মানুষের সংখ্যা বেড়েছে। বয়স্ক মানুষের সংখ্যা বেড়ে যাওয়ায় সামাজিক সুরক্ষা থেকে শুরু করে তাদের বিষয়ে বেশি নজর দিতে হবে। এটা একটি বড় চ্যালেঞ্জ বলে মনে করেন এ অর্থনীতিবিদ। সেই সঙ্গে দেশে পুরুষের তুলনায় নারীর সংখ্যা বেড়েছে। এই বিষয়ে বিশেষ দৃষ্টি দিতে হবে বলেও মনে করেন এই জনসংখ্যা বিশেষজ্ঞ।
আরও দেখুন
চাঁপাইনবাবগঞ্জে ‘রক্তের খোঁজে আমরা’র ২য় প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী পালিত
নিজস্ব প্রতিবেদক চাঁপাইনবাবগঞ্জ ………..চাঁপাইনবাবগঞ্জে রক্তদান সামাজিক সেবামূলক সংগঠন ‘রক্তের খোঁজে আমরা’র ২য় প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী পালিত হয়েছে। শুক্রবার …