সারা দুনিয়ায় মহামারি রূপ নেওয়া করানোভাইরাসের কারণে নিশ্চিত অর্থনৈতিক ক্ষতির মুখে পড়েছে বিশ্বের বিভিন্ন দেশ। বড় বড় কোম্পানিগুলো দেউলিয়া হয়ে পড়ার কারণে কর্মসংস্থান হারাচ্ছে কোটি কোটি মানুষ। করোনায় আরোপিত লকডাউনের কারণে বেকারত্ব আর হতাশা জেঁকে বসেছে অনেকের মধ্যে। আর বেকারত্বের এই হতাশা থেকেই আত্মহত্যার পথ বেছে নিয়েছেন ভারতের টেলিভিশন অভিনেতা মনমীত গ্রেওয়াল।
গতকাল শনিবার রাতে নবি মুম্বাইয়ে নিজ বাড়িতে গলায় ফাঁস দিয়ে মনমীত আত্মহত্যা করেছেন বলে ভারতের বিভিন্ন সংবাদমাধ্যমে খবর প্রকাশিত হয়েছে।
জানা গেছে, করোনার কারণে ভারতে চলমান লকডাউনে সব ধরনের শুটিং বন্ধ রাখা হয়েছে। এতে করে দীর্ঘ দিন ধরে শিল্পী-কলাকুশলীরা বেকার হয়ে পড়েছেন। মনমীতও অনেক দিন ধরে ঘরে বেকার বসে ছিলেন। তেমন কোনো কাজও যোগাড় করতে পারছিলেন না। ফলে ভয়াবহ অবসাদগ্রস্ত হয়ে পড়েছিলেন তিনি। পাশাপাশি, অর্থের অভাবও ছিল তার।
বাড়ি ভাড়া না দিতে পারার আশঙ্কাও তাকে গ্রাস করেছিল। অন্যদিকে বন্ধুদের কাছ থেকে আনা ধারের অর্থও পরিশোধ করতে পারছিলেন না। দিনে দিনে দেনায় ডুবছিলেন মনমীত। এই বেকারত্বের হতাশা থেকেই তিনি স্ত্রীর ওড়না দিয়ে গলায় ফাঁস দিয়ে আত্মহত্যা করেছেন।
মনমীতের বন্ধু মনজিৎ সিং মিড ডে সংবাদমাধ্যমকে বলেন, ‘সন্ধ্যাবেলায় নর্মাল ছিল মনমীত। তার কিছুটা পরে নিজের ঘরে গিয়ে দরজা বন্ধ করে দেয়। তখন ওর স্ত্রী রান্নাঘরে খাবার তৈরি করছিলেন। হঠাৎ চেয়ার পড়ে যাওয়ার শব্দ শুনে বেডরুমে দৌড়ে আসেন, মনমীতকে বাঁচানোর চেষ্টা করেন। তবে হাজার চিৎকার সত্ত্বেও কেউ এগিয়ে আসেনি। পরে এক সিকিউরিটি গার্ড এসে মনমীতের গলা থেকে ওড়না কেটে নিকটবর্তী হাসপাতালে নিয়ে গেলে চিকিৎসকরা তাকে মৃত ঘোষণা করে।’
মনজিৎ সিং আরও জানান, বাড়ি ভাড়া দেওয়ার জন্য সাড়ে ৮ হাজার রুপিও ছিল না মনমীতের। বন্ধক রাখা ছিল স্ত্রীর সোনার গহনা। এই চাপ থেকে বাঁচার জন্য আত্মহননের পথই বেছে নিয়েছে মনমীত।
তার পরিবার থেকে মা ও ভাই জানিয়েছেন, বেশ কয়েক মাস ধরেই আর্থিক অনটনে ছিলেন মনমীত। কয়েক লাখ টাকা ধারও করেছিলেন। কিন্তু লকডাউন হয়ে যাওয়ার কোনো রোজগার হচ্ছিল না তার। ফলে কীভাবে টাকা ফেরত দেবেন তা নিয়ে অবসাদে ভুগছিলেন তিনি। এই কারণেই এমন চরম পথ বেছে নিয়েছেন অভিনেতা।
মনমীত গ্রেওয়াল ‘আদত সে মজবুর’, ‘কুলদিপাক’-এর মতো ধারাবাহিকে অভিনয় করেছিলেন। এছাড়া বেশ কিছু বিজ্ঞাপনেও কাজ করেছেন এই অভিনেতা।
বিশ্ব স্বাস্থ্য বলছে, করোনায় পৃথিবীর মানুষের মানসিক স্বাস্থ্যের ব্যাপক অবনতি ঘটবে। এরইমধ্যে তার প্রমাণ পাওয়া যাচ্ছে লকডাউনে ঘরবন্দী হয়ে মানুষের অবসাদ দেখে। করোনা মোকাবিলায় তাই মানসিক ও শারীরিক স্বাস্থ্যের উপর জোর দেওয়া হচ্ছে।