নিউজ ডেস্ক:
পদ্মা সেতুতে বারবার ফেরির ধাক্কা লাগার ঘটনায় উঠে এসেছে এই নৌযানসংকটের বিষয়টি। বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌপরিবহন সংস্থার (বিআইডাব্লিউটিসি) আওতায় থাকা ফেরিগুলোর বেশির ভাগই পুরনো ও দুর্বল শক্তির হওয়ায় চালকরা সেগুলো চালাতে গিয়ে মাঝেমধ্যেই নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে বিপাকে পড়েন। এতে নানা ধরনের বিপত্তি ঘটে। প্রতিবছরই বর্ষা মৌসুমে স্রোতের সঙ্গে পাল্লা দিতে না পেরে কখনো কখনো ফেরি বন্ধ রাখার নজিরও রয়েছে।
এমন দুরবস্থা থেকে উত্তরণে সরকার জরুরি ভিত্তিতে ১২টি শক্তিশালী ফেরি নির্মাণের উদ্যোগ নিয়েছে। এরই মধ্যে এসব ফেরিসহ মোট ৩৫টি বিভিন্ন ধরনের নৌযান নির্মাণের কার্যাদেশ দিয়েছে বিআইডাব্লিউটিসি। ফেরি ছাড়াও রয়েছে যাত্রীবাহী অত্যাধুনিক ১০টি নৌযান। বাকিগুলোর মধ্যে টাগবোট, ট্যাংকার, সি-ট্রাকও রয়েছে।
দেশের তিনটি নৌযান নির্মাণ প্রতিষ্ঠানকে গত জুলাই মাসে এই কার্যাদেশ দেওয়া হয়েছে। এর মধ্যে সবচেয়ে বেশি ১৮টি নৌযান তৈরি হবে ঢাকার কাছেই গজারিয়ায় থ্রি অ্যাঙ্গেল মেরিন লিমিটেডের ডকইয়ার্ডে। বাকিগুলো তৈরি হবে চট্টগ্রামের কর্ণফুলী ও আনন্দ শিপইয়ার্ডে। কার্যাদেশ পাওয়ার পর এরই মধ্যে প্রাথমিক কাজ শুরু করেছে নির্মাতা প্রতিষ্ঠানগুলো।
১২টি নতুন ফেরি তৈরির কাজ শুরু হওয়ার বিষয়টি নিশ্চিত করে বিআইডাব্লিউটিসির পরিচালক (বাণিজ্য) এস এম আশিকুজ্জামান কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘পর্যায়ক্রমে আগামী বছরের জুনের মধ্যেই সব কটি ফেরি আমরা চালু করতে পারব।’
বিআইডাব্লিউটিসি সূত্র জানায়, পদ্মা নদীসহ দেশের বিভিন্ন নৌপথে চলাচলকারী ৫৩টি ফেরির মধ্যে বেশির ভাগেরই চলত্শক্তি প্রায় শেষের পথে। কয়েকটি ফেরি নতুন রয়েছে। যেগুলো বেশি পুরনো সেগুলোর মেয়াদও শেষ হয়েছে। তবু জোড়াতালি দিয়ে এগুলো চালানো হচ্ছে। অনেক ফেরির বয়স ৪০ বছরের বেশি হয়ে গেছে। এমনকি প্রায় এক শ বছরের পুরনো ফেরিও রয়েছে ফেরিবহরে। কয়েকটি নিয়মিতই ডকইয়ার্ডে রাখতে হয় মেরামতের জন্য। ফলে কখনো সব ফেরি একসঙ্গে চালু রাখা যায় না। এগুলোর বেশির ভাগেরই নেই প্রয়োজনীয় ফিটনেসও। ১৯২৫, ১৯৩৮, ১৯৪৭ সালে নির্মিত ফেরি আছে একাধিক। সম্প্রতি সেতুতে ধাক্কা দেওয়া একাধিক ফেরিই বহু আগের তৈরি। ‘বুড়ো’ ফেরি সরিয়ে নতুন ফেরি চালু করা গেলে বিপত্তি থাকবে না বলে জানান কর্মকর্তারা।
গত জুলাই থেকে আগস্ট পর্যন্ত দুই মাসে পদ্মা পাড়ি দেওয়ার সময় পদ্মা সেতুর পিলারের সঙ্গে পাঁচবার ফেরির ধাক্কা লাগে। এসব ঘটনায় ফেরির সংশ্লিষ্ট কয়েকজন কর্মীকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয় এবং ঘটনা তদন্তের উদ্যোগ নেওয়া হয়। এসব ঘটনায় স্রোতের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে চলার মতো ফেরি সংকটের কথাও উঠে আসে।
বিআইডাব্লিউটিসি সূত্র জানায়, আগে দেশে ফেরি তৈরি হতো না। বাইরে থেকে তৈরি করে আনতে হতো। দেশেই ফেরি তৈরি শুরু হলেও এত দিন বিভিন্ন সরকারের সময় নতুন ফেরি তৈরির দিকে খুব একটা নজর দেওয়া হয়নি। এখন ধীরে ধীরে পুরনো ফেরি বাদ দিয়ে নতুন ফেরি নামানোর দিকে নজর দেওয়া হয়েছে। আর পদ্মা সেতুতে ধাক্কা লাগার পর থেকেই তৎপরতা আরো বেড়েছে।
বিআইডাব্লিউটিসির পরিচালক (বাণিজ্য) এস এম আশিকুজ্জামান কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘ফেরিসংকট কাটাতে আমরা ১২টি ফেরি তৈরির কাজ শুরু করে দিয়েছি। এরই মধ্যে প্রাথমিক কাজও শুরু হয়ে গেছে। নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যেই আশা করি, আমরা ফেরিগুলো ও অন্যান্য নৌযান বুঝে পাব।’
জানা গেছে, নতুন যেসব ফেরি তৈরি করা হচ্ছে সেগুলো বড় ১২টি ট্রাক বা বাস পরিবহন ক্ষমতার।
ফেরি ও অন্যান্য নৌযান নির্মাতা প্রতিষ্ঠানগুলোর অন্যতম থ্রি অ্যাঙ্গেল মেরিন লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক প্রকৌশলী আমিনুল ইসলাম কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘আমরা ছয়টি ইউলিটি ফেরিসহ মোট ১৮টি নৌযান তৈরির দায়িত্ব পেয়েছি। ফেরি ছাড়া অন্যগুলোর মধ্যে রয়েছে দুটি টাগবোট, দুটি ট্যাংকার, চারটি সি ট্রাক ও তিনটি অত্যাধুনিক যাত্রীবাহী নৌযান।’ তিনি বলেন, ‘এর আগেও আমরা সরকারকে অনেকগুলো নৌযান দিয়েছি। সবগুলোই সময়মতো দেওয়া হয়েছে। এবারও আশা করি, নির্দিষ্ট সময়ের আগেই আমরা ফেরিগুলো দিতে পারব।’
ওই প্রকৌশলী বলেন, ফেরির পাশাপাশি এবার তাঁরা দেশের নৌপথের জন্য সরকারি উদ্যোগে বিশ্বমানের তিনটি যাত্রীবাহী নৌযান তৈরি করবেন। আরো কয়েকটি একই ধরনের নৌযান তৈরির কার্যাদেশ পেয়েছে অন্য দুটি প্রতিষ্ঠান