রবিবার , নভেম্বর ১৭ ২০২৪
নীড় পাতা / জাতীয় / বিসিএসে নতুন নীতিমালা: প্রতিবছর পরীক্ষা, প্রতিবছর নিয়োগ

বিসিএসে নতুন নীতিমালা: প্রতিবছর পরীক্ষা, প্রতিবছর নিয়োগ

বিসিএস পরীক্ষা পদ্ধতিতে পরিবর্তন আনতে যাচ্ছে বাংলাদেশ সরকারি কর্ম কমিশন-পিএসসি। সে অনুযায়ী এক বছরের মধ্যে বিসিএস পরীক্ষা গ্রহণ ও নিয়োগ সম্পন্ন করতে চায় সংস্থাটি। এ ছাড়া নন-ক্যাডার নিয়োগে অটোমেশন পদ্ধতিসহ বেশ কিছু পরিবর্তন আনা হচ্ছে। নন-ক্যাডার নিয়োগবিষয়ক নীতিমালাটি জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ে চূড়ান্ত অনুমোদনের অপেক্ষায় রয়েছে।

পিএসসির চেয়ারম্যান হিসেবে ২০২০ সালের ১৬ সেপ্টেম্বর যোগ দেন মো. সোহরাব হোসাইন। এরপর তিনি বর্ষপঞ্জি মেনে বিসিএস পরীক্ষা আয়োজনের ঘোষণা দেন। প্রতিবছরের শুরুতে নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করে ওই বছরের মধ্যে নিয়োগ সম্পন্ন করার বিষয়ে পরিকল্পনা নেন। তবে করোনা মহামারিসহ নানা প্রতিবন্ধকতায় এর বাস্তবায়ন সম্ভব হয়নি বলে পিএসসির চেয়ারম্যান জানান।

এ বিষয়ে সোহরাব হোসাইন কালের কণ্ঠকে বলেন, ৪৬তম বিসিএস থেকে বর্ষপঞ্জি মেনে নিয়োগ প্রক্রিয়া চালু হবে। এ লক্ষ্যে ২০২৪ সাল থেকে প্রতিবছর ১ জানুয়ারিতে নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি প্রকাশের সিদ্ধান্ত হয়েছে। নির্ধারিত বছরের মধ্যেই প্রশ্নপত্র প্রণয়ন, পরীক্ষার আয়োজন ও নিয়োগ সুপারিশ শেষ করে কর্মস্থলে যোগদান নিশ্চিত করা হবে।

তিনি বলেন, ‘এর আগে প্রতিবছর নভেম্বরে এই বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করা হতো। নতুন নিয়মে প্রথম নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি প্রকাশে যে দুই মাস দেরি হবে, এতে অনেক প্রার্থীর বয়সের সময়সীমা পার হতে পারে। এ জন্য প্রথম বর্ষপঞ্জিতে প্রার্থীদের বয়সের বিষয় বিবেচনায় নিয়ে কিছুটা ছাড়া দেওয়া হবে। এর পর থেকে প্রতিবছর নির্ধারিত বর্ষপঞ্জিতে আমরা বিসিএসের নিয়োগ সম্পন্ন করতে পারব। এ লক্ষ্যে বিগত বিসিএস পরীক্ষার নিয়োগ দ্রুত শেষ করার পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে।’

সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা বলছেন, প্রতিটি বর্ষপঞ্জিতে বিসিএসের নিয়োগ হলে অনেক বেশি প্রার্থী চাকরিতে প্রবেশের সুযোগ পাবেন। আবার বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে দীর্ঘদিন পদ শূন্য না থাকায় সেখানে কাজের গতিও বাড়বে। আগে একটি বিসিএস পরীক্ষার বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ থেকে শুরু করে নিয়োগ প্রক্রিয়া পর্যন্ত তিন বছরের বেশি সময় পার হয়েছে। এতে অনেক মেধাবী শিক্ষার্থী কর্মহীন থাকার পাশাপাশি প্রতিষ্ঠানগুলো শূন্য পদ নিয়ে খুঁড়িয়ে খুঁড়িয়ে চলেছে। প্রতিবছর নির্ধারিত সময়ে নিয়োগ সুপারিশের মাধ্যমে বিসিএসজট মুক্তির সঙ্গে এসব সমস্যা দূর করা সম্ভব হবে।

পিএসসি সূত্রে জানা যায়, ২০১৯ সালে ৪১তম বিসিএসের বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করা হয়। ২০২০ সালে ৪৩তম, ২০২১ সালে ৪৪তম ও ২০২২ সালে ৪৫তম বিসিএসের বিজ্ঞপ্তি প্রকাশিত হয়। এই চারটি বিসিএসের পরীক্ষা ও নিয়োগ সুপারিশ কার্যক্রম এখনো চলছে। চারটি বিসিএস ক্যাডারে শূন্য পদ সাত হাজার ৯৯৯টি। দীর্ঘদিন খালি থাকলেও বিসিএসজটের কারণে এখনো এসব পদে নিয়োগ সুপারিশ করা সম্ভব হয়নি। এর মধ্যে ৪১তম বিসিএসে দুই হাজার ১৬৬টি, ৪৩তম বিসিএসে এক হাজার ৮১৪টি, ৪৪তম বিসিএসে এক হাজার ৭১০টি এবং ৪৫তম বিসিএসে দুই হাজার ৩০৯টি ক্যাডার পদে নিয়োগের সুপারিশ দেওয়া হবে।

৪২তম বিসিএস পরীক্ষাটি ছিল ব্যতিক্রম। এ সময় করোনার কারণে চিকিৎসক নিয়োগে দ্রুত বিশেষ ব্যবস্থায় নিয়োগ প্রক্রিয়া সম্পন্ন করা হয়।

নন-ক্যাডার নিয়োগ নীতিমালায়ও আসছে ব্যাপক পরিবর্তন। এতে অটোমেশন পদ্ধতিতে নিয়োগ প্রক্রিয়াসহ মেধাক্রম অনুযায়ী পছন্দের পদে যোগ দেওয়ার সুযোগ পাবেন প্রার্থীরা। এসব বিষয় অন্তর্ভুক্ত করে নন-ক্যাডার নিয়োগ নীতিমালাটি জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ে চূড়ান্ত অনুমোদনের অপেক্ষায় রয়েছে। এ ছাড়া প্রার্থীদের কাছ থেকে অপ্রয়োজনীয় কাগজপত্র না নেওয়ার সিদ্ধান্ত হয়েছে। জাতীয় পরিচয়পত্র থেকে একজন প্রার্থীর যেসব তথ্য পাওয়া যায়, এ ধরনের তথ্যের জন্য আলাদা কোনো কাগজ চাওয়া হবে না। এর বদলে গবেষণামূলক প্রয়োজনীয় ডাটা সংরক্ষণের উদ্যোগ নিচ্ছে প্রতিষ্ঠানটি।

অটোমেশন পদ্ধতি 

প্রস্তাবিত নীতিমালায় অটোমেশন পদ্ধতিতে নিয়োগ প্রক্রিয়া সম্পন্ন করার বিষয়ে বলা হয়েছে। ৪৫তম বিসিএস থেকে এর বাস্তবায়ন হবে। ৪৪তম বিসিএস পর্যন্ত মেধাতালিকা অনুযায়ী প্রার্থীদের বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে যোগদানের সুপারিশ করা হতো। এতে মেধা অনুযায়ী তুলনামূলকভাবে ভালো পদে নিয়োগের সুপারিশ পেলেও কাঙ্ক্ষিত পদে যোগদানের সুযোগ ছিল না। ৪৫তম বিসিএস থেকে নতুন নিয়োগ নীতিমালার মাধ্যমে এই ব্যবস্থাপনায় পরিবর্তন আনবে পিএসসি।

এই বিসিএস থেকে অটোমেশন পদ্ধতিতে নিয়োগ সুপারিশ করা হবে। প্রাপ্ত পদগুলোর মধ্যে পছন্দক্রম অনুযায়ী বেছে নিতে পারবেন মেধাতালিকায় তুলনামূলকভাবে এগিয়ে থাকা প্রার্থীরা। বাকি পদগুলো থেকে মেধাতালিকার ক্রমানুসারে প্রার্থীরা পছন্দ করে নিতে পারবেন।

নন-ক্যাডার নিয়োগ নীতিমালা-২০১৪ অনুসরণে ৪৫তম বিসিএস থেকে পদসংখ্যা উল্লেখ করে বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করা হবে। এর আগে পদসংখ্যা উল্লেখ না করে ৪১তম থেকে ৪৪তম বিসিএসের নন-ক্যাডার নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করা হয়েছিল। এসব বিসিএসে নন-ক্যাডার নিয়োগ কার্যক্রম এখনো প্রক্রিয়াধীন। এগুলোতে পদসংখ্যা উল্লেখ করে নিয়োগপ্রক্রিয়া সম্পন্ন করতে চায় পিএসসি। এ লক্ষ্যে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের বিশেষ ছাড় অনুমোদন (ওয়েভার) নিয়ে নির্ধারিত পদে নন-ক্যাডার নিয়োগ দেওয়া হবে।

চূড়ান্ত অনুমোদনের অপেক্ষায় থাকা নন-ক্যাডার নিয়োগ নীতিমালায় জানানো হয়, একটি বিসিএসের বিজ্ঞপ্তি প্রকাশকাল থেকে পরবর্তী বিসিএসের বিজ্ঞপ্তি প্রকাশকাল পর্যন্ত বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান ও দপ্তরে থাকা শূন্য পদগুলো ধরে পদসংখ্যা নির্ধারণ করা হবে। এর আগে ৪০তম বিসিএসের নন-ক্যাডার নিয়োগের ক্ষেত্রে এই পদ্ধতি অনুসরণ করে প্রতিষ্ঠানটি। তবে এ নিয়ে সংশ্লিষ্ট বিসিএস প্রার্থীদের মধ্যে উদ্বেগ দেখা গেছে। তাঁরা পিএসসি কার্যালয়ের সামনে দীর্ঘদিন প্রতিবাদ ও মানববন্ধন পালন করেছেন। তাঁদের অভিযোগ, এ প্রক্রিয়ায় নন-ক্যাডার নিয়োগের পদসংখ্যা কমে আসবে।

আরও দেখুন

পিরোজপুরে মানিলন্ডারিং ও সন্ত্রাসী কার্যে অর্থায়ন প্রতিরোধ বিষয়ে দিনব্যাপীপ্রশিক্ষণ কর্মসূচি অনুষ্ঠিত

নিজস্ব প্রতিবেদক:  ১৩ জুলাই ২০২৪, শনিবার, ঢাকা: মানিলন্ডারিং ও সন্ত্রাসী কার্যে অর্থায়ন প্রতিরোধ বিষয়ে পিরোজপুরের …