শুক্রবার , জানুয়ারি ১০ ২০২৫
নীড় পাতা / জাতীয় / বিশ্বের বৃহত্তম ড্রেজারে খনন হচ্ছে মোংলা চ্যানেল

বিশ্বের বৃহত্তম ড্রেজারে খনন হচ্ছে মোংলা চ্যানেল

নিউজ ডেস্ক:
করোনাভাইরাসের রেডজোনে পরিণত হলেও বাগেরহাটের মোংলা বন্দরে পুরোদমে এগিয়ে চলছে উন্নয়নযজ্ঞ। সরগরম মোংলার ইনারবার চ্যানেল। খননের কাজ করে যাচ্ছে চীনের বৃহৎ দানবাকৃতির খনন যন্ত্র ফড়িং আকৃতির ‘হপার ড্রেজার’। এটি চীনের সবচেয়ে বড় তিন খননযন্ত্রের একটি।

ঢাকায় চীনা দূতাবাসের উপ রাষ্ট্রদূত হ্যালং ইয়ান এক ফেসবুক পোস্টে এ তথ্য জানান। পোস্টে চীনের সংবাদ সংস্থা সিনহুয়ার একটি প্রতিবেদনও শেয়ার করেন তিনি।

প্রতিবেদনে বলা হয়, কোভিড-১৯ সত্ত্বেও একটি চীনা হপার ড্রেজার মোংলা বন্দর কর্তৃপক্ষ এবং চীন সিভিল ইঞ্জিনিয়ারিং কনস্ট্রাকশন করপোরেশনের (সিসিইসিসি) চুক্তি অনুযায়ী দেশের দ্বিতীয় প্রধান সমুদ্রবন্দর মোংলায় বন্দর চ্যানেল ড্রেজিংয়ের জন্য কঠোর পরিশ্রম করছে।

গত বুধবার মোংলায় পৌঁছানোর পরই বিশাল হপার ড্রেজার জিন জি ল্যাং-৫ কাজ শুরু করেছে। উন্নত অটোমেশন সরঞ্জামে সজ্জিত ড্রেজারটি তৈরিতে একটি কার্যকরী নকশা করা হয়েছে, যার নিচে ডাম্পিং স্পেস রাখা হয়েছে। নকশা অনুযায়ী, দানবাকৃতির এই খনন যন্ত্র যেকোনো সময়, যেকোনো ঋতুতে, যেকোনো পরিস্থিতিতে তার খনন কাজ চালিয়ে যেতে সক্ষম।

সিনহুয়া বলছে, ফেব্রুয়ারিতে ড্রেজারটি তৈরি হওয়ার পর মোংলা বন্দর চ্যানেল খননের মাধ্যমে এটির আনুষ্ঠানিক যাত্রা শুরু হয়। এটি তিনটি দানবাকৃতি চীনা ড্রেজারের একটি। অন্য দুটি হলো বিশ্বের বৃহত্তম কাটার সাকশন ড্রেজার ‘সিন হাই টেং’ ও ‘জিন হাই জু’। এ দুটিও মোংলা চ্যানেল প্রকল্পের কাজে নিয়োজিত।

চীনা প্রকল্প বাস্তবায়নকারী সংস্থা সিসিইসিসি বলেছে, বিশ্বের দুটি বৃহত্তম সেলফ নেভিগেটেড কাটার সাকশন ড্রেজার পরিচালনা সত্যিই চ্যালেঞ্জ। কেননা, প্রতি ঘণ্টায় সাড়ে ছয় হাজার ঘনমিটার মাটি ও বালু কেটি নিয়ে তা ২০ কিলোমিটার দূরে ফেলতে হচ্ছে।

চীনা সংবাদ সংস্থা বলেছে বঙ্গীয় ব-দ্বীপের অন্যতম প্রধান সমুদ্রবন্দর মোংলা, যা খুলনা শহর থেকে প্রায় ৪৮ কিলোমিটার দূরে ও পশুর নদের পাড়ে অবস্থিত।

দেশের বৃহত্তম সমুদ্রবন্দর চট্টগ্রামের ওপর ক্রমবর্ধমান চাপের কারণে অনেক আন্তর্জাতিক শিপিং সংস্থা বিকল্প বন্দর হিসেবে মোংলায় তাদের জাহাজ পাঠাতে পছন্দ করছে।

এ ছাড়া, দেশের বৃহত্তম প্রকল্প পদ্মা সেতু এবং পদ্মা রেল লিঙ্ক নির্মাণের কারণে মোংলা একটি আকর্ষণীয় গেটওয়ে হিসেবে আত্মপ্রকাশ করতে যাচ্ছে। দেশের এ দুটি বড় প্রকল্প মোংলা বন্দরকে রাজধানী ঢাকার সঙ্গে সরাসরি সংযুক্ত করতে চলেছে। তবে বন্দরটি বর্তমানে পশুর চ্যানেলের নাব্যতা সমস্যার কারণে চ্যালেঞ্জের মুখে পড়েছে।

এই পরিস্থিতিতে মোংলা বন্দর কর্তৃপক্ষ এবং সিসিইসিসির মধ্যে চুক্তি হয় ২০২০ এর ডিসেম্বরে। চুক্তি অনুযায়ী মোংলা বন্দরের ইনারবার চ্যানেলের গভীরতা সাড়ে ছয় মিটার থেকে বাড়িয়ে ১০ মিটার গভীর করবে সিসিইসিসি। যাতে যেকোন সময় ১০ মিটার ড্রাফটের কন্টেইনার জাহাজ বন্দরের টার্মিনালে ভিড়তে পারে।

৭.৫৪ বিলিয়ন টাকার প্রকল্পটি ২০২১ সালের মার্চ মাসে শুরু হয়ে ২০২২ সালের জুলাইয়ে শেষ হবে বলে আশা করা হচ্ছে।

মোংলা বন্দর চ্যানেলের ইনারবারের ড্রেজিং বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় ড্রেজিং প্রকল্প। চুক্তির আওতায় কাজের মূল অংশটি ২৪ মিলিয়ন ঘনমিটারের বেশি ড্রেজিং ভলিউমসহ ২৪ কিমি দীর্ঘ।

প্রকল্প গ্রহণ ও বাস্তবায়নের জন্য ২০১৮ সালের সেপ্টেম্বর মাসে খুলনা প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় (কুয়েট) এর মাধ্যমে প্রকল্পটির সম্ভাব্যতা যাচাই (ফিজিবিলিটি স্টাডি) করা হয়। খুলনা প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃক পরিচালিত সমীক্ষায় মোংলা বন্দরে ২০২৫ সালে ৮.৭২ লাখ টিইউজ কন্টেইনার এবং ২০৫০ সালে ৪৫.৩২ লাখ টিইউজ কন্টেইনার ও ৩০ হাজারের বেশি গাড়ি হ্যান্ডলিং এর সম্ভাবনা রয়েছে বলে জানানো হয়। এরপরই মূলত প্রকল্পটি চূড়ান্তভাবে হাতে নেয়া হয়।

মোংলা বন্দর কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান রিয়ার অ্যাডমিরাল মোহাম্মদ মুসা নিউজবাংলাকে বলেন, ১৩০ কিলোমিটারের এই ইনারবার (অভ্যন্তরীণ চ্যানেল) ড্রেজিং হলে বন্দরে সাড়ে ৯ মিটার থেকে ১০ মিটার গভীরতার জাহাজ অনায়াসেই প্রবেশ করতে পারবে। তাতে আর কোনো বাধা থাকবে না। এখন বন্দর চ্যানেলে সাত মিটার পর্যন্ত গভীরতার জাহাজ আসতে পারে।

এ ছাড়া, ইনারবার ড্রেজিংয়ের ফলে বন্দরের গতিশীলতা আরও বাড়বে। নানামুখী উন্নয়নের ফলে আগের তুলনায় এখন এই বন্দরে ২০ শতাংশ জাহাজ আসা বেড়েছে বলেও জানান তিনি।

২০২০-২১ অর্থবছরে মোংলা সমুদ্রবন্দরে রেকর্ডসংখ্যক ৯৭০টি জাহাজ এসেছে। এর আগে মোংলা বন্দরে এত জাহাজ আর কখনোই আসেনি। এই সময়ে মোংলা বন্দর ৩৪০ কোটি টাকা রাজস্ব আয় করেছে।

২০২০-২১ অর্থবছরে মোংলা বন্দরে মোট কার্গো হ্যান্ডলিং হয়েছে ১১৯ দশমিক ৪৫ লাখ মেট্রিক টন। এ ছাড়া, ৪৩ হাজার ৯৫৯টি কনটেইনার খালাস-বোঝাই এবং ১৪ হাজার ৪৭৪টি গাড়ি নামানো হয়েছে বন্দরে।

ডিসেম্বরে রামপাল কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্র চালু হলে বছরে ৪৫ লাখ মেট্রিক টন কয়লার দরকার হবে। ফলে বছরে ১৩০টি মাদার ভেসেল এবং তিন শতাধিক লাইটার জাহাজ বন্দরে আসবে।

আরও দেখুন

সিংড়ায় কৃষকের নির্মাণাধীন ঘর

ভেঙ্গে দিলো প্রতিপক্ষরা নিজস্ব প্রতিবেদক সিংড়া,,,,,,,,,,,,,নাটোরের সিংড়ায় কৃষক মাসুদের নির্মাণাধীন ঘর ভেঙ্গে দিয়েছেপ্রতিপক্ষরা। চাঁদা না …