নিউজ ডেস্ক:
সৌদি যুবরাজের সঙ্গে বৈঠক, আন্তরিকতার সঙ্গে সম্মান দেখিয়েছেন যুক্তরাজ্য, নেদারল্যান্ডস, সিঙ্গাপুর ও ইতালির প্রধানমন্ত্রীসহ বিশ্বনেতারা
ভারতের রাজধানী নয়াদিল্লিতে জি২০ সম্মেলনে অংশগ্রহণ করে বিরল সম্মান পেলেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। জি২০-এর মতো বিশ্বমঞ্চে প্রথমবার অংশগ্রহণ করা বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রীকে বিভিন্ন আয়োজনে আন্তরিকভাবে সম্মান দেখিয়েছেন বিশ্বের প্রভাবশালী দেশগুলোর নেতারা। গতকাল সম্মেলনের শেষ দিনে সাইডলাইনে প্রধানমন্ত্রী বৈঠক করেছেন সৌদি আরবের যুবরাজ ও প্রধানমন্ত্রী মোহাম্মাদ বিন সালমানের সঙ্গে। গতকাল ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী ঋষি সুনাক প্রধানমন্ত্রীর চেয়ারের পাশে হাঁটু গেড়ে বসে শুভেচ্ছা চেয়েছেন। পাশাপাশি জাতিসংঘ মহাসচিব অ্যান্তোনিও গুতেরেসসহ অন্য বিশ্বনেতারাও প্রধানমন্ত্রীকে দেখিয়েছেন অন্যরকম ভালোবাসা। এর আগে শনিবার দিনভর বিশ্বের ক্ষমতাধর নেতাদের সঙ্গে নানান আনুষ্ঠানিকতায় কাটিয়েছেন শেখ হাসিনা। গতকাল সকালে মহাত্মাগান্ধীর স্মৃতির প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে দিনের কর্মসূচি শুরু করেন প্রধানমন্ত্রী। নয়াদিল্লির রাজঘাটে এ অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী অংশ নেন জি২০ সদস্য এবং অতিথি রাষ্ট্র ও সরকারপ্রধানদের সঙ্গে। সেখানে শ্রদ্ধা জানানোর পর নিজেদের মধ্যে মিথস্ক্রিয়ায় অংশ নেন বিশ্বনেতারা। এ সময় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে অনেককে ছবি তুলতে দেখা গেছে। এসব ছবিতে দেখা যায়, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে কেউ জড়িয়ে ধরেছেন, কেউ হাত ধরে আছেন। সূত্র জানান, এ সময় ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী ঋষি সুনাক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে কথা বলেন কিছু সময়। তিনি নিজে থেকে প্রধানমন্ত্রীর কাছে আসেন এবং শেখ হাসিনা যে চেয়ারে বসে ছিলেন তাঁর পাশে হাঁটু গেড়ে বসে কথা বলেন। ঋষি সুনাক ছোটবেলা থেকে শেখ হাসিনার নাম শুনে আসছেন বলে উল্লেখ করে বলেন, এতদিন ধরে আপনার সঙ্গে পরিচিত হওয়ার সুযোগ খুঁজছিলাম। আমার জন্য আপনার শুভেচ্ছা প্রয়োজন বলেও উল্লেখ করেন ঋষি সুনাক। এ ছাড়া নেদারল্যান্ডসের প্রধানমন্ত্রী মার্ক রুটকে প্রধানমন্ত্রীর পাশে বসে বেশ সময় নিয়ে কথা বলতে দেখা গেছে। বেশ হাস্যোজ্জ্বল ছিলেন নেদারল্যান্ডসের প্রধানমন্ত্রী। শেখ হাসিনার সঙ্গে কুশলবিনিময় করেছেন ইউরোপিয়ান ইউনিয়নের প্রেসিডেন্ট উরসুলা ভন দার লিয়ন। প্রধানমন্ত্রীকে দেখে দাঁড়িয়ে সম্মান দেখিয়ে মনোযোগের সঙ্গে কথা শুনেছেন জাতিসংঘের মহাসচিব অ্যান্তোনিও গুতেরেস ও সিঙ্গাপুরের প্রধানমন্ত্রী লি লুং। কাছে এসে বিভিন্ন ইস্যুতে কথা বলতে দেখা গেছে বিশ্বব্যাংকের প্রধান অজয় বাঙ্গা, আইএমএফের প্রধান ক্রিস্টালিনা জর্জিভা ও ওইসিডির জেনারেল সেক্রেটারি ম্যাথিয়াস কারমেনকে। শুভেচ্ছাবিনিময় করেছেন ইতালির প্রধানমন্ত্রী জর্জিয়া মেলনি। পাশে বসে কথা বলেছেন ওমানের ডেপুটি প্রাইম মিনিস্টার সৈয়দ আসাদ। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে মাঝখানে রেখে ছবি তুলেছেন ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল ম্যাক্রোঁ, আর্জেন্টিনার প্রেসিডেন্ট আলবার্তো ফার্নান্দেজসহ সাত বিশ্বনেতা। রাজঘাটের অনুষ্ঠান থেকে ভারত মান্দাপান কনভেশন সেন্টারে জি২০ সম্মেলনের শেষ অধিবেশনে অংশ নেওয়ার পর সৌদি আরবের যুবরাজ মোহাম্মদ বিন সালমানের সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় বৈঠক হয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার। বাংলাদেশের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ এ বৈঠকে বাংলাদেশ ও সৌদি আরব সম্ভাব্য সব ক্ষেত্রে সহযোগিতা বাড়াতে একযোগে কাজ করবে বলে জানিয়েছেন সৌদি যুবরাজ মোহাম্মদ বিন সালমান। এ ক্ষেত্রে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে পূর্ণ সমর্থনের আশ্বাস দিয়েছেন বৈশ্বিকভাবে প্রভাবশালী এ নেতা। পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, বাংলাদেশের পতেঙ্গা টার্মিনাল, পায়রা বন্দর, আকুয়া নবায়নযোগ্য জ্বালানি প্রকল্পসহ বিভিন্ন প্রকল্পে সৌদি বিনিয়োগকারীদের চলমান বিনিয়োগে সন্তোষ প্রকাশ করেন সৌদি যুবরাজ মোহাম্মদ বিন সালমান। তিনি বলেন, প্রায় ২.৮ মিলিয়ন বাংলাদেশি তাদের কঠোর পরিশ্রমের মাধ্যমে সৌদির অর্থনীতিতে উল্লেখযোগ্য অবদান রাখছেন। অত্যন্ত ফলপ্রসূ এ বৈঠকে যুবরাজ সালমান সাম্প্রতিক বছরগুলোয় বাংলাদেশের উল্লেখযোগ্য আর্থসামাজিক উন্নয়ন অর্জনে ‘অনুপ্রেরণামূলক নেতৃত্বের জন্য’ শেখ হাসিনার প্রশংসা করেন। অপরদিকে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সৌদি আরবে বেশকিছু সামাজিক সংস্কার এবং সাম্প্রতিক সময়ে অসংখ্য কূটনৈতিক সাফল্য অর্জনের জন্য যুবরাজকে অভিনন্দন জানান। যুবরাজকে বাংলাদেশ সফরের আমন্ত্রণও জানান। সালমান তাঁর আমন্ত্রণ গ্রহণ করেন এবং বাংলাদেশ সফরের ইচ্ছা প্রকাশ করেন। সৌদি যুবরাজের সঙ্গে বৈঠক শেষে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা গতকাল দুপুরে নয়াদিল্লির পালাম বিমানবন্দর থেকে বিশেষ বিমানে ঢাকার উদ্দেশে রওনা দেন। বিকালে তিনি ঢাকা পৌঁছান।
তিন দিনের সফরে শুক্রবার নয়াদিল্লি পৌঁছানো প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা প্রথম কর্মসূচিতে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির বাসভবনে যান। সেখানে মোদির সঙ্গে হয় আনুষ্ঠানিক বৈঠক ও একান্ত বৈঠক। বৈঠক শেষে বাংলাদেশ-ভারত তিন সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষর হয়। শনিবার ভোর থেকে মধ্যরাত পর্যন্ত নানান আনুষ্ঠানিকতায় বিশ্বনেতাদের সঙ্গে ব্যস্ত দিন পার করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। সদস্য না হলেও অতিথি রাষ্ট্র হিসেবে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী অংশ নেন মর্যাদাপূর্ণ জি২০ শীর্ষ সম্মেলনে। সদস্য রাষ্ট্রগুলোর বাইরে এ সম্মেলনে দুই দফায় ভাষণ দিয়েছেন একমাত্র বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী। জি২০-তে যোগ দেওয়া মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের সঙ্গে একান্ত পরিবেশে কথা হয় শেখ হাসিনার। মার্কিন প্রেসিডেন্ট নিজ হাতে মোবাইল নিয়ে সেলফি তোলেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও তাঁর কন্যা সায়মা ওয়াজেদ পুতুলের সঙ্গে। নির্বাচন নিয়ে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের চাপের মধ্যে এ হাস্যোজ্জ্বল সেলফির প্রতিক্রিয়া মুহূর্তেই দেখা যায় বাংলাদেশের রাজনৈতিক অঙ্গনে। জি২০ সম্মেলনে অংশগ্রহণ করার পাশাপাশি প্রধানমন্ত্রী সাইডলাইনে দ্বিপক্ষীয় বৈঠক করেছেন দক্ষিণ কোরিয়ার প্রেসিডেন্ট, আজেন্টিনার প্রেসিডেন্ট ও আরব আমিরাতের প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে। পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আবদুল মোমেনের ভাষায়, বাংলাদেশের জন্য এবারের সফর ছিল অবিস্মরণীয়। ভারতের রাষ্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রী আয়োজিত নৈশভোজে ভারতের বিভিন্ন প্রদেশ থেকে মুখ্যমন্ত্রীরা এসেছিলেন। তাঁরা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে সাক্ষাৎ করার জন্য লাইন দিয়ে দাঁড়িয়েছিলেন। জি২০-তে মোট নয়টি দেশ অতিথি হিসেবে যোগ দিয়েছিল। তাদের সবার মুখে মুখে ছিল বাংলাদেশের কথা ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কথা। দূরে বসা রাষ্ট্রনেতা ও শীর্ষ কর্মকর্তারা প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে একবারের জন্য হলেও এসে দেখা করে কথা বলে গেছেন। এ সম্মানের জন্য আমরা জি২০-এর প্রেসিডেন্ট ভারতবর্ষ ও ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদিকে ধন্যবাদ দিই। পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, যেহেতু ভারতবর্ষ সম্মান দিয়েছে, অন্য সব রাষ্ট্রও বাংলাদেশকে সম্মান দেখিয়েছে। বাংলাদেশের মানুষের এনিয়ে গর্ব করা উচিত বলে মনে করেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. মোমেন।