নিউজ ডেস্ক:
বিশ্বব্যাপী দাম উল্লেখযোগ্যভাবে স্থিতিশীল হওয়ায় গম আমদানির সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার। বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের তথ্য অনুসারে, বর্তমানে প্রতিটন গমের দাম ২৬৬ মার্কিন ডলার, যা মাত্র এক বছর আগেও ৩৭৮ ডলার ছিল। অবশ্য এর আগে, রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের প্রভাবে আন্তর্জাতিক বাজারে গমের দাম ৪০০ ডলার পর্যন্ত উঠেছিল।
আন্তর্জাতিক দরপত্র ও জি-টু-জি চুক্তির আওতায় সরকার এ বছর সাড়ে ৪ লাখ টন গম কেনার কার্যক্রম শুরু করেছে। দীর্ঘ অস্থিরতার পর বিশ্ব গমের বাজারে কিছুটা স্থিতিশীলতা দেখা দেওয়ায় এমন উদ্যোগ নিয়েছে সরকার।
রাশিয়া, রোমানিয়া, বুলগেরিয়াসহ আরেকটি উৎস থেকে এই গম আমদানি করা হবে। রোমানিয়া থেকে যে গম আমদানি করা হচ্ছে, সেটি মূলত ইউক্রেনের গম বলে জানা গেছে। খাদ্য মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, আমদানির জন্য সব ধরনের চুক্তি ইতোমধ্যেই সম্পন্ন করেছে মন্ত্রণালয়।
জানা গেছে, সরকার রাশিয়া থেকে জি-টু-জি পদ্ধতিতে ৩ লাখ টন গম আমদানি করছে, যা ইতোমধ্যেই সরকারি ক্রয়সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটি অনুমোদন দিয়েছে।
এর বাইরে বুলগেরিয়া থেকে ৫০ হাজার মেট্রিক টন এবং রোমানিয়া থেকে আরও ৫০ হাজার মেট্রিক টন গম কেনা হচ্ছে আন্তর্জাতিক দরপত্রের মাধ্যমে।
এছাড়া, আন্তর্জাতিক দরপত্রের মাধ্যমে আরও ৫০ হাজার মেট্রিক টন গম আমদানির কার্যক্রম চলমান রয়েছে বলে খাদ্য মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে।
এরমধ্যে ৪৬ হাজার মেট্রিক টন গমের আমদানি সম্পন্ন হয়েছে বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা। একই সঙ্গে বেসরকারি আমদানিও অনেকটা স্বাভাবিক হচ্ছে।
বিশ্বব্যাপী গমের দাম উল্লেখযোগ্যভাবে স্থিতিশীল হওয়ায় গম আমদানির এই সিদ্ধান্ত নিল সরকার। বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের তথ্য অনুসারে, বর্তমানে প্রতিটন গমের দাম ২৬৬ মার্কিন ডলার, যা মাত্র এক বছর আগেও ৩৭৮ ডলার ছিল। অবশ্য এর আগে, রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের প্রভাবে আন্তর্জাতিক বাজারে গমের দাম ৪০০ ডলার পর্যন্ত উঠেছিল।
খাদ্যমন্ত্রী সাধন চন্দ্র মজুমদার দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ডকে বলেন, কিছু গম ইতোমধ্যে এসে পৌঁছেছে; আর বাকিগুলো প্রক্রিয়াধীন রয়েছে।
তিনি বলেন, “আমাদের এবার ৫ লাখ টন চাল আমদানির অনুমতি নেওয়া ছিল, কিন্তু সেটা আনতে হচ্ছে না। শুধু গম আনলেই হয়ে যাবে। দ্রুতই আমরা গম আমদানির কাজ শেষ করবো।”
গমের বাজারে অস্থিরতা
২০২২ সালের ২৪ ফেব্রুয়ারিতে রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ শুরু হওয়ার পর গম আমদানিতে ব্যাপক সংকটে পড়ে বাংলাদেশ।
গম আমদানির বড় দুই উৎস বন্ধ হয়ে যাওয়ায় সরকারি-বেসরকারি কোনো পক্ষই প্রায় ৬ মাস পর্যন্ত কোনো গম আমদানি করতে পারেনি। বড় দুই রপ্তানিকারক দেশের রপ্তানি বন্ধ হওয়ায় আন্তর্জাতিক বাজারেও গমের দাম রেকর্ড পরিমাণে বাড়তে থাকে।
সে সময় যেটুকু ভরসার জায়গা ছিল ভারত, সেটিও বন্ধ হয়ে যায়। স্থানীয় খাদ্যশস্যের মজুদ ধরে রাখতে এবং দাম স্থিতিশীল রাখতে প্রতিবেশি দেশটিও ২০২২ সালের ১৪ মে রপ্তনি বন্ধ করে দেয়। ভারত এখনও রপ্তানি শুরু না করলেও রাশিয়া থেকে গম আমদানি করছে সরকার।
জাতিসংঘ ও তুরস্কের মধ্যস্থতায় রাশিয়া-ইউক্রেনের শস্য চুক্তির মেয়াদ শেষ হওয়ার কারণে ইউক্রেনের খাদ্যশস্য আমদানি আবারও বন্ধ হয়ে গেছে।
এই পরিস্থিতিতে সরকার রাশিয়ার পাশাপাশি বিকল্প দেশ হিসেবে বুলগেরিয়া, রোমানিয়া থেকে গম আমদানি করছে।
তবে আন্তর্জাতিক বাজারে এই দাম যুদ্ধের আগের অবস্থায় ফিরলেও দেশের বাজারে আটার দাম আগের অবস্থায় ফেরেনি। ডলারের উচ্চমূল্য, ফ্রেইট চার্জ, এলসি খোলার জটিলতাসহ নানান কারণ এর জন্য দায়ী বলে মনে করছেন বেসরকারি আমদানিকারকরা।
ট্রেডিং কর্পোরেশন অফ বাংলাদেশ (টিসিবি)- এর বাজার বিশ্লেষণের তথ্য বলছে, বাজারে খোলা অটা বিক্রি হচ্ছে ৪৫ টাকা কেজি দরে, যা গত বছরের এই সময়ে বিক্রি হয়েছে ৫৮ টাকা পর্যন্ত দামে। তবে যুদ্ধের আগে খোলা আটার দাম ছিল ৩৪-৩৫ টাকা কেজি।
এছাড়া, প্যাকেট আটার দাম এখনো ৫৫ টাকা, যা গত বছরের একই সময়ে বিক্রি হয়েছে ৬৫ টাকা পর্যন্ত দামে।
টিসিবির বলছে, গত এক মাসের ব্যবধানে প্যাকেট আটার দাম কেজিতে ৫ টাকা পর্যন্ত কমেছে। বর্তমানে সরকারের কাছে প্রায় ১ লাখ ৫৬ হাজার মেট্রিক টন গমের মজুদ রয়েছে।
বেসরকারি আমদানি
স্থানীয় বাজারে যেটুকু গম-আটার দাম কমেছে, তার কারণ বেসরকারি আমাদনিটা অনেকটাই স্বাভাবিক। অর্থবছরের তিনমাসে ভালো পরিমাণে গম আমদানি করেছে বেসরকারি খাত।
খাদ্য মন্ত্রণালয়ের তথ্য বলছে, গত ১ জুলাই থেকে ১০ অক্টোবর পর্যন্ত বেসরকারি খাতে ১২.৮২ লাখ টন গম আমদানি হয়েছে। এই সময়ে সরকারিসহ গমের মোট আমদানির পরিমাণ ১৩.১১ লাখ টন।
রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের প্রভাব থাকার কারণে গত বছরও গমের আমদানি কমে গিয়েছিল। ২০২২-২৩ অর্থবছরে মোট ৩৮.৭৫ লাখ টন গম আমদানি করা হয়। যেখানে সরকারিভাবে ৬.৭৯ লাখ টন এবং বেসরকারিভাবে মোট ৩১.৯৫ লাখ টন গম আমদানি করা হয়েছিল।
বাংলাদেশের দ্বিতীয় প্রধান খাদ্যশস্য গম। বার্ষিক ৭০ লাখ টন চাহিদার বিপরীতে দেশে উৎপাদন হয় মাত্র ১০-১২ লাখ টন। বাকিটা আমদানি করে চাহিদা মেটানো হয়। তবে দুই বছর ধরে যুদ্ধের প্রভাবে আটার দাম বেড়ে যাওয়ায় দেশেও আটার চাহিদা কমেছে।
সিটি গ্রুপের ডিজিএম (সেলস) প্রদীপ করণ টিবিএস কে জানান, আটা-ময়দার দাম ধীরে ধীরে কমছে। কম মূল্যের যেসব গম দেশে আসছে প্রতিনিয়তই তার সঙ্গে দামের সমন্বয় করা হচ্ছে।