নিজস্ব প্রতিবেদক:
নাটোর সদর উপজেলার কাদিম সাতুরিয়া এলাকায় চিকিৎসক দম্পতি আমানুল্লাহ আমান এবং ইসরাত জাহান। দু’জনই বেসরকারি হাসপাতালে কর্তব্যরত। করোনা ভাইরাস সংক্রমণের সময়ে জনগনকে সেবা দিতে বহু চিকিৎসক যখন অনীহা প্রকাশ করেছেন। তারা সেই সময়ে থেকেছেন রোগীদের সেবায় মগ্ন।
ডা: আমান কর্তব্যরত আছেন বড়াইগ্রাম উপজেলার বনপাড়ায় আমিনা হাসপাতালে এবং তার স্ত্রী রয়েছেন রাজশাহীর বারিন্দ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে। দেশের করোনা ভাইরাস সংক্রমণের উর্দ্ধমূখী ধারায় পড়ে যান ডা: আমান তার স্ত্রী ডা: ইসরাত জাহান, বাবা মামদুদ হোসেন, মা শাহানারা বেগম এবং ছোট ভাই প্রকৌশলী কাওসার হোসেন। বাদ থাকে পরিবারের সর্ব কনিষ্ঠ সদস্য ডা: আমানের ৩ বছর বয়সী ছেলে ইউসুফ।
১৯ জুলাই তারা করোনা পজিটিভ শনাক্ত হন।একই পরিবারের ৫ সদস্য একই সঙ্গে করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত হওয়ার নজির নেই। এর মধ্যে ঢাকা সিএমএইচ ভর্তি হন বাবা মামদুদ হোসেন, মা শাহানারা বেগম এবং ছোট ভাই প্রকৌশলী কাওসার হোসেন। কুর্মিটোলা জেনারেল হাসপাতালে চিকিৎসা নেন চিকিৎসক ডা:আমানুল্লাহ এবং ইসরাত জাহান। দশ দিনের চিকিৎসা শেষে বাড়ি ফেরেন চিকিৎসক দম্পতি ও বাবা-মা। তার বাবা-মা চারজন সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরলেও ভাই প্রকৌশলী কাউসার হোসাইন এখনো সিএমএইচে ভর্তি আছেন। তার অবস্থা এখনও সঙ্কটজনক।
ইতিমধ্যে তাদের চিকিৎসা বাবদ ব্যয় হয়েছে তিন লক্ষাধিক টাকা। এরপর আবার মরার উপর খাঁড়ার ঘা হয়ে দাঁড়ায় বাড়ির ক্ষতি। এই সুযোগে তাদের পুকুর থেকে ৫ লক্ষাধিক টাকার মাছ চুরি হয়ে যায়। তাদের ধানের জমিতে সেচ দেয়ার জন্যে যে বিদ্যুত চালিত ডিপটিউবয়েল ছিল তার তিনটি ট্রান্সফরমার চুরি হয়ে যায়। ডাক্তার দম্পতি ফিরে এসে আবারো জনগনের সেবায় নিয়োজিত হয়েছেন।
ডাক্তার আমান জানান, যেহেতু প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনা আহ্বান জানিয়েছেন এই দুর্যোগে দুর্গত মানুষের পাশে দাঁড়ানোর জন্য, তাই পুণরায় আক্রান্তের ভয় না করেই আবারো ঝাঁপিয়ে পড়েছেন জনগনের সেবায়।
তিনি আরো জানান, চিকিৎসা সেবায় যুক্ত হয়ে এইভাবে যদি নিজের প্রাণ চলে যায় তবু তিনি চিকিৎসা দান থেকে বিরত থাকবেন না।
তার স্ত্রী ইসরাত জাহান জানান, তার তিন বছরের ছেলে ইউসুফকে রেখে হাসপাতালে দশদিন নিজে আক্রান্ত হয়েও স্বামীর অবস্থা বেশি সংকটাপন্ন হওয়ায় তার সেবা করতে হয়েছে। সুস্থ হয়ে আবারো জনগনের সেবায় নিয়োজিত হতে হচ্ছে। এমতাবস্থায় বাড়িতে ছোট্ট ছেলেকে দেখা-শোনার কেউ নেই।
বাবা মামদুদ হোসেন জানান, নানামুখী সংকটে বিপর্যস্ত আমাদের পরিবার। এমতাবস্থায় জননেত্রী শেখ হাসিনা যদি তাদের পাশে দাঁড়াতেন তাহলে হয়তো আবারও ঘুরে দাঁড়াতে পারবেন তারা। ছোট ছেলে কাউছার হোসাইন এখনো সংকটাপন্ন অবস্থায় আছে। তার চিকিৎসা ব্যয়বহন করা পরিবারের জন্যে খুবই কঠিন হয়ে দাঁড়িয়েছে।