বৃহস্পতিবার , নভেম্বর ২১ ২০২৪
নীড় পাতা / মুক্ত মত / বিপদে বানভাসীরা, আসুন পাশে দাঁড়াই

বিপদে বানভাসীরা, আসুন পাশে দাঁড়াই


আবু জাফর সিদ্দিকী, সিংড়া:
স্বরণকালের সবচেয়ে বড় বন্যা হয়েছে এবার সিলেট, সুনামগঞ্জসহ দেশের বেশ কয়েকটি জেলায়। বড় বিপদে আছে এই বানভাসীরা। আসুন আমরা সবাই সামর্থ্য অনুযায়ী তাদের পাশে দাঁড়াই। খাদ্য, নিরাপদ পানি, বস্ত্র, ওষুধ, বাসস্থানের ব্যাপক সঙ্কটে পড়েছে তারা। সরকারি সহায়তার পাশাপাশি বিভিন্ন রাজনৈতিক দল, সংগঠন, সংস্থা, সেনাবাহিনী, বিজিবি, প্রশাসন, পুলিশ সবার জায়গা থেকে সাধ্যমত সহায়তা করছে। তবুও যেন বানভাসীদের চোখে শুধু অন্ধকার। রাস্তা-ঘাট, বাড়ি-ঘর, স্কুল-কলেজ, দোকান-পাট, বাজার, অফিস-আদালত সবকিছু যেন এখন পানির নিচে। বিদ্যুৎ বিচ্ছিন্ন এ মানুষগুলোর পাশে দাঁড়ানো আমাদের ঈমানী ও সামাজিক দায়িত্ব। এদের সবকিছু ভেসে গেছে। তারা সত্যিই অসহায়। তাই আসুন তাদের পাশে দাঁড়াই।

অবিরাম বৃষ্টি এবং উজান থেকে নেমে আসা ঢলে দেশের প্রধান প্রধান নদ-নদীর পানি বেড়েই চলেছে। এতে দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে বন্যা পরিস্থিতির আরো অবনতি ঘটেছে এবং বিভিন্ন নদ-নদীর ২৩টি পয়েন্টে পানি বিপদসীমা অতিক্রম করেছে। এর প্রভাবে এ পর্যন্ত প্রায় ২০টি জেলার নিম্নাঞ্চল তলিয়ে গেছে। চলতি মাস পেরিয়ে আগস্টের প্রথম সপ্তাহ পর্যন্ত বন্যা স্থায়ী হতে পারে বলে বন্যা পূর্বাভাস ও সতর্কীকরণ কেন্দ্র এসব তথ্য দিয়েছে। একদিকে মহামারি করোনার কারণে সাধারণ খেটেখাওয়া মানুষদের আয়-রোজগার বন্ধ অপরদিকে বন্যা পরিস্থিতির অবনতি হওয়ায় উত্তর ও পূর্বাঞ্চলের বিস্তীর্ণ জনপদে চরম দুর্ভোগ দেখা দিয়েছে। বিশেষ করে খাদ্য ও পানীয় জলের তীব্র সংকটে পড়েছেন বানভাসি মানুষ। সরকারি হিসেবে ইতোমধ্যে প্রায় ৩ লাখ পরিবার পানিবন্দি হয়ে পড়েছে। সে হিসেবে ১০ লাখের বেশি মানুষ পানিবন্দি অবস্থায় রয়েছেন। বন্যায় সাড়ে ১৪ লাখের বেশি মানুষ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন। ফসলের ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতির খবর আসছে। বিভিন্ন স্থানে নদীভাঙন তীব্র আকার ধারণ করেছে।

ব্রহ্মপুত্র, তিস্তা, পদ্মা, যমুনা ও সুরমাসহ প্রধান নদীগুলোর পানি প্রবাহের তোড়ে ভাঙনে বিলীন হচ্ছে গ্রামের পর গ্রাম। বন্যায় অনেক দরিদ্র পরিবারের বাড়িঘর, সহায়-সম্পদ যা ছিল সবকিছু শেষে হয়ে গেছে। আমাদের দেশে প্রায় প্রতি বছরই কমবেশি প্রাকৃতিক দুর্যোগ-দুর্বিপাক হানা দেয়। প্রাকৃতিক দুর্যোগ কখনো এমনভাবে ধেয়ে আসে যার ফলে গ্রামের পর গ্রাম তছনছ করে দিয়ে চলে যায়। মহামারি, বন্যা, জলোচ্ছাস, টর্নেডো ইত্যাদি দুর্যোগ প্রাকৃতিক, মানুষের এতে কোনো হাত নেই। আমরা কেউ বলতে পারি না কোন সময় আমরা ভয়াবহ প্রাকৃতিক দুর্যোগের শিকারে পরিণত হতে যাচ্ছি বা কখন প্লাবনে আমাদের সবকিছু ডুবিয়ে দেয়। তাই এমন দুর্যোগের দিনগুলোতে যাদের সামর্থ্য রয়েছে তাদের উচিত দুর্গতদের পাশে গিয়ে দাঁড়ানো। আমাদের সবার একটু সহযোগিতার ফলে একটি পরিবার ফিরে আসতে পারে স্বাভাবিক জীবনে। আমরা কী পারি না তাদের দুঃখের দিনের বন্ধু হতে? মানুষ হিসেবে কী আমাদের ওপর এই দায়িত্ব বর্তায় না তাদের সাহায্য করা? সমাজে অনেক এমন মানুষও রয়েছেন যারা সব সময় অন্যের সাহায্যের জন্য নিবেদিত থাকে। ক্ষতিগ্রস্তদের সাহায্যের জন্য দেশের বিত্তশালী, বিভিন্ন এনজিও, স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনসহ সাধারণ মানুষকে পাশে দাঁড়ানো উচিত।

বৃষ্টি আর পাহাড়ি ঢল অব্যাহত থাকায় সিলেট ও সুনামগঞ্জে বন্যা পরিস্থিতি ভয়াবহ আকার ধারণ করেছে। ভারতের মেঘালয়-আসামে প্রবল বৃষ্টিপাতের কারণে উজান থেকে নেমে আসা পানিতে চলতি মৌসুমের তৃতীয় দফা বন্যা দেখা দিয়েছে সিলেট অঞ্চলে। একের পর এক বন্যায় বিপর্যস্ত এ অঞ্চলের বাসিন্দারা। দুই জেলার লাখ লাখ মানুষ পানিবন্দি। পানি ঢুকে পড়েছে অনেক গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনায়ও। বিদ্যুৎ স্টেশন ডুবে যাওয়ায় সিলেট ও সুনামগঞ্জে বিদ্যুৎ বিচ্ছিন্ন। সিলেট ওসমানী আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে পানি প্রবেশ করায় ফ্লাইট ওঠানামা বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। অনেক এলাকায় সড়ক যোগাযোগও বিচ্ছিন্ন। নিরাপদ আশ্রয়ের সন্ধানে বন্যার্ত মানুষ উঁচু স্থান, স্কুল বা আশ্রয়কেন্দ্রে ছুটছেন। অনেকের হাতে কাজ নেই, ঘরে খাবার নেই, বিশুদ্ধ পানিরও সঙ্কট দেখা দিয়েছে- এক কথায় নিদারুণ কষ্টে দিন কাটাচ্ছেন বানভাসি মানুষ। বন্যাকবলিতদের উদ্ধার ও ত্রাণ তৎপরতার জন্য সরকার ইতোমধ্যে সিলেট ও সুনামগঞ্জে সেনাবাহিনী মোতায়েন করেছে।

দেশের বিভিন্ন স্থানে বন্যা পরিস্থিতির অবনতির কারণে অসহায় মানুষ যখন পানিবন্দি অবস্থায় জীবনযাপন করছে। টাকা-পয়সা, খাদ্য, বস্ত্র, পানি, ওষুধ- যার যা কিছু আছে তা নিয়েই স্বতঃস্ফ‚র্তভাবে বন্যাদুর্গতদের সাহায্যে এগিয়ে আসার এখনই সময়। বানভাসি মানুষের কাছে এখন একেকটি দিন যেন দুর্বিষহ কষ্টের অনন্তকাল। বন্যা দূর্গত এলাকায় আশ্রয়ণ প্রকল্প অত্যন্ত স্বল্প। পর্যাপ্ত আশ্রয়ণ প্রকল্প গড়ে তুলতে হবে। বন্যায় যারা ঘরবাড়ি হারিয়েছেন, তাদের সরকারিভাবে অনুদান প্রদান করা হোক এবং তাদের ক্ষয়ক্ষতিগুলো পূরণ করা হোক।

সুতরাং যে প্রান্তেই থাকুন, নিজেদের সামর্থ্য অনুযায়ী বন্যার্তদের সাহায্য-সহযোগিতা করুন। ঐক্যবদ্ধভাবে সবাই যদি এগিয়ে আসেন, তাহলে বন্যার্তরা আশার আলো দেখতে পাবে। বিপদের বন্ধুই হলো প্রকৃত বন্ধু। বড় বিপদে রয়েছে বানভাসীরা, আসুন পাশে দাঁড়াই।


আবু জাফর সিদ্দিকী
শিক্ষার্থী, অনার্স শেষ বর্ষ
সিংড়া জি এ সরকারি কলেজ, নাটোর।

আরও দেখুন

বর্ষাকালে চলনবিলের প্রকৃতি

আবু জাফর সিদ্দিকী:বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় বিলের নাম চলনবিল। ৩টি জেলাজুড়ে এর বিস্তৃতি। নাটোর, সিরাজগঞ্জ ও …