নিউজ ডেস্ক:
অনেক আলোচনার পর সম্পূর্ণ বিনা খরচে বাংলাদেশি কর্মীদের মালয়েশিয়ায় যাওয়ার প্রক্রিয়া শুরু হলো। প্রথম দল হিসেবে গতকাল রাতে ২০ জন বাংলাদেশি কর্মীর একটি দল রওনা দিয়েছে মালয়েশিয়ার উদ্দেশে। একই প্রক্রিয়ায় সম্পূর্ণ বিনা খরচে চলতি মাসেই আরও দুই ধাপে কর্মীরা যাবেন মালয়েশিয়ায়। এর মাধ্যমে মালয়েশিয়ায় বাংলাদেশের শ্রমবাজারে নতুন অধ্যায়ের সূচনা হলো। ২০ জনের এই দলে আছে ২২ বছরের টগবগে যুবক ব্রাহ্মণবাড়িয়ার এনামুল। গতকাল দুপুরে তার চোখে-মুখে ছিল খুশির ঝিলিক। জানতে চাইলে এনামুল বললেন, অনেক দিন ধরেই বিদেশে কাজের জন্য যাওয়ার ইচ্ছা। পরিবারের পক্ষে অর্থ ব্যয় করে বিদেশে পাঠানো ছিল অসম্ভব। কিন্তু সেই স্বপ্ন পূরণ হতে যাচ্ছে বিনা ব্যয়ের এই সুযোগের কারণে। এনামুলের সঙ্গেই বিনা খরচে মালয়েশিয়া যাওয়ার এই দলে থাকা আলী আজমের মুখে বার বার নিয়োগকর্তা ও সংশ্লিষ্টদের প্রতি কৃতজ্ঞতার কথা উঠে এলো। আলী বললেন, হঠাৎ করেই সুযোগ পেলাম। কল্পনাই করতে পারি নাই এক টাকাও খরচ না করে যেতে পারব। বিনা খরচের কর্মী যাওয়া শুরু উপলক্ষে গতকাল বসুন্ধরায় অবস্থিত ক্যাথারসিস কমপ্লেক্সে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়, বেসরকারি রিক্রুটিং এজেন্সি ক্যাথারসিস ইন্টারন্যাশনালের সার্বিক তত্ত্বাবধানে এবং রিক্রুটিং এজেন্সি জেজি আলফালাহ ম্যানেজমেন্টের ব্যবস্থাপনায় এই ২০ কর্মী মালয়েশিয়ার যাচ্ছেন। মালয়েশিয়ায় তাদের রিসিভ করবেন নিয়োগকর্তা ইনস্টাইল সোফা এসডিএন বিএইচডি এর কর্মকর্তারা। তারা মালয়েশিয়ায় ১৫০০ রিঙ্গিত বেসিক বেতন ও ন্যূনতম ২ ঘণ্টা অভারটাইমের সুযোগ পাবেন। এতে একজন কর্মী মাসে আয় করবেন ৫০ হাজার টাকার মতো, যা মধ্যপ্রাচ্যের যে কোনো দেশের শ্রমিকের আয়ের দ্বিগুণ। সংবাদ সম্মেলনে ক্যাথারসিস ইন্টারন্যাশনালের স্বত্বাধিকারী রুহুল আমিন স্বপন বলেন, উচ্চ অভিবাসন ব্যয় রোধে ‘আইএলও ফেয়ার রিক্রুটমেন্ট ইনিশিয়েটিভ’ এর আওতায় কিছু আন্তর্জাতিক কোম্পানি ‘জিরো কস্ট মাইগ্রেশন’ মেথডে কর্মী নিয়োগে সম্মত হয়েছে। এক্ষেত্রে বিদেশগামী কর্মীর পাসপোর্ট থেকে শুরু করে বিমান টিকিট পর্যন্ত সব খরচ নিয়োগকর্তা বহন করবে। মালয়েশিয়ায় যাওয়ার পর বাংলাদেশি এসব কর্মীর সব ইমিগ্রেশন ফি, ভিসা ফি, স্বাস্থ্য পরীক্ষা, ইন্স্যুরেন্স ও বাসস্থানসহ সব খরচ মালয়েশিয়ার নিয়োগকর্তা বহন করবেন। পাশাপাশি নিয়োগকর্তা কর্মীদের মানসম্মত আবাসন, বীমা, চিকিৎসা ও কল্যাণ নিশ্চিত করবেন। তিনি বলেন, চলতি মাসেই দুই ধাপে ৯৫ জনের বিনাখরচে মালয়েশিয়া যাওয়ার ভিসা রেডি আছে। নিয়োগকর্তাদের চাহিদা পাওয়া গেলে ধাপে ধাপে ১০ হাজার জনকে এভাবে বিনা খরচে পাঠানোর চেষ্টা করা হবে। সেক্ষেত্রে ভবিষ্যতে জব লটারির মাধ্যমে বিনা খরচের কর্মী বাছাই করা হবে। নিয়োগ কর্তারা চাইলে মালয়েশিয়ায় জনশক্তি পাঠাতে অনুমোদন প্রাপ্ত ১০১টি রিক্রুটিং এজেন্সিই এভাবে বিনা খরচে কর্মী পাঠাতে পারবে। সবাইকে ক্যাথারসিস ইন্টারন্যাশনাল সার্বিক সহযোগিতা করবে। সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত প্রবাসী কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের উপসচিব সারওয়ার আলম বলেন, বাংলাদেশের শ্রমবাজারের জন্য আজকের দিনটি একটি ব্যতিক্রমী দিন। উচ্চ অভিবাসনের দোষ থেকে বাংলাদেশের নাম কাটানোর চেষ্টার ক্ষেত্রে, এই বিনা খরচের কর্মী পাঠানোর শুরু বিশেষ ভূমিকা রাখবে। এভাবে একদিন চেষ্টা করতে করতে আমরা পুরো শ্রমবাজারকেই জিরো মাইগ্রেশনে আনার স্বপ্ন দেখি। সেজন্য আস্থার জায়গা তৈরি করতে হবে। সত্যিই যে বিনা খরচে কর্মী পাঠানো যায় তার উদাহরণ আজ তৈরি হলো। বৈদেশিক কর্মসংস্থার ও প্রশিক্ষণ ব্যুরো বিএমইটির উপ-পরিচালক সাজ্জাদ হোসেন সরকার বলেন, ইতোমধ্যেই মালয়েশিয়ায় ২ লাখ ৩৭ হাজার কর্মী পাঠানো সম্ভব হয়েছে। এটা সম্ভবও হয়েছে খুব অল্প সময়ে। এর মধ্যে আজকে প্রজেক্ট আকারে বিনা খরচে যাওয়ার প্রক্রিয়া শুরু হলো, এটা অবিস্মরণীয়। সংবাদ সম্মেলনে আরও উপস্থিত ছিলেন রিক্রুটিং এজেন্সি ইমপেরিয়াল রিসোর্সের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মাহবুবর রহমান প্রমুখ।