শুক্রবার , নভেম্বর ১৫ ২০২৪
নীড় পাতা / স্বাস্থ্য / করোনা / বিনামূল্যে টিকা বিতরণের নীতিমালা প্রায় চূড়ান্ত

বিনামূল্যে টিকা বিতরণের নীতিমালা প্রায় চূড়ান্ত

নিজস্ব প্রতিবেদক:
বিনামূল্যে করোনাভাইরাসের টিকা বিতরণের নীতিমালা প্রায় চূড়ান্ত হয়েছে। এ সংক্রান্ত নীতিমালার সারসংক্ষেপ স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের স্বাস্থ্যসেবা বিভাগের সচিব আবদুল মান্নানের দপ্তরে রয়েছে। খুব দ্রম্নতই নীতিমালাটি মন্ত্রীর অনুমোদন পাবে। এদিকে আমদানিকৃত তিন কোটি ডোজ টিকা নাগরিকদের বিনামূল্যে দেওয়া হবে বলে মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে।

জানা গেছে, প্রাপ্তবয়স্ক সব নাগরিককে এই টিকার আওতায় আনার পরিকল্পনা রয়েছে সরকারের। তবে প্রথম দিকে অগ্রাধিকার বিচারে স্বাস্থ্যকর্মী, আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্য এবং সরকারের অগ্রাধিকারপ্রাপ্তদের এই টিকার আওতায় আনা হবে। পর্যায়ক্রমে শ্রমঘন এলাকা এবং গণমাধ্যমকর্মীসহ সবাইকে টিকা দেওয়া হবে।

দেশে ১৮ বছরের বেশি বয়সি ১৩ কোটি ৭৬ লাখ মানুষকে টিকার আওতায় আনা হবে। এর অংশ হিসেবে প্রাথমিকভাবে ভারতের সেরাম ইনস্টিটিউট থেকে ৩ কোটি ডোজ টিকা আমদানি করা হচ্ছে। সেরাম ইনস্টিটিউটে উৎপাদিত ভ্যাকসিনের বাংলাদেশে ‘এক্সক্লুসিভ ডিস্ট্রিবিউটর’ বেক্সিমকো ফার্মাসিউটিক্যালস লিমিটেডের তথ্য অনুযায়ী, বাংলাদেশের নিয়ন্ত্রক সংস্থা কোভিশিল্ড ব্যবহারের অনুমোদন দেওয়ার এক মাসের মধ্যে ৫০ লাখ ডোজ টিকার প্রথম চালান পাঠানোর কথা সেরাম ইনস্টিটিউটের।

অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয় ও অ্যাস্ট্রাজেনেকা মিলে করোনাভাইরাসের যে টিকা তৈরি করেছে, তার উৎপাদন ও বিপণনের সঙ্গে যুক্ত রয়েছে সেরাম ইনস্টিটিউট অব ইন্ডিয়া। কোভিশিল্ড নামের ওই টিকার তিন কোটি ডোজ কিনতে গত ৫ নভেম্বরে সেরাম ইনস্টিটিউট অব ইন্ডিয়ার সঙ্গে চুক্তি করে বাংলাদেশ সরকার। বাংলাদেশের ঔষধ প্রশাসন অধিদপ্তর সোমবার এই টিকা আমদানি ও জরুরি ব্যবহারের অনুমোদনও দিয়েছে।

টিকার দাম বিষয়ে স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক জানিয়েছেন, প্রতি ডোজ টিকার ক্রয়মূল্য হবে ৪ ডলার। সব খরচ মিলিয়ে দাম পড়বে ৫ ডলার। বাংলাদেশি টাকায় হিসাব করলে ৪২৫ টাকার মতো। উলেস্নখ্য, ভারত এই টিকা পাবে দুই ডলারে।

ভারতের সেরাম

\হইনস্টিটিউট থেকে অক্সফোর্ড-অ্যাস্ট্রাজেনেকার টিকা আমদানির জন্য যে চুক্তি হয়েছিল সেটি জি টু জি (সরকারের সঙ্গে সরকারের) চুক্তি ছিল, নাকি সেরাম ইনস্টিটিউট আর বেক্সিমকো ফার্মাসিউটিক্যালস লিমিটেডের সঙ্গে ত্রিপক্ষীয় চুক্তি ছিল-তা পরিষ্কার করেনি সরকার। এই বিষয়ে স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের স্বাস্থ্যসেবা বিভাগের সচিব আবদুল মান্নান বলেন, ভ্যাকসিন আনার প্রক্রিয়া যা-ই হোক না কেন, আমরা সময়মতো তা পাব।

বেক্সিমকো ফার্মাসিউটিক্যালসের প্রধান পরিচালন কর্মকর্তা রাব্বুর রেজা গণমাধ্যমকে বলছেন, সিরাম ইনস্টিটিউটের সঙ্গে সমঝোতা অনুযায়ী, বাংলাদেশ সরকারের জন্য আপাতত ৩ কোটি টিকা কেনা হবে। তবে বেসরকারি খাতের জন্য তারা এক মিলিয়ন বা দশ লাখ টিকার চাহিদা জানিয়েছেন। সব টিকাই আনা হবে বেক্সিমকোর মাধ্যমে। তবে সরকারি টিকা সব একবারে পাওয়া যাবে না। প্রতি মাসে ৫০ লাখ করে টিকা বাংলাদেশে আসবে। পরবর্তীতে বাংলাদেশ আরও টিকা আনার চেষ্টা করবে। ভবিষ্যতে বাংলাদেশও টিকাটি তৈরির চেষ্টা করবে বলে তিনি জানান।

সরকারি পর্যায়ে আগেই জানানো হয়েছিল, করোনাভাইরাসের সঙ্গে লড়াইয়ে সামনের সারিতে থাকা স্বাস্থ্যকর্মী, বয়স্ক ব্যক্তিরা আগে টিকা পাবেন। পর্যায়ক্রমে অন্য সবাইকে এই টিকা দেওয়া হবে। তবে কীভাবে সরকারি টিকার বিতরণ হবে, তার গাইডলাইন এখনো চূড়ান্ত করেনি সরকার। বেসরকারি খাতের টিকার বিতরণের বিষয়টি এখনো ধোঁয়াশার মধ্যেই রয়েছে।

সংশ্লিষ্টরা বলছেন, বেসরকারি খাতেও যাদের সামনের সারিতে কাজ করতে হয়, এই টিকা প্রাপ্তির ক্ষেত্রে তাদের অগ্রাধিকার দিবে সরকার। কারণ দেশের অর্থনীতি চালু রাখতে হলে আরও অনেক খাতের কর্মীদেরও টিকাটি পাওয়া দরকার। তাই বেসরকারি খাতে এরকম সামনের সারিতে থাকা কর্মীদের জন্য টিকাপ্রাপ্তি নিশ্চিত করতে বেসরকারিভাবে কিছু টিকা দরকার হবে। সেক্ষেত্রে কিছু প্রতিষ্ঠান নির্দিষ্ট করে দেওয়া হতে পারে। যেখানে কোভিড-১৯ টেস্টের মতো আগে তালিকাভুক্ত করে অগ্রাধিকারের ভিত্তিতে টিকা দেওয়ার ব্যবস্থা হতে পারে বলে আভাস পাওয়া গেছে।

গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের প্রতিষ্ঠাতা ডা. জাফরুলস্নাহ চৌধুরী বলেছেন, করোনার যে টিকা ভারত দুই ডলারে পাচ্ছে, আমরা সেটা পাচ্ছি সোয়া পাঁচ ডলারে। তাহলে বাড়তি টাকাটা কে নিয়ে যাচ্ছে? টিকার জন্য প্রথম ধাপে যে ৬ হাজার ৭৮৬ কোটি ৫৯ লাখ টাকা বাংলাদেশ দিচ্ছে, এর চেয়ে কম টাকায় যদি পৃথিবীর শ্রেষ্ঠ দশ বিজ্ঞানীকে এক কোটি টাকা মাসিক বেতনে আনা হতো, তাহলেও দেশের ১২০ কোটি টাকা খরচ হতো। এখানে অনেক বেশি বিজ্ঞানী তৈরি হতে পারত। নিশ্চিতভাবে বলা যায়, দেশেই এক বছরের মধ্যে টিকা তৈরি করা যেত। এরপরও সরকার যদি জনগণের মাঝে বিনামূল্যে টিকা সরবরাহ করে তা ইতিবাচক দিক।

এদিকে বিএনপি বিনামূল্যে করোনা টিকার দাবি জানিয়ে আসছে। এ বিষয়ে করোনাভাইরাসের ভ্যাকসিন দেশে এলে তা সাধারণ মানুষের মধ্যে বিনামূল্যে সরবরাহের দাবি জানিয়েছে বিএনপি। একই সঙ্গে করোনা ভ্যাকসিন নিয়ে সরকারের কর্মপরিকল্পনা জনসমক্ষে প্রকাশের দাবিও জানিয়েছেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।

তিনি বলেন, ভ্যাকসিনের মূল্য সরকার দেবে নাকি জনগণকে দিতে হবে-বিষয়টা ক্লিয়ার না। অবিলম্বে সরকারের এ বিষয়ে পরিপূর্ণ একটা পরিকল্পনা রোডম্যাপ অবশ্যই জনগণের সামনে প্রকাশ করতে হবে। তিনি আরও বলেন, শোনা যাচ্ছে, উচ্চ পর্যায়ের মানুষদের জন্য এরই মধ্যে তালিকা প্রস্তুত হয়ে গেছে। গুলশান ক্লাব, ঢাকা ক্লাব, উত্তরা ক্লাব-এসব ক্লাবে যারা সদস্য আছেন তাদের তালিকা করা হচ্ছে। আরও শুনতে পারছি, সরকারের উচ্চপদস্থ কর্মকর্তা যারা আছেন তাদের জন্য করা হচ্ছে, মন্ত্রীদের জন্যও হচ্ছে। কিন্তু সাধারণ মানুষ কীভাবে এই ভ্যাকসিনটা পাবে, কখন পাবে সে বিষয়ে সুনির্দিষ্ট কোনো বক্তব্য সরকারের কোনো দপ্তরের কাছ থেকে এখন পর্যন্ত পাইনি। আমাদের যেটা বেশি প্রয়োজন সাধারণ মানুষ যেন বিনামূল্যে ভ্যাকসিন পায়।

এদিকে মঙ্গলবার প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সভাপতিত্বে জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির (একনেক) বৈঠকে জরুরি ভিত্তিতে ‘কোভিড-১৯ রেসপন্স অ্যান্ড প্যানডেমিক প্রিপার্ডনেস’ প্রকল্পটি সংশোধন করে টিকা কেনার জন্য এই অর্থ অনুমোদন দেওয়া হয়েছে। করোনাভাইরাসের টিকা আমদানির জন্য বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে ৬ হাজার ৭৮৬ কোটি ৫৯ লাখ টাকা।

আরও দেখুন

বিএনপির সাবেক এমপি আমিনুল ইসলামের বিরুদ্ধে হামলা-দখলের অভিযোগ

নিজস্ব প্রতিবেদক চাঁপাইনবাবগঞ্জ,,,,,,,,,,চাঁপাইনবাবগঞ্জের নাচোলে বিএনপির জাতীয় নির্বাহী কমিটির শিল্প ও বানিজ্য বিষয়ক সহ-সম্পাদক ও সাবেক …