নিজস্ব প্রতিবেদক:
আওয়ামী লীগের নেতৃত্বাধীন সরকারের ১১ বছরে দেশে বিভিন্ন খাতে উল্লেখযোগ্য সাফল্য এসেছে। তবে সফলতার পথে এই অগ্রযাত্রায় দেশের বিদ্যুৎ খাত আছে সর্বাগ্রে। দেশের ৯৭.৫০ শতাংশ জনগোষ্ঠী এরই মধ্যে বিদ্যুতের আওতায় চলে এসেছে। পাশাপাশি গ্যাসেও স্বয়ংসম্পূর্ণ হওয়ার পথে এগিয়ে যাচ্ছে দেশ।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দূরদর্শিতা ও বলিষ্ঠ নেতৃত্বের কারণে বিদ্যুৎ ও জ্বালানি খাতে এমন সাফল্য অর্জন সম্ভব হয়েছে বলে মনে করেন সংশ্লিষ্ট ক্ষেত্রের বিশেষজ্ঞরা। ‘শেখ হাসিনার উদ্যোগ—ঘরে ঘরে বিদ্যুৎ’ স্লোগান সামনে রেখে শতভাগ ও নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ সরবরাহ নিশ্চিত করতে সরকার যে বিশাল কর্মযজ্ঞ হাতে নিয়েছে তার সফল বাস্তবায়ন করতে দিন-রাত কাজ করে চলেছেন বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ।
প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ বলেন, ‘অর্থনীতির প্রধান চালিকাশক্তি বিদ্যুৎ ও জ্বালানি। দেশের প্রতিটি ঘরে বিদ্যুৎ পৌঁছে দেওয়া এখন আর স্বপ্ন নয়। বিদ্যুতের পাশাপাশি গ্যাসেও আমরা স্বয়ংসম্পূর্ণ হতে যাচ্ছি। আমরা এখন নিরবচ্ছিন্ন গ্যাস সরবরাহ দিতে পারছি। গ্যাস দেওয়া নিয়ে এখন আর কোনো অভিযোগ নেই।’
তিনি বলেন, দেশের প্রায় শতভাগ মানুষ এরই মধ্যে বিদ্যুৎ সুবিধার আওতায় চলে এসেছে। ১১ বছর আগেও তা ছিল মাত্র ৪৭ শতাংশ। আওয়ামী লীগ ২০০৯ সালে সরকারের দায়িত্ব গ্রহণের পর উৎপাদনে আত্মনির্ভরশীলতা অর্জনের মাধ্যমে বিদ্যুৎ ও জ্বালানি খাতকে অগ্রাধিকার খাত হিসেবে ঘোষণা করে। ২০২১ সালের মধ্যে ঘরে ঘরে বিদ্যুৎ পৌঁছে দেওয়ার লক্ষ্যে একটি রোডম্যাপ তৈরি করা হয়। নির্ধারিত সময়ের এক বছর আগেই মুজিববর্ষের মধ্যে গ্রিড এলাকা শতভাগ বিদ্যুৎ সুবিধার আওতায় নিয়ে আসা হবে।
পাওয়ার সেলের মহাপরিচালক মোহাম্মদ হোসাইন কালের কণ্ঠকে বলেন, ২০০৯-১০ সালের চ্যালেঞ্জ ছিল এক রকম। তখন উৎপাদনে স্বল্পতা ছিল। গত তিন-চার বছরের বড় চ্যালেঞ্জ ছিল কিভাবে নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ সেবা পৌঁছানো যায়। সেই চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা করতে গিয়ে বর্তমান প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ যথেষ্ট দক্ষতার পরিচয় দিয়েছেন। তাঁর দক্ষতায় বিদ্যুৎ বিভাগ বারবার চ্যাম্পিয়ন হচ্ছে। বিগত কয়েক বছরে এডিপি বাস্তবায়ন শতভাগ হচ্ছে। করোনা পরিস্থিতিতেও এডিপি প্রায় শতভাগ বাস্তবায়ন হয়েছে। মেগাপ্রকল্পগুলো নির্ধারিত সময়ের মধ্যে উৎপাদনে নেওয়ার লক্ষ্যে নিরলস কাজ করে যাচ্ছে। নবায়নযোগ্য জ্বালানির বড় প্রসার হয়েছে। প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদের দূরদর্শী নেতৃত্বের কারণেই এসব সম্ভব হচ্ছে।
নসরুল হামিদ কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘আমরা এরই মধ্যে ৯৭.৫ শতাংশ মানুষের কাছে বিদ্যুৎ পৌঁছে দিতে সক্ষম হয়েছি। বর্তমান সরকারের নির্বাচনী ওয়াদা ছিল শতভাগ বিদ্যুৎ এবং বিতরণ ব্যবস্থা উন্নয়নের মাধ্যমে গ্রাহকদের নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ সরবরাহ নিশ্চিত করা। মাত্র ১১ বছরে বিদ্যুৎ খাতে যে অভূতপূর্ব পরিবর্তন এসেছে তা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দূরদর্শী নেতৃত্বের কারণেই সম্ভব হয়েছে।’
প্রতিমন্ত্রী বলেন, ‘বিদ্যুৎ ও জ্বালানি খাতের আধুনিকায়নে একগুচ্ছ নতুন প্রকল্প নেওয়া হয়েছে। এর মধ্যে রয়েছে গ্যাসের বিভিন্ন বিতরণী সংস্থা, বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম এক্সপ্লোরেশন অ্যান্ড প্রডাকশন কম্পানি লিমিটেড (বাপেক্স) এবং বিস্ফোরক অধিদপ্তরের আধুনিকায়ন। বিদ্যুৎ মন্ত্রণালয়ই প্রথম এন্টারপ্রাইজ সফটওয়্যার ইমপ্লিমেন্টের দিকে গেছে। এমনকি ভবিষ্যতে এই মন্ত্রণালয়কে আমরা পেপারলেস করার জন্য প্রকল্প হাতে নিয়েছি।’
নসরুল হামিদ বলেন, ‘পৃথিবীতে হোম সোলার সিস্টেমে বাংলাদেশ চ্যাম্পিয়ন। নবায়নযোগ্য জ্বালানির বড় একটি প্রসার হয়েছে। বর্তমানে ৫৮ লাখ সোলার হোম সিস্টেম দিয়ে গ্রামীণ ও দরিদ্র জনগোষ্ঠীকে বিদ্যুৎ সুবিধার আওতায় আনা হয়েছে। ছাদ সৌরবিদ্যুৎ এবং ভাসমান সৌরবিদ্যুৎ কেন্দ্র নিয়ে কাজ হচ্ছে। বর্জ্য ও বায়ু থেকে বিদ্যুৎ উৎপাদন নিয়ে গৃহীত উদ্যোগগুলো এগিয়ে চলেছে। আমাদের একটি বড় প্রচেষ্টা ছিল সৌরবিদ্যুতের ব্যবস্থা কিভাবে অল্প খরচে করা যায়। সস্তায় সৌরবিদ্যুৎ সরবরাহের জন্য সরকার সোলার প্যানেল সিস্টেমের অর্ধেক খরচ ভর্তুকি দেওয়া শুরু করে। বাকি অর্ধেকের জন্য ইনফ্রাস্ট্রাকচার ডেভেলপমেন্ট কম্পানি লিমিটেড (ইডকল) ঋণ দেয়। সে সুবাদে সোলার প্যানেল এখন গ্রাহকদের কাছে সস্তায় পৌঁছে যাচ্ছে। এতে দেশে সোলার প্যানেল ব্যবহারে বিপ্লব হয়ে গেছে। প্রতিটি এলাকায় টিআর ও কাবিখা কর্মসূচির অর্ধেক টাকা সোলার প্যানেল বসানোর পেছনে ব্যয় করার বাধ্যতামূলক করে দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী। সোলারের মাধ্যমে সেচ প্রকল্প হাতে নিয়েও আমরা সফল হয়েছি।’
আগামী পাঁচ বছরের মধ্যে বিদ্যুতের সব লাইন ভূগর্ভস্থ করা হবে বলে জানান প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ। তিনি বলেন, ভূগর্ভস্থ লাইনে ঝড়-বৃষ্টিতেও বিদ্যুৎ সংযোগ ব্যাহত হবে না। নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ সরবরাহ নিশ্চিত হবে। সিস্টেম লস কমে রাষ্ট্র ও জনগণের উপকার হবে। স্মার্ট প্রি-পেইড মিটার স্থাপনের মাধ্যমে দেশে নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ সরবরাহ নিশ্চিত হবে। দেশের সর্বত্র নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ ও জ্বালানি সেবা নিশ্চিত রাখতে কাজ চলছে।