নিউজ ডেস্ক:
পরীক্ষামূলকভাবে বাংলাদেশের বিচ্ছিন্ন দ্বীপ উপজেলা পটুয়াখালীর রাঙ্গাবালীতে বিদ্যুত সরবরাহ চালু হয়েছে। জাতীয় গ্রিডে সংযুক্তির মাধ্যমে ১১০ কিলোমিটার সঞ্চালন লাইনের সাহায্যে প্রথম পর্যায়ে উপজেলা সদর বাহেরচর বাজারে বিদ্যুত সংযোগ দেয়া হয়েছে। দ্বিতীয় পর্যায়ে বেশ জোরেশোরে চলছে একের পর এক গ্রাম বিদ্যুতায়নের কাজ। পল্লীবিদ্যুতের ‘আলোর ফেরিওয়ালা’ হিসেবে খ্যাত কয়েকটি টিমের বিদ্যুত কর্মীরা এখন ছুটছেন এক বাড়ি থেকে আরেক বাড়িতে বিদ্যুতায়নের কাজে। কর্তৃপক্ষ জানান, এরই মধ্যে চার হাজারেরও বেশি বাড়িঘরে বিদ্যুত পৌঁছে দেয়া হয়েছে।
পটুয়াখালী পল্লীবিদ্যুত সমিতির গলাচিপার ডেপুটি জেনারেল ম্যানেজার প্রকৌশলী মোঃ মাইনউদ্দিন জানান, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আগামীকাল ১২ সেপ্টেম্বর রাঙ্গাবালীর বিদ্যুত সরবরাহ ব্যবস্থা আনুষ্ঠানিকভাবে উদ্বোধন করবেন।
বঙ্গোপসাগর মোহনায় জেগে ওঠা দ্বীপ রাঙ্গাবালী। পটুয়াখালী জেলা শহর থেকে ৪০ কিলোমিটার দক্ষিণে অবস্থান রাঙ্গাবালীর। দক্ষিণে বঙ্গোপসাগর। উত্তরে আগুনমুখা নদী। পূর্বে বুড়াগৌরাঙ্গ নদ ও পশ্চিমে রাবনাবাদ নদী। ২০১২ সালের ২৫ ফেব্রুয়ারি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার আনুষ্ঠানিক উদ্বোধনের মাধ্যমে উপজেলা হিসেবে পথচলা শুরু হয় রাঙ্গাবালীর। তবে বিচ্ছিন্ন এ দ্বীপ উপজেলায় এত দিনেও পৌঁছায়নি বিদ্যুতের আলো। দ্বীপ উপজেলাটিতে বিদ্যুত পৌঁছে দিতে তিনটি নদীতে সাবমেরিন ক্যাবল স্থাপন করা হয়েছে। পটুয়াখালী পল্লীবিদ্যুত সমিতি সূত্রে জানা গেছে, জাতীয় গ্রিডে যুক্ত করতে রাঙ্গাবালীর ছোটবাইশদিয়া ইউনিয়নের গহিনখালীতে ১০ মেগাওয়াটের বিদ্যুত উপকেন্দ্র নির্মাণ করা হয়েছে। ভোলার চরফ্যাশনের মুজিবনগর উপকেন্দ্র থেকে আমগাছিয়া বাজার হয়ে বুড়াগৌরাঙ্গ নদের দুই কিলোমিটার তলদেশ দিয়ে সাবমেরিন ক্যাবল পৌঁছেছে গহিনখালী উপকেন্দ্রে। এ জন্য ২২ কিলোমিটার দীর্ঘ ৩৩ কেভির বিদ্যুত সঞ্চালন লাইন টানা হয়েছে। মোট সঞ্চালন লাইন টানা হয়েছে ১১০ কিলোমিটার। এছাড়া রাঙ্গাবালী সদর, ছোটবাইশদিয়া, বড় বাইশদিয়া ও মৌডুবী ইউনিয়নে এক হাজার কিলোমিটার বিদ্যুত বিতরণ লাইন টানা হয়েছে। এই চারটি ইউনিয়নের ৮২টি গ্রামে প্রাথমিক পর্যায়ে ১৯ হাজার ৭৭ জন গ্রাহক বিদ্যুত সুবিধা পাচ্ছেন। এছাড়া চালিতাবুনিয়া ইউনিয়নে বিদ্যুত নেয়া হয়েছে গলাচিপা সদর ইউনিয়ন থেকে আগুনমুখা নদীর তলদেশে দুই কিলোমিটার সাবমেরিন ক্যাবলের মাধ্যমে। সাগরপাড়ের চরমোন্তাজ ইউনিয়নেও ভোলার মুজিবনগর থেকে পৃথক সাবমেরিন ক্যাবলের মাধ্যমে বিদ্যুত পৌঁছে দেয়া হয়েছে। এ দুটি ইউনিয়নেও কয়েক হাজার গ্রাহক বিদ্যুত সুবিধা পাবেন।
ছোটবাইশদিয়া ইউনিয়নের বড়ইতলা বাজারের খুদে দোকানি রফিকুল ইসলাম (৬৬) বলেন, আমাদের কাছে বিদ্যুত ছিল স্বপ্ন। জীবনে বিদ্যুতের আলো দেখে যেতে পারব, তা ভাবিনি। কিন্তু এখন আমার দোকানেই বিদ্যুতের আলো জ্বলছে, ভাবতেও ভাল লাগছে। স্বপ্ন পূরণ হলো।
সদর ইউনিয়নের বাহেরচর এলাকার বাসিন্দা ছাব্বির হোসেন (৩৫) জানান, বিদ্যুত পাওয়ায় উপজেলার মানুষের জীবনযাত্রার মানে পরিবর্তন আসবে। অর্থনৈতিক কর্মকা- গতি পাবে।