শনিবার , নভেম্বর ১৬ ২০২৪
নীড় পাতা / জাতীয় / বিদ্যানন্দ: জীবনের আনন্দপাঠ

বিদ্যানন্দ: জীবনের আনন্দপাঠ

অনন্ত আরফাত: বিদ্যানন্দের একজন কর্মী

বিদ্যানন্দের কাজ শুধু শিক্ষা কার্যক্রমে পড়ে থাকল না। গুণগতভাবে ভালো লেখালেখি করে, কিন্তু প্রকাশকের কাছে যাদের দু-পয়সার মূল্য নেই, এ রকম তরুণ লেখক-লেখিকাদের জন্য বিদ্যানন্দ খুলল বিদ্যানন্দ প্রকাশনী। শত শত লেখার মধ্য থেকে বাছাই করে প্রতি বছর বের করা হয় বিভিন্ন রকম গল্প আর কবিতার সংকলন। শুধু পড়ালেখা করাতে গিয়ে দেখা গেল বেশির ভাগ শিক্ষার্থী ক্ষুধার যন্ত্রণার কারণে পড়তে পারে না। এইসব ক্ষুধার্ত শিশুদের কথা মাথায় রেখে বিদ্যানন্দ শুরু করল ‘এক টাকায় আহার’ কার্যক্রম। এক টাকার বিনিময়ে খাবার বিতরণ করা শুরু হলো প্রতিটি শাখায়। আস্তে আস্তে বিস্তৃত হতে লাগল এই কার্যক্রম

এই দেশের নিরানন্দময় শিক্ষাপদ্ধতির শিকার হয়ে প্রতিদিন কত শত শিশুর আত্মা মরে যাচ্ছে তার খবর আমরা ক’জন পাই? তার ওপর যদি সেই শিশু হয় অসচ্ছল পরিবারের, পরবর্তী দিনের অন্নসংস্থানের চিন্তা নিয়ে যেই পরিবারের কর্তা ঘুমাতে যায়—সেই পরিবারের একটা শিশুর আত্মার গল্প তো দূরের কথা পড়ালেখাই করা হয়ে ওঠে না ঠিকমতো।

এরকম এক অসচ্ছল পরিবারের সন্তান কিশোর কুমার দাশ। নিজের পরিবারে ছিল অসচ্ছলতার বিষবাষ্প। তাঁর ওপর বিদ্যালয়ের পড়ালেখা ছিল আনন্দহীন। পড়ালেখার প্রতি আনন্দ খুঁজে না পাওয়ায় তার গায়ে ছিল অমেধাবীর তকমা।

গুটিকয়েক মেধাবীদের মতো জীবন ছিল না তার। পিছিয়ে থাকা বেশির ভাগ শিক্ষার্থীর মতো সাধারণ, শিক্ষকরা যাঁদের সুনজরে দেখেন না, রেজাল্ট খারাপের কারণে পরিবারে যাদের তিরস্কার সহ্য করতে হয়, সেসব সাধারণ বাচ্চাদের মতো তাঁর জীবন। শিক্ষকরা এসব শিশুদের মনের কথাটা বুঝতে চেষ্টা করেন না। কোনো একটা শিক্ষক এগিয়ে আসেননি পড়ালেখাটা তার কাছে একটু মজার করে তুলতে। ধুকে ধুকে এই শিক্ষাজীবন চালাতে গিয়ে এসএসসি পরীক্ষার পর একসময় বন্ধও হয়ে গেল তাঁর পড়ালেখা। তারপর নানা চেষ্টা-চরিত্র করে আবার ফিরলেন পড়ালেখায়।

সেই কিশোর কুমার দাশ নিজে যখন নানা চড়াই উতরাই পার করে জীবনে সফলতার মুখ দেখলেন, তখন ভাবলেন—নিজের সেই কষ্টকর শৈশবের জন্য কিছু করবেন। এখনো হাজার হাজার ছেলে তাঁর মতো একই রকম নিরানন্দের মাঝে শুধু ভয়ভীতি সহ্য করে পড়ালেখা করছে। পড়ালেখার আনন্দটা তারা জানে না। বড়দিদি শিপ্রা দাসের সঙ্গে পরামর্শ করে নিজের জন্মস্থান নারায়ণগঞ্জের শাব্দি বাজারে ২০১৩ সালের ২২ ডিসেম্বর শুরু করলেন বিদ্যানন্দ নামে একটা প্রতিষ্ঠান। বিদ্যানন্দ, বিদ্যা+আনন্দ—আনন্দের সাথে পড়ালেখা করানোটাই যে প্রতিষ্ঠানের লক্ষ্য। শিক্ষার্থী হিসেবে বেছে নিলেন আশপাশের নিম্নবিত্ত পরিবারের সন্তানদের। যাদের ভাগ্যে পড়ালেখাই জোটে না, তাদের জন্য আনন্দের সাথে শিক্ষার ব্যবস্থা করা। কথাটা শুনতে যতটুকু সহজ, মাঠে কাজ শুরু করে বোঝা গেল একেবারে গন্ধমাদন।

মানুষের টিটকারি হাসাহাসি সহ্য করে এইসব নিম্নবিত্ত সন্তানদের পড়ানো শুরু হলো। যারা স্কুলে যেতে ভয় পেত, ধীরে ধীরে দেখা গেল এরা বিদ্যানন্দে পড়তে চলে আসতে শুরু করল। এমনকি শুক্রবারেও। একটা কথা বলে রাখা দরকার, বিদ্যানন্দ কিন্তু কোনো স্কুল নয়। কিন্তু যেসব অসচ্ছল শিক্ষার্থী বাসায় শিক্ষক রেখে পড়তে পারে না, স্কুলেও শিক্ষার আনন্দ থেকে বঞ্চিত—শুধু তাদের পড়ালেখা করানো হয় বিদ্যানন্দে। তারপর ধীরে ধীরে বাড়তে শুরু করল বিদ্যানন্দের পরিসর। চট্টগ্রাম শাখা হলো। চট্টগ্রামে শুরু হলো ভিন্ন রকম একটা কাজ দিয়ে। উন্মুক্ত পাঠাগার। সাড়ে ৩০০০ বইয়ের সম্ভার দিয়ে সাজানো হলো বিদ্যানন্দের পাঠাগার। সকাল আটটা থেকে বিকাল পাঁচটা পর্যন্ত খোলা থাকে এই পাঠাগার। যে কেউ এসে পড়তে পারে এই পাঠাগারে। তারপর শুরু হলো আর্থিকভাবে অসচ্ছল এইচএসসি পরীক্ষার্থীদের জন্য বিনামূল্যে বিশ্ববিদ্যালয় ভর্তি কোচিং। দেশের বাণিজ্যিক কোচিং সেন্টারে যারা পড়তে পারে না সামর্থ্যের অভাবে, তাদের জায়গা হলো এই কোচিংয়ে। যারা বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হওয়ার স্বপ্ন দেখতে পারত না, তাদের কেউ কেউ এখানে পড়ালেখা করে টিকল দেশের সেরা সেরা সব পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে। বর্তমানে এই কোচিংয়ের শিক্ষার্থীদের জন্য আবাসনব্যবস্থাও নিশ্চিত করা হয়।

এখানে থেমে থাকল না বিদ্যানন্দের কাজ। ঢাকায় শাখা হলো। প্রতিটা শাখায় শুরু হলো প্রথম শ্রেণি থেকে দ্বাদশ শ্রেণি পর্যন্ত রেগুলার কোচিং। শুধু পড়ালেখার আনন্দ নয়, শিক্ষার্থীদের ফলাফলের কথাও মাথায় রাখা হলো। দিনশেষে গুণগত শিক্ষাটাই বিদ্যানন্দের লক্ষ্য হয়ে দাঁড়ায়। একজন শিক্ষার্থী সমাজের প্রতি দায়বদ্ধ হচ্ছে কি না, মানুষের প্রতি মানবিক হচ্ছে কি না, সেই লক্ষ্য সামনে রেখেই বিদ্যানন্দের শিক্ষা কার্যক্রম চলতে লাগল।

বিদ্যানন্দের কাজ শুধু শিক্ষা কার্যক্রমে পড়ে থাকল না। গুণগতভাবে ভালো লেখালেখি করে, কিন্তু প্রকাশকের কাছে যাদের দু-পয়সার মূল্য নেই, এ রকম তরুণ লেখক-লেখিকাদের জন্য বিদ্যানন্দ খুলল বিদ্যানন্দ প্রকাশনী। শত শত লেখার মধ্য থেকে বাছাই করে প্রতি বছর বের করা হয় বিভিন্ন রকমগল্প আর কবিতার সংকলন।

শুধু পড়ালেখা করাতে গিয়ে দেখা গেল বেশির ভাগ শিক্ষার্থী ক্ষুধার যন্ত্রণার কারণে পড়তে পারে না। এইসব ক্ষুধার্ত শিশুদের কথা মাথায় রেখে বিদ্যানন্দ শুরু করল ‘এক টাকায় আহার’ কার্যক্রম। এক টাকার বিনিময়ে খাবার বিতরণ করা শুরু হলো প্রতিটি শাখায়। আস্তে আস্তে বিস্তৃত হতে লাগল এই কার্যক্রম। এখন সারাদেশে প্রায় প্রতিদিন ৩০০০ শিশুকে খাবার খাওয়ানো হয় এই কার্যক্রমের আওতায়। অনেকেই প্রশ্ন করে থাকেন, কেন এক টাকা নেওয়া হয়। শিশুদের কাছ থেকে এক টাকা নেওয়া হয় যাতে তাদের ভেতরে ভিক্ষাবৃত্তির মনোভাব না জাগে। ফ্রি খাবার পাচ্ছে—এই মনোভাব যদি তাদের মাথায় ঢুকে যায় তবে তাদের মধ্যে ভিক্ষাবৃত্তি জাগতে পারে, এই আশঙ্কা থেকে এক টাকা করে নেওয়া।

এর মধ্যে কক্সবাজারের রামুতে তৈরি হলো বিদ্যানন্দের প্রথম আবাসিক শাখা—সম্প্রীতি অনাথালয়। এখানে সংখ্যালঘু পাহাড়ি আদিবাসীদের জন্য একটা আশ্রম তৈরি করা হলো। প্রায় শতাধিক অনাথ শিশুর দায়িত্ব নিল বিদ্যানন্দ। তাদের থাকা খাওয়া এবং পড়ালেখার খরচ বহন করে এই প্রতিষ্ঠান। এরপর রাজবাড়িতে তৈরি করা হলো পারিজাত অনাথালয় এবং বৃদ্ধাশ্রম। এখানেও অনাথ বাচ্চাদের এবং সহায়সম্বলহীন বৃদ্ধদের জন্য আবাসনের ব্যবস্থা করা হয়েছে। সময়ের চাহিদার কারণে রামু শাখার শিক্ষার্থীদের জন্য প্রতিষ্ঠা করা হয়েছে বিদ্যানন্দ প্রাথমিক বিদ্যালয়।

এরপর একযোগে রাজশাহী, রংপুর আর ময়মনসিংহে তৈরি করা হলো আরো তিনটি শাখা। বর্তমানে সারাদেশে ৮টি শাখায় প্রায় ১২০০ শিক্ষার্থী পড়ালেখা করে প্রতিদিন। এ পর্যন্ত প্রায় ১২,৩০,০০০ মানুষের মধ্যে খাবার বিতরণ করা হয়েছে এক টাকায় আহার কার্যক্রমের আওতায়। আছে প্রায় ৮০০০ বইসমৃদ্ধ উন্মুক্ত পাঠাগার। এই পাঠাগারগুলোতে যে কেউ এসে পড়তে পারেন সকাল ৮টা থেকে বিকাল ৫টা পর্যন্ত।

শিক্ষার বিস্তারে প্রতিটি শাখায় চালু করা হয়েছে মাসিক বৃত্তি কার্যক্রম। স্কুল, কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয়ের অসচ্ছল মেধাবী শিক্ষার্থীদের মাঝে এই বৃত্তি দেওয়া হয় প্রতি বছর।

অসচ্ছল পরিবারের মেধাবী শিক্ষার্থীদের কথা মাথায় রেখে বিদ্যানন্দ চালু করেছে বিদ্যানন্দ ফাউন্ডেশন মেধাবৃত্তি পরীক্ষা। অন্য বাণিজ্যিক বৃত্তি পরীক্ষাগুলোতে শিক্ষার্থীদের অংশগ্রহণ করতে হয় চড়া দামে ফর্মের মূল্য দিয়ে। এই চড়া মূল্য দিয়ে বেশির ভাগ অসচ্ছল পরিবারের শিক্ষার্থীরা অংশগ্রহণ করতে পারে না। ফলে মেধাবী হয়েও তাদের মেধা যাছাই করার সুযোগ হয় না শুধুমাত্র অর্থের কারণে। এ কারণে বিদ্যানন্দ মেধাবৃত্তি পরীক্ষাটা আয়োজন করে বিনামূল্যে। এ বৃত্তি পরীক্ষায় পুরস্কৃত করা হয় শতাধিক শিক্ষার্থীকে। দেওয়া হয় শিক্ষা উপকরণসহ লক্ষাধিক টাকার পুরস্কার।

এছাড়া বিদ্যানন্দের অনেকগুলো মৌসুমী কার্যক্রম রয়েছে। প্রতি বছর রোজার সময় অসচ্ছল মানুষের মধ্যে ইফতার বিতরণ করে থাকে বিদ্যনন্দ ফাউন্ডেশন। গতবছর প্রায় ১১৩০০০ মানুষের মধ্যে বিতরণ করা হয় ইফতার। প্রতি বছর শীতের সময় বিতরণ করা হয় শীতবস্ত্র। ঈদের সময় শিশুদের মধ্যে বিতরণ করা হয় নতুন পোশাক। বন্যার সময় প্রতি বছর হাজার হাজার মানুষের মাঝে বিতরণ করা হয় খাবার। উত্তরবঙ্গ এবং হাওর অঞ্চলের বন্যাকবলিত এলাকার মানুষের মধ্যে বিতরণ করা হয় এই খাবার। এছাড়া প্রতি বছর কোরবানির ঈদে দরিদ্র অঞ্চলে বিতরণ করা হয় গোশত।

বিদ্যানন্দের আরেকটা গুরুত্বপূর্ণ প্রকল্প হচ্ছে—রোহিঙ্গা প্রজেক্ট। মায়ানমার থেকে বিতাড়িত রোহিঙ্গাদের মধ্যে প্রথম থেকেই দেওয়া হচ্ছে খাবার। এখন পর্যন্ত প্রায় ৩০০০০০ রোহিঙ্গাদের মধ্যে খাবার বিতরণ করা হয়েছে এই প্রকল্পের আওতায়। সেখানে খাবারের পাশাপাশি ব্যবস্থা করা হয়েছে শুকনো খাবারের। এখনো এই প্রকল্প চলমান। এদের আরো দেওয়া হচ্ছে বিনামূল্যে চিকিত্সাসেবা।

প্রতিটি শাখায় এক টাকায় চিকিত্সা কার্যক্রমের আওতায় দেওয়া হচ্ছে চিকিত্সাসেবা। আরো একটা প্রকল্প আছে বিদ্যানন্দের। এক টাকায় আইনি সেবা কার্যক্রম। এই কার্যক্রমের আওতায় অসহায় মানুষদের দেওয়া হয় আইনি সহায়তা।

কিছুদিন আগে থেকে শুরু হয়েছে পথশিশুদের পড়ালেখা কার্যক্রম। এই কার্যক্রমের আওতায় প্রতিটি শাখায় বিভিন্ন স্পটে পড়ানো হয় ছিন্নমূল পথশিশুদের। তাদের পড়ালেখা করানো এবং খাবার দেওয়ার পাশাপাশি শেখানো হয় পরিষ্কার-পরিছন্নতা। স্বেচ্ছাসেবকরা নিয়মিত এদের গোসল করিয়ে দেয়, হাত পায়ের নখ কেটে দেয়। এই শিশুগুলোকে মানবিক বোধসম্পন্ন মানুষ হিসেবে গড়ে তোলার চেষ্টা চালানো হচ্ছে প্রতিনিয়ত।

পড়ালেখার পাশাপাশি বিদ্যানন্দ বাচ্চাদের জন্য আয়োজন করে থাকে সহপাঠক্রমিক কার্যক্রম। এই কার্যক্রমের আওতায় বাচ্চাদের শেখানো হয় নাচ, গান, চিত্রাংকন এবং সুন্দর হাতের লেখা। বাচ্চাদের দিয়ে আয়োজন করানো হয় বিভিন্ন জাতীয় দিবস। শহীদ দিবস, বুদ্ধিজীবী দিবসে বাচ্চারা ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা জানায় এদেশের জন্য প্রাণ দেওয়া শহীদদের প্রতি। বাচ্চাদের শোনানো হয় একটা পরাধীন দেশের স্বাধীন হওয়ার গল্প।

দেশে বিদ্যানন্দের এসব কার্যক্রমের পাশাপাশি বাংলাদেশ থেকে প্রায় দশ হাজার কিলো দূরে দক্ষিণ আমেরিকার বিভিন্ন শহরে চালু হয়েছে এক টাকায় আহার কার্যক্রম। স্থানীয়দের নিজেদের অর্থায়নে চলে এই কার্যক্রম। এই প্রকল্পে কাজ করে ভিন্ন ভিন্ন দেশের নানা পেশার কিছু মানুষ।

বিদ্যানন্দের প্রথম অর্থায়ন হয় প্রতিষ্ঠানের উদ্যোক্তা কিশোর কুমার দাশের ব্যাক্তিগত অর্থ থেকে। অনেকদিন পর্যন্ত একা একাই মিটাতে হয়েছে এই বিশাল অর্থের চাহিদা। পরবর্তী সময়ে বিদ্যানন্দের কার্যক্রম দেখে ধীরে ধীরে সাহায্য করতে শুরু করেন বিভিন্ন শুভাকাঙ্ক্ষীরা। এখন এই প্রতিষ্ঠান চলে সম্পুর্ণ শুভাকাঙ্ক্ষীদের টাকায়।

এই প্রতিষ্ঠানের অর্থনৈতিক স্বচ্ছতা নিশ্চিত করার জন্য নিয়োগ দেওয়া হয়েছে দেশের শীর্ষস্থানীয় অডিট ফার্ম একনাবিন বাংলাদেশকে। এই ফার্ম চুলচেরা পর্যবেক্ষণের মাধ্যমে অডিট রিপোর্ট তৈরি করে থাকেন। বিদ্যানন্দের অডিট রিপোর্ট প্রতি বছর আপডেট করা হয় বিদ্যানন্দের ওয়েবসাইটে এবং ফেসবুক পেইজে। এছাড়া বিদ্যানন্দের যেকোনো শুভাকাঙ্ক্ষী যেকোনো সময় বিনা নোটিশে অংশগ্রহণ করতে পারেন বিদ্যানন্দের যেকোনো শাখায়, যেকোনো অনুষ্ঠানে।

এই প্রতিষ্ঠানে বর্তমানে কাজ করে শতাধিক স্বেচ্ছাসেবক এবং অর্ধশতাধিকের মতো কর্মকর্তা। এই অল্প কিছু মানুষের হাত ধরে এগিয়ে যাচ্ছে বিদ্যানন্দের কার্যক্রম।

বর্তমানে যে কাজগুলো চলমান তার সাথে ভবিষ্যতে যুক্ত হতে যাচ্ছে আরো কিছু কার্যক্রম। কুড়িগ্রামে তৈরি হতে যাচ্ছে বিদ্যানন্দের আরেকটি শাখা। এখানে তৈরি হচ্ছে বন্যাকবলিত মানুষের জন্য আশ্রয়কেন্দ্র। প্রতি বছর এই অঞ্চলে ব্রহ্মপুত্র নদীতে বন্যা হয়ে ঘরবাড়িহারা হয় হাজার হাজার মানুষ। তাদের কথা মাথায় রেখে চলছে এই শাখার নির্মাণকাজ। আগামী বছর থেকে আসছে ফুড ভ্যান্ডিং মেশিন। প্রতিদিন প্রতিটি বাচ্চার যাতে এক প্যাকেট খাবার নিশ্চিত হয় সেজন্য এই আয়োজন। ফুড ভ্যান্ডিং মেশিন চালু হলে বাচ্চারা নিজেরা মেশিনে পয়সা দিয়ে ফিঙ্গার প্রিন্ট দিয়ে নিতে পারবে এক প্যাকেট খাবার।

এই যে অল্প সময়ে বিদ্যানন্দের এতটা পথ আসা, এই পথটা খুব একটা সহজ ছিলো না। যখন স্বেচ্ছাসেবকরা পথশিশুদের খাবার খাওয়ানোর জন্য রাস্তায় নামল, তখন অপপ্রচার চালানো হলো প্রতিষ্ঠানের নামে। প্রচার করা হলো বাচ্চাদের মরা মাংস খাওয়ানো হয়। বলা হলো খাবারের সাথে চেতনানাশক মিশিয়ে বাচ্চাদের পাচার করে দেওয়ার ধান্ধা করছে এই প্রতিষ্ঠান। কোমলমতি শিশুদের মনে ভয় ঢুকিয়ে দেওয়া হলো এই প্রতিষ্ঠানের স্বেচ্ছাসেবকদের ছেলেধরা হিসেবে। প্রথম দিকে ভয়ে ভয়ে শিশুরা খাবার নিতে চাইত না স্বেচ্ছাসেবকদের হাত থেকে। পরবর্তী সময়ে আসল সত্য বুঝতে পেরে বাচ্চাদের ভয় ভাঙল। এখন খাবারের ভ্যান দেখলেই হইচই করে এসে লাইনে দাঁড়িয়ে যায় বাচ্চাগুলো। অপপ্রচারকারীর দল থেমে থাকল না। গত বছর ইফতার কার্যক্রমকে প্রশ্নবিদ্ধ করার জন্য তারা ছড়াল ইফতারের ছোলার সাথে গো-চনা মেশানো হয়। কয়দিন আগে রোহিঙ্গা ক্যাম্পে ডাকাতদের আক্রমণের শিকার হলো স্বেচ্ছাসেবকরা। রাজশাহী শাখার স্বেচ্ছাসেবকরা আক্রান্ত হলো বাড়িওয়ালা এবং স্থানীয় সন্ত্রাসীদের হাতে। এই কারণে কয়দিন এই শাখায় চালানো গেল না এক টাকায় আহার কার্যক্রম। ব্যাহত হলো শিক্ষার্থীদের পড়াশোনা। কিন্তু থেমে থাকল না বিদ্যানন্দের কার্যক্রম। আবার খোলা আকাশের নিচে চালু হলো রাজশাহী শাখার এক টাকায় আহার কার্যক্রম। এত সব চড়াই উতরাই পার হয়ে কাজ করে বিদ্যানন্দের স্বেচ্ছাসেবকরা।

বিদ্যানন্দ বিশ্বাস করে, এই পৃথিবীতে কোনো না কোনো একদিন প্রতিটি শিশুর খাবারের নিশ্চয়তা বিধান হবে। খাবারের যন্ত্রণা থেকে শিশুদের মুক্তি দেওয়ার দৃঢ একটা প্রতিজ্ঞা নিয়ে সামনে এগিয়ে যাচ্ছে বিদ্যানন্দ ফাউন্ডেশন।

আরও দেখুন

নাটোরে নবাগত ইউএনও’র খাল পরিচ্ছন্নতার উদ্যোগ

নিজস্ব প্রতিবেদক সিংড়া,,,,,,,,নাটোরের সিংড়ায় খাল পরিচ্ছন্নতার উদ্যোগ নিয়েছেন সদ্যযোগদানকৃত উপজেলা নির্বাহী অফিসার মাজহারুল ইসলাম। শনিবারসকাল …