এতদিনের গৎবাঁধা চেহারা থেকে বের করে নিয়ে এসে নতুন চেহারা দেওয়ার চেষ্টা চলছে বিদেশে বাংলাদেশের কূটনৈতিক মিশনগুলোকে। নতুন নির্দেশনায় সব ক্ষেত্রে কার্যকর ও প্রাণবন্ত ভূমিকা রাখতে হবে বাংলাদেশের দূতাবাসগুলোর কূটনীতিকদের। দ্বিপক্ষীয় সম্পর্ক থেকে শুরু করে সেবা- সবই হতে হবে কাক্সিক্ষত মাত্রায়। দায়িত্ব পালনে শিথিলতার কোনো সুযোগ থাকবে না কারও। কর্তব্যকাজে অবহেলা পাওয়া গেলে সরাসরি নেওয়া হবে ব্যবস্থা। দূতাবাসগুলোকে কাজের ক্ষেত্রে সিদ্ধান্ত নিতে হবে স্বতঃস্ফূর্ত। সতর্ক থাকতে হবে দেশের ভাবমূর্তি রক্ষা ও বিরূপ পরিস্থিতি এড়াতে। নির্দিষ্ট সময় পরপর ঢাকায় করতে হবে জবাবদিহিতাও। শীর্ষ কূটনৈতিক সূত্রে সরকারের নতুন এ মনোভাবের কথা জানা গেছে।
পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সূত্র জানান, ইতোমধ্যে সরকারের সিদ্ধান্তের কথা পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আবদুল মোমেন বছরের প্রথম দিনে নিজেই জানিয়ে দিয়েছেন বিদেশে বাংলাদেশের মিশনগুলোকে। এতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সুস্পষ্ট নির্দেশনাও রয়েছে। সরকারপ্রধানের নির্দেশনায় দেশের ভাবমূর্তি রক্ষার জন্য পাশাপাশি অর্থনৈতিক কূটনীতিকে গুরুত্ব দিতে বলা হয়েছে। শুধু গার্মেন্টনির্ভর না হয়ে বহুমুখী পণ্যের বাজার খুঁজতে বলা হয়েছে। এ বাজার বাণিজ্যিক পণ্যের পাশাপাশি শ্রমশক্তির ক্ষেত্রেও বলা হয়েছে। প্রবাসীদের সেবা নিশ্চিত করার অংশ হিসেবে দূতাবাসগুলোয় ফোন না ধরার প্র্যাকটিস বাদ দিতে বলা হয়েছে। এ ধরনের অভিযোগ যেন আর শোনা না যায় সে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। দেশের প্রয়োজনে সব প্রবাসীর নাম, ফোন নম্বর ও ইমেইলের তালিকা করার করার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে বিভিন্ন দেশের মিশনকে। রোহিঙ্গা ইস্যুতে এত কাজ করার পরও তেমন কোনো সফলতা না আসায় নতুন আঙ্গিকে এ ইস্যুতে কাজ করতে বলা হয়েছে। দেশের ইমেজ বৃদ্ধিতে সব দূতাবাসকে সক্রিয় হতে বলা হয়েছে। পাশাপাশি স্যাংশনের মতো বিরূপ পরিস্থিতির বিষয়ে আগাম সতর্কতা নিতে বলা হয়েছে। র্যাবের ওপর যুক্তরাষ্ট্রের নিষেধাজ্ঞার পর যুক্তরাজ্য থেকে অনুরূপ সিদ্ধান্ত আসার শঙ্কা তৈরি হলেও তা ঠেকাতে স্থানীয় মিশনের ভূমিকার জন্য ধন্যবাদ দেওয়া হয়েছে। এভাবেই অন্য মিশনগুলোকেও প্রোঅ্যাকটিভ থাকতে বলা হয়েছে। সম্প্রতি রাশিয়ার জাহাজ নিয়ে উদ্ভূত পরিস্থিতি এড়াতে অগ্রিম সতর্ক হতে বলা হয়েছে সব মিশনকে। এ ছাড়া সরকারবিরোধী কুৎসা ঠেকাতে কার্যকর ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য নির্দেশ দেওয়া হয়েছে সব কূটনৈতিক মিশনকে। বিশ্বের ৮১টি দেশে বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত, হাইকমিশনার ও মিশনপ্রধানদের নির্দেশনা দেওয়া প্রসঙ্গে পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আবদুল মোমেন বলেছেন, ‘আগামী বছরের কর্মপরিকল্পনা ও গত বছরের অর্জন নিয়ে পর্যালোচনা করার জন্য বিভিন্ন দেশে বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূতদের সঙ্গে বৈঠক করেছি। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার স্মার্ট বাংলাদেশ গড়ার যে দিকনির্দেশনা রয়েছে তা নিয়ে রাষ্ট্রদূতদের বলেছি। বিশ্বের বিভিন্ন দেশ কীভাবে স্মার্ট হলো সে অভিজ্ঞতা জানাতে বলেছি। বাংলাদেশের সম্পদ কাজে লাগিয়ে বিনিয়োগের যে আহ্বান জানানো হয়েছিল, সে বিষয়ে গত বছর দূতাবাসগুলো কী কাজ করল তা নিয়ে জানতে চেয়েছি। কোন কোন দেশ কোন ধরনের দক্ষ জনশক্তি চায় তা জানানোর জন্য বলেছি। সেসব দেশের গুরুত্বপূর্ণ ক্ষেত্রে যোগাযোগের জন্য বলেছি। দূতাবাসে সেবার মান নিয়ে এখনো অভিযোগ আছে, সেগুলো বন্ধ করতে বলেছি। আঞ্চলিক শান্তি বজায় রাখার জন্য কী করা যায় তা জানাতে বলেছি। পাশাপাশি প্রবাসী দিবস ঘোষণার পর সব প্রবাসীকে একসূত্রে নিয়ে আসার জন্য নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।’ পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, ‘বিভিন্ন সময় কেউ কেউ মিথ্যা বানোয়াট তথ্য দিয়ে থাকে। এ বিষয়ে সতর্ক ও স্বতঃস্ফূর্ত হতে বলেছি। এ ধরনের কোনো বিষয় দেখতে পেলে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের নির্দেশনার দিকে তাকিয়ে না থেকে দ্রুত রেসপন্স করতে বলা হয়েছে। স্পষ্টভাবে বলা হয়েছে মন্ত্রণালয়ের হুকুমের জন্য বসে না থেকে নিজেরাই ব্যবস্থা নেওয়ার। প্রত্যেককে দায়িত্ব নিয়ে কাজ করতে বলা হয়েছে।’ মন্ত্রী বলেন, ‘দূতাবাসগুলো এতদিন এ ধরনের বিষয়ে নিজেরা কিছুই করত না। ভালো কিছু হলে জানাত, কিন্তু খারাপ কিছু হলে তারা জানাতে লজ্জা পেত, ব্যবস্থাও নিত না। এ পরিস্থিতি পাল্টে মন্ত্রণালয় ও দূতাবাসগুলোকে একটি টিম হয়ে সরাসরি দায়িত্ব নিয়ে কাজ করতে বলেছি।’