নিউজ ডেস্ক:
করোনা মহামারির ক্ষত পুষিয়ে নেওয়া এবং চতুর্থ শিল্প বিপ্লবের চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় দক্ষ জনশক্তি তৈরিতে বিশেষ গুরুত্ব দিচ্ছে সরকার। এর অংশ হিসাবে ছয় জেলায় স্থাপন করা হবে বাংলাদেশ শিল্প কারিগরি সহায়তা কেন্দ্রের (বিটাক) ছয়টি প্রশিক্ষণ কেন্দ্র।
এসব কেন্দ্রে থাকবে আধুনিক সুবিধার কারিগরি প্রশিক্ষণ-উপযোগী অবকাঠামো। এগুলোর মাধ্যমে আন্তর্জাতিক ও স্থানীয় শিল্পের জন্য কারিগরি জনবল তৈরি করা হবে। এজন্য মঙ্গলবার এক হাজার ১৩২ কোটি ৬১ লাখ টাকার একটি প্রকল্প উঠছে জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির (একনেক) বৈঠকে। খবর পরিকল্পনা কমিশন সূত্রের।
সূত্র জানায়, ‘গোপালগঞ্জ, সুনামগঞ্জ, বরিশাল, রংপুর, জামালপুর ও যশোর জেলায় বিটাকের ছয়টি কেন্দ্র স্থাপন’ প্রকল্পটি প্রস্তাব করেছে শিল্প মন্ত্রণালয়। একনেকে অনুমোদন পেলে ২০২৫ সালের জুনের মধ্যে এটি বাস্তবায়ন করবে বিটাক। এ প্রকল্পটিসহ আরও ৯টি প্রকল্প একনেকে উপস্থাপন করা হবে। এর মধ্যে পাঁচটি নতুন, পাঁচটি সংশোধিত।
পরিকল্পনা প্রতিমন্ত্রী ড. শামসুল আলম জানান, অষ্টম পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনায় চতুর্থ শিল্প বিপ্লবের চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় জন্য ম্যানুফ্যাকচারিং, নির্মাণ ও আধুনিক সেবা খাতে দক্ষ জনবল সৃষ্টিকে অগ্রাধিকার দেওয়া হয়েছে। এ ছাড়া কর্মসংস্থান নীতির সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে শ্রমশক্তি সৃজনের লক্ষ্যে কারিগরি তথা প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষাকে গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে। পাশাপাশি টেকসই উন্নয়ন অভীষ্ট লক্ষ্যমাত্রা-৯ এ অন্তর্ভুক্তিমূলক ও টেকসই শিল্পায়নের বিষয়টি বিশেষ গুরুত্ব দেওয়া আছে। এ ক্ষেত্রে জাতীয় পরিস্থিতির সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে ২০৩০ সালের মধ্যে কর্মসংস্থান ও জিডিপিতে শিল্প খাতের অংশ উল্লেখযোগ্য পরিমাণেই বৃদ্ধির কথা বলা হয়েছে। এজন্য সরকার দক্ষ জনশক্তি তৈরির জন্য নানা উদ্যোগ নিচ্ছে।
প্রকল্পটির লক্ষ্যমাত্রা সম্পর্কে প্রকল্প প্রস্তাবে বলা হয়েছে, এসব কেন্দ্রে বছরে ছয় হাজার ১৪৪ জন নারী ও ছয় হাজার ১৪৪ জন পুরুষ অর্থাৎ মোট ১২ হাজার ২৮৮ জন প্রশিক্ষণার্থীর আবাসনের ব্যবস্থা থাকবে। ওয়ার্কশপে ফলপ্রসূ প্রশিক্ষণ ও আমদানি বিকল্প খুচরা যন্ত্রাংশ তৈরি করা হবে।
প্রকল্প প্রস্তাবে শিল্প মন্ত্রণালয় থেকে বলা হয়েছে, প্রযুক্তির দ্রুত উন্নয়নের জন্য দক্ষ জনবল সৃষ্টি ছাড়া মুক্তবাজার অর্থনীতিতে প্রতিযোগিতায় টিকে থাকা প্রায় অসম্ভব। এ কারণে গতানুগতিক প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষার পাশাপাশি কারিগরি দক্ষতাসম্পন্ন মানবসম্পদ তৈরি আবশ্যক। ২০১৪ সালের ২৪ সেপ্টেম্বর প্রধানমন্ত্রী শিল্প মন্ত্রণালয় পরিদর্শন করে বিভাগীয় পর্যায়ে সাতটি ট্রেনিং সেন্টার প্রতিষ্ঠার নির্দেশ দেন। বর্তমানে বিটাকের পাঁচটি কেন্দ্র ঢাকা, চট্টগ্রাম, চাঁদপুর, খুলনা ও বগুড়ায় রয়েছে। বিদ্যমান যুব জনশক্তির তুলনায় তা অপ্রতুল। এ ছাড়া গোপালগঞ্জ, সুনামগঞ্জ, বরিশাল, রংপুর, জামালপুর ও যশোরে বিটাকের প্রশিক্ষণ কেন্দ্র স্থাপন করা হলে স্থানীয় পর্যায়ে দক্ষ জনবল সৃষ্টি এবং দেশের ভেতরে আমদানি বিকল্প যন্ত্র তৈরি করা সম্ভব হবে। তাই স্থানীয় উৎপাদনমুখী শিল্পের সঙ্গে সম্পর্কযুক্ত জনশক্তি পাওয়ার ফলে উদ্যোক্তারা উৎপাদনমুখী শিল্পে বিনিয়োগে আগ্রহী হয়ে উঠবেন। প্রকল্প প্রস্তাবে আরও বলা হয়েছে, শিল্পনীতি ২০১৬-তে রপ্তানি বাজার ও দেশের অভ্যন্তরীণ চাহিদা পূরণে বিশেষ অর্থনৈতিক এলাকা স্থাপনের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। এসব শিল্প কারখানা ও শিল্প পার্কের জন্য প্রশিক্ষিত কর্মশক্তির প্রয়োজন হবে। প্রকল্পটি যুব নারী ও পুরুষদের লাইট ইঞ্জিনিয়ারিং খাতে বিশেষ প্রশিক্ষণ দেওয়ার মাধ্যমে দ্রব্যের মানের উন্নয়ন সহায়ক ভূমিকা পালন করবে।
পরিকল্পনা কমিশনের শিল্প ও শক্তি বিভাগের সদস্য (সচিব) শরিফা খান কমিশনের মতামত দিতে গিয়ে বলেন, ২০৪১ সালের মধ্যে বাংলাদেশকে উন্নত সমৃদ্ধিশালী দেশে রূপান্তরের জন্য মানবসম্পদ উন্নয়ন একান্তই প্রয়োজন। প্রকল্পটি বাস্তবায়িত হলে আন্তর্জাতিক ও স্থানীয় বাজারের চাহিদা অনুযায়ী দক্ষ জনশক্তি সৃষ্টির মাধ্যমে শিল্প কারখানায় দক্ষ জনবলের চাহিদা পূরণসহ বেকার জনশক্তির আত্মকর্মসংস্থান সৃষ্টি হবে। প্রকল্পের আওতায় মূল কার্যক্রম হচ্ছে-ভূমি অধিগ্রহণ ও ক্রয়, আবাসিক ভবন নির্মাণ এবং অনাবাসিক ভবন ও অভ্যন্তরীণ সড়ক নির্মাণ। এ ছাড়া প্রকৌশল ও অন্যান্য সরঞ্জামাদি কেনা, আসবাবপত্র, কম্পিউটার ও আনুষঙ্গিক অফিস সরঞ্জামাদি, দুটি মোটরযান, শিক্ষা ও প্রশিক্ষণ উপকরণ কেনা হবে। হোস্টেলে ব্যবহারের জন্য দ্রবাদি যেমন-ক্রোকারিজ, বিছানাপত্র ইত্যাদি কেনা হবে