সোমবার , ডিসেম্বর ২৩ ২০২৪
নীড় পাতা / উন্নয়ন বার্তা / বিজয় দিবসের আগেই পদ্মা জয়

বিজয় দিবসের আগেই পদ্মা জয়

নিজস্ব প্রতিবেদক:
বিজয়ের মাসে দেশবাসীর জন্য আরেকটি বড় বিজয় অপেক্ষা করছে। এ বিজয় পদ্মা সেতুর বিজয়। আগামী ১৬ ডিসেম্বরের আগেই পদ্মা নদীর দুই ক‚ল স্পর্শ করবে স্বপ্নের পদ্মা সেতু। এর মাধ্যমেই পদ্মা সেতুর স্বপ্ন বাস্তবে রূপ নিতে খুব কাছাকাছি চলে যাবে। শুক্রবার পদ্মা সেতুর ৪০তম স্প্যান বসানো হয়েছে। ফলে পদ্মা সেতু এখন দৃশ্যমান হলো ৬ কিলোমিটার। বাকি রইল আর মাত্র একটি স্প্যান, যার দূরত্ব মাত্র ১৫০ মিটার। ১৬ ডিসেম্বরের আগেই যেকোনো এক দিন ৪১তম স্প্যানটি বসানো হলেই মিলবে পদ্মার দুই ক‚ল।
স্প্যান বসানোর পাশাপাশি পদ্মা সেতুর সড়কপথ তৈরির কাজও এগিয়ে চলেছে সমানতালে। ইতোমধ্যেই শরীয়তপুরের জাজিরা পয়েন্টে পদ্মা সেতুর প্রায় ৩ কিলোমিটার পিচ ঢালাইয়ের কাজ সম্পন্ন হয়েছে। সবগুলো স্প্যান বসানোর পর এবং সড়কের ঢালাই কাজ সম্পন্ন হওয়ার পাশাপাশি আনুষঙ্গিক কাজ শেষ করা হবে। সব কাজ শেষ হলে ২০২১ সালের ডিসেম্বরের মধ্যেই খুলে দেওয়া হবে স্বপ্নের পদ্মা সেতু। অর্থাৎ আর মাত্র এক বছর পরই পদ্মা সেতুর ওপর দিয়ে চলবে গাড়ি।
শুক্রবার দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে পদ্মা সেতুতে বসানো হলো ৪০তম স্প্যান ‘টু-ই’। মুন্সীগঞ্জের মাওয়া প্রান্তে ১০ ও ১১ নম্বর পিয়ারের ওপর বসানো হয় স্প্যানটি। পদ্মা সেতুর নির্বাহী প্রকৌশলী
(মূল সেতু) দেওয়ান মো. আব্দুল কাদের এ তথ্য নিশ্চিত করেন। সময়ের আলোকে তিনি জানান, বৃহস্পতিবার কুমারভোগ কনস্ট্রাকশন ইয়ার্ড থেকে বিশে^র সবচেয়ে বড় ভাসমান ক্রেন ‘তিয়াইন-ই’ ১৫০ মিটার দৈর্ঘ্যরে ৪০তম স্প্যানটি বহন করে নির্দিষ্ট পিয়ার দুটির কাছে নিয়ে নোঙর করে রাখা হয়েছিল। বাকি ছিল স্প্যানটি ওপরে তুলে বসানোর কাজ। শুক্রবার সকাল ৯টা ২০ মিনিটে ওপরে তোলার কাজ শুরু হয়। এরপর বেলা ১১টার দিকে নির্ধারিত পিয়ার দুটির ওপরে ভ‚মিকম্প সহনশীল বিয়ারিংয়ে স্প্যানটি বসানো সম্পন্ন হয়।
আব্দুল কাদের জানান, ৪০তম স্প্যানটি বসে যাওয়ায় ১২ ও ১৩নং পিয়ারে সর্বশেষ ৪১তম স্প্যান ‘ই-এফ’ বসানোর পরিকল্পনা রয়েছে। আগামী ১৬ ডিসেম্বর মহান বিজয় দিবসের মধ্যে সর্বশেষ স্প্যানটি বসানো হতে পারে বলে সংশ্লিষ্ট একাধিক সূত্রে জানা গেছে। এদিকে স্প্যান বসানোরা কাজ ছাড়াও সেতুর অন্যান্য কাজও এগিয়ে চলেছে। সেতুতে ১ হাজার ৮৪৮টি রেলওয়ে ও ১ হাজার ২৩৮টি রোডওয়ে সø্যাব বসানো হয়েছে।
পদ্মা সেতুটি এখন এক মাহেন্দ্রক্ষণের সামনে দাঁড়িয়ে রয়েছে। শরীয়তপুরের জাজিরার ক‚লে বেশ আগেই মাটি স্পর্শ করেছে পদ্মা সেতু। বাকি আর একটি স্প্যান বসলেই সেতুটি পদ্মা নদীর মাওয়া পাশের মাটিও স্পর্শ করবে। দুই ক‚লের মানুষ এখন এই সুন্দর মুহূর্তটি দেখার অপেক্ষায় আছে। অবশ্য পদ্মার দুই ক‚লের মিলন আরও ঘনিয়ে আসত এতদিনে। আগস্ট-সেপ্টেম্বরে অন্তত পাঁচটি স্প্যান খুঁটির ওপর বসানোর লক্ষ্য ছিল কর্তৃপক্ষের। তবে মাওয়া প্রান্তের মূল পদ্মায় প্রচÐ স্রোত প্রবাহিত হওয়ায় এ সময়ে একটি স্প্যানও বসানো সম্ভব হয়নি। এ ছাড়া নজিরবিহীন ভাঙনেও কাজের ক্ষতি হয়েছে। গত ১০ অক্টোবর পর্যন্ত সেতুতে ৩১টি স্প্যান বসানো হয়েছিল। আর গত ১১ অক্টোবর থেকে ৪ নভেম্বরÑ এই ৫৪ দিনের মধ্যে বসল ৯টি স্প্যান। এর মধ্যে অক্টোবর মাসে বসানো হয় ৪টি স্প্যান। গত ১১ অক্টোবর বসেছিল ৩২তম স্প্যান, ১৯ অক্টোবর বসেছিল ৩৩তমটি, ২৫ অক্টোবর বসেছিল ৩৪তম স্প্যান এবং ৩১ অক্টোবর বসেছিল ৩৫তম স্প্যান। এরপর নভেম্বর মাসেও পদ্মা সেতুতে বসে ৪টি স্প্যান। গত ৪ নভেম্বর ৩৬তম, ১১ নভেম্বর ৩৭তম, ১৬ নভেম্বর ৩৮তম, ২৩ নভেম্বর ৩৯তম আর শুক্রবার ৪ ডিসেম্বর ৪০তম স্প্যান বসানো হলো পদ্মা সেতুর ওপর।
উল্লেখ্য, ২০১৪ সালের ডিসেম্বরে পদ্মা সেতুর নির্মাণকাজ শুরু হয়। ২০১৭ সালের ৩০ সেপ্টেম্বর ৩৭ ও ৩৮ নম্বর খুঁটিতে প্রথম স্প্যান বসানোর মধ্য দিয়ে দৃশ্যমান হয় পদ্মা সেতু। এরপর একে একে বসানো হয় ৪০টি স্প্যান। ৪২টি পিলারে ১৫০ মিটার দৈর্ঘ্যরে ৪১টি স্প্যান বসিয়ে ৬ দশমিক ১৫ কিলোমিটার দীর্ঘ পদ্মা সেতু নির্মাণ করা হবে। ৬ দশমিক ১৫ কিলোমিটার দীর্ঘ এ বহুমুখী সেতুর মূল আকৃতি হবে দোতলা। কংক্রিট ও স্টিল দিয়ে নির্মিত হচ্ছে এ সেতুর কাঠামো। পদ্মা সেতুর নির্মাণকাজ সম্পূর্ণ হওয়ার পর আগামী ২০২১ সালেই খুলে দেওয়া হবে।
মূল সেতু নির্মাণের জন্য কাজ করছে চীনের ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান চায়না মেজর ব্রিজ ইঞ্জিনিয়ারিং কোম্পানি (এমবিইসি) ও নদীশাসনের কাজ করছে চীনের ‘সিনো হাইড্রো করপোরেশন’। দেশের দীর্ঘতম এই সেতুর নির্মাণকাজ ২০২১ সালের ৩০ জুনের মধ্যে শেষ করার লক্ষ্য রয়েছে।
পদ্মা সেতুর কাজের সার্বিক অগ্রগতি সম্পর্কে পদ্মা বহুমুখী সেতু প্রকল্পের প্রকল্প পরিচালক শফিকুল ইসলাম সময়ের আলোকে জানান, আমরা স্বপ্ন বাস্তবায়নের খুব কাছে চলে এসেছি। ৪০টি স্প্যান বসানো হয়ে গেল। আর বাকি থাকল মাত্র ১টি। শেষ স্প্যানটি আমরা বসাব আগামী ১৬ ডিসেম্বর বিজয় দিবসের আগেই। আমরা এই বিজয়ের মাসে দেশের মানুষকে আরেক বিজয়ের স্বাদ দিতে চাই। আশা করছি, আবহাওয়া ঠিক থাকলে নির্ধারিত সময়ের মধ্যেই সেটি করতে পারব। তিনি আরও জানান, স্প্যান বসানোর কাজ আরও তিন মাস আগেই শেষ করার পরিকল্পনা ছিল আমাদের। কিন্তু গত বর্ষাকালে নদীতে পানি বেড়ে যাওয়ায় পদ্মার মূল অংশে প্রবল স্রোত হওয়ায় স্প্যান বসানোর কাজ বন্ধ রাখতে হয়। নতুবা এতদিনে সবগুলো স্প্যান বসানো হয়ে যেত। তা ছাড়া করোনাভাইরাসের কারণের কনস্ট্রাকশন কাজে ব্যাঘাত ঘটেছে। তবে এখন সবদিক দিয়েই অনুক‚ল পরিবেশ রয়েছে। আমাদের প্রত্যাশা আজ থেকে আর মাত্র এক বছরের মধ্যেই, অর্থাৎ আগামী বছরের ডিসেম্বরের মধ্যেই পদ্মা সেতু দিয়ে গাড়ি চলাচল শুরু করা সম্ভব হবে।

আরও দেখুন

পেঁয়াজের চারা পুড়ে শেষ-কৃষকের মাথায় হাত! জমিতে এখন শুধুই ঘাস!

নিজস্ব প্রতিবেদক নলডাঙ্গা,,,,,,,,,,,,,,,,,জমিতে নষ্ট হওয়া পেঁয়াজের চারা দেখে নিজেদের ধরে রাখতে পারেননি জমি লিজ নিয়ে …