নিউজ ডেস্ক: জুয়া, মাদক, চাঁদাবাজি ও অন্যান্য অপরাধ দমনে বিশেষ অভিযান শুরু করেছে সরকার। সরকারের ভাবমূর্তি উজ্জ্বল করতে এবং সামাজিক শৃঙ্খলা ফিরিয়ে রাখতে রাজধানীসহ সারা দেশে এই বিশেষ অভিযান অব্যাহত রাখবে সরকার। সরকারের বিশেষ এই অভিযানে এরই মধ্যে ধরা পড়েছে রাজনীতির রাঘব বোয়ালরা।
যুবলীগের কথিত নেতা খালেদ ভূঁইয়া, জি কে শামীম, কৃষকলীগের নেতা সফিকুল আলম ফিরোজ ওরফে কালা ফিরোজ এর মতো নেতাদের আটক করে সরকার মাদক, জুয়া, টেন্ডারবাজি ও চাঁদাবাজি রাজনীতির লাগাম টানছে। তবে এসব অভিযানে ক্ষমতাসীন দলের যেসব নেতাদের নাম এসেছে, তারা মূলত হাইব্রিড ও দলবদলকারী নেতা বলে জানা গেছে। অতীতে তারা বিএনপি ও অন্যান্য রাজনৈতিক দলের সাথে সম্পৃক্ত ছিলেন বলেও জানা গেছে।
বিভিন্ন তথ্যসূত্র বলছে, ক্ষমতার পট পরিবর্তন হওয়ায় রাজনৈতিক সুবিধা আদায়ে দল পাল্টিয়েছেন কথিত যুবলীগ নেতা খালেদ, শামীম ও কৃষকলীগ নেতা কালা ফিরোজরা। বিএনপির রাজনীতি করে একেক জন হয়ে ওঠেন চাঁদাবাজ, সন্ত্রাসী। বিএনপির রাজনীতিতে সুবিধা আদায়ে ব্যর্থ হয়ে এক সময় ক্ষমতাসীন দলে যোগদান করেন এসব ক্যাসিনো, জুয়া ও চাঁদাবাজি রাজনীতির গডফাদাররা।
ক্যাসিনো চালানোর অভিযোগে অস্ত্রসহ গ্রেফতার হওয়া যুবলীগ ঢাকা মহানগর দক্ষিণের সাংগঠনিক সম্পাদক খালেদ মাহমুদ ভূঁইয়া এক সময় ছিলেন ফ্রিডম পার্টির কর্মী। ১৯৮৯ সালে ধানমন্ডির ৩২ নম্বরে শেখ হাসিনার ওপর হামলা চালানো ফ্রিডম মানিক ও ফ্রিডম রাসুর হাত ধরে উত্থান হয় তার। সেসময় ফ্রিডম পার্টির কর্মী ছিলেন খালেদ। পরবর্তীতে ২০০১ সাল পরবর্তী চারদলীয় জোট সরকারের সময় তিনি ছাত্রদলের রাজনীতির সঙ্গেও জড়িত ছিলেন। সেসময় তিনি বিএনপি নেতা মির্জা আব্বাসের ভাই মির্জা খোকনের ঘনিষ্ঠ ছিলেন। খিলগাঁও-শাহজাহানপুর এলাকায় সন্ত্রাসী-চাঁদাবাজ হিসেবে পরিচিতি ছিল তার। বিএনপির শীর্ষ সন্ত্রাসী জাফর আহমেদ মানিকের হয়ে সে এলাকায় চাঁদাবাজি করতো। ২০০৯ সালে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় এলে ভিড়ে যান যুবলীগে। শুরু করেন যুবলীগের রাজনীতি। এরপর থেকেই আরও বেশি বেপরোয়া হয়ে ওঠে খালিদ।
বিস্তারিত অনুসন্ধানে জানা গেছে, যুবদলের রাজনীতি থেকে যুবলীগে যোগদান করেন সদ্য আটক হওয়া বিশিষ্ট চাঁদাবাজ ও টেন্ডারবাজ এস এম গোলাম কিবরিয়া শামীম ওরফে জি কে শামীম। অবৈধ অস্ত্র, মাদক ও কোটি টাকাসহ তাকে আটক করেছে র্যাব। ছোটখাটো মানুষ হলেও শামীমের ক্ষমতার দাপট ছিল আকাশসমান। রাজধানীর সবুজবাগ, বাসাবো, মতিঝিলসহ বিভিন্ন এলাকায় জি কে শামীম প্রভাবশালী ঠিকাদার হিসেবে পরিচিত। গণপূর্ত ভবনের বেশির ভাগ ঠিকাদারি কাজই জি কে শামীম নিয়ন্ত্রণ করেন। বিএনপি-জামায়াত শাসনামলেও গণপূর্তে এই শামীম ছিলেন ঠিকাদারি নিয়ন্ত্রণকারী ব্যক্তি। একসময়ের যুবদল নেতা ক্ষমতার পরিবর্তনে হয়ে যান যুবলীগ নেতা। জি কে শামীম একসময় বিএনপি নেতা মির্জা আব্বাসের ক্যাডার ছিলেন। বিএনপির আমলে জি কে শামীমের ভয়ে মতিঝিল, পল্টন, শান্তিনগরের আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা পালিয়ে বেড়িয়েছেন। সন্ত্রাস আর চাঁদাবাজি ছিল তার পেশা। ওই সময় মির্জা আব্বাসের ডানহাত হিসাবে গণপূর্ত ভবনের সকল টেন্ডার নিয়ন্ত্রণ করা শুরু করেন জি কে শামীম।
২০০৮ সালের নির্বাচনে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আশার পর দলবদল করে শাসক দলে
কৌশলে যোগদানের চেষ্টা করেন জি কে শামীম। তৎকালীন সময়ে যুবলীগের কমিটিতে
স্থান না পেলেও স্বঘোষিতভাবে যুবলীগের নেতা হিসেবে নিজেকের বিভিন্ন মহলে
জাহির করার চেষ্টা করেন শামীম।
এদিকে বিভিন্ন তথ্যসূত্রের বরাতে জানা গেছে, রাজধানী ঢাকার ৪ নম্বর ওয়ার্ড
যুবদলের কমিটিতে যোগদানের মাধ্যমেই জি কে শামীমের রাজনৈতিক পথচলা শুরু হয়।
পরবর্তী সময়ে মির্জা আব্বাসের ভাই মির্জা কালু ও মির্জা খোকনের সঙ্গে
ঘনিষ্ঠতা হয় এবং তাদের সহযোগিতায় ধীরে ধীরে গণপূর্ত ভবনের ঠিকাদারি ব্যবসার
নিয়ন্ত্রণ নেন। ঢাকা মহানগর যুবদলের সহ-সম্পাদকের পদও বাগিয়ে নেন। বিএনপির
আমলে গণপূর্ত ভবন ছিল তার দখলে। একসময় মির্জা আব্বাস আর খালেদা জিয়া,
তারেক রহমানের ছবিসহ সবুজবাগ-বাসাবো এলাকাসহ রাজধানীর বিভিন্ন এলাকায় শোভা
পেত জি কে শামীমের ব্যানার-পোস্টার। এখন শোভা পায় যুবলীগ ও আওয়ামী লীগের
কেন্দ্রীয় নেতাদের ছবিসহ পোস্টার-ব্যানার।
অন্যদিকে, ধানমন্ডির কলাবাগান ক্রীড়া চক্র ক্লাবে অভিযান চালিয়ে সংগঠনটির সভাপতি শফিকুল আলম ফিরোজ ওরফে কালা ফিরোজকে আটক করে র্যাব। জানা গেছে, কৃষক লীগ কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য বলে পরিচয় দিলেও কালা ফিরোজের রাজনীতি শুরু হয় ছাত্রদলের মাধ্যমে। ছাত্রদলের রাজনীতির মাধ্যমে বিএনপির কেন্দ্রীয় রাজনীতির সাথেও জড়িত ছিলেন কালা ফিরোজ। বিএনপির শাসনামলে বায়রা সদস্যপদ লাভ করে তৎকালীন বিএনপির প্রভাবশালী মন্ত্রীদের হাত করে নারী ও শিশু পাচার, মানব পাচার সিন্ডিকেট গড়ে তোলেন। বিদেশে মানুষ পাঠানোর নামে কোটি কোটি টাকা বিদেশে পাচার করেন কালা ফিরোজ।
এদিকে রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা বলছেন, জুয়া, চাঁদাবাজি, টেন্ডারবাজি করে যারা ক্ষমতাসীন দলের ভাবমূর্তি নষ্ট করার চেষ্টা করছেন, তারা মূলত আওয়ামী লীগের মূল ধারার রাজনীতিবিদ নন। তাদের ভেতর নূন্যতম রাজনৈতিক আদর্শ নেই। মূলত ক্ষমতাসীন দলে অনুপ্রবেশকারী, সুবিধাবাদী রাজনীতিবিদরা দলের নাম ভাঙ্গিয়ে চাঁদাবাজি, সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড করে বেড়াচ্ছেন। আওয়ামী লীগের মূল আদর্শধারী নেতারা কখনই এসব অপকর্ম করতে পারেন না। যারা দলের নাম ভাঙ্গিয়ে এসব অপকর্ম করছেন তারা মূলত অন্য রাজনৈতিক দল থেকে আসা অতিথি পাখি, হাইব্রিড নেতা। তারা কেবল অনৈতিক সুবিধা আদায়ের জন্য রাজনীতি করেন বলেও মনে করছেন রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা।