নিউজ ডেস্ক: চীনের বেল্ট অ্যান্ড রোড ইনিশিয়েটিভ (বিআরআই) প্রকল্পের আওতায় বাংলাদেশের আধুনিকায়নে সহযোগিতা করবে বেইজিং। স্মার্ট বাংলাদেশ বিনির্মাণে একসঙ্গে কাজ করার আগ্রহ ও দৃঢ় অনুপ্রেরণা রয়েছে চীনের। এসব কথা জানিয়েছেন ঢাকা সফররত চীনের কমিউনিস্ট পার্টির নেতা ও আন্তর্জাতিক বিভাগের মন্ত্রী লিউ জিয়ানচাও। গতকাল সোমবার হোটেল ইন্টারকন্টিনেন্টালে পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদের সঙ্গে বৈঠক শেষে সাংবাদিকদের তিনি এসব কথা জানান।
লিউ জিয়ানচাও বলেন, দুই সপ্তাহের মধ্যে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার চীন সফরের বিষয়ে তারা অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করছেন। প্রধানমন্ত্রীর সফর খুবই ফলপ্রসূ হবে বলে তারা মনে করেন।
দুই দেশের পারস্পরিক স্বার্থসংশ্লিষ্ট বিষয়ে আলোচনা করতে চার দিনের সরকারি সফরে গত শনিবার ঢাকায় পৌঁছেন লিউ জিয়ানচাও। প্রধানমন্ত্রীর সফর প্রসঙ্গে বলেন, ‘আমাদের অনেক প্রত্যাশা রয়েছে এবং আমি নিশ্চিত, দুই দেশের সরকার ও সরকারি সংস্থাগুলো পারস্পরিক সহযোগিতার জন্য একটি পরিকল্পনা তৈরি করবে।’ পররাষ্ট্রমন্ত্রী হাছান মাহমুদের সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় সম্পর্ক নিয়ে বিস্তৃত আলোচনা হয়েছে জানিয়ে লিউ জিয়ানচাও বলেন, স্মার্ট বাংলাদেশ বিনির্মাণে একসঙ্গে কাজ করার আগ্রহ ও দৃঢ় অনুপ্রেরণা
রয়েছে চীনের। দুই দেশ অবকাঠামো, কৃষি, বিনিয়োগ, উৎপাদন ও বাণিজ্য খাতে কাজ করতে পারে। পররাষ্ট্রমন্ত্রীর সঙ্গে বেশ কিছু আঞ্চলিক ও আন্তর্জাতিক ইস্যু নিয়েও আলোচনা হয়েছে। বেশির ভাগ ইস্যুতে আমাদের একই রকম দৃষ্টিভঙ্গি রয়েছে।
চীনের এই নেতা বলেন, তারা বিশ্বাস করেন, সরকারের নীতিগুলো প্রায়ই দলীয় দৃষ্টিভঙ্গি থেকে আসে। তাই রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে পারস্পরিক যোগাযোগ খুব প্রয়োজন। এটি একে অপরকে ভালোভাবে বুঝতে সহায়তা করে। তিনি বলেন, এ ধরনের পারস্পরিক আলাপ-আলোচনার বিষয়টি খুবই গুরুত্বপূর্ণ এবং এটাই পারস্পরিক শিক্ষার প্রক্রিয়া।
প্রধানমন্ত্রীর সফরের সময় সম্ভাব্য চুক্তির বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, তারা আশা করছেন, অনেক ক্ষেত্রে চুক্তি হতে যাচ্ছে। চীন যে প্রতিশ্রুতি দেয় এবং তা পূরণ করে। এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, তারা বাংলাদেশ সরকারের উদারতা ও মানবিক সহায়তার প্রশংসা করেন। রোহিঙ্গা ইস্যু আরও জটিল হয়ে উঠছে মন্তব্য করে তিনি বলেন, এই ইস্যুতে সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন পক্ষের সঙ্গে কাজ করে সমস্যা সমাধানে চীনের ভূমিকা অব্যাহত থাকবে।
এদিকে বৈঠকের পর পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ বলেন, আগামী ৮ থেকে ১১ জুলাইয়ের মধ্যে প্রধানমন্ত্রীর চীন সফরের সম্ভাবনা বেশি। বাংলাদেশের উন্নয়নে চীনের গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রয়েছে। প্রধানমন্ত্রীর সফরেও গুরুত্বপূর্ণ অগ্রগতি হবে, সেটি আমরা প্রত্যাশা করছি। আমরা এই সফরের দিকে তাকিয়ে আছি। চীনা মন্ত্রীর সঙ্গে আলোচনার বিষয়ে হাছান মাহমুদ বলেন, ‘চীন আমাদের সবচেয়ে বড় উন্নয়ন সহযোগী এবং বাণিজ্য সহযোগী। আমরা বাণিজ্য ঘাটতি নিয়ে আলোচনা করেছি। আমরা চীন থেকে আমদানি করি প্রায় ১ হাজার ৩০০ কোটি ডলারের পণ্য। রপ্তানি করি পৌনে ১০০ কোটি ডলারের পণ্য। আমরা বলেছি, ওষুধ, চামড়া ও সিরামিক পণ্য তারা আমাদের কাছ থেকে নিতে পারে।’ বাংলাদেশের একটি ব্যবসায়ী প্রতিনিধি দল প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে চীন সফরে যাবে বলে জানান হাছান মাহমুদ।
রোহিঙ্গা ইস্যুতে আলোচনা হয়েছে জানিয়ে পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, ‘রোহিঙ্গা সমস্যা সমাধানে বিশেষ করে রোহিঙ্গাদের প্রত্যাবাসনে চীনের সহায়তা চেয়েছি। আমরা গাজা ইস্যু নিয়েও আলোচনা করেছি। রোহিঙ্গা ইস্যুতে চীন অ্যাকটিভ রোল প্লে করবে বলে প্রত্যাশা ব্যক্ত করেছি।’
যে কোনো ফরমেটে বাংলাদেশকে ব্রিকসে যুক্ত করতে চীনের সহায়তা চাওয়া হয়েছে জানিয়ে হাছান মাহমুদ বলেন, ব্রিকসে বাংলাদেশের অন্তর্ভুক্তি– মেম্বার কান্ট্রি বা পার্টনার কান্ট্রি যেভাবেই হোক, সেটা নিয়ে তাদের সমর্থন চেয়েছি। বাংলাদেশে চীনের বিনিয়োগ নিয়ে আলোচনা প্রসঙ্গে পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, চীনের বিনিয়োগ যেন আরও আসে, তা নিয়ে আলোচনা হয়েছে। চীনা মন্ত্রী এ দেশে আরও বিনিয়োগের ব্যাপারে আগ্রহ প্রকাশ করেছেন। তিস্তা বহুমুখী প্রকল্প নিয়ে কোনো আলোচনা হয়েছে কিনা জানতে চাইলে পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, এটা নিয়ে আলোচনা হয়নি।
আওয়ামী লীগের জ্যেষ্ঠ নেতাদের একটি প্রতিনিধি দল চীন সফর করবে জানিয়ে ড. হাছান মাহমুদ বলেন, ‘আমাদের দলের জুনিয়র নেতারা চীন সফর করেছেন। দলের সিনিয়র মেম্বাররাও যাবেন, সেটা নিয়ে আলোচনা করেছি।’