নিজস্ব প্রতিবেদক ,,,,,,,,,,“তোমাকে মনে পড়ে, আমার স্বপ্নভঙ্গের দিনগুলোতে,কিংবা পরম সুখের মূহুর্ত গুলোতে। বাবা, তোমাকে মনে পড়ে “শুপাড়ী নিবাস” এর প্রতিটি দেয়ালের স্পর্শে , খুব মনে পড়ে ! জাগরনে, গভীর ঘুমে… হৃদয় দুমরে যায়, যখনই মুশরে পরি অমানিশার ঘোর কুয়াশায়। স্তম্ভিত ফিরে পাই, মনে পরতেই “শত বর্ষ পর কিভাবে চলবে এ দুনিয়া” তুমি তাও বলেছিলে সেই আমার পুতুল খেলার ছেলেবেলায়। তোমার চলে যাওয়ার ৮ বছরেই তোমার শত ভাবনা বাস্তব হলো চোখের সামনে। শুধু বাবা বলেই নয়, তুমি সত্যিই আমার হিরো, একাল -সেকালের সেরা হিরো। তোমার কাছ থেকে জেনেছি সৃষ্টিকর্তা ও তার বিধানকে। সাথে তুমি শিখিয়েছো রেডিও তে গভীর মনোযোগে ইংরেজি খবর শুনতে ( বুঝবো না যেনেও)। রবীন্দ্রনাথ, নজরুল, হাসন রাজা’র প্রতি তোমার কাছ থেকেই প্রথম আগ্রহ অনুভব করেছি। বুঝতাম না আমি, আমার অতি বালক বেলায় লালন সাইজী’র নির্ভিক প্রশ্ন ( যিনি রাজাদের রাজা তিনি আবার চোরেরও রাজা তাহলে আমি এখন কার কাছে অভিযোগ দিব ?) এর উত্তর আমার কাছ থেকেই কেন বার বার বাবা জানতে চাইতে তুমি (?)। এগুলো সেসময় খুবই অপ্রয়োজনীয় মনে হলেও কিছুকাল পরেই বুঝতে পেরেছি তুমি মূলত বীজ রোপন করতে চেয়েছো আমার মগজে, যদি কোন কালে ভরপুর ডাল-পাতা যুক্ত কোন বৃক্ষ হয়ে পথহারা ক্লান্ত পথিকের নির্মল ছায়ার কারন হিসেবে দাড়াতে পারি বা প্রচলিত বিদ্যা চর্চার বাইরেও ভিন্ন ও অনন্য উপায়ে নিজেকে প্রস্তুত করতে পারি, যেনো মানুষ তার অতি – বিপদ এবং দিকভ্রান্ত সব ভুলে যাওয়া মনে তোমার এ প্রিয় সন্তানকে স্মরণ করার মতো উপযুক্ত মানুষে পরিনত হই আমি । কিন্তু বাবা’র কোন ইচ্ছে আমি পুরুন করতে পারিনি, বাবার প্রয়াসের কোন প্রতিফলন আমার মধ্যে খুজে পাইনা। শুধু অবনত চিত্তে, গভীর শ্রদ্ধায় তোমাকে স্মরন করি, তোমার দর্শন উপলব্ধি করার মৃদ চেষ্টাও করি, পেরে উঠি আবার উঠি না। বাবা, তুমিই প্রথম কাঠের রেডিওতে খবর শোনার পর আমাকে বুঝাতে,”পশ্চিমাদের সাম্রাজ্যবাদী দৃষ্টি মধ্যপ্রাচ্যেকে আস্তে আস্তে ঘিরে ধরছে অক্টোপাসের মতো৷ প্রথম প্রথম ভাবতাম বাড়ির পশ্চিম পার্শ্বের প্রতিবেশীর কিছু অন্যায্যতায় নিজেকে মধ্যপ্রাচ্য ভাবছেন বাবা- কারন পশ্চিমা, মধ্যপ্রাচ্য,সাম্রাজ্যবাদ এসব শব্দের সাথে আমার বয়স অনুপাতে বড় বেশী অলীক, বেমানান । তোমার মুখে সবচেয়ে বেশী শুনেছি তিন শব্দের একটি চিরন্তনী বাক্য:-” বাচতে হলে পড়তে হবে/ জানতে হবে অনেক”। এ জীবনে ভালো কিছু যা ই শিখেছি, তুমিই তার একমাত্র শিক্ষক, তুমি কেমন করে জানতে ইংরেজি না বোঝা ছোট্র সন্তানকে পাশে বসিয়ে ইংরেজি খবর শুনলে শব্দ গুলো মগজে সেট হয়ে যাবে, বিশাল শব্দ ভান্ডার গড়ে দিয়েছো তুমি আমার অভ্যন্তরে, আমারই অজান্তে। প্রতিদিন নানা উচ্চারনে তোমার স্মৃতি আমাকে বার বার পুলকিত করে। বাবা তোমাকে হারানোর বেদনা আমায় অতটা পরাস্ত করেনা যতটা মুশরে পরি একজন শ্রেষ্ট ও অনন্য শিক্ষকের অনুপুস্থিতির ভাবনায়। তোমার কৌশলি শিখন প্রক্রিয়ার সুফল প্রতিদিন পাই, প্রতিনিয়ত আমাকে আলোরিত করে, সমৃদ্ধ করে । শিক্ষার সুযোগ বঞ্চিত এখন খেটে খাওয়া মানুষ কিভাবে সন্তানের জন্যে হয়ে উঠলে দুনিয়ার সেরা শিক্ষক শুধু সেটা আমায় সেখালে না বাবা! তুমি ওপার থেকে দোয়া করিও বাবা , তোমার নাতনী মাবশূ হোসেন কে তোমারই শেখন পদ্ধতি প্রয়োগে আমি যেনো সফল হই। মাবশূ জীবনে যা ইচ্ছে হোক, শিক্ষার প্রতি অনুরাগ যেনো তোমাকেও ছাড়িয়ে যায়। আমি তো পারিনি বাবা, আমার মেয়ে যেনো তোমার শিখন প্রক্রিয়ার স্থায়ী রুপ দিতে পারে, দুনিয়ার সবাই যেনো বুঝতে পারে সন্তানের প্রথম ধর্মালয়, প্রথম বিশ্ববিদ্যালয় তার বাবা, ঠিক যেমন ছিলে তুমি। কিছুই জানা হলো না বাবা, সুযোগ পেলাম না, ২৫ বছর পক্ষাঘাতগ্রস্ত নিশ্চুপ তোমার মলিন মুখের দিকে অপলক তাকিয়ে, তোমার আমানত গুছিয়ে রাখার যে দায়িত্ব আমার কাধে পরেছিলো তা সত্যিই আমাকে ঘিরে তোমার স্বপ্ন ভংগ করে দিয়েছে একটু একটু করে। আমাকে গোছাতে একটুও সময় আমিই দিতে পারিনি, দিতে দেয়নি কেও । আমাকে নিয়ে তোমার যতো ইচ্ছে, যতো প্রয়াস তার সবই অনুজদের প্রতি বন্টনে তোমার আদর্শই আমাকে বাধ্য করেছিলো, বন্টনের জন্য সম্পদ রেখে যাওনি ঠিকই কিন্তু যা রেখেছো, সন্তানদের দেবার চেষ্টা করেছো তার পদতলে দুনিয়ার সমস্ত সম্পদের পাহার অবনত থাকবে, একাডেমিক শিক্ষার সুযোগ তোমার জীবনে খুব বেশী না থাকলেও সম্পদ ও সম্পত্তির তফাৎ তুমি খুব ভালো করে অনুভব করেছো । তোমার অন্য সন্তানদের আমার মতো বালক বেলায় শ্রমিক হতে দেইনি আমি । বালক শ্রমিকের অভিজ্ঞতায় নিজে কাটিয়েছি প্রাইমারি ছেড়ে অনেক গুলো বছর। তুমি সব দেখেছো তবু ওরা অস্বিকার করে। কোন আফসোস নেই আমার , তাদের অস্বিকার আমাকে বিচলিত করেনা, কারন আমি তো তোমারই কাজ কাধে তুলে নিয়েছিলাম সানন্দে যখন আমার কাধের হাড় একদম অল্প আঘাতে টুকরো হয়ে যাওয়ার বয়স। মাথার ওপর ছায়াহীন জীবনের নির্মমতা,আমি তোমার আর কোন সন্তান কে মোকাবেলা করতে দিতে চাইনি। পৃথিবীতে কে তোমাকে কিভাবে চেনে আমি ভাবিনা বাবা, আমার সমস্ত ভাবনা জুড়ে সব সময় যে অনুভূতি বারবার আমাকে শিহরণ যোগায়, পথ হারিয়েও নতুন পথে পৌছুতে সাহস আর শক্তি জোগায়, অচেনা মুল্লুক মুহূর্তে আপন করে নেওয়ার অমোঘ শক্তি আর কেও দেয় নি আমাকে, সে কেবলি তুমি বাবা। মরহুম হাসেন প্রামানিক, প্রিয় বাবা – যেখানেই থাকো সর্বোত্তম প্রাপ্তীতে থাকো। আমার জীবনের যে মৌলিক কাঠামো তুমি রচনা করার প্রয়াস করেছিলে তা যেনো আমি বাস্তবায়ন করে তোমার স্মৃতিকে আরও মহিমান্বিত করতে পারি, অনেকে যেনো তোমার মতো বাবা হ’বার স্বপ্ন দেখে! *মহান আল্লাহ তোমাকে নিশ্চয়ই জান্নাতের মেহমান হিসেবে কবুল করবেন, রাব্বির হামহুমা কামা রাব্বাইয়ানি সগিরা ” আমীন
( ২৯ নভেম্বর-২০১৬, তোমাকে হারিয়েছি ৮ বছর, হারিয়েছি একজন সাক্ষী,যার অনুপুস্থিতিতে পরিবারিক আদালতে হেরে গেছি আমি, বিজয়ী হয়েও পড়াজয়ের গ্লানিবোধ নিয়ে টিকে থাকা তুমিই শিখিয়েছিলে, তাই টিকে আছি, যতোদিন প্রকৃতি তোমার হয়ে সাক্ষ্য না দেয় )
আরও দেখুন
লালপুরে আইন শৃঙ্খলা কমিটির সভা
নিজস্ব প্রতিবেদক লালপুর,,,,,,,,,,,,,,,,,,,নাটোরের লালপুর উপজেলা প্রশাসনের আয়োজনে আইন শৃঙ্খলা কমিটিরমাসিক সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে। সোমবার বেলা …