আসন্ন বাজেটের রাজস্ব পরিকল্পনা নিয়ে এনবিআর’র সঙ্গে প্রধানমন্ত্রীর বৈঠক করমুক্ত আয়সীমা বাড়ছে
আসন্ন ২০২৩-২৪ অর্থবছরের বাজেটে সাধারণ জনগণের ওপর বাড়তি করের বোঝা চাপানো হচ্ছে না। এছাড়া করমুক্ত আয়ের সীমা বাড়াবে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর)। গতকাল গণভবনে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কাছে আগামী বাজেটের ওপর রাজস্ব আদায়ের পরিকল্পনা সংক্রান্ত একটি রূপরেখা এনবিআরের পক্ষ থেকে তুলে ধরা হয়। বর্তমান করমুক্ত আয়সীমা ৩ লাখ টাকা। এটা বাড়িয়ে ৩ লাখ ২০ হাজার থেকে ৩ লাখ ৫০ হাজার টাকা করা হতে পারে। তবে কর্পোরেট করহার আর কমছে না। কোন কোন খাতে বিনিয়োগে কর অবকাশ সুবিধা দেয়া হচ্ছে এবং এরফলে সরকারের আয় কতটুকু কমছে তার একটি হিসেব করছে এনবিআর।
এছাড়া ঋণ নির্ভরতা থেকে বেরিয়ে এসে পর্যায়ক্রমে নিজস্ব অর্থায়নে বাজেট প্রণয়ন করতে চায় সরকার। এলক্ষ্যে রাজস্ব আদায় বাড়াতে নতুন কৌশল গ্রহণ করা করার তাগিদ দেয়া হয়েছে বৈঠকে। এছাড়া যারা নিয়মিত কর দিচ্ছেন, টিআইএন নিয়ে নিয়মিত ট্যাক্স রিটার্ন জমা দিচ্ছেন তারা যেন হয়রানির শিকার না হউন সেদিকেও গুরুত্ব দেয়া হচ্ছে। এ ব্যাপারে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় দেশে করবান্ধব পরিবেশ তৈরির ওপর সর্বোচ্চ জোর দিয়েছে। চলমান বৈশ্বিক সঙ্কটের এই সময় করহার না বাড়িয়ে কর আদায়ের আওতা বাড়ানোর পরামর্শ দেয়া হয়েছে। জানা গেছে, আগামী বাজেটের সম্ভাব্য ব্যয়ের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে ৭ লাখ ৬৪ হাজার ২০৩ কোটি টাকা। এরমধ্যে ৫ লাখ কোটি টাকা রাজস্ব আয়ের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। যেখানে এনবিআরকে সংগ্রহ করতে হবে ৪ লাখ ৩০ হাজার কোটি টাকা। এছাড়া মোট ব্যয়ের বাকি ২ লাখ ৫৯ হাজার ৯৫৫ কোটি টাকা স্থানীয় এবং বিদেশি বিভিন্ন উৎস থেকে ঋণ অনুদানের মাধ্যমে মেটানোর পরিকল্পনা গ্রহণ করা হয়েছে। এর মধ্যে বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচির (এডিপি) আওতায় ৯৪ হাজার কোটি টাকার বৈদেশিক ঋণ পাওয়া যাবে বলে আশা করছে সরকার। এ ছাড়া বিভিন্ন অনুদান এবং বাজেট সহায়তা মোট ১১ হাজার কোটি টাকার লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হচ্ছে। এছাড়া দেশের ব্যাংক ব্যবস্থা থেকে ১ লাখ ২৪ হাজার কোটি টাকা ঋণ নেওয়ার লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। বাকি ৩০ হাজার ৯৫৫ কোটি টাকা জাতীয় সঞ্চয়পত্র বিক্রি ও অন্যান্য খাত থেকে ঋণ গ্রহণ করে বাজেট বাস্তবায়ন করা হবে। তবে বৈশ্বিক পরিস্থিতির কারণে ডলার সঙ্কটে আমদানি কম হওয়ায় চলতি অর্থবছরে মূল্য সংযোজন কর (মূসক বা ভ্যাট) ও আয়কর আদায় কম হবে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে। ফলে রাজস্ব আদায়ের লক্ষ্যমাত্রা পূরণ কঠিন হয়ে উঠতে পারে।
এমন বাস্তবতা মাথায় নিয়েও আগামী অর্থবছরের রাজস্ব আদায়ের লক্ষ্যমাত্রা বৃদ্ধির চ্যালেঞ্জ নিয়েছে এনবিআর। সংস্থাটির চেয়ারম্যান চেয়ারম্যান আবু হেনা মো. রহমাতুল মুনিম প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে বৈঠকে রাজস্ব আদায়ের সার্বিক পরিস্থিতি ও এনিয়ে তাদের কৌশল তুলে ধরেন। এ সময় অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামালসহ সংশ্লিষ্ট উর্ধতন কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন। এর আগে গত ১০ মে রাতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কাছে আসন্ন বাজেটের রূপরেখা তুলে ধরেন অর্থমন্ত্রী। ওই সময় নিত্যপণ্যের দাম কমাতে মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণসহ আগামী বাজেটে ১০ বিষয়ে গুরুত্ব দিয়ে বাজেট প্রণয়নের তাগিদ দেন প্রধানমন্ত্রী। আগামী ১ জুন জাতীয় সংসদে বাজেট উপস্থাপন করবেন আ হ ম মুস্তফা কামাল। ইতোমধ্যে আগামী অর্থবছরের জন্য এডিপি নেয়া হয়েছে ২ লাখ ৬৩ হাজার কোটি টাকা। চলতি অর্থবছরের এডিপির আকার ছিল ২ লাখ ৪৬ হাজার কোটি টাকার। সবদিক বিবেচনায় নিয়ে এবার এডিবির আকার তেমন বাড়ানো হয়নি। এছাড়া নতুন করে কোন মেগা প্রকল্প আসবে না আগামী বাজেটে। বরং চলমান প্রকল্পগুলো দ্রুত বাস্তবায়নের নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল জানিয়েছেন, আগামী বাজেট হবে জনবান্ধব। দেশের সকল মানুষকে ভাল রাখার বাজেট প্রণয়ন করা হচ্ছে। এছাড়া কর্মসংস্থান বাড়াতে বিনিয়োগ ও ব্যবসাবান্ধব বাজেটেও গুরুত্ব দিচ্ছে সরকার।
এদিকে, ব্যবসায়ী ও শিল্পপতিদের শীর্ষ সংগঠন ফেডারেশন অব বাংলাদেশ চেম্বার অব কমার্স এ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রি (এফবিসিসিআই) থেকে ব্যবসাবান্ধব বাজেট প্রণয়নে জোর দিয়েছে। একই সঙ্গে কর আদায়ের নামে ব্যবসায়ী ও অন্যান্য স্টেকহোল্ডারদের হয়রানি বন্ধের দাবি জানিয়েছে সংগঠনটি। সম্প্রতি এনবিআরের পরামর্শক কমিটির ৪৩তম সভায় এফবিসিসিআইয়ের পক্ষ থেকে অত্যাবশ্যকীয় ১৭ টি ভোগ্যপণ্য যেমন চাল, গম, আলু পেঁয়াজ, রসুন, ছোলা, বুট, ডাল, হলুদ, মরিচ, ভুট্রা, আটা, ময়দা, লবণ, ভোজ্যতেল, চিনি ও সকল প্রকার ফল ইত্যাদির সরবরাহ পর্যায়ে উৎস্যে কর ২ শতাংশ হারে কর্তনের আওতা বর্হিভূত রাখার প্রস্তাব করে। এবার ভ্যাট আদায়ে ইএফডি যন্ত্র সরবরাহ করবে এনবিআর। দেশি শিল্পকে সুবিধা দিতে পরিচালনার ব্যয় কমানোর জন্য আমদানি পর্যায়ে অগ্রিম আয়করের (এআইটি) হার ৫ শতাংশ থেকে ধাপে ধাপে কমিয়ে ৩ শতাংশ করা হতে পারে। এছাড়া মোবাইল, সিগারেট এবং ফার্মাসিউটিক্যাল (ওষুধ) খাতে বড় অঙ্কের করফাঁকি উদঘাটনে জোর দিয়েছে এনবিআর। অডিটে মিথ্যা তথ্য দেওয়া বন্ধে নতুন প্রযুক্তির ব্যবহার বাধ্যতামূলক করা হয়েছে। কর না বাড়িয়ে করের আওতা বাড়ানো হবে। সম্পদশালীদের ওপর সারচার্জ এবং সুপার ট্যাক্স গ্রুপের কাছ থেকে রাজস্ব আদায়ে কঠোরতা অবলম্বন করা হতে পারে।