নিজস্ব প্রতিবেদক, বাগাতিপাড়া:
নাটোরের বাগাতিপাড়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চিকিৎসক সংকট প্রকট আকার ধারণ করেছে। কাগজে কলমে ৯ জন পদায়ন থাকলেও বাস্তবে আছেন ৩ জন চিকিৎসক।বিপুল রোগীর সেবা প্রদানে তারা হিমশিম খাচ্ছেন। তাছাড়া এই উপজেলায় দিন দিন করোনা আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা বাড়লেও এই দূর্যোগে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সটিতে কোভিড-১৯ আক্রান্ত রোগীদের চিকিৎসা সেবা প্রদানের কোন ব্যবস্থা নেই। ফলে চিকিৎসাসেবা ব্যাহত হওয়ায় দূর্ভোগে পড়েছেন রোগীরা। যদিও স্বাস্থ্য বিভাগ বলছে, এসব রোগীদের জন্য ৫টি বেড নির্ধারিত রয়েছে।
হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ উর্দ্ধতন কর্তৃপক্ষকে জানালেও সংকট নিরসনে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়নি। একদিকে চিকিৎসক সংকট, অন্যদিকে দুই জন চিকিৎসককে প্রেষণে অন্য হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে। এসব সংকট কাটাতে দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়ার দাবিও জানিয়েছেন রোগীর স্বজন ও স্থানীয়রা। হাসপাতাল সুত্রে জানা গেছে, উপজেলায় মোট ১৪ জন চিকিৎসকের পদের মধ্যে স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ৯ জন এবং ইউনিয়ন সাব-সেন্টারগুলোতে ৫ জন চিকিৎসকের পদ রয়েছে। কিন্তু ওই ১৪ পদের বিপরীতে কাগজে কলমে ৯ জন চিকিৎসকের পদায়ন থাকলেও একজন প্রশাসনিক দায়িত্বে এবং মাত্র তিন জন চিকিৎসক সেবা প্রদান করছেন। আর অন্যরা বিভিন্ন কারণে হাসপাতালের বাইরে রয়েছেন। উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. রতন কুমার সাহা সম্প্রতি ব্রেন টিউমারে আক্রান্ত হয়ে অসুস্থ রয়েছেন। তার স্থলে আবাসিক মেডিক্যাল অফিসারের দায়িত্বে থাকা ডা. ফরিদুজ্জামান হাসপাতালের প্রশাসনিক কাজের দায়িত্ব পালন করছেন।
বর্তমানে মেডিক্যাল অফিসার ডা. নাজমুস সাকিব, সহকারী সার্জন ডা. মাহমুদুল হাসান এবং সহকারী সার্জন ডা. নাজমুল আরেফিন রোস্টার অনুযায়ী চিকিৎসা সেবা প্রদান করছেন। তবে এসব চিকিৎসকগণ সবাই ইউনিয়ন উপ-স্বাস্থ্য কেন্দ্রের জন্য পদায়িত রয়েছেন। সূত্র জানায়, পদায়ন থাকার পরও বিভিন্ন কারণে হাসপাতালের বাইরে থাকা চিকিৎসকদের মধ্যে দুই জন চিকিৎসক দীর্ঘ দিন যাবত কর্মস্থলে অনুপস্থিত রয়েছেন। জুনিয়র কনসালট্যান্ট (সার্জারি) ইয়াসের আরাফাত ২০১২ সালের ১৮ মার্চ থেকে ৮ বছরের অধিক সময় এবং মেডিকেল অফিসার মোফাজ্জল শরিফ ২০১৪ সালের ২১ জুলাই থেকে ৬ বছর ধরে অনুপস্থিত রয়েছেন। তাদের বিরুদ্ধে বিভাগীয় মামলা চলমান আছে। মামলা নিষ্পত্তি না হওয়া পর্যন্ত ওই দুটি পদে কাউকে নিয়োগ প্রদান করা যাচ্ছে না। প্রেষণে (ডেপুটেশন) রয়েছেন গাইনি ও ডেন্টাল সার্জন পদের দুই চিকিৎসক। জুনিয়র কনসালটেন্ট (গাইনি) পদের চিকিৎসক ডা. সালমা আক্তার নাটোর আধুনিক হাসপাতালে এবং ডেন্টাল সার্জন ডা. সাদিয়া সুলতানা সুমি রাজশাহীর পুলিশ হাসপাতালে প্রেষণে রয়েছেন। আবাসিক মেডিক্যাল অফিসার ও এনেসথেশিয়া পদ দীর্ঘ কাল যাবত শূণ্য রয়েছে। শিশু, চক্ষু এবং অর্থপেডিকের মত গুরুত্বপূর্ণ পদ নাই। এছাড়াও স্বাস্থ্য সহকারির পদ রয়েছে ১৭টি। তার বিপরীতে কর্মরত আছেন ১২জন। অফিস সহকারীর ৩ টি পদের মধ্যে কর্মরত আছেন ২ জন। পরিসংখ্যানবিদের পদটি শূণ্য আছে। টেকনিশিয়ান নাই। শিশু, চক্ষু এবং অর্থপেডিকের মত গুরুত্বপূর্ণ পদ না থাকায় দরিদ্র এই জনপদের ঐ সমস্ত রোগীদের বেসরকারি ক্লিনিকে চিকিৎসা সেবা নিতে হচ্ছে।
এছাড়া আসবাবপত্র ও বিভিন্ন বিভাগে যন্ত্রপাতির সংকটও রয়েছে। করোনা পরিস্থিতিতে শুরুর দিকে রোগীর চাপ কমলেও বর্তমানে ভর্তি রোগীর পাশাপাশি হাসপাতালটিতে বহির্বিভাগে প্রতিদিন গড়ে ২০০ থেকে ৩৫০ জন রোগী চিকিৎসা সেবা নিতে আসে। এক্স-রে মেশিন ৪ বছর ধরে অকেজো। জাইকা প্রকল্পের অর্থায়নে আধুনিক এক্স-রে মেশিন ক্রয়ের সিদ্ধান্ত প্রায় দুই বছরেও বাস্তবায়ন হয়নি। দুটি ইসিজি মেশিন থাকলেও তা দিয়ে তেমন কোন কাজ হয় না।
স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে জরুরি প্রসুতি সেবা কার্যক্রম না থাকায় রোগীদেরকে অন্য হাসপাতাল অথবা ক্লিনিকে সেবা নিতে হয়। তাছাড়া গাইনি বিশেষজ্ঞ পদ থাকলেও এ সংক্রান্ত কোন ওটি (অপারেশন কার্যক্রম) হয়না। এ ছাড়া কিছু রোগের পরীক্ষা করা হলেও জটিল রোগ নির্ণয়ের পরীক্ষা হয় না। সম্প্রতি হাসপাতালটি ৩১ শয্যা থেকে ৫০ শয্যায় উন্নীতকরণের ঘোষণা অনুযায়ী ভবন নির্মাণের কাজ চলছে। কিন্তু সে অনুযায়ী জনবল নিয়োগ হয়নি। এদিকে উপজেলায় লাফিয়ে লাফিয়ে করোনা রোগী বাড়তে শুরু করেছে। সর্বশেষ তথ্যানুযায়ী এ পর্যন্ত এ উপজেলায় ৬১জন কোভিড-১৯ রোগী শনাক্ত হয়েছে। এর মধ্যে একজন চিকিৎসকসহ স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের ৯ জন, থানার ওসিসহ ২৬ পুলিশের করোনা শনাক্ত হয়। কিন্তু অদ্যাবধি হাসপাতালটিতে কোভিড-১৯ আক্রান্ত রোগীদের চিকিৎসার কোন ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়নি।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে বাগাতিপাড়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের আবাসিক চিকিৎসক ডা. ফরিদুজ্জামান বলেন, চিকিৎসক সংকটের কারণে স্বল্প সংখ্যক চিকিৎসক নিয়ে সেবা দিতে হিমশিম খাচ্ছেন। এ কারনে তিনি নিজেও প্রশাসনিক কাজের পাশাপাশি রোস্টার অনুযায়ী চিকিৎসা সেবা দিচ্ছেন। তাছাড়া করোনা রোগীদের জন্য চিকিৎসা সেবা দেওয়ার মত আইসোলেশন ইউনিট বা এমন বিশেষ কোন ব্যবস্থা এখনও তার হাসপাতালে নেই। কয়েকটি মাত্র অক্সিজেন সিলিন্ডার রয়েছে, সেটিও আরও বাড়ানো দরকার বলে তিনি মনে করেন।
এ ব্যাপারে নাটোরের সিভিল সার্জন ডা. মিজানুর রহমান বলেন, বাগাতিপাড়া স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সটিতে এই মুহুর্তে চিকিৎসক সংকট রয়েছে। বিষয়টি উর্দ্ধতন কর্তৃপক্ষ বরাবর জানানো হয়েছে। খুব শিগগিরই এ সংকট দূর হবে। তাছাড়া উপজেলা পর্যায়ের প্রতিটি হাসপাতালের মতো বাগাতিপাড়ায়ও ৫টি বেড করোনা রোগীদের জন্য রয়েছে। করোনা রোগীদের সাধারন সর্দি-জ্বর বা সামান্য শ্বাসকষ্টের চিকিৎসা সেখানে দিতে পারবে। তবে রোগীর অবস্থার ওপর নির্ভর করে অন্যত্র স্থানান্তর করা হবে।
আরও দেখুন
বিএনপির সাবেক এমপি আমিনুল ইসলামের বিরুদ্ধে হামলা-দখলের অভিযোগ
নিজস্ব প্রতিবেদক চাঁপাইনবাবগঞ্জ,,,,,,,,,,চাঁপাইনবাবগঞ্জের নাচোলে বিএনপির জাতীয় নির্বাহী কমিটির শিল্প ও বানিজ্য বিষয়ক সহ-সম্পাদক ও সাবেক …